Monday, November 14, 2016

নারীদের দিকে কূদৃষ্টি দেওয়ার হুকুম।

ইসলাম হল বিশ্বজাজানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কতৃক এমন একটি পুতঃপবিত্র ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম,যে ধর্মে সমস্ত অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।নারীদেরকে ইসলাম দুনিয়ার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন।নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন নারীর দিকে কুদৃষ্টি দেওয়াকে ইসলামে মারাত্নকভাবে নিষেধ করা হয়েছে।কোরআন ও হাদিসে নারীদের দিকে কুদৃষ্টি দেওয়ার হুকুম সম্পর্কে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল-
★আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা নুরের 30 নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
 ﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺯْﻛَﻰ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ
অর্থাৎ হে নবী (সাঃ),আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন,তারা যেন তাদের চক্ষুকে পর নারী থাকে অবনত রাখে এবং তাদের চতরকে হেফাজত করে।এভাবে চলাই হল তাদের জন্য পবিত্রতম।আর নিশ্চয় তারা যাই করুক না কেন আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত।অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের থেকে চক্ষু অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।সুতরাং যারা নারীদের দিকে কুদৃষ্টি দিবে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করল।
 ★কোরআন শরীপের সুরা ইয়াসিনের 65 নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﺨْﺘِﻢُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﻜَﻠِّﻤُﻨَﺎ
 ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺗَﺸْﻬَﺪُ ﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ
অর্থাৎ আজকে (হাশরের মাঠে)আমি তাদের মুখের উপরে মোহর মেরে দিব আর তাদের হাত কথা বলা শুরু করবে এবংতাদের দুপা যা যা করছে সব কিছেু তাদের বিপক্ষ স্বাক্ষ দেওয়া শুরু করবে।এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, কিয়ামতের মাঠে মানুষের অঙ্গ -প্রতঙ্গ মানুষের বিপক্ষে স্বাক্ষ দিবে।সুতরাং আমরা যদি কোন নারীর দিকে কুদৃষ্টি দিই তাহলে কিয়ামতের মাঠে এই চক্ষু আমাদের বিপক্ষে স্বাক্ষ দিবে।
★অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
 ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊَ ﻭَﺍﻟْﺒَﺼَﺮَ ﻭَﺍﻟْﻔُﺆَﺍﺩَ ﻛُﻞُّ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺴْﺌُﻮﻟًﺎ (( ‏[ ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ 36: ‏]
অর্থাৎ নিশ্চয় তোমাদের চক্ষু, কর্ণ,এবং প্রত্যকেই কেয়ামতের মাঠে জিজ্ঞাসিত হবে।সুতরাং যারা কদৃষ্টি দেয় তাদের একটু চিন্তা ভাবনা করা উচিৎ হাশরের মাঠে আল্লাহ তাদের চক্ষু সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা কি উত্তর দিবে?
 ★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাদিস শরীপে ইরশাদ করেন,
 إِنَّ النَّظْرَةَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ إِبْلِيسَ مَسْمُومٌ ، مَنْ تَرَكَهَا مَخَافَتِي
 أَبْدَلْتُهُ إِيمَانًا يَجِدُ حَلاوَتَهُ فِي قَلْبِه ( المعجم الكبيرِ " 10215)
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় কুদৃষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত তীর হইতে একটি তীর।যে ব্যক্তি শুধু আমার ভয়ে কুদৃষ্টি পরিত্যাগ করল আমি তাকে এমন ইমান দিব, যে ইমানের সাধ তার অন্তরে খুব বেশি অনুভব করবে।এই হাদিসে কুদৃষ্টিকে ইবলিসের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।নাউজুবিল্লাহ!
 ★আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন,
 ﻣﻦ ﻧﻈﺮَ ﺇﻟﻰ ﻣﺤﺎﺳﻦِ ﺍﻣﺮﺃﺓٍ ﺃﺟﻨﺒﻴﺔٍ ﻋﻦ ﺷﻬﻮﺓٍ ﺻُﺐَّ ﻓﻲ ﻋﻴﻨﻴﻪِ ﺍﻵَﻧُﻚ ﻳﻮﻡَ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔِ ﺍﻟﺮﺍﻭﻱ : - (ﺍﻟﺪﺭﺍﻳﺔ -ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺮﻗﻢ : 2/225)
 অর্থাৎ-যে ব্যক্তি কোন বেগানা নারীর সোন্দর্যের দিকে কুদৃষ্টি দেয় আল্লাহ তায়ালা এটার বিনিময়ে কেয়ামতের মাঠে তার দুচোখে শিষা গলিয়ে লাগিয়ে দিবে। নাউজুবিল্লাহ!
 ★সহীহ মুসলিমের একখানা হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন,
 فالعينان زناهما النظر ، والأذنان زناهما الاستماع ، واللسان زناه الكلام ، واليدان تزنيان وزناهما البطش ، والرجلان تزنيان وزناهما المشي ، والقلب يهوى ويتمنى ، ويصدق ذلك الفرج ، أو يكذبه
 অর্থাৎ-মানুষের দু'চোখের যিনা হল-কুদৃষ্টি দেয়া। আর দু'কানের যিনা হল-অশ্লিল কথা শ্রবন করা।আর জিহ্বার যিনা হল-অশ্লিল বাক্যালাপ করা। দু'হাতের যিনা হল-কাউকে স্পর্শ করা।দু'পায়ের যিনা হল-কোন খারাপ উদ্যশ্যে হাঁটা। মানুষের অন্তর যিনার আকাঙ্ক্ষা করে আর সে আকাঙ্ক্ষাকে যোনাঙ্গ সত্যায়ন করে বা মিথ্যায় পরিনত করে।এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় কুদৃষ্টি দেয়া এটা যিনার অন্তর্ভুক্ত।
 ★এমন কি হাদিস শরীপে কোন মৃত মানুষের দিকে কুদৃষ্টি দেয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে।যেমন এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেন,
(لا تُبْرِزْ فَخِذَكَ وَلاَ تَنْظُرْ إلَى حَيَ وَلاَ مَيّتٍ (أبو داود) ، অর্থাৎ তুমি কখনও তোমার উরুকে কারও সামনে প্রকাশ করিও না এবং কোন জীবিত ও মৃত মহিলার দিকে কুদৃষ্টি দিও না।
★পরিশেষে সকলকে উদাত্ত আহবান জানাব যে, নারী, পুরুষ সকলেই কুদৃষ্টি থেকে নিজের চক্ষুকে হেফাজত করুন।আশা করা যায় এটার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করবে এবং বেহেশতের চিরশান্তিতে জায়গা করে দিবে।যেমন এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, اضْمَنُوا لِي سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمْ الْجَنَّةَ اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا اؤْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ [ أحمد في مسنده وابن حبا
অর্থাৎ তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের প্রতিশ্রুতি দাও, তাহলে আমি তোমাদেরকে বেহেশতের প্রতিশ্রুতি দিব।আর সে প্রতিশ্রুত ছয়টি জিনিস হল-
1-যখন তোমরা কথা বলবে তখন সত্য কথা বলবে।
2-যখন অঙ্গিকার করবে তখন অঙ্গিকার পূরন করবে।
 3-যখন তোমাদের নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হবে তখন তা আদায় করবে।
 4-তোমরা তোমাদের গোপনাঙ্গকে হেফাজত করবে।
5-তোমাদের দৃষ্টিকে কুদৃষ্টি থেকে হেফাজত করবে।
6-এবং তোমাদের হাতকে অন্যায় থেকে বিরত রাখবে।

Sunday, November 6, 2016

অমুসলিম পণ্ডিতদের দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে পথহারা মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য কিছু মহামানবকে বাছাই করেছেন।এসমস্ত মহামানবদেরকেই কোরআন ও হাদিসে নবী ও রাসুল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেহ ছিলেন নির্দিষ্ট জাতির জন্য(যেমন হযরত লুত আঃ ছিলেন তার জাতির হেদায়েতের জন্য)আবার কেহ ছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য(যেমন ইসা আঃ ছিলেন মুহাম্মদ সাঃ এর আসার আগ পর্যন্ত)।তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।আল্লাহ তায়ালা উনাকে সর্বকালের সকল জাতির মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য বাছাই করেছেন।উনার পরে আর কোন নবী রাসুল এ পৃথিবীতে আসবে না।বর্তমানে মুসলমানের মধ্যে নামধারী কিছু সেকুলার বুদ্ধিজীবী বিশ্বনবী নবী সম্পর্কে কিছু বাজে মন্তব্য করে অথচ উনার জ্ঞান,প্রজ্ঞা,দূরদর্শিতা,সততা,আন্তরিকতা,আদর্শ সম্পর্কে যুগে যুগে অমুসলিম মণীষীরা পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।কেনইবা তারা স্বীকার করবেনা কারন তিনি হলেন এই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একান্ত বাছাইকৃত সর্বশ্রেষ্ট মানুষ।রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ সম্পর্কে অমুসলিম পণ্ডিতেরা কি কি মন্তব্য করেছেন, এ সসম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা হল-

★ বিখ্যাত মণীষী'Michael H. Hart' তার লিখিত বই The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,’ .গ্রন্হে উল্লেখ করেন, "মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেকুলার এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যীশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশী।…. আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেকুলার উভয়ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যাক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভুত করেছে।

★ স্কটল্যান্ডের খ্যাতিমান গ্রন্থকার স্যার টমাস কারলাইল (১৭৯৫-১৮৬২ খ্রী:) তাঁর প্রধান গ্রন্থ অনু হিরোস হিরো ওয়ারশিপ এন্ড দি হিরোইন ইন হিসটরীতে লিখেছেন- মহানবীর আগমনে মানুষের সার্বিক অবস্থায় এবং চিন্তাধারায় এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ জাতির এক বিরাট অংশ অন্য কারো কথা অপেক্ষা মুহাম্মদের কথায়ই অধিকতর আস্থাশীল। অন্ধকার হতে আলোর পথের দিশারী হযরত মুহাম্মদ (স.)। তিনি নিজে যা নন তাই হওয়ার জন্য তিনি ভান করতেন না।

★ প্রাচ্য পণ্ডিত গিব তাঁর "মুহাম্মদেনিজম" শীর্ষক ইংরেজী গ্রন্থে বলেছেন, "আজ এটা এক বিশ্বজনীন সত্য যে, মুহাম্মদ নারীদেরকে উচ্চতর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।"

 ★ ফরাসী দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠতম পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদ প্রফেসর লামার্টিন তার 'তুরস্কের ইতিহাস" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, উপায় উপকরণের স্বল্পতা এবং বিস্ময়কর সফলতা এ তিনটি বিষয় যদি মানব প্রতিভার মানদণ্ড হয়, তাহলে ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবকে এনে মুহাম্মদের সাথে তুলনা করবে এমন কে আছে?ঃ দার্শনিক বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, আদর্শ বিজেতা, মানবিক রীতি-নীতির প্রবর্তনকারী এবং একটি ধর্মীয় সাম্রাজ্য ও বিশটি জাগতিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তিনি মুহাম্মদ। তিনি বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, ছেলে মেয়েদের মহান প্রেমিক, তবু বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সবচেয়ে সম্মানিত, সব চেয়ে উন্নত, বরাবর সত্, সর্বদাই সত্যবাদী, শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসী এক প্রেমময় স্বামী, এক হিতৈষী পিতা, এক বাধ্য ও কৃতজ্ঞ পুত্র, বন্ধুত্বে অপরিবর্তনীয় এবং সহায়তায় ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ন, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতাচারী। কঠিন তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনী, কুত্সাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারিতায়, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং নিয়মিত আল্লাহর প্রার্থনা অনুষ্ঠানে এক মহান ধর্ম প্রচারক।"

 ★ ইউরোপের বিশ্ব বিখ্যাত মহাবীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট তার "অটোবায়োগ্রাফী"তে বলেছেন, "আমি আল্লাহর মহিমা কীর্তন করি, এবং পূত চরিত্র ও দিব্য প্রেরণা দীপ্ত মুহাম্মদকে আর পবিত্র কুরআনকে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।"
★Mahatma Gandhi, statement published in ‘Young India,’1924. আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম যিনি আজ লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন।যেকোন সময়ের চেয়ে আমি বেশী নিশ্চিত যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেইসব দিনগুলোতে মানুষের জীবন-ধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, ভয়হীনতা, ঈশ্বর এবং তাঁর(নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এ সব-ই মুসলমানদেরকে সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর ২য় খন্ড বন্ধ করলাম তখন আমি খুব দু:খিত ছিলাম যে এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছু বাকি থাকলো না।

 ★J.W.H. Stab নামে আরেক মণীষী বলেন, "তাঁর কাজের সীমা এবং স্থায়িত্ব বিবেচনা করলে শুধু মক্কার নবী হিসেবে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি আরও দীপ্তিময়ভাবে জ্বলজ্বল করছেন। …..মানুষের বিখ্যাত হওয়ার মাপকাঠি অনুসারে বিচার করলে তাঁর সাথে অন্য কোন মরণশীলের খ্যাতি তুলনীয় হতে পারে কি ?" (Islam and its Founder’)

 ★ Gibbon নামে আরেক মণীষী বলেন, "মুহাম্মদের মহত্বের ধারণা আড়ম্বড়পূর্ণ রাজকীয়তার ধারণাকে অস্বীকার করেছে। স্রষ্টার বার্তাবাহক পারিবারিক গৃহকর্মে নিবেদিত ছিলেন; তিনি আগুন জ্বালাতেন; ঘর ঝাড়ু দিতেন; ভেড়ার দুধ দোয়াতেন; এবং নিজ হাতে নিজের জুতা ও পোষাক মেরামত করতেন। পাপের প্রায়শ্চিত্তের ধারণা ও বৈরাগ্যবাদকে তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁকে কখনো অযথা দম্ভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি, একজন আরবের সাধারণ খাদ্যই ছিলো তাঁর আহার্য।" (‘The Decline and Fall of the Roman Empire’ )

পরিশেষে বলব যে, নবীজির উম্মত হতে পেরে আমরা প্রত্যেকেই ধন্য কারন এই নবীর উম্মত হওয়ার জন্য যুগে যুগে বহু নবী রাসুলেরা পর্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করে ছিলেন।আর যারা নবীজীর বিরোধিতা করেতেছেন আপনারা নবীজীর জীবনীকে ভালবাবে অধ্যয়ন করুন তাহলে আপনাদের সমস্ত উত্তর পেয়ে যাবেন।

Saturday, November 5, 2016

কেয়ামতের আলামত (১ম পর্ব)

আল্লাহ তায়ালা বিশেষ একটি উদ্যেশ্য নিয়ে এই বিশ্বজাহানকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই বিশ্বজাহানের মধ্যে স্বর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে মানবজাতিকে বাছাই করেছেন।মানবজাতির দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসাব নিকাশ করার জন্য একটি দিবসকে নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।সেই নির্দিষ্ট দিবসটিকে কোরআন ও হাদিসের পরিভাষায় কেয়ামত নামে অভিহিত করা হয়েছে।কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে এ পৃথিবীতে কেয়ামতের এমন কিছু আলামত প্রকাশিত হবে, যে আলামতগুলো বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আমাদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।নিম্নে হাদিসের আলোকে কিয়ামতের কিছু আলামত সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
 ★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,
 ﻳﺘﻘﺎﺭﺏ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﻭﻳﻨﻘﺺ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻭﻳﻠﻘﻰ ﺍﻟﺸﺢ ﻭﺗﻈﻬﺮ ﺍﻟﻔﺘﻦ ﻭﻳﻜﺜﺮ ﺍﻟﻬﺮﺝ ﻗﺎﻟﻮﺍﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻳﻢ ﻫﻮ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﺍﻟﻘﺘﻞ
 অর্থাৎ-কেয়ামতের আলামতের মধ্যে কিছু আলামত হচ্ছে-
 *সময় নিকটবর্তী হয়ে যাবে( সময় থেকে বরকত উঠে যাবে)।
 *কোরআন ও হাদিসের উপর আমল কমে যাবে। 
*মানুষের মধ্যে কৃপনতা বেড়ে যাবে।
*ফেতনা ফাসাদ বেড়ে যাবে।
 *এবং হত্যা রাহাজানি প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে।(বুখারি-4452)

 ★অন্য আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, 
 ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠَﺖْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺧَﻤْﺲَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﺼْﻠَﺔً ﺣَﻞَّ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟْﺒَﻼﺀ
 . ﻗِﻴﻞَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻦَّ ؟ ﻗَﺎﻝَ " : ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻤَﻐْﻨَﻢُ ﺩُﻭَﻻ , ﻭَﺍﻷَﻣَﺎﻧَﺔُ ﻣَﻐْﻨَﻤًﺎ , ﻭَﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓُ ﻣَﻐْﺮَﻣًﺎ , ﻭَﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺯَﻭْﺟَﺘَﻪُ , ﻭَﻋَﻖَّ ﺃُﻣَّﻪُ , ﻭَﺑَﺮَّ ﺻَﺪِﻳﻘَﻪُ , ﻭَﺟَﻔَﺎ ﺃَﺑَﺎﻩُ , ﻭَﺃُﻛْﺮِﻡَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣَﺨَﺎﻓَﺔَ ﺷَﺮِّﻩِ , ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺯَﻋِﻴﻢُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﺃَﺭْﺫَﻟَﻬُﻢْ , ﻭَﺍﺭْﺗَﻔَﻌَﺖِ ﺍﻷَﺻْﻮَﺍﺕُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪِ , ﻭَﺷُﺮِﺏَ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮُ , ﻭَﻟُﺒِﺲَ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮُ , ﻭَﺍﺗُّﺨِﺬَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻥُ , ﻭَﺍﺗُّﺨِﺬَ ﺍﻟْﻤَﻌَﺎﺯِﻑُ , ﻭَﻟَﻌَﻦَ ﺁﺧِﺮُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻷُﻣَّﺔِ ﺃَﻭَّﻟَﻬَﺎ , ﻓَﻠْﻴَﺮْﺗَﻘِﺒُﻮﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺛَﻼﺛًﺎ : ﺭِﻳﺤًﺎﺣَﻤْﺮَﺍﺀَ ,ﻭَﺧَﺴْﻔًﺎ ,ﻭَﻣَﺴْﺨم 
অর্থাৎ যখন আমার উম্মতেরা পঁনেরটি কাজ করা শুরু করবে তখন একের পর এক বালা মুসিবত শুরু হয়ে যাবে।সাহাবিরা রাসুল (সাঃ)কে প্রশ্ন করল,হে আল্লাহর রাসুল (সা:) সে পঁনেরটি কাজ কি কি?তখন রাসুল (সাঃ) বললেন,পঁনেরটি কাজ হল- 
1-যখন গনিমতকে বা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজস্ব সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
 2-আমানতকে মনে করা হবে গণিমত।অর্থাৎ আমানতের খেয়ানত করা হবে। 
3-জাকাত দেয়াকে মনে করা হবে জরিমানা।
 4-পুরুষ তার স্ত্রীর কথা মান্য করবে কিন্তু তার মায়ের কথা অমান্য করবে ।
 5-মানুষ তার বন্ধুর সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করবে।
 6-কিন্তু তার পিতার সাথে দূর্বব্যবহার করবে।
 7-মানুষকে শ্রদ্ধা করা হবে তার ক্ষতি থেকে বাচার জন্য।
 8-জাতির নেতৃত্ব দিবে তারা, যারা জাতির মধ্যে কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী অত্যধিক নিকৃষ্ট। 9-মসজিদগুলোর মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু হয়ে যাবে অর্থাৎ দুনিয়াবী কথাবার্তা।
 10-মদ পান প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে।
 11-রেশমির সুতার কাপড় পরিধান করা শুরু করবে।
 12-বিভিন্ন ধরনের গায়ক গায়িকাদের আভির্বাব হবে।
 13-বিভিন্ন ধরেনের বাদ্যযন্ত্রের আভির্বাব হবে। 
14-উম্মতের শেষ সময়ের লোকেরা পূর্ববর্তী সময়ের নেককার লোকদের সমালোচনা করবে।
 যে সময় এ সমস্ত আলামতগুলো প্রকাশ পাবে,সেসময়ে তারা যেন তিনটি বড় ধরনের শাস্তির অপেক্ষা করে।আর সে তিনটি শাস্তি হল-
 ক-ঘু্র্নিঝড়। 
খ-ভুমিধ্বস ।
গ-আকৃতি পরিবর্তন।নাউজুবিল্লাহ!(তিরমিজি2/33)
 এ হাদিসখানায় কেয়ামতের পঁনেরটি আলামতের কথা বলা হয়েছে যেগুলো আমাদের সামনে অহরহ দেখা যাচ্ছে। 

★অপর আরেক হাদিসে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে বিশ্বনবী (সাঃ) ইরশাদ করেন,
 ﻳﻮﺷﻚ ﺃﻥ ﻳﺄﺗﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺯﻣﺎﻥ ﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺇﻻ ﺍﺳﻤﻪ ، ﻭﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺇﻻ ﺭﺳﻤﻪ ، ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻋﺎﻣﺮﺓ ﻭﻫﻲ ﺧﺮﺍﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﻬﺪﻯ ، ﻋﻠﻤﺎﺅﻫﻢ ﺷﺮ ﻣَﻦ ﺗﺤﺖ ﺃﺩﻳﻢ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ، ﻣِﻦ ﻋﻨﺪﻫﻢ ﺗﺨﺮﺝ ﺍﻟﻔﺘﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﻢ ﺗﻌﻮﺩ ‏ 
অর্থাৎ-মানুষের উপরে এমন একটি সময় আসতেছে যে সময় ইসলামের নাম ব্যতিত কোন বিধানাবলী মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা। কোরআনের পৃষ্ঠা ব্যতিত কোরআনের কোন আমল মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা।ঐ সময়ে মসজিদগুলো হবে জাকজমকপূর্ণ পূর্ণ কিন্তুু এগুলো হবে হেদায়াতশুন্য (মসজিদে মুসল্লি পাওয়া যাবে না বা প্রকৃত মুসল্লি পাওয়া যাবে না।) ঐ সময়ে বহু আলেম হবে মানুষের নিকট হেয়।তাদের থেকে যাবতীয় ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং সে ফেতনার দায়ভারও তাদেরকে বহন করতে হবে। (4/227ﺍﺑﻦ ﻋﺪﻱ ﻓﻲ " ﺍﻟﻜﺎﻣﻞ ) 
 এই হাদিসখানাও কেয়ামতের যে সমস্ত আলামতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো অনেকটাই আমাদের সামনে দৃশ্যমান।

 ★অারেকখানা হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কেয়ামতের আলামতের আলামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻹِﺳْﻼﻡُ ﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ، ﻭَﺳَﻴَﻌُﻮﺩُ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃَﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ﻓَﻄُﻮﺑَﻰ ﻟِﻠْﻐُﺮَﺑَﺎﺀ
 অর্থ-ইসলামের আগমন শুরু হয়েছে গরিবি অবস্হায়। অচিরেই কেয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসতেছে যে সময় ইসলাম আবার আগের অবস্হায় ফিরে যাবে অর্থাৎ ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের সংখ্যা কমে যাবেসে গরিবি অবস্হায় যারা কোরআন ও হাদিসের উপর কায়েম থাকতে পারবে তাদের জন্য সুসংবাদ।সুবহানাল্লাহ!(মুসলিম শরীপ হাদিস নং145)
এ হাদিসে কিয়ামতের আলামত হিসেবে বলা হয়েছে যে,ইসলামের প্রকৃত অনুসারীর সংখ্যা প্রাথমিক অবস্হায় ফিরে আসবে।বর্তমানে আমরা দেখতেছি যে,সাহাবিদের যে ইমান ছিল সে ধরনের মুমিন পাওয়া বড়ই অপ্রতুল। 
পরিশেষে বলতে চাই যে,কেয়ামতের যে সমস্ত আলামতের কথা নবীজি বলে গেছেন সেগুলো নিঃসন্দেহে ঘটবে কেননা নবীজি যা বলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলে থাকেন কিন্তু কেয়ামতের কোন আলামত যাতে আমাদের মাধ্যমে প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।লেখাটি পড়ে ভাল লাগলে অনুরোধ থাকবে অন্যকে শেয়ার করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেন।এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবে। (চলবে----------)

Friday, November 4, 2016

কেমন নারীদেরকে বিয়ে করবেন?

সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালা নর ও নারীর মধ্যে করে দিয়েছেন এক বিশেষ আকর্ষন।যে আকর্ষনের প্রভাবেই তারা পরস্পরের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে অথবা বিভিন্ন কুকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।বর্তমানে এ ফেতনার জামানায় একজন স্বতিসাদ্দী নারী খুজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর হয়ে গেছে।পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সতীসাদ্দী নারীদের কিছু বিশেষ গুনাগুন উল্লেখ করা হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল-
★আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের 21নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
, ﻭَﻣِﻦْ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻥْ ﺧَﻠَﻖَ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ ﻟِﺘَﺴْﻜُﻨُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْﻣَﻮَﺩَّﺓً ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ‏
অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শনের মধ্য একটি নিদর্শন হচ্ছে,তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের দ্বারা প্রশান্তি লাভ করতে পার এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক মহব্বত ও রহমত ঢেলে দিয়েছেন।
উপরের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে,যে সমস্ত মহিলাদের সোন্দর্য,কথাবার্তা,ও চরিত্র দ্বারা পুরুষরা মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করে এ সমস্ত মহিলারা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিদর্শন।

★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻣﺘﺎﻉ ﻭﺧﻴﺮ ﻣﺘﺎﻉ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﺔ অর্থ এ পৃথিবীর সমস্ত নেয়ামতই সম্পদ।আর এ সম্পদগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে একজন নেককার স্ত্রী (মুসলিম শরীপ1467) এ হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে একজন নেককার মহিলা মুসলিম পুরুষদের জন্য এ দুনিয়ায় সবচেয়ে দামি সম্পদ।

★শুধু তাই নয় রাসুলুল্লাহ (সা:) এক হাদিসে একজন নেককার রমনীকে তাকওয়ার পর দুনিয়ায় সর্বোত্তম জিনিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।যেমন রাসুলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন,
 ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻔﺎﺩ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺑﻌﺪ ﺗﻘﻮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺧﻴﺮﺍ ﻣﻦ ﺯﻭﺟﺔ ﺻﺎﻟﺤﺔ، ﺇﻥ ﺃﻣﺮﻫﺎ ﺃﻃﺎﻋﺘﻪ، ﻭﺇﻥ ﻧﻈﺮ ﺇﻟﻴﻬﺎ ﺳﺮﺗﻪ، ﻭﺇﻥ ﺃﻗﺴﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺃﺑﺮﺗﻪ، ﻭﺇﻥ ﻏﺎﺏ ﻋﻨﻬﺎ ﻧﺼﺤﺘﻪ ﺃﻭ ﺣﻔﻈﺘﻪ ﻓﻲ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻭﻣﺎﻟﻪ (ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ 1857)
অর্থাৎ-তাকওয়ার পর একজন মুমিনের নিকট কল্যানময় জিনিস হচ্ছে,একজন নেককার মহিলা অর্থাৎ যে মহিলার ভিতরে চারটি গুন পাওয়া যাবে।যথা-
 1-যদি তাকে স্বামী কোন নেক কাজের নির্দেশ দেয় তার সামর্থ অনুযায়ি স্বামীর নির্দেশকে মান্য করে।
 2-যদি তার দিকে স্বামী দৃষ্টি দেয়,(তার সোন্দর্য,ব্যবহার,ও কথাবার্তায় )স্বামীকে আনন্দিত করে।
 3-যদি স্বামী তার কাছে কোন কিছু চায় তার সাধ্যানুযায়ী স্বামীর চাহিদাকে পুরন করে।
4-আর স্বামী যদি কখনও তার থেকে অনুপস্থিত থাকে,তার অনুপস্থিতে ঐ মহিলা তার নিজের ইজ্জত আব্রু ও স্বামীর সম্পদের হেফাজত করে।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই বিয়ে সাদী করার সময় চিন্তাভাবনা করা উচিৎ যে,কোন ধরনের মহিলাদেরকে আমরা নিজের সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহন করতেছি।সে কি নেককার নাকি বদকার?
রাসুলুল্লাহ (সা:) এক হাদিসে ইরশাদ করেন,
 ﺗُﻨْﻜَﺢُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻟِﺄَﺭْﺑَﻊٍ : ﻟِﻤَﺎﻟِﻬَﺎ ، ﻭَﻟِﺤَﺴَﺒِﻬَﺎ ، ﻭَﻟِﺠَﻤَﺎﻟِﻬَﺎ ، ﻭَﻟِﺪِﻳﻨِﻬَﺎ ﻓَﺎﻇْﻔَﺮْ ﺑِﺬَﺍﺕِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﺪَﺍ
অর্থাৎ মহিলাদেরকে চারটি দিক বিবেচনা করে বিয়ে করা হয়। যথা-
1-তার ধন সম্পদকে বিবেচনা করে।
2-তার বংশ মর্যাদাকে বিবেচনা করে।
 3-তার সোন্দর্যকে বিবেচনা করে।
 4-তার ধার্মিকতাকে বিবেচনা করে। তুমি ধার্মিকতার দিকটি বেশি গুরুত্ব দাও এটার বিনিময়ে তোমার জীবন সোভাগ্যবান হবে।(বুখারী শরীপ হাদিস নং 4802)
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে,বিয়ে সাদীর সময় আমাদেরকে অন্যান্য গুনের পাশাপাশি ধার্মিকতার দিকটি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় আমাদের জীবন সৌভাগ্যবান হবে।আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে একজন নেককার স্ত্রী অর্জন করার তাওফিক দান করুক!আমিন!

Wednesday, November 2, 2016

ইমামের পিছনে মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে।

বর্তমানে একদল লোককে বলতে শুনা যায় যে, নামাজের ভিতরে মুক্তাদি সুরা ফাতিহা পাঠ না করলে তার নামাজই হবে না। আসুন আমরা দেখি, তাদের এ কথাটি কতটুকু কোরআন ও হাদিস সম্মত?নামাজের ভিতরে মুক্তাতির সুরা ফাতিহা পাঠ করার হুকুম সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদেরকে সর্বপ্রথম কয়েকটি বিষয় বুঝতে হবে।যথা-
 1-একাকি নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করার হুকুম।
2-জামাতে নামাজ পড়ার সময় ইমামের সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম।
3-জামাতে নামাজ পড়ার সময় মুক্তাতির সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম।3 নং মাসআলাটি আবার দুভাবে বিভক্ত।যথা-
ক-জাহরি নামাজে(যে নামাজে ইমাম কেরাত জোরে পড়ে)মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম ।
খ-সিররি নামাজে(যে নামাজে ইমাম কেরাত আস্তে পড়ে)মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম।

★1ও 2 নং মাসআলায় সকল আলেম একমত যে,এ অবস্হায় সুরা ফাতিহা অবশ্যই পাঠ করতে হবে ।সুরা ফাতিহা ব্যতিত তাদের নামাজই হবে না।দলিল-বুখারি শরীপের নিন্মোক্ত হাদিস -
 ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺑﻦ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺻﻼﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ
অর্থ- হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:)থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসুল (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি সুরা ফাতিহা পড়বেনা তার নামাজই হবে না।(বুখারি শরীপ723নং)

 **3নং মাসআলার ক অর্থাৎ (যে নামাজে ইমাম কেরাত জোরে পড়ে যেমন ফজর,মাগরিব,ও এশার নামাজ) এ মাসআলায়ও সকল আলেম একমত যে,জাহরি নামাজে ইমামের কেরাত শুনা অবস্হায় মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা লাগবে না।দলিল পবিত্র কোরআনের সুরা আনকাবুতের 204 নং আয়াত- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
 " ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﺎﺳﺘﻤﻌﻮﺍ ﻟﻪ ﻭﺃﻧﺼﺘﻮﺍ ﻟﻌﻠﻜﻢ ﺗﺮﺣﻤﻮﻥ "
অর্থ: আর যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয়।
এ আয়াত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য তাফসীরে তাবারী (৯খ. ১০৩পৃ.) ও তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২খ. ২৮পৃ.) এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে-
 ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﺎﺳﺘﻤﻌﻮﺍ ﻟﻪ ﻭﺃﻧﺼﺘﻮﺍ ﻟﻌﻠﻜﻢ ﺗﺮﺣﻤﻮﻥ " ﻳﻌﻨﻲ ﻓﻲ
 ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻔﺮﻭﺿﺔ
অর্থ : যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয় অর্থাৎ ফরজ নামাযে। হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর মতও তাই।
তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে
: ﺻﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ، ﻓﺴﻤﻊ ﺃﻧﺎﺳﺎ ﻳﻘﺮﺀﻭﻥ ﻣﻊ ﺍﻻﻣﺎﻡ، ﻓﻠﻤﺎ ﺍﻧﺼﺮﻑ، ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﺎ ﺁﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ
 ﺗﻔﻘﻬﻮﺍ ؟ ﺃﻣﺎ ﺁﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ ﺗﻌﻘﻠﻮﺍ ؟ ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﺎﺳﺘﻤﻌﻮﺍ ﻟﻪ ﻭﺃﻧﺼﺘﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﺃﻣﺮﻛﻢ ﺍﻟﻠﻪ
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রা. নামায পড়ছিলেন, তখন কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন : তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বোঝার সময় হয় নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (৯ খ. ১০৩ পৃ.)

★ 3নং মাসআলার খ অর্থাৎ (যে নামাজে ইমাম কেরাত আস্তে পড়ে যেমন জোহর ও আসরের নামাজ)এ মাসআলায় আলিমগন দুভাবে বিভক্ত হয়ে গেছেন।যথা-
(ক)ইমাম শাফেয়ি ( রঃ)সহ একদল আলিমের মতে এ সমস্ত নামাজে মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।এ দলের প্রবক্তাদের নিকট এমন কোন স্পষ্ট মারফু সহীহ হাদিস নেই, যে হাদিসে রাসুলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে,ইমামের পিছনে মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।তারা সহীহ মুসলিমের যে হাদিসখানা পেশ করে এ হাদিসখানা হচ্ছে মাউকুফ হাদিস।
(খ)ইমাম আবু হানিফা (র:)সহ একদল আলিমের মতে,এ সমস্ত নামাজে (যে নামাজে ইমাম কেরাত আস্তে পড়ে)মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব নয়।তারা তাদের মতের সমর্থনে নিন্মোক্ত দলিলগুলি পেশ করেন-
*হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. বলেছেন
, ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﺫﺍ ﻗﺮﺃ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺄﻧﺼﺘﻮﺍ، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﻌﺪﺓ ﻓﻠﻴﻜﻦ ﺃﻭّﻝ ﺫﻛﺮ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺍﻟﺘﺸﻬﺪ . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ (৪০৪)
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম কুরআন পড়বে, তোমরা তখন চুপ করে থাকবে। আর বৈঠকের সময় তাশাহহুদ-ই প্রথম পড়তে হবে। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪০৪
*হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন,
 ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟُﻌِﻞَ ﺍﻹِﻣَﺎﻡُ ﻟِﻴُﺆْﺗَﻢَّ ﺑِﻪِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻓَﻜَﺒِّﺮُﻭﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃَ ﻓَﺄَﻧْﺼِﺘُﻮﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪ
অর্থ রাসুলু্ল্লাহ (সাঃ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম নিয়োগ করার উদ্দেশ্য তাকে অনুসরণ করা । সুতরাং সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তখন তাকবীর বলবে। আর যখন কুরআন পড়বে, তখন তোমরা নীরব থাকবে। যখন সে ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ বলবে, তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ বলবে। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৬০৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৯২২-৯২৩
*হযরত জাবির( রাঃ)থেকে বর্নিত,
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺇﻣﺎﻡ ﻓﻘﺮﺍﺀﺓ ﺍﻹﻣﺎﻡ
 ﻟﻪ ﻗﺮﺍﺀﺓ
অর্থাৎ হযরত যাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তির ইমাম রয়েছে(অর্থাৎ যে ইমামের পিছনে নামায পড়বে) তার ইমামের কিরাতই তার কিরাতের জন্য যথেষ্ট হবে(রুহুল মাআনি9/151সুরা আল আরাপ আয়াত নং204 এর তাফসীর)
 এ হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ এবং অত্র মাসআলায় সর্বাধিক সুস্পষ্ট।
হাদীসটির মাঝে একটি মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায (জিহরী) বা সরব হোক অথবা (সীররী) নীরব হোক সর্বাবস্থায় ইমামের কিরাতই মুক্তাদীর কিরাতের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং মুক্তাদীর কিরাত পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। উপরোক্ত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে ,ইমামের কেরাত পড়ার সময় মুক্তাদি চুপ থাকবে । উল্লেখ্য কেরাত বলতে বুঝায় কোরআনের যেকোন আয়াতের তেলাওয়াতকে। চাই তা সুরা ফাতিহা হোক অথবা অন্য কোন আয়াত হোক।
* অপর হাদিসে বর্নিত আছে:-
 ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ‏(ﺭﺽ ‏) ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﯽ ﺳﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ صلي ﺭﮐﻌۃ ﻟﻢ ﯾﻘﺮﺍ ﻓﯿﮭﺎ ﺑﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻠﻢ ﯾصل ﺍﻻ ﺍﻥ ﯾﮑﻮﻥ ﻭﺭﺍﺀ ﺍﻻﻣﺎم
অর্থাৎ হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক রাকাত নামাজ আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পড়ল না সে যেন নামাযই পড়ল না। তবে ইমামের পিছনে থাকলে ভিন্নকথা তখন ফাতিহা পড়া লাগবে না।(তিরমিজি হাদিস নং 310)ইমাম তিরমিজি( রঃ)হাদিসখানা উল্লেখ করার পর বলেছেন হাদিসখানা হাসান, সহীহ। 
 এরকম আরও আরও অসংখ্য দলিল রয়েছে যেগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে মুক্তাদি ইমামের পিছনে কোন ধরনের কিরাত পড়া লাগবেনা ।আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি অনেক দলিল উল্লেখ করিনি।আল্লাহ তায়ালা এ ফেতনার জামানায় সমস্ত প্রকার বিভাজন দুর করে আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে চলার তাওফিক দান করুক!আমিন!

Tuesday, November 1, 2016

জয়িপ হাদিস কি সর্বাবস্হায় পরিত্যাজ্য?

বর্তমান এমন কিছু লোককে দেখা যায় যে ,যারা জয়িপ হাদিসের কথা শুনলেই বলে থাকে জয়িপ হাদিসের উপর আমল করা জায়েয নেই।এমনকি তারা এরকম কথাও বলে থাকে যে জয়িপ হাদিস মানেই হল মাউজু।অথচ জয়িপ ও মাউজু হাদিসের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।মাউজু হল রাসুলের শানে একেবারে ডাহা মিথ্যা অপবাদ আর জয়িপ হল রাসুলের হাদিস তবে উক্ত হাদিসের রাবীর গুনের মধ্যে ত্রুটি থাকার কারনে উক্ত হাদিসকে জয়িপ বলা হয়।আসুন আমরা জয়িপ হাদিস সম্পর্কে হাদিস বিশারদগন কি মন্তব্য করেছেন সে সম্পর্কে জেনে নিই তাহলে আমাদের সমস্ত সংশয় দুর হয় যাবে। ★ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺣْﻤَﺪُ : ﺇﺫَﺍ ﺭَﻭَﻳْﻨَﺎ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻼﻝِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﺷَﺪَّﺩْﻧَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺳَﺎﻧِﻴﺪِ . ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﻭَﻳْﻨَﺎ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺎﻝِ، ﻭَﻣَﺎ ﻻ ﻳَﻀَﻊُ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻭَﻻ ﻳَﺮْﻓَﻌُﻪُ ﺗَﺴَﺎﻫَﻠْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺳَﺎﻧِﻴﺪِ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺨﻄﻴﺐ ﺑﺴﻨﺪﻩ ﻓﻲ "ﺍﻟﻜﻔﺎﻳﺔ ﺹ 134" অর্থাৎ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)বলেন,যখন আমরা রাসুল (সাঃ) থেকে হালাল ও হারাম বিষয়ে কোন হাদিস বর্ণনা করি তখন আমরা উক্ত হাদিসের সনদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করি আর যখন আমলের ফজিলতের ব্যাপারে কোন হাদিস বর্ণনা করি অথবা এমন কোন হাদিস বর্ণনা করি যা দ্বারা কোন বিধান সাব্যস্ত হয়না এমন হাদিসের সনদের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করি।অর্থাৎ ফজিলতের ব্যাপারে হাদিস জয়িপ হলেও সমস্যা নেই। ★ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﻟﺴﺨﺎﻭﻱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ : " ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻤﻐﻴﺚ )" 1/287 ‏) :" ﻭﻛﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﺗﻠﻘﺖ ﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺣﺘﻰ ﺃﻧﻪ ﻳﻨﺰﻝ ﻣﻨﺰﻟﺔ ﺍﻟﻤﺘﻮﺍﺗﺮ ﻓﻲ ﺃﻧﻪ ﻳﻨﺴﺦ ﺍﻟﻤﻘﻄﻮﻉ ﺑﻪ؛ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ : " ﻻﻭﺻﻴﺔ ﻟﻮﺍﺭﺙ " : ‏( ﺇﻧﻪ ﻻﻳﺜﺒﺘﻪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻌﺎﻣﺔ ﺗﻠﻘﺘﻪ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻭﻋﻤﻠﻮﺍ ﺑﻪ ﺣﺘﻰ ﺟﻌﻠﻮﻩ ﻧﺎﺳﺨﺎ ﻵﻳﺔ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ ﻟﻪ ‏) অর্থাৎ হাফেজ সাখাবি( রঃ)বলেন,যখন মুসলিম উম্মত কোন জয়িপ হাদিসকে গ্রহন করে নেয় তখন এ হাদিসের উপর সহীহের মত আমল করা হবে এমনকি এরকম হাদিস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পোঁছে যায়।একারনেই ইমাম শাফেয়ি (রঃ) 'ওয়ারিসদের জন্য কোন অসিয়ত নেই'এ হাদিসের ব্যাপারে বলেছেন যে, এ হাদিসখানানার সনদ যদিও জয়িপ কিন্তুু হাদিসখানাকে উম্মত কবুল করা ও আমল করার কারনে হাদিসখানা অসিয়তের আয়াতকে রহিত করে দিয়েছে। ★ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ ﺹ36 ﻃﺒﻌﺔ ﺩﺍﺭ ﺍﻟﻤﻨﻬﺎﺝ . )) ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ : ﻳﺠﻮﺯ ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻀﺎﺋﻞ ﻭﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ﺑﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻣﺎﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻮﺿﻮﻋﺎً ( অর্থাৎ ইমাম নববী( রঃ) বলেন,"মুহাদ্দিস ফুকাহা এবং অন্যান্য আলেমগন বলেন,(ফজিলত উৎসাহদান ভীতিপ্রদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জয়িপ হাদিস দ্বারা আমল জায়েয ও মুস্তাহাব হবে যতক্ষন তা মাউজুর পর্যায়ে উপনীত না হয়" ★ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻟﻌﺴﻘﻼﻧﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ‏( ﺍﻟﻨﻜﺖ ﻋﻠﻰ ﻣﻘﺪﻣﺔ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺼﻼﺡ ‏) ﺝ1 ﺹ 243 ﻣﺎ ﻧﺼﻪ : )) ﻭﻗﺪ ﺻﺮَّﺡ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻄﺎﻥ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﺤﻔﺎﻅ ﺍﻟﻨﻘﺎﺩ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ‏( ﺑﻴﺎﻥ ﺍﻟﻮﻫﻢ ﻭﺍﻹﻳﻬﺎﻡ ‏) ﺑﺄﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﺴﻢ - ﺃﻱ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﺃﻭ ﺍﻟﻤﻨﻘﻄﻊ . . . - ﻻ ﻳﺤﺘﺞ ﺑﻪ ﻛﻠﻪ ﺑﻞ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﻭﻳﺘﻮﻗﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺍﻷﺣﻜﺎﻡ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻛﺜﺮﺕ ﻃﺮﻗﻪ ﺃﻭ ﻋﻀﺪﻩ ﺍﺗﺼﺎﻝ ﻋﻤﻞ ﺃﻭ ﻣﻮﺍﻓﻘﺔ ﺷﺎﻫﺪ ﺻﺤﻴﺢ ، ﺃﻭ ﻇﺎﻫﺮ ﻗﺮﺁﻥ . - ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻣﺒﺎﺷﺮﺓ - : ﻭﻫﺬﺍ ﺣﺴﻦ ﻗﻮﻱ ﺭﺍﻳﻖ ﻣﺎ ﺃﻇﻦ ﻣﻨﺼﻔﺎً ﻳﺄﺑﺎﻩ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﻮﻓﻖ অর্থ -হাফেজ ইবনে হাজার আসকালিন (রঃ)বলেন,আবুল হাসান ইবনে কাত্তান স্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে,জয়িপ সকল ক্ষেত্রে দলিলযোগ্য নয় তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য,আহকামের ক্ষেত্রে তখন আমলযোগ্য হবে যখন হাদিস বিভিন্ন সুত্রে বর্নিত হবে অথবা হাদিসটির উপরে নববী যুগ থেকে আমল বিদ্যমান থাকে অথবা হাদিসটির সমর্থনে যদি কোন সহীহ হাদিস বিদ্যমান থাকে অথবা কোরআনের কোন সুস্পষ্ট আয়াত থাকে তখন জয়িপ হাদিসের উপরে আমল জায়েয হবে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে,ফজিলত ভয়ভীতি উৎসাহ দান ইত্যাদি ক্ষেত্রে জয়িপ হাদিসের উপরে মুতলাক আমল জায়েয।আর কোন বিধিবিধান সাব্যস্ত করতে চাইলে জয়িপ হাদিসের উপর শর্ত সাপেক্ষে আমল জায়েয।