Monday, September 12, 2016

রাসুল সাঃ বা অন্য কোন মৃত নেককার লোকদের অসিলায় দোয়া করা প্রসঙ্গে।

বর্তমানে আমাদের সমাজে একদল লোক বলতেছে যে রাসুল সাঃ বা অন্য কোন মৃত নেককার লোকদের অসিলা দিয়ে দোয়া করা জায়েয নেই।আসল কথা হচ্ছে রাসুল সাঃ বা অন্যান্য মৃত নেককার লোকদের অসিলা দিয়ে দোয়া করা ইসলামি শরিয়তে সমপূর্ণরুপে জায়েয।নিচে এ ব্যাপারে কয়েকখানা হাদিস পেশ করা হল- ★আল্লামা ইমাম তাবরানি রঃ তার লিখিত আওসাত নামক গ্রন্থের ১/১৫২ পৃষ্টায় এসেছে-عن سيدنا بن عباس رض انه قال قال رسول الله صلي لما دفن فاطمۃ بنت اسد رض ام سيدنا علي رض :اللهم بحقي وبحق الانبياء من قبلي اغفر لامي بعد امي অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,যখন হযরত আলি রাঃ এর মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ রাঃ এর দাফন করা হল,তখন রাসুল সাঃ দোয়া করলেন যে হে আল্লাহ আপনি আমার এবং আমার পূর্বের সমস্ত নবীদের অসিলায় আমার খালাকে মাফ করে দেন। তাহলে এ হাদিস থেকে বুঝা যায় মৃত ব্যাক্তির অসিলায় দোয়া করা জায়েয।কারন সমস্ত নবীরা রাসুল সাঃ এর অনেক আগেই ইনতেকাল করেছিলেন অথচ রাসুল সাঃ তাদের নামের অসিলায় দোয়া করতেছেন। ★ইমাম বুখারি রঃ ,আত তারিখুল কাবির ৭/৩০৪ পৃষ্টায় হাদিস নিয়ে এসেছেন-عن مالك رض قال اصاب الناس قحط في زمان عمر بن الخطاب رض فجاء رجل الي قبر النبي صلي فقال يا رسول الله استسق الله لامتك فانهم قد هلكوا فاتاه رسول الله في المنام فقال اءت عمر رض فاقرءه مني السلام واخبرهم انه مسقون و قل له عليك بالكيس الكيس فاتي الرجل فاخبر عمر فقال يا رب ما ءالوا الا ما عجزت عنهঅর্থাৎ হযরত মালেক রঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,হযরত ওমর রাঃ এর জামানায় মানুষকে দুর্ভিক্ষ পাইল।অতপর এক সাহাবি রাসুল সাঃ এর কবরের পাশে এসে বলল,হে আল্লাহর রাসুল সাঃ,আপনি আল্লাহর নিকট আপনার উম্মতের জন্য পানি প্রার্থনা করুন কারন তারা ধংস হয়ে যাচ্ছে ।অতঃপর রাসুল সাঃ স্বপ্নে এ লোকটির নিকট এসে বলল-তুমি উমরের কাছে গিয়ে আমার সালাম দাও আর বলবে যে তারা পানি পাবে। অতপর লোকটি এসে হযরত উমরকে এসে এ খবরটি জানাল।হযরত উমর রাঃ এ খবর শুনে বলে উঠলেন হে প্রভু! তারা এমন অবস্হায় পোঁছেছে আমার পক্ষে সমাধান করা অসম্ভব ছিল।সুতরাং এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে,রাসুল এর অসিলায় দোয়া করা রাসুলের ইনতেকালের পর হযরত উমরের জামানায়ও জায়েয ছিল।এখন যারা এটাকে শিরক বলে তারা কি সাহাবিদের থেকেও বেশি জ্ঞানী!নাউজুবিল্লাহ। ★শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রঃ, আল কালিমুত তায়্যিব কিতাবের ১/১৭৩ পৃষ্টায় হাদিস নিয়ে এসেছেন-عن الهيثم بن انس رض كنا عند بن عمر رض فخدرت رجله فقال له رجل اذكر احب الناس اليك فقال يا محمد فكانما نشط من عقالঅর্থাৎ হযরত হাইসাম ইবনে আনাস থেকে বণিত, তিনি বলেন,আমরা ইবনে উমরের সামনে বসা ছিলাম।হঠাৎ করে তার পা অবশ হয়ে গেল।তখন উপস্থিত এক ব্যাক্তি তাকে বললেন,আপনি আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ব্যাক্তি কে স্ণরন করুন।তখন তিনি বলে উঠলেন হে মুহাম্মদ! এ কথা বলার সাথে সাথে তার পা ভাল হয়ে গেল।সুতরাং এ হাদিস থেকে জানা গেল ইবনে উমরের মত সাহাবি রাসুলের ইনতেকালের পর রাসুলের নামের অসিলায় সুস্থ হয়ে গেলেন। এখন কি আপনারা বলবেন ইবনে উমর শিরক করে ফেললেন।নাউজুবিল্লাহ?বরং ইবনে উমর রাসুলের সুন্নাহর খুবই অনুসারি ছিলেন।উনি জানতেন যে,রাসুলের ইনতেকালের পর রাসুলের অসিলায় দোয়া করা শিরক নয়। ★ইবনে মাজাহ,হাদিস নং৭৭৮عن ابي سعيدن الخدري رض قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم من خرج من بيته الي الصلاۃ فقال اللهم اني اسالك بحق الساءلين عليك و بحق ممشاي هذا فاني لم اخرج اشرا ولا بطرا ولا رياء ولا سمعۃ خرجت اتقاء سخطك و ابتغاء مرضاتك فاسالك ان تعيذني من النار و ان تغفرلي ذنوبي انه لا يغفر الذنوب الا انت اقبل الله بوجهه و استغفر له سبعون الف ملكঅর্থ- হযরত আবু সায়িদ খুদরি রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ বলেছেন,যে ব্যক্তি ঘর থেকে নামাজের উদ্যেশ্যে বের হয়।তারপর সে বলে,হে খোদা আমি আপনার কাছে আপনার সমস্ত ছুয়ালকারিদের এবং আমার এই যাতায়াতের অসিলায় দোয়া করতেছি।নিশ্চয় আমি কোন অহংকার বা কোন আত্নগর্ব,কোন লোকিকতা, বা কাউকে শুনানোর জন্য বের হইনি ।আমি শুধু বের হয়েছি তোমার শাস্তি থেকে রক্ষা এবং তোমার সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য।সুতরাং তুমি আমাকে জাহাননামের আগুন থেকে মুক্তি দাও এবং আমার সমস্ত পাপকে মাফ করো।কেননা তুমি ছাড়া পাপ মোচনের কেহ নেই।এ দোয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তার দিকে ফিরেন এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা চায়। এ হাদিসখানাকে আললামা ইবনে হাজার আসকালিন রঃ ,আমালিল আযকার নামক কিতাবের ১/২৯১ পৃষ্টায় হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।এ হাদিসে রাসুল সাঃ দোয়া শিখিয়েছেন যে,যারা সমস্ত সুয়াল কারিদের অসিলায় দোয়া করবে। আললাহর কাছে সুয়ালকারি বলতে জিবীত মৃত সমস্ত নবী,রাসুল নেককার বান্দাগনই উদ্যেশ্য।সুতরাং এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে রাসুল সাঃ সহ সমস্ত মৃত নেককার বান্দাদের অসিলায় দোয়া করা জায়েয। ★দারিমি শরিপ ১/৪৩ পৃষ্টা عن ابي الجوزاء اوس بن عبد الله قال قحط اهل المدينۃ قحطا شديد فشكوا الي عاءشۃ فقالت انظروا قبر النبي صلي الله عليه وسلم فاجعلوا منه كوي الي ا لسماء حتي لا يكون بينه وبين السماء سقف قال ففعلوا فمطرنا مطرا حتي نبت العشب و سمنت الابل حتي تفتقت من الشحم فسمي الفتقঅর্থাৎ হযরত আবুল জাওযা আউস ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মদিনাবাসিরা একদা মারাত্মক দুর্ভিক্ষের শিকার হলেন।অতঃপর তারা হযরত আয়েশা রাঃ এর নিকট অভিযোগ জানাইল।আয়েশা রাঃ তাদেরকে বললেন,তোমরা রাসুলের কবরের দিকে তাকাও।রাসুলের কবরের উপর থেকে আসমান পর্যন্ত খালি করে দাও যাতে আসমান ও রাসুলের কবরের মাঝখানে কোন পর্দা না থাকে। রাবি বলেন,সাহাবিরা আয়েশার কথা মোতাবেক তাই করল।আর আমরা এমন বৃষ্টি পাইলাম যে বৃষ্টির দ্বারা অনেক ঘাস হল এবং উট মোটা তাজা হল।এ হাদিস থেকে বুঝা গেল রাসুলের রওজার অসিলায় সাহাবিরা বৃষ্টি পেল। আবার তাও যিনি রাসুলের হাদিস সম্পর্কে বেশি অবগত তার পরামর্শে ।যদি রাসুলের ইন্তেকালের পর রাসুলের অসিলায় দোয়া শিরিক হইত তাহলে আয়েশা রাঃ সাহাবাদেরকে এ ধরনের শিরিকি পরামর্শ দিতেন না।সুতরাং উপরে বর্ণিত মারফু ও মাওকুফ হাদিস দ্বারা আমরা জানলাম যে,রাসুলের বা নেক বান্দাদের ইন্তেকালের পরও তাদের অসিলায় দোয়া করা বৈধ।এছাড়াও আরও বিস্তরিারিত জানার জন্য দেখুন-তাফসিরে ইবনে কাসির সুরা নিসা ৬৪নং আয়াতের তাফসির। তিরমিজি ৩৫৭৮ নং হাদিস।উল্লেখ্য-জিবীত নেককার লোকদের অসিলায় দোয়া করা জায়েয হওয়া এটা বুখারি শরিপের ৯৬৪ নং হাদিস দারা প্রমানিত।

No comments:

Post a Comment