Friday, January 19, 2018

মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল কি জঈফ ও ইমাম বুখারী (রহ) ।

====================================আসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” একথার দাবিতে অটল থেকে বুকের উপর কোন দলীল পেশ করতে সক্ষম নন। তাই এক্ষেত্রে চালাকীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন।

বিবরণ অনুযায়ী সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম … তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻃﺎﻫﺮ، ﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ، ﻧﺎ ﺃﺑﻮ ﻣﻮﺳﻰ، ﻧﺎ ﻣﺆﻣﻞ، ﻧﺎ ﺳﻔﻴﺎﻥ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻗﺎﻝ : ﺻﻠﻴﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﻭﺿﻊ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ .
-সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯
উক্ত হাদীসের রাবী মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহঃ বলেন-
ﻣﺆﻣﻞ ﺑﻦ ﺍﺳﻤﺎﻋﻴﻞ ﺍﻟﻌﺪﻭﻯ ﻣﻮﻟﻰ ﺁﻝ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻭﻗﻴﻞ ﻣﻮﻟﻰ ﺑﻨﻲ ﺑﻜﺮ ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺒﺼﺮﻱ ﻧﺰﻳﻞ ﻣﻜﺔ . ﺍﻟﺦ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
অনুবাদ-মুআম্মাল বিন ইসমাঈর আল আদাবী আলুল খিতাবের মাওলা ছিলেন, কারো মতে বনী বকরের মাওলা ছিলেন। তিনি মক্কায় আগত। ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, তিনি ছিলেন মুনকারুল হাদীস!।
{তাহজীবুত তাহজীব, রাবী নং-৬৮১}

ইবনে কাত্তান রহঃ বর্ণনা করেন, নিশ্চয় বুখারী রহঃ বলেছেন, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমি “মুনকারুল হাদীস” বলি তার থেকে বর্ণনা করা জায়েজ নয়।
{মীযানুল ইতিদাল-১/৬}

ইমাম বুখারী রহঃ এর মতে তিনি যাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন তার থেকে বর্ণনা করা জায়েজই নয়। আর ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে বলেছেন মুনকারুল হাদীস। মানে ইমাম বুখারী রহঃ এর মতানুসারে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল থেকে হাদীস বর্ণনা কারা জায়েজ নয়।
শায়খ আলবানীও সিলসিলাতুয যয়ীফার অনেক জায়গায় মুআম্মাল বিন ইসমাঈল কে জয়ীফ বলেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।
দেখুন : সিলসিলাতুয যয়ীফা ১/১৩১; ২/২৪৬, ৩/১৭৯; ৩/২২৭; ৪/৪৫৫ ইত্যাদি।

আলবানী সাহেব বলছেন হাদীসটির সনদ জঈফ। সেই সাথে এটি ত্রুটিপূর্ণ। মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সাহেবের মুখস্ত শক্তি ছিল খুবই দুর্বল। এত কিছুর পরও নাকি হাদীস সহীহ!!!

বর্ণনাকারী মুনকার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। সনদ দুর্বল। তারপরও হাদীস সহীহ? বাহ! একেই বলে বিচার মানি তালগাছ আমার। দুর্বল স্মৃতিশক্তির দুর্বল বর্ণনাকারীর

কুরআন ও সহীহ হাদীসই যদি কেবল দলীলযোগ্য হয়, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্যের অনুসরণ যদি শিরক পর্যায়ের তাকলীদ হয়ে থাকে, তাহলে সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসটি তাদের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে কি সহীহ সাব্যস্ত করিয়েছেন?

যদি না করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ যে হাদীসকে সহীহ বলেননি, সে হাদীসকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের রেফারেন্স ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্য দিয়ে সহীহ বলাটা কি উক্ত মুহাদ্দিসের অন্ধ তাকলীদ নয়?

আমরা বিজ্ঞ মুজতাহিদের তাকলীদ করলে শিরক, আর তারা করলে সেটি কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল হয় কি করে?
মুখে মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল মানার স্লোগান, আর কাজেকর্মে উম্মতীর বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়াই অন্ধভাবে মেনে নেয়ার নাম আর যাই কিছু হোক, কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ নয়, বরং ধোঁকাবাজী।

বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীল যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা কোথাও পেলেন না নিজেদের উদ্ভাবিত থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” অনুপাতে। তখন প্রথমেতো কুরআন ও হাদীসের দলীল ছাড়াই মুহাদ্দিসীনে কেরামের তাকলীদ করে সহীহ ইবনে খুজাইমার হাদীসটিকে সহীহ বলা শুরু করলেন।
কিন্তু যখনি আমরা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যে, যে ইমাম বুখারী রহঃ এর সকল মন্তব্যকেই চূড়ান্ত ও হক বলে বিশ্বাস করে থাকে, তিনি উক্ত বর্ণনাটির একজন রাবী মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে “মুনকারুল হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন, তখন তাদের টনক নড়ল। নতুন বুদ্ধি বের করলেন। সেটি হল, মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলকে মুয়াম্মাল বিন সাঈদ বানিয়ে দেয়া।

এ এক আজীব চালাকী...???
চলুন, দেখি ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ কেই কি “মুনকারুল হাদীস” বলে মন্তব্য করেছেন নাকি না? সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম তাদের স্বীয় কিতাবে কি লিখেছেন?

১ঃআল্লামা মিজ্জী রহঃ লিখেছেন- ﻭﻗَﺎﻝ ﺍﻟﺒُﺨﺎﺭِﻱُّ : ﻣﻨﻜﺮ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . তথা ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তিনি [মুআম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ] মুনকারুল হাদীস। {তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল, বর্ণনা নং-৬৩১৯}

২ঃইমাম যাহাবী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল মুনকারুল হাদীস।
আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭,
তারীখুল ইসলাম, বর্ণনা নং-৩৮০,
সিয়ারু আলামিন নুবালা, বর্ণনা নং-১৫৪৬,
জিকরু মান তাকাল্লামা ফীহি, বর্ণনা নং-৩৪৭,
মিযানুল ইতিদাল, বর্ণনা নং-৮৯৪৯।

৩ঃইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮, লিসানুল মিযান, বর্ণনা নং-৪৯৮৭}

৪ঃআল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {মাগানিয়ুল আখয়ার, বর্ণনা নং-২৪১৯}

৫ঃআহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ইয়ামানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {খুলাসাতুল তাহযীবু তাহযীবিল কামাল}
এতগুলো গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণ এতসব কিতাবে ইমাম বুখারী রহঃ এর মন্তব্যটি নকল করেছেন। ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে নয়, মুয়াম্মাল বিন সাঈদ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন, এমন কথা কোন পূর্ববর্তী কোন গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমাম কি বলেছেন?

কেউ বলেননি, সবাই মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কেই ইমাম বুখারীর মন্তব্যটির নিসবত করেছেন। মুআম্মাল বিন সাঈদের কথা কেউ বলেননি।
একথা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, বর্তমানের নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা নিজেদের দলীলহীন মাসআলা প্রমাণের জন্য এতসব গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণের অবস্থানকে ভুল সাব্যস্ত করার হীন কর্মকান্ডে নেমেছেন।

আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীস নামধারী এসব ভ্রান্তদের চক্রান্ত থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযত করুন।

একটি মজার কথা......!!!
একই ব্যক্তি যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইদের মাসআলার খেলাফ হন, তখন তিনি জঈফ ও অগ্রণযোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যান, আবার উক্ত ব্যক্তিই যখন নিজেদের পক্ষের কোন মাসআলার দলীল হন, তখন তিনি কি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে যান সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।
প্রথমে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির সনদটির দিকে আমরা একটু দৃষ্টি বুলিয়ে নেইঃ
ﻣﺆﻣﻞ ﻋﻦ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ ﻛﻠﻴﺐ ﻋﻦ ﺍﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﻭﺍﺋﻞ ﺑﻦ ﺣﺠﺮ
অনুবাদ-মুআম্মাল সুফিয়ান ছাওরী রাহ থেকে, তিনি আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।
এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কয়েকটি ধোঁকাবাজী লক্ষ্য করি।

ধোঁকাবাজী নং-১...........???
সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত হাদীসটির সূত্রে মুআম্মাল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান সওরী রহঃ থেকে, আর সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করেছেন।
আর এ সূত্রটিকে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সহীহ সনদ বলে প্রচার করছেন।
অথচ একই ধরণের সনদ তথা সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা সম্বলিত রফয়ে ইয়াদাইন রুকুতে গমণ ও উঠার সময় ছেড়ে দেয়ার বর্ণনা যখন আমরা আবু দাউদ, তিরমিজী ও নাসায়ী থেকে পেশ করি। তখন তারা বলে এ সনদ দুর্বল। কারণ সুফিয়ান সওরী রহঃ নাকি মুদাল্লিস। আর তিনি “আন” শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদীসটি দুর্বল।
অথচ সহীহ ইবনে খুজাইমার মাঝে সেই সুফিয়ান সওরী রহঃ যখন “আন” শব্দের মাধ্যমে আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করছেন তখন এ হাদীস তাদের গলার মালা হয়ে গেল। এখন কোথায় গেল “আন” বললে জঈফ হয়, বা সুফিয়ান সওরী রহঃ মুদাল্লিস সম্বলিত বক্তব্য?

ধোঁকাবাজী নং-২..........???
রুকুতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ীর হাদীসটিকে তারা পরিত্যাজ্য আরেকটি কারণে বলে থাকে, সেটি হল, উক্ত হাদীসটির সনদে আসেম বিন কুলাইবন “মুনফারিদ” তথা একাকী বর্ণনাকারী। আর আসেম বিন কুলাইব যখন মুনফারিদ হন, তখন তিনি দলীলযোগ্য হন না।
কিন্তু মজার বিষয় হল, সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত সনদটিতেও আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ। এরকম বর্ণনা ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে আর কারো সূত্রে নেই। তাহলে তিরমিজী, নাসায়ী ও আবু দাউদের রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার হাদীস আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ হওয়ার কারণে দলীলযোগ্য না থাকলে সহীহ ইবনে খুজাইমাতে মুনফারিদ হওয়া সত্বেও দলীলযোগ্য হয়ে গেলেন কিভাবে? বড়ই অবাক করা ভাইদের মানসিকতা!

ধোঁকাবাজী নং-৩.............???
সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত হাদীসটির পরেই বর্ণিত হয়েছে কাছাকাছি সূত্রে-
ﻋَﺎﺻِﻢُ ﺑْﻦُ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ ﺍﻟْﺠَﺮْﻣِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﺑِﻲ ﺃَﻥَّ ﻭَﺍﺋِﻞَ ﺑْﻦَ ﺣُﺠْﺮٍ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻩُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ” ﻟَﺄَﻧْﻈُﺮَﻥَّ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﻴْﻒَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻨَﻈَﺮْﺕُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ، ﻗَﺎﻡَ ﻓَﻜَﺒَّﺮَ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺣَﺎﺫَﺗَﺎ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ،
আসেম বিন কুলাইব তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বর্ণনা করেন, ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ দেখছিলাম তিনি কিভাবে নামায আদায় করেন, তখন আমি দেখলাম, তিনি দাঁড়ালেন, তারপর তাকবীর দিলেন, তারপর উভয় হাত উঠালেন কানের লতি পর্যন্ত।
{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৮০}

আসেম বিন কুলাইব, তার পিতা, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর সূত্রে প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীসটি উল্লেখ করা হল, সেটির নং হল, ৪৭৯, আর একই সূত্র তথা কুলাইব তার পিতা, পিতা হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাঃ নামাযে কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন।
অথচ কথিত আহলে হাদীসরা মহিলাদের মত কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠায়। কান পর্যন্ত হাত উঠায় না। এ হাদীসটির মুখালাফাত করে থাকে। এক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে গলার মালা বানানো, আরেক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে বাদ দিয়ে দেয়ার নাম কি সহীহ হাদীসের উপর আমল না মনের পূজা?
ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস না বললেও উক্ত হাদীস কথিত আহলে হাদীসদের দলীল হতে পারে না।

 কারণ ২টি। যথা-
১ম কারণঃ
মুআম্মাল বিন ইসমাঈল মুনফারিদ
আসেম বিন কুলাইব, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে। এ সূত্রের মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর নামায সংক্রান্ত একাধিক সূত্র এসেছে।
কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করছি-

১ঃ
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ
আব্দুল্লাহ বিন ওয়ালীদ, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৭১}

২ঃ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷَﺮِﻳﻚٌ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ،
শারীক বর্ণনা করেন আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৬৮}

৩ঃ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕِ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ
আব্দুর রাজ্জাক তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৫৮}

৪ঃ
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﺇِﺩْﺭِﻳﺲَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ ،
আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯১২}

৫ঃ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺑِﺸْﺮُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﻔَﻀَّﻞِ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ ،
বিশর বিন মুফাদ্দাল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭২৬}

৬ঃ
ﻋَﻦْ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦ ﺃَﺑﻴﻪِ، ﻋَﻦ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮ، ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ،
মুসা বিন আবী আয়শা থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪৮৯}

৭ঃ
ﻗُﺘَﻴْﺒَﺔُ، ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ ،
কুতাইবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১২৬৩}

৮ঃ
ﺍﺑْﻦُ ﻓُﻀَﻴْﻞٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ
ইবনে ফুযাইল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}

৯ঃ
ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ
শুবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}

১০ঃ
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ
আবু ইসহাক আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।
{সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭০৫}

মাত্র ১০টি সূত্র উল্লেখ করলাম। এরকম আরো অসংখ্য সূত্রে উক্ত বর্ণনাটি এসেছে। কিন্তু কোথাও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের সূত্রে এসেছে বুকের উপর কথাটি।
তাই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধা বলার ক্ষেত্রে মুনফারিদ। আর সমস্ত জরাহ তাদীলের ইমামগণ একমত যে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল প্রচুর ভুল করতেন। সুতরাং একথা সহজেই বুঝা যায় যে, উক্ত বর্ণনাটিতে বুকের উপর কথাটি তিনি হয়তো ভুলেই বলেছেন। নতুবা আর কারো সূত্রে একথা আসেনি কেন?

মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ ভুল করে উক্ত বর্ণনাটি আনতে পারেন। দলীল মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট-

১- ইবনে সাদ রহঃ বলেন, তথা তিনি সিকা তবে প্রচুর ভুল করেন। {আততাবকাতুল কুবরা, বর্ণনা নং-১৬৫৬}
২- মুহাম্মদ বিন হিব্বান রহঃ বলেন, তিনি প্রায় ভুল করতেন। {আসসিকাতুল লিইবনে হিব্বান, বর্ণনা নং-১৫৯১৫}
৩- আল্লামা খতীব বাগদাদী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর করতেন। {তারীখে বাগদাদ-৬}
৪- ইমাম আবু হাতেম রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলজারহু ওয়াততাদীল, বর্ণনা নং-১৭০৯}
৫- আল্লামা যাহাবী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলকাশশাফ, বর্ণনা নং-৫৭৪৭}
৬- ইমাম আবূ জুরআ রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭}
৭- ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮}

২য় কারণঃ
হাদীসটির বর্ণনাকারীই উক্ত হাদীসের বিপরীত আমল করেন একথা সহজেই অনুমেয় যে, যিনি কোন কথা বর্ণনা করার পর উক্ত কথার বিপরীত কাজ করে থাকেন, তার কাছে তার বর্ণিত কথাটি আমলযোগ্য বা জরুরী নয় বলেই পরিস্কার বুঝা যায়।
আর সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসের সূত্রের একজন রাবী হলেন, হযরত সুফিয়ান সওরী রহঃ। আর খোদ তিনিই বুকের উপর হাত বাঁধার মতকে গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নাভির নিচে হাত বাঁধতেন।

ইমাম নববী রহঃ শরহে মুসলিমে উল্লেখ করেছেন- ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺳﻔﻴﺎﻥ ﻭﺍﺳﺤﺎﻕ ﺑﻦ ﺭﺍﻫﻮﻳﺔ ﻭﺍﺑﻮ ﺍﺳﺤﺎﻕ ﺍﻟﻤﺮﻭﺍﺯﻯ ﻣﻦ ﺍﺻﺤﺎﺑﻨﺎ ﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﺗﺤﺖ ﺳﺮﺗﻪ তথা ইমাম আবু হানীফা রহঃ, সুফিয়ান সওরী রহঃ, ইসহাক বিন রাহুয়া রহঃ এবং আমাদের আসহাবদের মাঝে আবু ইসহাম মারওয়াজী রহঃ বলেন যে, উভয় হাতকে নাভির নিচে বাঁধতে হবে। {শরহে মুসলিম লিননববী-১/৭৩}
আর বর্ণনাকারী খোদ নিজেই যখন স্বীয় বর্ণনার খেলাফ আমল করেন, তখন উক্ত বর্ণনা আমলহীন তা স্পষ্টতই বুঝে আসে।

সুতরাং একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, আসলে বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীলই নেই। যা কিছু কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করে বেড়ান, তা সবই তাদের নিজেদের তৈরীকৃত থিউরী অনুপাতেই ধোঁকাবাজী সাব্যস্ত হয়।যারা আমার পোষ্টের উপর কলম ধরতে চান তারা কলম ধরার আগে শায়খ আলবানী(রঃ)এর কিতাবের দিকে চোখ রাখুন!তার উপর ফতোয়া দিন!কেন তিনি রাবী ইসমাঈলকে জঈফ বলেছেন???

আল্লাহ তাআলা আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের ফিতনা থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযাত করুন। আমীন।