Monday, November 14, 2016

নারীদের দিকে কূদৃষ্টি দেওয়ার হুকুম।

ইসলাম হল বিশ্বজাজানের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কতৃক এমন একটি পুতঃপবিত্র ও বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম,যে ধর্মে সমস্ত অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।নারীদেরকে ইসলাম দুনিয়ার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছেন।নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন নারীর দিকে কুদৃষ্টি দেওয়াকে ইসলামে মারাত্নকভাবে নিষেধ করা হয়েছে।কোরআন ও হাদিসে নারীদের দিকে কুদৃষ্টি দেওয়ার হুকুম সম্পর্কে কি বলা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল-
★আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা নুরের 30 নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
 ﻗُﻞ ﻟِّﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺯْﻛَﻰ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ
অর্থাৎ হে নবী (সাঃ),আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন,তারা যেন তাদের চক্ষুকে পর নারী থাকে অবনত রাখে এবং তাদের চতরকে হেফাজত করে।এভাবে চলাই হল তাদের জন্য পবিত্রতম।আর নিশ্চয় তারা যাই করুক না কেন আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত।অত্র আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের থেকে চক্ষু অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।সুতরাং যারা নারীদের দিকে কুদৃষ্টি দিবে তারা প্রকারান্তরে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করল।
 ★কোরআন শরীপের সুরা ইয়াসিনের 65 নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﺨْﺘِﻢُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﻜَﻠِّﻤُﻨَﺎ
 ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺗَﺸْﻬَﺪُ ﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ
অর্থাৎ আজকে (হাশরের মাঠে)আমি তাদের মুখের উপরে মোহর মেরে দিব আর তাদের হাত কথা বলা শুরু করবে এবংতাদের দুপা যা যা করছে সব কিছেু তাদের বিপক্ষ স্বাক্ষ দেওয়া শুরু করবে।এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, কিয়ামতের মাঠে মানুষের অঙ্গ -প্রতঙ্গ মানুষের বিপক্ষে স্বাক্ষ দিবে।সুতরাং আমরা যদি কোন নারীর দিকে কুদৃষ্টি দিই তাহলে কিয়ামতের মাঠে এই চক্ষু আমাদের বিপক্ষে স্বাক্ষ দিবে।
★অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
 ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊَ ﻭَﺍﻟْﺒَﺼَﺮَ ﻭَﺍﻟْﻔُﺆَﺍﺩَ ﻛُﻞُّ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺴْﺌُﻮﻟًﺎ (( ‏[ ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ 36: ‏]
অর্থাৎ নিশ্চয় তোমাদের চক্ষু, কর্ণ,এবং প্রত্যকেই কেয়ামতের মাঠে জিজ্ঞাসিত হবে।সুতরাং যারা কদৃষ্টি দেয় তাদের একটু চিন্তা ভাবনা করা উচিৎ হাশরের মাঠে আল্লাহ তাদের চক্ষু সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তারা কি উত্তর দিবে?
 ★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাদিস শরীপে ইরশাদ করেন,
 إِنَّ النَّظْرَةَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ إِبْلِيسَ مَسْمُومٌ ، مَنْ تَرَكَهَا مَخَافَتِي
 أَبْدَلْتُهُ إِيمَانًا يَجِدُ حَلاوَتَهُ فِي قَلْبِه ( المعجم الكبيرِ " 10215)
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় কুদৃষ্টি ইবলিসের বিষাক্ত তীর হইতে একটি তীর।যে ব্যক্তি শুধু আমার ভয়ে কুদৃষ্টি পরিত্যাগ করল আমি তাকে এমন ইমান দিব, যে ইমানের সাধ তার অন্তরে খুব বেশি অনুভব করবে।এই হাদিসে কুদৃষ্টিকে ইবলিসের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।নাউজুবিল্লাহ!
 ★আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন,
 ﻣﻦ ﻧﻈﺮَ ﺇﻟﻰ ﻣﺤﺎﺳﻦِ ﺍﻣﺮﺃﺓٍ ﺃﺟﻨﺒﻴﺔٍ ﻋﻦ ﺷﻬﻮﺓٍ ﺻُﺐَّ ﻓﻲ ﻋﻴﻨﻴﻪِ ﺍﻵَﻧُﻚ ﻳﻮﻡَ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔِ ﺍﻟﺮﺍﻭﻱ : - (ﺍﻟﺪﺭﺍﻳﺔ -ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ﺃﻭ ﺍﻟﺮﻗﻢ : 2/225)
 অর্থাৎ-যে ব্যক্তি কোন বেগানা নারীর সোন্দর্যের দিকে কুদৃষ্টি দেয় আল্লাহ তায়ালা এটার বিনিময়ে কেয়ামতের মাঠে তার দুচোখে শিষা গলিয়ে লাগিয়ে দিবে। নাউজুবিল্লাহ!
 ★সহীহ মুসলিমের একখানা হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন,
 فالعينان زناهما النظر ، والأذنان زناهما الاستماع ، واللسان زناه الكلام ، واليدان تزنيان وزناهما البطش ، والرجلان تزنيان وزناهما المشي ، والقلب يهوى ويتمنى ، ويصدق ذلك الفرج ، أو يكذبه
 অর্থাৎ-মানুষের দু'চোখের যিনা হল-কুদৃষ্টি দেয়া। আর দু'কানের যিনা হল-অশ্লিল কথা শ্রবন করা।আর জিহ্বার যিনা হল-অশ্লিল বাক্যালাপ করা। দু'হাতের যিনা হল-কাউকে স্পর্শ করা।দু'পায়ের যিনা হল-কোন খারাপ উদ্যশ্যে হাঁটা। মানুষের অন্তর যিনার আকাঙ্ক্ষা করে আর সে আকাঙ্ক্ষাকে যোনাঙ্গ সত্যায়ন করে বা মিথ্যায় পরিনত করে।এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় কুদৃষ্টি দেয়া এটা যিনার অন্তর্ভুক্ত।
 ★এমন কি হাদিস শরীপে কোন মৃত মানুষের দিকে কুদৃষ্টি দেয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে।যেমন এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেন,
(لا تُبْرِزْ فَخِذَكَ وَلاَ تَنْظُرْ إلَى حَيَ وَلاَ مَيّتٍ (أبو داود) ، অর্থাৎ তুমি কখনও তোমার উরুকে কারও সামনে প্রকাশ করিও না এবং কোন জীবিত ও মৃত মহিলার দিকে কুদৃষ্টি দিও না।
★পরিশেষে সকলকে উদাত্ত আহবান জানাব যে, নারী, পুরুষ সকলেই কুদৃষ্টি থেকে নিজের চক্ষুকে হেফাজত করুন।আশা করা যায় এটার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করবে এবং বেহেশতের চিরশান্তিতে জায়গা করে দিবে।যেমন এক হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন, اضْمَنُوا لِي سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمْ الْجَنَّةَ اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا اؤْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ [ أحمد في مسنده وابن حبا
অর্থাৎ তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের প্রতিশ্রুতি দাও, তাহলে আমি তোমাদেরকে বেহেশতের প্রতিশ্রুতি দিব।আর সে প্রতিশ্রুত ছয়টি জিনিস হল-
1-যখন তোমরা কথা বলবে তখন সত্য কথা বলবে।
2-যখন অঙ্গিকার করবে তখন অঙ্গিকার পূরন করবে।
 3-যখন তোমাদের নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হবে তখন তা আদায় করবে।
 4-তোমরা তোমাদের গোপনাঙ্গকে হেফাজত করবে।
5-তোমাদের দৃষ্টিকে কুদৃষ্টি থেকে হেফাজত করবে।
6-এবং তোমাদের হাতকে অন্যায় থেকে বিরত রাখবে।

Sunday, November 6, 2016

অমুসলিম পণ্ডিতদের দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে পথহারা মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য কিছু মহামানবকে বাছাই করেছেন।এসমস্ত মহামানবদেরকেই কোরআন ও হাদিসে নবী ও রাসুল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেহ ছিলেন নির্দিষ্ট জাতির জন্য(যেমন হযরত লুত আঃ ছিলেন তার জাতির হেদায়েতের জন্য)আবার কেহ ছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য(যেমন ইসা আঃ ছিলেন মুহাম্মদ সাঃ এর আসার আগ পর্যন্ত)।তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।আল্লাহ তায়ালা উনাকে সর্বকালের সকল জাতির মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য বাছাই করেছেন।উনার পরে আর কোন নবী রাসুল এ পৃথিবীতে আসবে না।বর্তমানে মুসলমানের মধ্যে নামধারী কিছু সেকুলার বুদ্ধিজীবী বিশ্বনবী নবী সম্পর্কে কিছু বাজে মন্তব্য করে অথচ উনার জ্ঞান,প্রজ্ঞা,দূরদর্শিতা,সততা,আন্তরিকতা,আদর্শ সম্পর্কে যুগে যুগে অমুসলিম মণীষীরা পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।কেনইবা তারা স্বীকার করবেনা কারন তিনি হলেন এই বিশ্বজাহানের স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একান্ত বাছাইকৃত সর্বশ্রেষ্ট মানুষ।রাসুল (সাঃ) এর আদর্শ সম্পর্কে অমুসলিম পণ্ডিতেরা কি কি মন্তব্য করেছেন, এ সসম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা হল-

★ বিখ্যাত মণীষী'Michael H. Hart' তার লিখিত বই The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,’ .গ্রন্হে উল্লেখ করেন, "মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেকুলার এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যীশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশী।…. আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেকুলার উভয়ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যাক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভুত করেছে।

★ স্কটল্যান্ডের খ্যাতিমান গ্রন্থকার স্যার টমাস কারলাইল (১৭৯৫-১৮৬২ খ্রী:) তাঁর প্রধান গ্রন্থ অনু হিরোস হিরো ওয়ারশিপ এন্ড দি হিরোইন ইন হিসটরীতে লিখেছেন- মহানবীর আগমনে মানুষের সার্বিক অবস্থায় এবং চিন্তাধারায় এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ জাতির এক বিরাট অংশ অন্য কারো কথা অপেক্ষা মুহাম্মদের কথায়ই অধিকতর আস্থাশীল। অন্ধকার হতে আলোর পথের দিশারী হযরত মুহাম্মদ (স.)। তিনি নিজে যা নন তাই হওয়ার জন্য তিনি ভান করতেন না।

★ প্রাচ্য পণ্ডিত গিব তাঁর "মুহাম্মদেনিজম" শীর্ষক ইংরেজী গ্রন্থে বলেছেন, "আজ এটা এক বিশ্বজনীন সত্য যে, মুহাম্মদ নারীদেরকে উচ্চতর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।"

 ★ ফরাসী দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠতম পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদ প্রফেসর লামার্টিন তার 'তুরস্কের ইতিহাস" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, উপায় উপকরণের স্বল্পতা এবং বিস্ময়কর সফলতা এ তিনটি বিষয় যদি মানব প্রতিভার মানদণ্ড হয়, তাহলে ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবকে এনে মুহাম্মদের সাথে তুলনা করবে এমন কে আছে?ঃ দার্শনিক বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, আদর্শ বিজেতা, মানবিক রীতি-নীতির প্রবর্তনকারী এবং একটি ধর্মীয় সাম্রাজ্য ও বিশটি জাগতিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তিনি মুহাম্মদ। তিনি বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, ছেলে মেয়েদের মহান প্রেমিক, তবু বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সবচেয়ে সম্মানিত, সব চেয়ে উন্নত, বরাবর সত্, সর্বদাই সত্যবাদী, শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসী এক প্রেমময় স্বামী, এক হিতৈষী পিতা, এক বাধ্য ও কৃতজ্ঞ পুত্র, বন্ধুত্বে অপরিবর্তনীয় এবং সহায়তায় ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ন, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতাচারী। কঠিন তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনী, কুত্সাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারিতায়, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং নিয়মিত আল্লাহর প্রার্থনা অনুষ্ঠানে এক মহান ধর্ম প্রচারক।"

 ★ ইউরোপের বিশ্ব বিখ্যাত মহাবীর নেপোলিয়ান বোনাপার্ট তার "অটোবায়োগ্রাফী"তে বলেছেন, "আমি আল্লাহর মহিমা কীর্তন করি, এবং পূত চরিত্র ও দিব্য প্রেরণা দীপ্ত মুহাম্মদকে আর পবিত্র কুরআনকে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।"
★Mahatma Gandhi, statement published in ‘Young India,’1924. আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম যিনি আজ লক্ষ কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন।যেকোন সময়ের চেয়ে আমি বেশী নিশ্চিত যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেইসব দিনগুলোতে মানুষের জীবন-ধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, ভয়হীনতা, ঈশ্বর এবং তাঁর(নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এ সব-ই মুসলমানদেরকে সকল বাঁধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর ২য় খন্ড বন্ধ করলাম তখন আমি খুব দু:খিত ছিলাম যে এই মহান মানুষটি সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছু বাকি থাকলো না।

 ★J.W.H. Stab নামে আরেক মণীষী বলেন, "তাঁর কাজের সীমা এবং স্থায়িত্ব বিবেচনা করলে শুধু মক্কার নবী হিসেবে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি আরও দীপ্তিময়ভাবে জ্বলজ্বল করছেন। …..মানুষের বিখ্যাত হওয়ার মাপকাঠি অনুসারে বিচার করলে তাঁর সাথে অন্য কোন মরণশীলের খ্যাতি তুলনীয় হতে পারে কি ?" (Islam and its Founder’)

 ★ Gibbon নামে আরেক মণীষী বলেন, "মুহাম্মদের মহত্বের ধারণা আড়ম্বড়পূর্ণ রাজকীয়তার ধারণাকে অস্বীকার করেছে। স্রষ্টার বার্তাবাহক পারিবারিক গৃহকর্মে নিবেদিত ছিলেন; তিনি আগুন জ্বালাতেন; ঘর ঝাড়ু দিতেন; ভেড়ার দুধ দোয়াতেন; এবং নিজ হাতে নিজের জুতা ও পোষাক মেরামত করতেন। পাপের প্রায়শ্চিত্তের ধারণা ও বৈরাগ্যবাদকে তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁকে কখনো অযথা দম্ভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি, একজন আরবের সাধারণ খাদ্যই ছিলো তাঁর আহার্য।" (‘The Decline and Fall of the Roman Empire’ )

পরিশেষে বলব যে, নবীজির উম্মত হতে পেরে আমরা প্রত্যেকেই ধন্য কারন এই নবীর উম্মত হওয়ার জন্য যুগে যুগে বহু নবী রাসুলেরা পর্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করে ছিলেন।আর যারা নবীজীর বিরোধিতা করেতেছেন আপনারা নবীজীর জীবনীকে ভালবাবে অধ্যয়ন করুন তাহলে আপনাদের সমস্ত উত্তর পেয়ে যাবেন।

Saturday, November 5, 2016

কেয়ামতের আলামত (১ম পর্ব)

আল্লাহ তায়ালা বিশেষ একটি উদ্যেশ্য নিয়ে এই বিশ্বজাহানকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই বিশ্বজাহানের মধ্যে স্বর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে মানবজাতিকে বাছাই করেছেন।মানবজাতির দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসাব নিকাশ করার জন্য একটি দিবসকে নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।সেই নির্দিষ্ট দিবসটিকে কোরআন ও হাদিসের পরিভাষায় কেয়ামত নামে অভিহিত করা হয়েছে।কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে এ পৃথিবীতে কেয়ামতের এমন কিছু আলামত প্রকাশিত হবে, যে আলামতগুলো বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আমাদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।নিম্নে হাদিসের আলোকে কিয়ামতের কিছু আলামত সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
 ★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,
 ﻳﺘﻘﺎﺭﺏ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﻭﻳﻨﻘﺺ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻭﻳﻠﻘﻰ ﺍﻟﺸﺢ ﻭﺗﻈﻬﺮ ﺍﻟﻔﺘﻦ ﻭﻳﻜﺜﺮ ﺍﻟﻬﺮﺝ ﻗﺎﻟﻮﺍﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻳﻢ ﻫﻮ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﺍﻟﻘﺘﻞ
 অর্থাৎ-কেয়ামতের আলামতের মধ্যে কিছু আলামত হচ্ছে-
 *সময় নিকটবর্তী হয়ে যাবে( সময় থেকে বরকত উঠে যাবে)।
 *কোরআন ও হাদিসের উপর আমল কমে যাবে। 
*মানুষের মধ্যে কৃপনতা বেড়ে যাবে।
*ফেতনা ফাসাদ বেড়ে যাবে।
 *এবং হত্যা রাহাজানি প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে।(বুখারি-4452)

 ★অন্য আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, 
 ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠَﺖْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺧَﻤْﺲَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﺼْﻠَﺔً ﺣَﻞَّ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟْﺒَﻼﺀ
 . ﻗِﻴﻞَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻦَّ ؟ ﻗَﺎﻝَ " : ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻤَﻐْﻨَﻢُ ﺩُﻭَﻻ , ﻭَﺍﻷَﻣَﺎﻧَﺔُ ﻣَﻐْﻨَﻤًﺎ , ﻭَﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓُ ﻣَﻐْﺮَﻣًﺎ , ﻭَﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺯَﻭْﺟَﺘَﻪُ , ﻭَﻋَﻖَّ ﺃُﻣَّﻪُ , ﻭَﺑَﺮَّ ﺻَﺪِﻳﻘَﻪُ , ﻭَﺟَﻔَﺎ ﺃَﺑَﺎﻩُ , ﻭَﺃُﻛْﺮِﻡَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣَﺨَﺎﻓَﺔَ ﺷَﺮِّﻩِ , ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺯَﻋِﻴﻢُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﺃَﺭْﺫَﻟَﻬُﻢْ , ﻭَﺍﺭْﺗَﻔَﻌَﺖِ ﺍﻷَﺻْﻮَﺍﺕُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪِ , ﻭَﺷُﺮِﺏَ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮُ , ﻭَﻟُﺒِﺲَ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮُ , ﻭَﺍﺗُّﺨِﺬَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻥُ , ﻭَﺍﺗُّﺨِﺬَ ﺍﻟْﻤَﻌَﺎﺯِﻑُ , ﻭَﻟَﻌَﻦَ ﺁﺧِﺮُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻷُﻣَّﺔِ ﺃَﻭَّﻟَﻬَﺎ , ﻓَﻠْﻴَﺮْﺗَﻘِﺒُﻮﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺛَﻼﺛًﺎ : ﺭِﻳﺤًﺎﺣَﻤْﺮَﺍﺀَ ,ﻭَﺧَﺴْﻔًﺎ ,ﻭَﻣَﺴْﺨم 
অর্থাৎ যখন আমার উম্মতেরা পঁনেরটি কাজ করা শুরু করবে তখন একের পর এক বালা মুসিবত শুরু হয়ে যাবে।সাহাবিরা রাসুল (সাঃ)কে প্রশ্ন করল,হে আল্লাহর রাসুল (সা:) সে পঁনেরটি কাজ কি কি?তখন রাসুল (সাঃ) বললেন,পঁনেরটি কাজ হল- 
1-যখন গনিমতকে বা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজস্ব সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
 2-আমানতকে মনে করা হবে গণিমত।অর্থাৎ আমানতের খেয়ানত করা হবে। 
3-জাকাত দেয়াকে মনে করা হবে জরিমানা।
 4-পুরুষ তার স্ত্রীর কথা মান্য করবে কিন্তু তার মায়ের কথা অমান্য করবে ।
 5-মানুষ তার বন্ধুর সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করবে।
 6-কিন্তু তার পিতার সাথে দূর্বব্যবহার করবে।
 7-মানুষকে শ্রদ্ধা করা হবে তার ক্ষতি থেকে বাচার জন্য।
 8-জাতির নেতৃত্ব দিবে তারা, যারা জাতির মধ্যে কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী অত্যধিক নিকৃষ্ট। 9-মসজিদগুলোর মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু হয়ে যাবে অর্থাৎ দুনিয়াবী কথাবার্তা।
 10-মদ পান প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে।
 11-রেশমির সুতার কাপড় পরিধান করা শুরু করবে।
 12-বিভিন্ন ধরনের গায়ক গায়িকাদের আভির্বাব হবে।
 13-বিভিন্ন ধরেনের বাদ্যযন্ত্রের আভির্বাব হবে। 
14-উম্মতের শেষ সময়ের লোকেরা পূর্ববর্তী সময়ের নেককার লোকদের সমালোচনা করবে।
 যে সময় এ সমস্ত আলামতগুলো প্রকাশ পাবে,সেসময়ে তারা যেন তিনটি বড় ধরনের শাস্তির অপেক্ষা করে।আর সে তিনটি শাস্তি হল-
 ক-ঘু্র্নিঝড়। 
খ-ভুমিধ্বস ।
গ-আকৃতি পরিবর্তন।নাউজুবিল্লাহ!(তিরমিজি2/33)
 এ হাদিসখানায় কেয়ামতের পঁনেরটি আলামতের কথা বলা হয়েছে যেগুলো আমাদের সামনে অহরহ দেখা যাচ্ছে। 

★অপর আরেক হাদিসে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে বিশ্বনবী (সাঃ) ইরশাদ করেন,
 ﻳﻮﺷﻚ ﺃﻥ ﻳﺄﺗﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺯﻣﺎﻥ ﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺇﻻ ﺍﺳﻤﻪ ، ﻭﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺇﻻ ﺭﺳﻤﻪ ، ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻋﺎﻣﺮﺓ ﻭﻫﻲ ﺧﺮﺍﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﻬﺪﻯ ، ﻋﻠﻤﺎﺅﻫﻢ ﺷﺮ ﻣَﻦ ﺗﺤﺖ ﺃﺩﻳﻢ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ، ﻣِﻦ ﻋﻨﺪﻫﻢ ﺗﺨﺮﺝ ﺍﻟﻔﺘﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﻢ ﺗﻌﻮﺩ ‏ 
অর্থাৎ-মানুষের উপরে এমন একটি সময় আসতেছে যে সময় ইসলামের নাম ব্যতিত কোন বিধানাবলী মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা। কোরআনের পৃষ্ঠা ব্যতিত কোরআনের কোন আমল মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা।ঐ সময়ে মসজিদগুলো হবে জাকজমকপূর্ণ পূর্ণ কিন্তুু এগুলো হবে হেদায়াতশুন্য (মসজিদে মুসল্লি পাওয়া যাবে না বা প্রকৃত মুসল্লি পাওয়া যাবে না।) ঐ সময়ে বহু আলেম হবে মানুষের নিকট হেয়।তাদের থেকে যাবতীয় ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং সে ফেতনার দায়ভারও তাদেরকে বহন করতে হবে। (4/227ﺍﺑﻦ ﻋﺪﻱ ﻓﻲ " ﺍﻟﻜﺎﻣﻞ ) 
 এই হাদিসখানাও কেয়ামতের যে সমস্ত আলামতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো অনেকটাই আমাদের সামনে দৃশ্যমান।

 ★অারেকখানা হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কেয়ামতের আলামতের আলামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻹِﺳْﻼﻡُ ﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ، ﻭَﺳَﻴَﻌُﻮﺩُ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃَﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ﻓَﻄُﻮﺑَﻰ ﻟِﻠْﻐُﺮَﺑَﺎﺀ
 অর্থ-ইসলামের আগমন শুরু হয়েছে গরিবি অবস্হায়। অচিরেই কেয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসতেছে যে সময় ইসলাম আবার আগের অবস্হায় ফিরে যাবে অর্থাৎ ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের সংখ্যা কমে যাবেসে গরিবি অবস্হায় যারা কোরআন ও হাদিসের উপর কায়েম থাকতে পারবে তাদের জন্য সুসংবাদ।সুবহানাল্লাহ!(মুসলিম শরীপ হাদিস নং145)
এ হাদিসে কিয়ামতের আলামত হিসেবে বলা হয়েছে যে,ইসলামের প্রকৃত অনুসারীর সংখ্যা প্রাথমিক অবস্হায় ফিরে আসবে।বর্তমানে আমরা দেখতেছি যে,সাহাবিদের যে ইমান ছিল সে ধরনের মুমিন পাওয়া বড়ই অপ্রতুল। 
পরিশেষে বলতে চাই যে,কেয়ামতের যে সমস্ত আলামতের কথা নবীজি বলে গেছেন সেগুলো নিঃসন্দেহে ঘটবে কেননা নবীজি যা বলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলে থাকেন কিন্তু কেয়ামতের কোন আলামত যাতে আমাদের মাধ্যমে প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।লেখাটি পড়ে ভাল লাগলে অনুরোধ থাকবে অন্যকে শেয়ার করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেন।এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবে। (চলবে----------)

Friday, November 4, 2016

কেমন নারীদেরকে বিয়ে করবেন?

সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তায়ালা নর ও নারীর মধ্যে করে দিয়েছেন এক বিশেষ আকর্ষন।যে আকর্ষনের প্রভাবেই তারা পরস্পরের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে অথবা বিভিন্ন কুকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।বর্তমানে এ ফেতনার জামানায় একজন স্বতিসাদ্দী নারী খুজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর হয়ে গেছে।পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সতীসাদ্দী নারীদের কিছু বিশেষ গুনাগুন উল্লেখ করা হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল-
★আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা রুমের 21নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
, ﻭَﻣِﻦْ ﺁَﻳَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻥْ ﺧَﻠَﻖَ ﻟَﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻜُﻢْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟًﺎ ﻟِﺘَﺴْﻜُﻨُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْﻣَﻮَﺩَّﺓً ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔً ‏
অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শনের মধ্য একটি নিদর্শন হচ্ছে,তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের দ্বারা প্রশান্তি লাভ করতে পার এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক মহব্বত ও রহমত ঢেলে দিয়েছেন।
উপরের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে,যে সমস্ত মহিলাদের সোন্দর্য,কথাবার্তা,ও চরিত্র দ্বারা পুরুষরা মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করে এ সমস্ত মহিলারা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিদর্শন।

★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻣﺘﺎﻉ ﻭﺧﻴﺮ ﻣﺘﺎﻉ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﺔ অর্থ এ পৃথিবীর সমস্ত নেয়ামতই সম্পদ।আর এ সম্পদগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে একজন নেককার স্ত্রী (মুসলিম শরীপ1467) এ হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে একজন নেককার মহিলা মুসলিম পুরুষদের জন্য এ দুনিয়ায় সবচেয়ে দামি সম্পদ।

★শুধু তাই নয় রাসুলুল্লাহ (সা:) এক হাদিসে একজন নেককার রমনীকে তাকওয়ার পর দুনিয়ায় সর্বোত্তম জিনিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।যেমন রাসুলুল্লাহ (সা:) এরশাদ করেন,
 ﻣﺎ ﺍﺳﺘﻔﺎﺩ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﺑﻌﺪ ﺗﻘﻮﻯ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺧﻴﺮﺍ ﻣﻦ ﺯﻭﺟﺔ ﺻﺎﻟﺤﺔ، ﺇﻥ ﺃﻣﺮﻫﺎ ﺃﻃﺎﻋﺘﻪ، ﻭﺇﻥ ﻧﻈﺮ ﺇﻟﻴﻬﺎ ﺳﺮﺗﻪ، ﻭﺇﻥ ﺃﻗﺴﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺃﺑﺮﺗﻪ، ﻭﺇﻥ ﻏﺎﺏ ﻋﻨﻬﺎ ﻧﺼﺤﺘﻪ ﺃﻭ ﺣﻔﻈﺘﻪ ﻓﻲ ﻧﻔﺴﻬﺎ ﻭﻣﺎﻟﻪ (ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ 1857)
অর্থাৎ-তাকওয়ার পর একজন মুমিনের নিকট কল্যানময় জিনিস হচ্ছে,একজন নেককার মহিলা অর্থাৎ যে মহিলার ভিতরে চারটি গুন পাওয়া যাবে।যথা-
 1-যদি তাকে স্বামী কোন নেক কাজের নির্দেশ দেয় তার সামর্থ অনুযায়ি স্বামীর নির্দেশকে মান্য করে।
 2-যদি তার দিকে স্বামী দৃষ্টি দেয়,(তার সোন্দর্য,ব্যবহার,ও কথাবার্তায় )স্বামীকে আনন্দিত করে।
 3-যদি স্বামী তার কাছে কোন কিছু চায় তার সাধ্যানুযায়ী স্বামীর চাহিদাকে পুরন করে।
4-আর স্বামী যদি কখনও তার থেকে অনুপস্থিত থাকে,তার অনুপস্থিতে ঐ মহিলা তার নিজের ইজ্জত আব্রু ও স্বামীর সম্পদের হেফাজত করে।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই বিয়ে সাদী করার সময় চিন্তাভাবনা করা উচিৎ যে,কোন ধরনের মহিলাদেরকে আমরা নিজের সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহন করতেছি।সে কি নেককার নাকি বদকার?
রাসুলুল্লাহ (সা:) এক হাদিসে ইরশাদ করেন,
 ﺗُﻨْﻜَﺢُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻟِﺄَﺭْﺑَﻊٍ : ﻟِﻤَﺎﻟِﻬَﺎ ، ﻭَﻟِﺤَﺴَﺒِﻬَﺎ ، ﻭَﻟِﺠَﻤَﺎﻟِﻬَﺎ ، ﻭَﻟِﺪِﻳﻨِﻬَﺎ ﻓَﺎﻇْﻔَﺮْ ﺑِﺬَﺍﺕِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﺪَﺍ
অর্থাৎ মহিলাদেরকে চারটি দিক বিবেচনা করে বিয়ে করা হয়। যথা-
1-তার ধন সম্পদকে বিবেচনা করে।
2-তার বংশ মর্যাদাকে বিবেচনা করে।
 3-তার সোন্দর্যকে বিবেচনা করে।
 4-তার ধার্মিকতাকে বিবেচনা করে। তুমি ধার্মিকতার দিকটি বেশি গুরুত্ব দাও এটার বিনিময়ে তোমার জীবন সোভাগ্যবান হবে।(বুখারী শরীপ হাদিস নং 4802)
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে,বিয়ে সাদীর সময় আমাদেরকে অন্যান্য গুনের পাশাপাশি ধার্মিকতার দিকটি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় আমাদের জীবন সৌভাগ্যবান হবে।আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে একজন নেককার স্ত্রী অর্জন করার তাওফিক দান করুক!আমিন!

Wednesday, November 2, 2016

ইমামের পিছনে মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে।

বর্তমানে একদল লোককে বলতে শুনা যায় যে, নামাজের ভিতরে মুক্তাদি সুরা ফাতিহা পাঠ না করলে তার নামাজই হবে না। আসুন আমরা দেখি, তাদের এ কথাটি কতটুকু কোরআন ও হাদিস সম্মত?নামাজের ভিতরে মুক্তাতির সুরা ফাতিহা পাঠ করার হুকুম সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদেরকে সর্বপ্রথম কয়েকটি বিষয় বুঝতে হবে।যথা-
 1-একাকি নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করার হুকুম।
2-জামাতে নামাজ পড়ার সময় ইমামের সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম।
3-জামাতে নামাজ পড়ার সময় মুক্তাতির সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম।3 নং মাসআলাটি আবার দুভাবে বিভক্ত।যথা-
ক-জাহরি নামাজে(যে নামাজে ইমাম কেরাত জোরে পড়ে)মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম ।
খ-সিররি নামাজে(যে নামাজে ইমাম কেরাত আস্তে পড়ে)মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠের হুকুম।

★1ও 2 নং মাসআলায় সকল আলেম একমত যে,এ অবস্হায় সুরা ফাতিহা অবশ্যই পাঠ করতে হবে ।সুরা ফাতিহা ব্যতিত তাদের নামাজই হবে না।দলিল-বুখারি শরীপের নিন্মোক্ত হাদিস -
 ﻋﻦ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺑﻦ ﺍﻟﺼﺎﻣﺖ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺻﻼﺓ ﻟﻤﻦ ﻟﻢ ﻳﻘﺮﺃ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ
অর্থ- হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:)থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসুল (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি সুরা ফাতিহা পড়বেনা তার নামাজই হবে না।(বুখারি শরীপ723নং)

 **3নং মাসআলার ক অর্থাৎ (যে নামাজে ইমাম কেরাত জোরে পড়ে যেমন ফজর,মাগরিব,ও এশার নামাজ) এ মাসআলায়ও সকল আলেম একমত যে,জাহরি নামাজে ইমামের কেরাত শুনা অবস্হায় মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা লাগবে না।দলিল পবিত্র কোরআনের সুরা আনকাবুতের 204 নং আয়াত- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
 " ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﺎﺳﺘﻤﻌﻮﺍ ﻟﻪ ﻭﺃﻧﺼﺘﻮﺍ ﻟﻌﻠﻜﻢ ﺗﺮﺣﻤﻮﻥ "
অর্থ: আর যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয়।
এ আয়াত সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য তাফসীরে তাবারী (৯খ. ১০৩পৃ.) ও তাফসীরে ইবনে কাসীরে (২খ. ২৮পৃ.) এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে-
 ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﺎﺳﺘﻤﻌﻮﺍ ﻟﻪ ﻭﺃﻧﺼﺘﻮﺍ ﻟﻌﻠﻜﻢ ﺗﺮﺣﻤﻮﻥ " ﻳﻌﻨﻲ ﻓﻲ
 ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻔﺮﻭﺿﺔ
অর্থ : যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয় অর্থাৎ ফরজ নামাযে। হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর মতও তাই।
তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে
: ﺻﻠﻰ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ، ﻓﺴﻤﻊ ﺃﻧﺎﺳﺎ ﻳﻘﺮﺀﻭﻥ ﻣﻊ ﺍﻻﻣﺎﻡ، ﻓﻠﻤﺎ ﺍﻧﺼﺮﻑ، ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﺎ ﺁﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ
 ﺗﻔﻘﻬﻮﺍ ؟ ﺃﻣﺎ ﺁﻥ ﻟﻜﻢ ﺃﻥ ﺗﻌﻘﻠﻮﺍ ؟ ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺮﺉ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﺎﺳﺘﻤﻌﻮﺍ ﻟﻪ ﻭﺃﻧﺼﺘﻮﺍ ﻛﻤﺎ ﺃﻣﺮﻛﻢ ﺍﻟﻠﻪ
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রা. নামায পড়ছিলেন, তখন কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন : তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বোঝার সময় হয় নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (৯ খ. ১০৩ পৃ.)

★ 3নং মাসআলার খ অর্থাৎ (যে নামাজে ইমাম কেরাত আস্তে পড়ে যেমন জোহর ও আসরের নামাজ)এ মাসআলায় আলিমগন দুভাবে বিভক্ত হয়ে গেছেন।যথা-
(ক)ইমাম শাফেয়ি ( রঃ)সহ একদল আলিমের মতে এ সমস্ত নামাজে মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।এ দলের প্রবক্তাদের নিকট এমন কোন স্পষ্ট মারফু সহীহ হাদিস নেই, যে হাদিসে রাসুলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে,ইমামের পিছনে মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।তারা সহীহ মুসলিমের যে হাদিসখানা পেশ করে এ হাদিসখানা হচ্ছে মাউকুফ হাদিস।
(খ)ইমাম আবু হানিফা (র:)সহ একদল আলিমের মতে,এ সমস্ত নামাজে (যে নামাজে ইমাম কেরাত আস্তে পড়ে)মুক্তাদির সুরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব নয়।তারা তাদের মতের সমর্থনে নিন্মোক্ত দলিলগুলি পেশ করেন-
*হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. বলেছেন
, ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﺫﺍ ﻗﺮﺃ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻓﺄﻧﺼﺘﻮﺍ، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﻌﺪﺓ ﻓﻠﻴﻜﻦ ﺃﻭّﻝ ﺫﻛﺮ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺍﻟﺘﺸﻬﺪ . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﻣﺴﻠﻢ (৪০৪)
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম কুরআন পড়বে, তোমরা তখন চুপ করে থাকবে। আর বৈঠকের সময় তাশাহহুদ-ই প্রথম পড়তে হবে। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪০৪
*হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন,
 ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟُﻌِﻞَ ﺍﻹِﻣَﺎﻡُ ﻟِﻴُﺆْﺗَﻢَّ ﺑِﻪِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻓَﻜَﺒِّﺮُﻭﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃَ ﻓَﺄَﻧْﺼِﺘُﻮﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ ﻓَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪ
অর্থ রাসুলু্ল্লাহ (সাঃ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম নিয়োগ করার উদ্দেশ্য তাকে অনুসরণ করা । সুতরাং সে যখন তাকবীর বলবে, তোমরাও তখন তাকবীর বলবে। আর যখন কুরআন পড়বে, তখন তোমরা নীরব থাকবে। যখন সে ﺳَﻤِﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻤَﻦْ ﺣَﻤِﺪَﻩُ বলবে, তখন তোমরা রাব্বানা লাকাল হামদ বলবে। আবূ দাউদ, হাদীস নং ৬০৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৯২২-৯২৩
*হযরত জাবির( রাঃ)থেকে বর্নিত,
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺇﻣﺎﻡ ﻓﻘﺮﺍﺀﺓ ﺍﻹﻣﺎﻡ
 ﻟﻪ ﻗﺮﺍﺀﺓ
অর্থাৎ হযরত যাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তির ইমাম রয়েছে(অর্থাৎ যে ইমামের পিছনে নামায পড়বে) তার ইমামের কিরাতই তার কিরাতের জন্য যথেষ্ট হবে(রুহুল মাআনি9/151সুরা আল আরাপ আয়াত নং204 এর তাফসীর)
 এ হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ এবং অত্র মাসআলায় সর্বাধিক সুস্পষ্ট।
হাদীসটির মাঝে একটি মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে যে, নামায (জিহরী) বা সরব হোক অথবা (সীররী) নীরব হোক সর্বাবস্থায় ইমামের কিরাতই মুক্তাদীর কিরাতের জন্য যথেষ্ট। সুতরাং মুক্তাদীর কিরাত পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। উপরোক্ত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে ,ইমামের কেরাত পড়ার সময় মুক্তাদি চুপ থাকবে । উল্লেখ্য কেরাত বলতে বুঝায় কোরআনের যেকোন আয়াতের তেলাওয়াতকে। চাই তা সুরা ফাতিহা হোক অথবা অন্য কোন আয়াত হোক।
* অপর হাদিসে বর্নিত আছে:-
 ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ‏(ﺭﺽ ‏) ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﯽ ﺳﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ صلي ﺭﮐﻌۃ ﻟﻢ ﯾﻘﺮﺍ ﻓﯿﮭﺎ ﺑﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻓﻠﻢ ﯾصل ﺍﻻ ﺍﻥ ﯾﮑﻮﻥ ﻭﺭﺍﺀ ﺍﻻﻣﺎم
অর্থাৎ হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক রাকাত নামাজ আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পড়ল না সে যেন নামাযই পড়ল না। তবে ইমামের পিছনে থাকলে ভিন্নকথা তখন ফাতিহা পড়া লাগবে না।(তিরমিজি হাদিস নং 310)ইমাম তিরমিজি( রঃ)হাদিসখানা উল্লেখ করার পর বলেছেন হাদিসখানা হাসান, সহীহ। 
 এরকম আরও আরও অসংখ্য দলিল রয়েছে যেগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে মুক্তাদি ইমামের পিছনে কোন ধরনের কিরাত পড়া লাগবেনা ।আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি অনেক দলিল উল্লেখ করিনি।আল্লাহ তায়ালা এ ফেতনার জামানায় সমস্ত প্রকার বিভাজন দুর করে আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে চলার তাওফিক দান করুক!আমিন!

Tuesday, November 1, 2016

জয়িপ হাদিস কি সর্বাবস্হায় পরিত্যাজ্য?

বর্তমান এমন কিছু লোককে দেখা যায় যে ,যারা জয়িপ হাদিসের কথা শুনলেই বলে থাকে জয়িপ হাদিসের উপর আমল করা জায়েয নেই।এমনকি তারা এরকম কথাও বলে থাকে যে জয়িপ হাদিস মানেই হল মাউজু।অথচ জয়িপ ও মাউজু হাদিসের মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য।মাউজু হল রাসুলের শানে একেবারে ডাহা মিথ্যা অপবাদ আর জয়িপ হল রাসুলের হাদিস তবে উক্ত হাদিসের রাবীর গুনের মধ্যে ত্রুটি থাকার কারনে উক্ত হাদিসকে জয়িপ বলা হয়।আসুন আমরা জয়িপ হাদিস সম্পর্কে হাদিস বিশারদগন কি মন্তব্য করেছেন সে সম্পর্কে জেনে নিই তাহলে আমাদের সমস্ত সংশয় দুর হয় যাবে। ★ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺣْﻤَﺪُ : ﺇﺫَﺍ ﺭَﻭَﻳْﻨَﺎ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻼﻝِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﺷَﺪَّﺩْﻧَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺳَﺎﻧِﻴﺪِ . ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﻭَﻳْﻨَﺎ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﻓَﻀَﺎﺋِﻞِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺎﻝِ، ﻭَﻣَﺎ ﻻ ﻳَﻀَﻊُ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻭَﻻ ﻳَﺮْﻓَﻌُﻪُ ﺗَﺴَﺎﻫَﻠْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺳَﺎﻧِﻴﺪِ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺨﻄﻴﺐ ﺑﺴﻨﺪﻩ ﻓﻲ "ﺍﻟﻜﻔﺎﻳﺔ ﺹ 134" অর্থাৎ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)বলেন,যখন আমরা রাসুল (সাঃ) থেকে হালাল ও হারাম বিষয়ে কোন হাদিস বর্ণনা করি তখন আমরা উক্ত হাদিসের সনদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করি আর যখন আমলের ফজিলতের ব্যাপারে কোন হাদিস বর্ণনা করি অথবা এমন কোন হাদিস বর্ণনা করি যা দ্বারা কোন বিধান সাব্যস্ত হয়না এমন হাদিসের সনদের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করি।অর্থাৎ ফজিলতের ব্যাপারে হাদিস জয়িপ হলেও সমস্যা নেই। ★ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﻟﺴﺨﺎﻭﻱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ : " ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻤﻐﻴﺚ )" 1/287 ‏) :" ﻭﻛﺬﺍ ﺇﺫﺍ ﺗﻠﻘﺖ ﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺣﺘﻰ ﺃﻧﻪ ﻳﻨﺰﻝ ﻣﻨﺰﻟﺔ ﺍﻟﻤﺘﻮﺍﺗﺮ ﻓﻲ ﺃﻧﻪ ﻳﻨﺴﺦ ﺍﻟﻤﻘﻄﻮﻉ ﺑﻪ؛ ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺚ : " ﻻﻭﺻﻴﺔ ﻟﻮﺍﺭﺙ " : ‏( ﺇﻧﻪ ﻻﻳﺜﺒﺘﻪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻭﻟﻜﻦ ﺍﻟﻌﺎﻣﺔ ﺗﻠﻘﺘﻪ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻭﻋﻤﻠﻮﺍ ﺑﻪ ﺣﺘﻰ ﺟﻌﻠﻮﻩ ﻧﺎﺳﺨﺎ ﻵﻳﺔ ﺍﻟﻮﺻﻴﺔ ﻟﻪ ‏) অর্থাৎ হাফেজ সাখাবি( রঃ)বলেন,যখন মুসলিম উম্মত কোন জয়িপ হাদিসকে গ্রহন করে নেয় তখন এ হাদিসের উপর সহীহের মত আমল করা হবে এমনকি এরকম হাদিস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পোঁছে যায়।একারনেই ইমাম শাফেয়ি (রঃ) 'ওয়ারিসদের জন্য কোন অসিয়ত নেই'এ হাদিসের ব্যাপারে বলেছেন যে, এ হাদিসখানানার সনদ যদিও জয়িপ কিন্তুু হাদিসখানাকে উম্মত কবুল করা ও আমল করার কারনে হাদিসখানা অসিয়তের আয়াতকে রহিত করে দিয়েছে। ★ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ ﺹ36 ﻃﺒﻌﺔ ﺩﺍﺭ ﺍﻟﻤﻨﻬﺎﺝ . )) ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ : ﻳﺠﻮﺯ ﻭﻳﺴﺘﺤﺐ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﻔﻀﺎﺋﻞ ﻭﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ﻭﺍﻟﺘﺮﻫﻴﺐ ﺑﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻣﺎﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻮﺿﻮﻋﺎً ( অর্থাৎ ইমাম নববী( রঃ) বলেন,"মুহাদ্দিস ফুকাহা এবং অন্যান্য আলেমগন বলেন,(ফজিলত উৎসাহদান ভীতিপ্রদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জয়িপ হাদিস দ্বারা আমল জায়েয ও মুস্তাহাব হবে যতক্ষন তা মাউজুর পর্যায়ে উপনীত না হয়" ★ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺍﻟﻌﺴﻘﻼﻧﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻓﻲ ‏( ﺍﻟﻨﻜﺖ ﻋﻠﻰ ﻣﻘﺪﻣﺔ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺼﻼﺡ ‏) ﺝ1 ﺹ 243 ﻣﺎ ﻧﺼﻪ : )) ﻭﻗﺪ ﺻﺮَّﺡ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻄﺎﻥ ﺃﺣﺪ ﺍﻟﺤﻔﺎﻅ ﺍﻟﻨﻘﺎﺩ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ‏( ﺑﻴﺎﻥ ﺍﻟﻮﻫﻢ ﻭﺍﻹﻳﻬﺎﻡ ‏) ﺑﺄﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﺴﻢ - ﺃﻱ ﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﺃﻭ ﺍﻟﻤﻨﻘﻄﻊ . . . - ﻻ ﻳﺤﺘﺞ ﺑﻪ ﻛﻠﻪ ﺑﻞ ﻳﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﻓﻀﺎﺋﻞ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﻭﻳﺘﻮﻗﻒ ﻋﻦ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻲ ﺍﻷﺣﻜﺎﻡ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻛﺜﺮﺕ ﻃﺮﻗﻪ ﺃﻭ ﻋﻀﺪﻩ ﺍﺗﺼﺎﻝ ﻋﻤﻞ ﺃﻭ ﻣﻮﺍﻓﻘﺔ ﺷﺎﻫﺪ ﺻﺤﻴﺢ ، ﺃﻭ ﻇﺎﻫﺮ ﻗﺮﺁﻥ . - ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻣﺒﺎﺷﺮﺓ - : ﻭﻫﺬﺍ ﺣﺴﻦ ﻗﻮﻱ ﺭﺍﻳﻖ ﻣﺎ ﺃﻇﻦ ﻣﻨﺼﻔﺎً ﻳﺄﺑﺎﻩ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﻮﻓﻖ অর্থ -হাফেজ ইবনে হাজার আসকালিন (রঃ)বলেন,আবুল হাসান ইবনে কাত্তান স্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে,জয়িপ সকল ক্ষেত্রে দলিলযোগ্য নয় তবে ফজিলতের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য,আহকামের ক্ষেত্রে তখন আমলযোগ্য হবে যখন হাদিস বিভিন্ন সুত্রে বর্নিত হবে অথবা হাদিসটির উপরে নববী যুগ থেকে আমল বিদ্যমান থাকে অথবা হাদিসটির সমর্থনে যদি কোন সহীহ হাদিস বিদ্যমান থাকে অথবা কোরআনের কোন সুস্পষ্ট আয়াত থাকে তখন জয়িপ হাদিসের উপরে আমল জায়েয হবে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে,ফজিলত ভয়ভীতি উৎসাহ দান ইত্যাদি ক্ষেত্রে জয়িপ হাদিসের উপরে মুতলাক আমল জায়েয।আর কোন বিধিবিধান সাব্যস্ত করতে চাইলে জয়িপ হাদিসের উপর শর্ত সাপেক্ষে আমল জায়েয।

Sunday, October 30, 2016

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী জাতির মর্যাদা।

বর্তমানে কিছু প্রগতিশীল সেকুলার বুদ্ধিজীবী ইসলামের উপর দোষারোপ করে যে,ইসলাম পুরুষদের বিবেচনায় নারীদের অপমান করেছে।অথচ ইসলাম এমন একটি বিজ্ঞানসম্মত বাস্তববাদী ধর্ম যেখানে নারীদেরকে শুধু সম্মানই দেননি বরং বহু ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।নিম্নে এ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

★ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে পুরুষদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺻَﺪُﻗَﺎﺗِﻬِﻦَّ ﻧِﺤْﻠَﺔً “আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)এ আয়াতে পুরুষদের উপরে নারীদের মোহরানা আদায় করাকে ফরজ করা হয়েছে।অথচ কোরআন ও হাদিসের কোথাও নারীদের উপরে এমন কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তোমরা পুরুষদেরকে মোহরানা আদায় কর।তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে মোহরানার ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের উপর সম্মান দেওয়া হয়েছে।

★ইসলাম পুরুষদের উপরে তাদের সামর্থ অনুযায়ী নারীদের ভরনপোষন আদায় করা ফরজ করে দিয়েছেন।যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে - ﺃَﺳْﻜِﻨُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﺳَﻜَﻨْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻭُﺟْﺪِﻛُﻢْ
“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও।”
(সূরা তালাক, আয়াত ৬)
শুধু তাই নয় নারীর নিজের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি

সন্তানের দায়িত্বও স্বামীর কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
ﻟِﻴُﻨْﻔِﻖْ ﺫُﻭ ﺳَﻌَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺳَﻌَﺘِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻗُﺪِﺭَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭِﺯْﻗُﻪُ ﻓَﻠْﻴُﻨْﻔِﻖْ ﻣِﻤَّﺎ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ
 “বিত্তশালীরা যেনো সামর্থানুযায়ী স্ত্রী- সন্তানের উপর ব্যয় করে। সীমিত উপার্জনকারীরা আল্লাহর দেয়া অর্থানুপাতে ব্যয় করবে।” (সূরা তালাক, আয়াত ৭)
অথচ কোরআন ও হাদিসের কোথাও এ রকম নির্দেশ আসেনি যে, নারীরা পুরুষদের ও সন্তানদের ভরন পোষন বহন করতে হবে।তাহলে এ আয়াতগুলো দ্বারাও নারীদেরকে পুরুষদের উপর বাড়তি সম্মান দান করা হয়েছে।

★ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে বেহেশতকে মায়ের পায়ের তলায় ঘোষণা করা হয়েছে।যেমন হাদিস শরীপে এসেছে-
ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺟﺎﻫﻤﺔ ﺃﻧﻪ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺭﺩﺕ ﺃﻥ ﺃﻏﺰﻭ، ﻭﺟﺌﺖ ﺃﺳﺘﺸﻴﺮﻙ ؟ ﻓﻘﺎﻝ: "ﻫﻞ ﻟﻚ ﻣﻦ ﺃﻡ "؟ ﻗﺎﻝ ﻧﻌﻢ : ﻗﺎﻝ: " ﻓﺎﻟﺰﻣﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺗﺤﺖ ﺭﺟﻠيه
হযরত মুয়াবিয়া বিনতে জাহিমা নবীজীর সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি। আপনার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাঁকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তাঁর দুই পায়ের নিচে।” (সুনানে নাসাঈ ) অথচ কোরআন ও হাদিসে কোথাও বেহেশতকে পিতার পায়ের নিচে বলা হয়নি।তাহলে এখানেও নারীদেরকে পুরুষদের তুলনায় বেশি সম্মান করা হয়েছে।

★অন্য হাদিসে পুরুষের ও নারীর মর্যাদার ব্যাপারে বলা হয়েছে -
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺃﺣﻖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺤﺴﻦ ﺻﺤﺎﺑﺘﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ,, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﺑﻮﻙ . ‏
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিতা-মাতার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার হকদার কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। এরপর সাহাবী চতুর্থ বার যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, তারপর কে? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার বাবা।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদীসের দ্বারা এটা পরিস্কার হয়ে গেলো যে, নারী জাতিকে ইসলাম মাতৃত্বের উচ্চাসনে বসিয়েছে। তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছে।অথচ পুরুষদের ব্যাপারে এমন কোন মর্যাদার কথা কোথাও বলা হয়নি।

 ★সমাজে কেউ যেনো নারী জাতির অবমাননা করতে না পারে সেটিও ইসলাম নিশ্চিত করেছে। অন্যায়ভাবে কেউ কোনো নারীকে অপবাদ দিলে তার জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
 ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺮْﻣُﻮﻥَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕِ ﺛُﻢَّ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺗُﻮﺍ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻌَﺔِ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﻓَﺎﺟْﻠِﺪُﻭﻫُﻢْ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴﻦَ ﺟَﻠْﺪَﺓً ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺒَﻠُﻮﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓً ﺃَﺑَﺪًﺍ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ
“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” (সুরা আন-নূর: আয়াত ৪)
অথচ পুরুষদের ব্যাপারে এরকম একক নির্দেশ কোথাও বলা হয়নি

★শুধু তাই নয়, নারীদের প্রতিপালনে ইসলাম যে মর্যাদা রেখেছে পুরুষদের জন্য তা রাখা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻻَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻷَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺛَﻼَﺙُ ﺑَﻨَﺎﺕٍ ﺃَﻭْ ﺛَﻼَﺙُ ﺃَﺧَﻮَﺍﺕٍ ﻓَﻴُﺤْﺴِﻦُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻦَّ ﺇِﻻَّ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
. ‘তোমাদের যে কারও যদি তিনজন কন্যা বা বোন থাকে আর সে তাদের সুন্দরমত দেখাশুনা করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [12]
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন,
ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻷَﻫْﻠِﻪِ ‘
তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’
 এ হাদীসে স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারকে পুরুষের চারিত্রিক মর্যাদার মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং এখন আমরা কি বলবো যে ইসলাম পুরুষের বিপক্ষে বর্ণবৈষম্যকে প্রশ্রয় দিয়েছে?

 ★ এমনকি ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মে আজ পর্যন্ত নারী জাতির অধিকারের কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। হিন্দুধর্মে নারী জাতিকে মৃত্যু, নরক, সর্প, বীষ ও আগুন থেকেও মারাত্মক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারী জাতির আলাদা কোনো অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় নি। যার কারণে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সাথে সহমরণে যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। খৃষ্টান ধর্মে নারী জাতিকে চরম লাঞ্চনার বস্তু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তাই তো খৃষ্টান পাদ্রী মি: সেন্ট টার্টুলিয়ামের মতে, নারী হচ্ছে বন্য জন্তুর চেয়েও অধিক বিপদজনক। অন্য আরেক পাদ্রী সেন্ট ক্রিয়ান নারীকে বীষধর সাপের সাথে তুলনা করে তার থেকে দূরে সরে থাকতে বলেছেন। সপ্তদশ শতকে খৃষ্টধর্মের রাজধানী রোমে বিত্তবানদের একটি কাউন্সিল সমবেত সকল শীর্ষ ব্যক্তি এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিল যে, নারীর কোন আত্মা নেই।

 ইহুদী ধর্মে নারীকে পুরুষের জন্য প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের মতে একজন সতী নারীর চেয়ে একজন পাপিষ্ট পুরুষ বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।
বৌদ্ধধর্মে কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করাকে অলক্ষণীয় বলে মনে করা হয়। নারীর কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকৃতি দেয় না।
 এভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মেই নারী জাতিকে পাপিষ্ট, অলুক্ষুণে, অপয়া ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে কোনো অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, তাদেরকে মানুষ বলেই স্বীকার করা হয়নি। তারা নারীদেরকে কেবলমাত্র ভোগের পণ্য হিসেবেই গণনা করতো।
 -এমনিভাবে সর্বত্রই যখন নারী জাতির এমন লাঞ্চনা-গঞ্জনা আর অসম্মান ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলাম এসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্ত করেছে।
ইসলামই একমাত্র দীন -যা নারী জাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের যথাযথ অধিকার। ইসলাম এসে ধাপে ধাপে নারী জাতিকে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। যেই সমাজে নারী জন্মই পাপ বলে গণ্য হতো সেখানে ইসলাম সর্বপ্রথমই নারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারী সন্তানকে হত্যাকারীদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। ঘোষণা করেছে
, ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﻟْﻤَﻮْﺀُﻭﺩَﺓُ ﺳُﺌِﻠَﺖْ . ﺑِﺄَﻱِّ ﺫَﻧْﺐٍ ﻗُﺘِﻠَﺖْ
“আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা! যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?”
 (সুরা তাকউইর, আয়াত ৮-৯)

 ★একইভাবে ইসলাম নারীদের জন্য সোনা ও রেশমী কাপড় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। পুরুষের জন্য দেয়নি। নারীদের মাসে প্রায় এক সপ্তাহ এবং বছরে প্রায় একমাস সালাত মাফ করা হয়েছে, যা পুরুষের ক্ষেত্রে করা হয়নি। নারীদেরকে দূর্বল ও অসহায় পেয়ে যাতে করে কেউ তাঁদের উপর জুলুম ও অত্যাচার না করে সেজন্যে ইসলাম ঘোষণা করেছে,
 ﻭَﻻَ ﺗُﻤْﺴِﻜُﻮﻫُﻦَّ ﺿِﺮَﺍﺭًﺍ ﻟِّﺘَﻌْﺘَﺪُﻭﺍْ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻓَﻘَﺪْ ﻇَﻠَﻢَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আর যারা এ ধরণের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা নিজেদের উপরই জুলুম করবে।”
 (সূরা বাকারা : আয়াত ২৩১)

 ★এবং নারীদেরকে আল্লাহ তায়ালা অর্থনৈতিকভাবেও স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন আল্লাহ তা’‘আলা বলেন,
 ﻟِﻠﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒُﻮﺍ ﻭَﻟِﻠﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒْﻦَ ‘পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে।’

 পরিশেষে বলব যে, নারীর অবাস্তব সমানাধিকারের দাবিদাররা যার গান গায় আমরা যদি সেই ফরাসি বিপ্লবের নথিপত্র এবং গণতান্ত্রিক দেশসহ বহু দেশের সংবিধান ঘেঁটে দেখি, তাহলে দেখবো অনেক ক্ষেত্রেই তারা নারীর সেই অধিকারগুলোর স্বীকৃতি মাত্র সেদিন দিয়েছে, ইসলাম যা প্রতিষ্ঠা করেছে চৌদ্দশ বছর আগে! শুধু তাই নয়, বরং অনেক অধিকার এমনও আছে যার স্বীকৃতি আজো তারা দেয়নি। যেমন পরিবারে নারীর আর্থিক দায়িত্ব ক্ষমা করা এবং তাকে যাবতীয় অর্থনৈতিক ভার থেকে অব্যহতি দেয়া ইত্যাদি।

Wednesday, October 26, 2016

মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা প্রসঙ্গে।

বর্তমানে কিছু লোককে বলতে শুনা যায় যে,মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা বিদআত।আসুন আমরা হাদিস থেকে এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জেনে নিই। ★ﻋﻦ ﻣﻌﻘﻞ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠه – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ " ﺍﻗﺮﺅﻭﺍ ‏( ﻳﺲ ‏) ﻋﻠﻰ ﻣﻮﺗﺎﻛﻢ " . ، ﻭﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ‏( 3 / 188 / 3121 ‏) ، অর্থাৎ হযরত মা'কাল ইবনে ইয়াসার (রাঃ)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল (সাঃ)বলেন,তোমরা মৃত ব্যক্তিদের উপরে সুরা ইয়াসিন পাঠ কর।তাহলে এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় মৃতদের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা রাসুলের নির্দেশ। ★ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : " ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻼ ﺗﺤﺒﺴﻮﻩ ، ﻭﺃﺳﺮﻋﻮﺍ ﺑﻪ ﺇﻟﻰ ﻗﺒﺮﻩ ، ﻭﻟﻴﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻪ ﻓﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ، ﻭﻋﻨﺪ ﺭﺟﻠﻴﻪ ﺑﺨﺎﺗﻤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻭﻗﺎﻝ : - ﻭﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺃﻧﻪ ﻣﻮﻗﻮﻑ ﻋﻠﻴﻪঅর্থাৎ হযরত ইবনে উমর (রাং)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি রাসুল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে,যখন তোমাদের কেহ মারা যাবে তখন তোমরা তার কাফনে দেরি করিওনা এবং দ্রুত তার দাফনের ব্যবস্হা কর এবং দাফনের পর তার মাথার পাশে সুরা বাকারার প্রাথমিক আয়াতগুলো ও তার পায়ের কাছে সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো পাঠ করবে।এ হাদিসেও মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের উদ্যশ্য কোরআন পাঠ করা জায়েয প্রমানিত হয়। ★ﻋَﻦِ ﺍﻟﺸَّﻌْﺒِﻲِّ ، ﻗَﺎﻝَ : " ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭُ ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖُ ﺍﺧْﺘَﻠَﻔُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺒْﺮِﻩِ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ "(ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ﻟﻠﺨﻼﻝ7) অর্থাৎ হযরত শাবি (রাঃ)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আনসার সাহাবিদের মধ্যে যখন কেহ মারা যেত তখন তারা তার কবরে ছড়িয়ে পড়ত,তারা সেখানে কোরআন শরিপ তেলাওয়াত করত।সুতরাং আনসার সাহাবিরা কোন কাজ করার অর্থ হল রাসুলের সম্মতি থাকা।কেননা রাসুলের অবাধ্য হওয়া কোন সাহাবির জন্য শোভনীয় নয়। ★ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﻠﺠﺎﺝ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﺃﺑﻲ ﻳﺎ ﺑﻨﻲ ﺇﺫﺍ ﺃﻧﺎ ﻣﺖ ﻓﺄﻟﺤﺪ ﻟﻲ ﻟﺤﺪﺍ ﻓﺈﺫﺍ ﻭﺿﻌﺘﻨﻲ ﻓﻲ ﻟﺤﺪﻱ ﻓﻘﻞ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﻣﻠﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛﻢ ﺳﻦ ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ ﻋﻠﻰ ﺳﻨﺎ ﺛﻢ ﺃﻗﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻲ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﺧﺎﺗﻤﺘﻬﺎ ﻓﺈﻧﻲ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺫﻟﻚ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﻣﻮﺛﻘﻮﻥ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ ﺝ/3 ﺹ 44 হযরত আব্দুর রহমান থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,আমাকে আমার পিতা বলেন,হে প্রিয় বৎস!যখন আমি মারা যাব তোমরা আমার জন্য কবর প্রস্তুত করবে।অতঃপর যখন আমাকে কবরে রাখার ইচ্ছে করবে তখন তুমি বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতে রাসুলিল্লাহ এ দোয়াটি পাঠ করবে।অতঃপর আমার কবরের উপরে মাটি ছিটিয়ে দাও।অতঃপর দাফনের পর আমার মাথার নিকট সুরা বাকারার প্রাথমিক আয়াতগুলো এবং আমার পায়ের নিকট সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো পাঠ কর।কেননা আমি রাসুল (সাঃ) কে এরকম বলতে শুনেছি।তাহলে এ হাদিস থেকে বুঝা যায় মৃত ব্যক্তির নিকট কোরআন তেলাওয়াত রাসুলের যুগ থেকেই সাবিত। ★আলী বিন মূসা আল- হাদ্দাদ বলেন, ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﺍﻟﺠﻮﻫﺮﻱ ﻓﻲ ﺟﻨﺎﺯﺓ، ﻓﻠﻤﺎ ﺩﻓﻦ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﺟﻠﺲ ﺭﺟﻞ ﺿﺮﻳﺮ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺮ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺃﺣﻤﺪ : ﻳﺎ ﻫﺬﺍ ﺇﻥ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺮ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﻠﻤﺎ ﺧﺮﺟﻨﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻘﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﻻﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ : ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﻣﺒﺸﺮ ﺍﻟﺤﻠﺒﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺛﻘﺔ ﻗﺎﻝ : ﻛﺘﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺷﻴﺌﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻧﻌﻢ، ﻗﺎﻝ : ﻓﺄﺧﺒﺮﻧﻲ ﻣﺒﺸﺮ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﻠﺠﻼﺝ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﺃﻭﺻﻰ ﺇﺫﺍ ﺩﻓﻦ ﺃﻥ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻪ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﺧﺎﺗﻤﺘﻬﺎ ﻭﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻳﻮﺻﻲ ﺑﺬﻟﻚ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺃﺣﻤﺪ : ﻓﺎﺭﺟﻊ ﻓﻘﻞ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﻳﻘﺮﺃ- ‘আমি আহমাদ বিন হাম্বল ও মুহাম্মাদ বিন কুদামা জাওহারীর সাথে কোন এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। মাইয়েতের দাফন সম্পন্ন হ’লে জনৈক অন্ধ কবরের নিকট বসে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করল। তখন ইমাম আহমাদ তাকে বললেন, ওহে! কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াত বিদ‘আত। আমরা যখন কবরস্থান হ’তে বের হ’লাম তখন ইবনু কুদামা ইমাম আহমাদকে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! মুবাশশির আল- হালাবীর ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, সে বিশ্বস্ত। আপনি তার থেকে কোন কিছু লিখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ইবনু কুদামা বললেন, মুবাশশির আব্দুর রহমান বিন আ‘লা বিন লাজলাজ তার পিতা হ’তে আমাকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এ মর্মে উপদেশ দিয়েছেন যে, যখন তাকে দাফন করা হবে তখন যেন তার মাথার নিকট সূরা বাক্বারার শুরু ও শেষাংশ তেলাওয়াত করা হয়। আর তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমরকে এ মর্মে অছিয়ত করতে শুনেছি। তখন ইমাম আহমাদ তাকে বললেন, ফিরে গিয়ে ঐ লোকটিকে বল, সে যেন কুরআন তেলাওয়াত করে’। (আবুবকর আল-খাল্লাল, আল-আমরু বিল মা‘রূফ, হা/২৪৬;) ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻳَﻘُﻮﻝُ : " ﺯَﺍﺭَ ﻗَﺒْﺮَ ﻭَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺟُﻤُﻌَﺔٍ ﺃَﻭْ ﺃَﺣَﺪِﻫِﻤَﺎ ، ﻓَﻘَﺮَﺃَ ﻋِﻨْﺪَﻫُﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻋِﻨْﺪَﻩُ : ﻳﺲ ، ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﺑِﻌَﺪَﺩِ ﺫَﻟِﻚَ ﺁﻳَﺔً ﺃَﻭْ ﺣَﺮْﻓًﺎ (" .ﻃﺒﻘﺎﺕ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﺑﺄﺻﺒﻬﺎﻥ ﻭﺍﻟﻮﺍﺭﺩﻳﻦ ﻋﻠﻴﻬﺎ-751) অর্থাৎ-হযরত আবু বকর থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে প্রতি শুক্রবার তার পিতা মাতা উভয় বা যেকোন একজনের কবর যিয়ারত করে এবং সেখানে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি আয়াত বা হরফের বিনিময়ে তাদেরকে মাফকরে দিবেন।সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে আমাদের কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা হাদিস অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমানিত। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি বহু হাদিস এখানে পেশ করতে পারিনি। এটাই হল জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতামত।(বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মিরকাতুল মাফাতিহ পৃষ্ঠা নং228-229)

Wednesday, October 5, 2016

মহররম ও আশুরার দিনের ফজিলত।

আরবি বছরের প্রথম মাস মুহাররম। আরবি বারটি মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে কুরআন শরিফ ও হাদিস শরিফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে, মুহাররম মাস তার মধ্যে অন্যতম। আসমান-জমিন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে। এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﺇِﻥَّ ﻋِﺪَّﺓَ ﭐﻟﺸُّﻬُﻮﺭِ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﺛۡﻨَﺎ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﻬۡﺮٗﺍ ﻓِﻲ ﻛِﺘَٰﺐِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮۡﻡَ ﺧَﻠَﻖَ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽَ ﻣِﻨۡﻬَﺎٓ ﺃَﺭۡﺑَﻌَﺔٌ ﺣُﺮُﻡٞۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﭐﻟﺪِّﻳﻦُ ﭐﻟۡﻘَﻴِّﻢُۚ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻈۡﻠِﻤُﻮﺍْ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۚ # ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٣٦ “নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলুম করো না।{সূরা আত-তাওবাহ: ৩৬} এ মাসেরই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহাররম “আশূরা” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয । ★ইতিহাসে আশুরা: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻗﺎﻝ : ﻗﺪﻡ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻓﺮﺃﻯ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﺗﺼﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ ﻓﻘﺎﻝ } : ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﺻَﺎﻟِﺢٌ، ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﻧَﺠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻫِﻢْ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ ﻣُﻮﺳَﻰ، ﻗﺎﻝ : ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﻤُﻮﺳَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ { ‏[ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ 1865]. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা আশুরার দিন সাওম পালন করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আলাইহিস সালম সাওম পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি সাওম পালন করেছেন এবং সাওম পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। {বুখারী:১৮৬৫ ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন, ﻭﻫﻮ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺬﻱ ﺍﺳﺘﻮﺕ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﻮﺩﻱ ﻓﺼﺎﻣﻪ ﻧﻮﺡ ﺷﻜﺮﺍً . এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন সাওম পালন করেছিলেন। ★আশুরার রোজার ফজিলত: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺘَﺤَﺮَّﻯ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓَﻀَّﻠَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﺇِﻟّﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺷَﻬْﺮَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন করার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমযান মাসের সাওমের প্রতি। {বুখারী: ১৮৬৭} রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ﺻﻴﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ، ﺇﻧﻲ ﺃﺣﺘﺴﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻔﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻗﺒﻠﻪ আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। {সহিহ মুসলিম:১৯৭৬} এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের সাওমের মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﺑَﻌْﺪَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺷَﻬْﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻤُﺤَﺮَّﻡُ অর্থাৎ রমযানের সাওমের পরে সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররাম মাসের রোজা। { সহিহ মুসলিম: ১৯৮২} ★আশুরার সাথে তাসু‘আর সাওমও মুস্তাহাব :: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, ﺣِﻴﻦَ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻳَﻮْﻡٌ ﺗُﻌَﻈِّﻤُﻪُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩُ ﻭَﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﻘْﺒِﻞُ ﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺻُﻤْﻨَﺎ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺍﻟﺘَّﺎﺳِﻊَ ." ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺄْﺕِ ﺍﻟْﻌَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﻘْﺒِﻞُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﻮُﻓِّﻲَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ অর্থাৎ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার সাওম পালন করলেন এবং (অন্যদেরকে) সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও সাওম পালন করব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। {সহিহ মুসলিম} ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার সাওমের ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের সাওমই মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ সাওম রেখেছেন এবং নয় তারিখ সাওম পালন করার নিয়ত করেছেন। এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার সাওমের কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের সাওম পালন করা। এরচে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের সাওম পালন করা। এমনিভাবে মুহাররাম মাসে সাওমের সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে। ★আশুরার তাৎপর্য: ১০ই মুহাররম হযরত আলী রা. এর নয়নমণি নবী তনয় ফাতিমার রা.-এর কলিব্জার টুকরা ইমাম হুসাইনের স্বপরিবারের উনিশজন সদস্যসহ তাঁর বাহাত্তরজন অনুসারীকে যেভাবে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়কে যে ব্যথিত করবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর তাই মুহাররম মাসের আগমনে নতুন করে মুসলমানদের হৃদয়ের নিভৃতে মুহররমের নির্মম স্মৃতি যেন সকল ঐতিহাসিক ঘটনাকে ম্লান করে দেয়। ঈমানদার মাত্রই এহেন নির্মম ঘটনায় মর্মাহত হবে এবং হওয়াই ঈমানের দাবী। আমাদের কিছু সংখ্যক অজ্ঞ মুসলমান কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে নিজেদের মনগড়া কিছু কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে এই দিনের তাৎপর্যকে নষ্ট করে। ঐদিন তারা তাজিয়া তৈরি করে পথ ঘাটে বুক থাবরিয়ে মাতম করে। ইমাম হুসাইনের কৃত্রিম কবর তৈরি করে অনৈসলামিক ‘কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। আসলে আশুরার দিনে যারা তাজিয়া তৈরি করে পথে প্রান্তরে পর্তন কুর্দন ও অন্যান্য অনৈসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন রা. এর স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাকে লোক চোখে তুলে ধরতে চায় তা ইসলাম সমর্থন নয় । যদিও অনেকের ধারণা কারবালার শোকাহত ও মর্মস্পশী ঘটনাই মুহাররম মাসের বৈশিষ্ট্য। আসলে তা ঠিক নয়। পৃথিবীর শুরু থেকেই মাহে মুহাররম দশম দিবস অতি পূণ্যময় ও তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ মাসটি অত্যন্ত সম্মানীত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত। জাহিলিয়াতের যুগেও আরবের মুর্খরা এ মাসটিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিত। এমনকি এ মাসকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনা করে অন্যায়, অবিচার, জুলুম-অত্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, দাঁঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে চলতো। আশুরা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যই নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের কাছেও একটি ফজিলতপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচিত হতো। বস্তুতঃ অতীতে আশুরা দিবসে বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে, কেননা আদিকাল থেকে যুগে যুগে আশুরা দিবসে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা বিভিন্ন সূত্রে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমরা জেনেছি আল্লাহ্ রাববুল আলামিন যেদিন আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জান্নাত-জাহান্নাম, লাউহু মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্টি জীবের আত্মাসৃজন করেন, সে দিনটি ছিল ১০ই মুহাররম তথা আশুরা দিবস। শুধু তাই নয় বরং আদম আ. এর সৃষ্টির দিন ও ছিল ১০ই মুহারম, হযরত নূহ আ. এর জাহাজ ৮০জন সহচর নিয়ে যেদিন নিরাপদে জুদী পর্বতে অবতরণ করেছিল সে দিনটিও ছিল ১০ই মুহাররম। এভাবে হযরত ইউসুফ আ. এর কুপ থেকে উদ্ধার। আয়ুব আ. এর আরোগ্য লাভ, হযরত ইউনুস আ. এর মৎস উদর হতে মুক্তি লাভ, মূসা আ. এর পরিত্রাণ, হযরত ইবরাহিম আ. নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে মুক্তি পেয়ে ছিলেন যে দিনটিতে সে দিনটিও ছিল ১০ই মুহাররম। শুধু কী তাই? বরং ঐদিন অর্থাৎ ১০ইং মুহাররমেই হাশর ও কিয়ামত সংঘটিত হবে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বস্তুতঃ যে আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য ইমাম হুসাইন রা. একদিন কারবালার প্রান্তরে শহিদ হয়ে ছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই আদর্শকে আমাদের আঁকড়ে ধরতে হবে। আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে ইসলামি মূল্যবোধকে জাগ্রত করার শপথ গ্রহণ করতে হবে। ঐদিন তাজিয়া নিয়ে নর্তন-কুর্দন করার দিন নয়। আমাদের প্রত্যেককেই ঐ দিনটির যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে। আর তখনই মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে যখন আমরা এ মাসের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য রেখে তা থেকে শিক্ষণীয় , বর্জনীয় ও করণীয় বিষয় এবং তার আদর্শ ও কার্যকলাপ আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রিয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারবো।আমিন!

Sunday, October 2, 2016

মধু সেবনের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা।

পৃথিবীতে যত খাবার রয়েছে সব খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা একটি তালিকা করি, তবে সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে ‘মধু’র নাম। মানবদেহের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই হতে পরিত্রান পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমানিত। হাজার বছর পূর্বেও মধু ছিল সমান জনপ্রিয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক সভ্যতায় মধু ‘ঔষধ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। এমনকি প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও মধু সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত)" মধু কি? মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধুর উপকারিতাঃ মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।মধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হল, ★শক্তি প্রদায়ীঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। ★হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি। ★কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। ★রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। ★ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাস কষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীর ভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাস কষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো। ★অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে। পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়। ★দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে। ★পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। ★দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। ★রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়। ★ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে, মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে। ★হাড়ের জন্য ভালো: দুধের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম। আর মধুর মধ্যে রয়েছে রোগ নিরাময়কারী উপাদান। তাই দুধ ও মধুর মিশ্রণ হাড়ের জন্যও ভালো। এটি হাড়কে শক্তিশালী করে এবং ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। ★তারুণ্য ধরে রাখে: মধু ও দুধের মিশ্রণ খাওয়া বার্ধক্যের আগমনকে ধীর করে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য এই খাবার শতবর্ষ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ★মনোযোগ বাড়ায়: মধু মস্তিষ্কে ভালো প্রভাব ফেলে। আর দুধ মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। দুধ ও মধুর মিশ্রণটি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। ★হাজারো গুণে ভরা মধুতে গুকোজ ও ফ্রুকটোজ আছে যা শরীরে শক্তি যোগায়। এর অন্যান্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। *প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগা,কফ,কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়। *মন ভালো করতে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারুচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন। *প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে,শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়। **মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। *মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়। *যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন। *সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয় । *ত্বকে নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।

Sunday, September 25, 2016

নামাজের মধ্যে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন আস্তে বলা প্রসঙ্গে।

সুরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নামাযে যেমন ইমাম ও মুনফারিদ (একা নামায আদায়কারী)-এর জন্য ‘আমীন’ বলা সুন্নত তেমনি মুকতাদির জন্যও ইমামের ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ শোনার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নত। ফকীহ ও ইমামগণের ইজমা আছে যে, আমীন মুখে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ তা মনে মনে পড়ার (কল্পনা করার) বিষয় নয়; বরং নামাযের অন্যান্য তাসবীহের মতো ‘আমীন’ও সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে। তবে তাঁদের মাঝে এ বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছে যে, ‘আমীন’ শব্দটি কি আস্তে উচ্চারণ করা হবে, না জোরে। এটা মূলত ‘তানাওউয়ে সুন্নাহ’ বা সুন্নাহর বিভিন্নতা, যাকে ইখতিলাফে মুবাহও বলা হয় অর্থাৎ এখানে দুটি নিয়মই মোবাহ ও বৈধ এবং যে নিয়মই অনুসরণ করা হোক সুন্নত আদায় হবে।


কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, অন্য অনেক কিছুর মতো একেও মানুষ জায়েয-নাজায়েয ও সুন্নত-বিদআতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এমনকি একে কেন্দ্র করে বিবাদ- বিসংবাদেও লিপ্ত হয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় দেখা যায়, কিছু মানুষ এত উঁচুস্বরে আমীন বলেন, যেন নামাযের মাঝেই অন্য মুসল্লীদের কটাক্ষ করেন যে, তোমরা সবাই সুন্নাহ তরককারী!নিচে আমিন আস্তে বলা সম্পর্কে বিস্তারিত দলিলসমূহ পেশ করা হল-

 ★আমীন একটি দুআ। আতা ইবনে রাবাহ বলেন, ‘আমীন হচ্ছে দুআ।’ ﺁﻣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺀ (সহীহ বুখারী ১/১০৭) লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে (১/২০৫) আছে, ‘আমীন অর্থ, ইয়া আল্লাহ আমার দুআ কবুল করুন, বা এমনই হোক।’ ﻭﻣﻌﻨﺎﻩ ﺍﺳﺘﺠﺐ ﻟﻲ ﺃﻭ ﻛﺬﻟﻚ ﻓﻠﻴﻜﻦ অতএব প্রথমেই দেখা উচিত, দুআ কি জোরে করা উত্তম, না আস্তে। যদিও জোরে দুআ করাও জায়েয এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেও দুআ করেছেন, তবে দুআর মূল তরীকা হল আস্তে করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- ﺍﺩﻋﻮﺍ ﺭﺑﻜﻢ ﺗﻀﺮﻋﺎ ﻭﺧﻔﻴﺔ তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ডাক কাতরভাবে ও গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ : ৫৫)

★হাদিসগ্রন্থের সুপ্রসিদ্ব কিতাব আল-আলাস সহিহাইন কিতাবে হাদিস এসেছে-
 ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻭَﺍﺋِﻞٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺻَﻠَّﻰ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣِﻴﻦَ ﻗَﺎﻝَ : ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦ{ ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﺁﻣِﻴﻦَ ‏» ﻳَﺨْﻔِﺾُ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ " ‏«ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﺮْﻁِ ﺍﻟﺸَّﻴْﺨَﻴْﻦِ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺨَﺮِّﺟَﺎﻩُ »(হাদিস নং-১২০০)
 অর্থাৎ হযরত ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত: তিনি রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে নামায পড়ছিলেন। যখন রসূলুল্লাহ স. ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ বললেন তখন নীরবে ‘আমীন’ বললেন। হাকেম বলেন: এ হাদীসটি বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ। তবে হাদীসটি বুখারী-মুসলিম রহ. কেউই বর্ণনা করেননি।

এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ তইয়ালীসী রহ. তাঁর সুনানেও বর্ণনা করেছেন। (হাদীস নম্বর- ১১১৭) হজর ইবনুল আম্বাস ব্যতীত উক্ত হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর হজর ইবনুল আম্বাস ﺛﻘﺔٌ “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৯৫০)
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় রাসুল( সাঃ)আমিন আস্তে বলতেন।

★হাদিস শাস্ত্রের আরেক প্রসিদ্ব কিতাব আবু দাউদ শরীপে এসেছে-
 ﺃَﻥَّ ﺳَﻤُﺮَﺓَ ﺑْﻦَ ﺟُﻨْﺪُﺏٍ، ﻭَﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺑْﻦَ ﺣُﺼَﻴْﻦٍ، ﺗَﺬَﺍﻛَﺮَﺍ ﻓَﺤَﺪَّﺙَ ﺳَﻤُﺮَﺓُ ﺑْﻦُ ﺟُﻨْﺪُﺏٍ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺣَﻔِﻆَ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳَﻜْﺘَﺘَﻴْﻦِ ﺳَﻜْﺘَﺔً ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻭَﺳَﻜْﺘَﺔً ﺇِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻦْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓِ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ ﻓَﺤَﻔِﻆَ ﺫَﻟِﻚَ ﺳَﻤُﺮَﺓُ ﻭَﺃَﻧْﻜَﺮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥُ ﺑْﻦُ ﺣُﺼَﻴْﻦٍ ﻓَﻜَﺘَﺒَﺎ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﺑَﻰِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺑِﻪِ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺭَﺩِّﻩِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺃَﻥَّ ﺳَﻤُﺮَﺓَ ﻗَﺪْ ﺣَﻔِﻆَ .
অর্থাৎ  হযরত সামুরা বিন জুুনদুব ও ইমরান বিন হুছইন রা. পরস্পর আলোচনা করার সময় হযরত সামুরা রা. বললেন: তিনি রসূলুল্লাহ স. থেকে দু’টি নীরবতা স্মরণ রেখেছেন। একটি নীরবতা হলো তাকবীরে তাহরিমা বলার পর। অপরটি হলো ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ َ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻ বলার পর। এ কথাটি হযরত সামুরা স্মরণ রাখলেও হযরত ইমরান অস্বীকার করায় উভয়ে এ ব্যাপারটি হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা.-এর নিকটে লিখে জানালেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে জানালেন যে, সামুরা হাদীসটি সঠিকভাবে স্মরণ রেখেছেন।
 (আবু দাউদ: ৭৭৯) হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের উঁচু মানের ﺛﻘﺔٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী। শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে বলেন: ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ “এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য, সহীহ হাদীসের রাবী”। (মুসনাদে আহমাদ: ২০১৬৬)
এই হাদিস দ্বারাও বুঝা যায় রাসুল( সাঃ)আমিন আস্তে বলতেন।

 ★হাদিস শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ব আরেক কিতাব (সুনানে নাসাঈ ১/১৪৭) পৃষ্টায় এসেছে-
 ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺗﻘﻮ ﺁﻣﻴﻦ، ﻭﺇﻥ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻳﻘﻮﻝ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﻤﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﺗﺄﻣﻴﻨﻪ ﺗﺄﻣﻴﻦ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
অর্থাৎ  ইমাম যখন বলে - ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ তখন তোমরা বল আমীন। কারণ ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলবে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
 পাঠক বৃন্দ লক্ষ করুন,, এখানে কি বলা হয়েছে,,??? এখানে বলা হয়েছে : **ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন।
** ইমামও এ সময় আমিন বলে কথাটি তখনই বলা চলে যখন ইমাম নিঃশব্দে আমিন বলে। ফেরেশতাগন যেমন নিঃশব্দে আমিন বলার কারনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এসময় ফেরেশতাগন আমিন বলে। তদ্রুপ ইমামও নিঃশব্দে বলার কারনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সময় ইমামও আমীন বলে। তাছাড়া এখানে ফেরেশতাগনের আমীন বলার সংগে মিল রেখে আমীন বলতে বলা হয়েছে। আর তারা তো নিঃশব্দে আমীন বলে থাকেন। সুতরাং এই হাদিসের উপর আমল তাদেরই সহিহ হবে যারা নিঃশব্দে আমীন বলবে।

 ★এখন আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে সাহাবিদের  কিছু আছার পেশ করছি।যথা-
১. হযরত ওমর রা. বলেন,
ﺃﺭﺑﻊ ﻳﺨﻔﻴﻬﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ : ﺍﻟﺘﻌﻮﺫ ﻭﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺁﻣﻴﻦ ﻭﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻭﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ
অর্থাৎ- চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ।
 (ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল ৮/২৭৪; বিনায়াহ ২/২১ ২

★. আবু ওয়াইল রাহ. বলেন,
 ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺠﻬﺮﺍﻥ ﺑﺒﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﻻ ﺑﺎﻟﺘﻌﻮﺫ، ﻭﻻ ﺑﺎﻟﺘﺄﻣﻴﻦ، ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺑﻮ ﺳﻌﺪ ﺍﻟﺒﻘﺎﻝ، ﻭﻫﻮ ﺛﻘﺔ ﻣﺪﻟﺲ
 অর্থাৎ- খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও। . (আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮)

 ★হযরত আবু ওয়াইল থেকে বর্ণিত,
ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﻋﻠﻲ ﻳﺠﻬﺮﺍﻥ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﻻ ﺑﺂﻣﻴﻦ
 অর্থাৎ হযরত ওমর রা. ও হযরত আলী রা. বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না।
 . (ইবনে জারীর তবারী ; আলজাওহারুন নকী ১/১৩০)

★হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
ﻳﺨﻔﻲ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺛﻼﺛﺎ : ﺍﻻﺳﺘﻌﺎﺫﺓ ﻭﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺁﻣﻴﻦ
অর্থাৎ- ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ ..., বিসমিল্লাহ ... ও আমীন।
  . (আলমুহাল্লা ৩/১৮৪)

★ ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,
ﺃﺭﺑﻊ ﻳﺨﻔﻴﻬﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ : ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺍﻻﺳﺘﻌﺎﺫﺓ ﻭﺁﻣﻴﻦ، ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﻦ ﺣﻤﺪﻩ ﻗﺎﻝ ﺭﺑﻨﺎ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ .
অর্থাৎ-চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : বিসমিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ, আমীন ও সামিআল্লাহর পর রাববানা লাকাল হামদ।


★ অন্য বর্ণনায় আছে,
ﺧﻤﺲ ﻳﺨﻔﻴﻬﻦ : ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﻭﺗﻌﻮﺫ ﻭﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺁﻣﻴﻦ ﻭﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ
 অর্থাৎ-পাঁচটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়া হয় : সুবহানাকাল্লাহুম্মা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ।
. (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৮৬ )
উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন আস্তে বলা উত্তম হওয়া এটা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।তবে যে সমস্ত বর্ণনায় জোরের কথা এসেছে তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য।



Tuesday, September 20, 2016

★★★★বিজ্ঞান ও কুরআনে মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর।****

কুরআন শরীফ মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: অর্থাৎ, আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরুপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুনরুপে দাড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টি কর্তা কতই না কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনুন: ১২-১৪) আরবী ” ﺍﻟْﻌَﻠَﻘَﺔَ ” (আলাকা) শব্দের তিনটি অর্থ রয়েছে। ১. জোক ২. সংযুক্ত জিনিস ৩. রক্তপিন্ড আমরা যদি জোককে গর্ভস্থ সন্তানের সাথে মেলাতে যাই তাহলে,আমরা দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাইজোক যেমন অন্যের রক্ত খায় তেমনি উক্ত ভ্রুন তার মায়ের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। দ্বিতীয় অর্থের আলোকে আমরা যদি তাকে “সংযুক্ত জিনিস” অর্থে নিই তাহলে দেখতে পাই যে,গর্ভস্থ ভ্রুন মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে আছে। তৃতীয় অর্থের আলোকে আমরা উক্ত শব্দের “রক্তপিন্ড” অর্থ গ্রহণ করলে দেখতে পাব যে, তার বাহ্যিক অবস্থা ও তার সংরক্ষিত খাচা (আবরণ) রক্ত পিন্ডের মতই দেখায়। উক্ত অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বর্তমান থাকে। এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত হয় না।সুতরাং, বলা যায়- এ অবস্থা রক্তপিন্ডের মতই। উক্ত “আলাকা” শব্দের তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুনের বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে। কুরআন শরীফের আয়াতে উল্লেখিত ভ্রুনের ২য় স্তর হল-” ﻣُﻀْﻐَﺔً ” (মুদগাহ)। ﻣُﻀْﻐَﺔً হল চর্বিত দ্রব্য। যদি কেউ ১ টুকরা লোবান নিয়ে দাতে চর্বন করার পর তাকে ভ্রুনের সাথে তুলনা করতে যায় তাহলে, দেখতে পাবে দাতে চর্বন করার পর উক্ত দ্রব্য যেমন দেখায় সেটার সাথে ভ্রুনের হুবহু মিল রয়েছে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) আজ বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে এগুলো আবিস্কার করেছে কুরআন নাযিল হওয়ার দেড় হাজার বছর পর। তাহলে, এত কিছু জানা মুহাম্মদ(সাঃ)এর জন্য কেমন করে সম্ভব ঐ সময়ে যখন এ সবের কিছুই আবিস্কৃত হয়নি? ১৬৭৭ খৃষ্টাব্দে হাম ও লিউয়েনহোক নামক দুই বিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষের বীর্যের মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব (Spermatozoma) খুজে পান রাসুল(সাঃ) এর যুগের এক সহস্রাধিক বছর পর। এ দুইজন বিজ্ঞানীই আগে ভূলক্রমে বিশ্বাস করেছিলেন যে, মানুষের বীর্যের মধ্যে উক্ত কোষের রয়েছে অতি সামান্য প্রক্রিয়া। নারীর ডিম্বানুতে আসার পর তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৯) আর প্রফেসর কেইথ এল. মুর বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ ভ্রুন বিজ্ঞানী এবং “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি” গ্রন্থের লেখক;যা বিশ্বের আটটি ভাষায় ছাপা হয়েছে।এটা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই।এ বইটি আমেরিকার বিশিষ্ট্য একটি গবেষণা বোর্ড কর্তৃক কোন একক লেখকের শ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেইথ এল.মুর হচ্ছেন কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা ও কোষ বিভাগের প্রফসর।তিনি ওখানে মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অধীনে মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী ডীন হিসেবে এবং আট বছর শরীরবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি কানাডায় শরীরবিদ্যা বিভাগের উপর কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখার জন্য কানাডার শরীরবিদ্যা বোর্ডের পক্ষ থেকে J.C.B পুরস্কার পেয়েছিলেন।এছাড়া তিনি “কানাডিয়ান এন্ড এমেরিকান এসোসিয়শন এবং দি কাউন্সিল অফ দি ইউনিয়ন অফ বাইয়োলজিকাল সাইন্স” সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১ সালে সউদীর দাম্মামে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল সেমিনারে তিনি বলেন:আমার জন্য এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে, আমি মানব শরীরের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে কুরআন শরীফের সহায়তা নিতাম।আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,এ বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।কেননা,এ সকল বিষয়ের প্রায় সব কিছুই তার ইন্তেকালের কয়েকশত বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে।এ ব্যাপারটি প্রমাণ করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহ তায়ালার সত্য নবী।(“হাজিহী হিয়াল হাকিকাহ তথা এটাই সত্য” নামক ভিডিও ডকুমেন্টারী থেকে সংগৃহীত) এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হল- তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায়-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী? তিনি জবাব দিলেন:”আমি এ কথা মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করি না।” প্রফেসর মুর একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন:”কুরআন ও হাদীসে মানবভ্রুনের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সময়কার বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভিন্ন নামে ভাগ করেছে।”এর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত চমৎকার ও বিস্তৃত অর্থ নির্দেশ করে থাকে।যা আধুনিক শরীর বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে সংগতিপূর্ণ।বিগত চার বছরে সপ্তম শতাব্দীতে নাযিলকৃত কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানবভ্রুন নিয়ে গবেষণা করে বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে। এরিস্টোটল ভ্রুন বিদ্যার জনক হওয়া সত্বেও খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মুরগীর ডিমের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে,মুরগীর বাচ্চার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্তরে।তবে, তিনি স্তরগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেন নি।ধরে নেয়া যায় যে,কুরআন নাযিলের সময় খুব কমই জানা ছিল ভ্রুনের স্তরগুলো সম্বন্ধে;যা সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কোন কিছুর উপর নির্ভর করে তা জানার সুযোগ ছিল না। এখানে এসে শুধু একটি মাত্র নির্ভরযোগ্য ফলাফলে আসা যায় যে, এসমস্ত জ্ঞান মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসেছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। কারণ, তিনি ছিলেন নিরক্ষর তার এগুলো জানার কথা ছিল না। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে তার মত নিরক্ষর লোককে যে ট্রেনিং দেয়া হবে তাও ছিল অসম্ভব।

Monday, September 12, 2016

হাবিল ও কাবিলের কাহিনী

যখন হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয় তখন হাওয়ার গর্ভ থেকে প্রত্যেকবারেই হযরত আদমের দুটি সন্তান এরুপ যমজ জম্ম গ্রহন করিত যে একটি পুত্র আর একটি কন্যা। তখন ভ্রাতা ভগ্নি ছাড়া হযরত আদম (আঃ) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভ্রাতা ভগ্নি পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ তায়ালা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আঃ) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এই নির্দেশ জারি করেন যে একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহন করিবে তারা পরস্পর সহোদর ভ্রাতা ভগ্নি গন্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহনকারীনী কন্যা সহোদরা ভগিনী হিসাবে গন্য হবে না। তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। অর্থাৎ ১ম বারের পুত্র ২য় বারের কন্যা আর ২য় বারের পুত্র এবং ১ম বারের কন্যা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত। অর্থাৎ আদমের শরীয়তে প্রয়োজনের কারনে গর্ভের ভিন্নতাকে বংশের ভিন্নতা হিসাবে গন্য করা হত। এ পরম্পরায় আদম (আঃ) এর দুটি পুত্র ভুমিষ্ট হল। একজনের নাম রাখা হল হাবীল আর অন্য জনের নাম রাখা হল কাবীল। উভয়ের সংগে এক এক জন কন্যাও জন্মেছিল। সে সময়ের বিধান অনুযায়ী হাবীলের বিবাহ কাবীলের ভগ্নির সহিত এবং কাবীলের বিবাহ হাবীলের ভগ্নির সহিত নির্ধারিত হল। কাবীলের সহজাত ভগ্নিটি ছিল অপেক্ষাকৃত পরমাসুন্দরী এবং হাবীলের ভগ্নিটি ছিল কুশ্রি ও কদাকার। অতএব কাবীল নিজেই তার ভগ্নির বিবাহের প্রার্থী হল। এতে হাবীল রাজী না হওয়ায় কাবীল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবীলের শত্র“ হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে আমার সহজাত ভগ্নি কেই আমার সংগে বিবাহ দিতে হবে। আদম (আঃ) কাবীলকে বহু বুঝালেন কিন্তু সে মানলনা। অবশেষে আদম (আঃ) তার শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবীলের আব্দার প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি কাবীলের মুখ বন্ধ করে হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দুর করার উদ্দেশ্যে এ মিমাংশা করলেন যে তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কোরবানী (মান্নত) পেশ কর। যার কোরবানী আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে সেই এ কন্যাকে বিবাহ করতে পারবে। আদম (আঃ) এর নিশ্চিত বিশ্বাস যে, যে সত্য পথে আছে তার কোরবানীই গৃহীত হবে। এজন্যই তিনি এই মিমাংশা করলেন যেন কাবিলের ঝগড়া বিবাদেরও কথা বলিবার স্থান না থাকে। ইহার অর্থ এ নহে যে কাবীলের পক্ষে তাহার ভগ্নি হালাল হবার সম্ভাবনা ছিল। তৎকালে কোরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পস্ট নিদর্শন ছিল এই যে আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কোরবানীকে পোড়াইয়া দিত, যে কোরবানীকে অগ্নি পোড়াইয়া দিত না তাকে প্রত্যাখ্যাত মনে করা হত। মোট কথা উভয়েই স্ব স্ব কোরবানী (মান্নত) উপস্থিত করল। হাবীল ভেড়া দুম্বা ইত্যাদি পশুু পালন করত তাই সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কোরবানীর জন্য উপস্থিত করল। কাবীল কৃষি কাজ করত সে কিছু শস্য গম পেশ করল। অতঃপর আকাশ থেকে অগ্নিশিখা অবতরন করে হাবীলের কোরবানীকে পোড়াইয়া দিল এবং কাবীলের কোরবানী যেমন ছিল তেমনি পড়ে রইল। এ মিমাংশায়ও যখন কাবীল হেরে গেল তখন তার দুঃখ ও ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল। অত্যাচারী যখন কোন প্রমান উপস্থিত করতে না পারে তখন প্রতিশোধ গ্রহনের পিছনে লেগে যায়। সে মর্মে কাবীল হাবীলের প্রানের শত্র“ হয়ে গেল। এবং প্রকাশ্যে ভাইকে প্রানহানীর হুমকি দিয়ে বলে দিল অবশই আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবীল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারন করে বলল ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻘﻴﻦ আল্লাহ তায়ালার নিয়ম এই যে তিনি খোদাভীরু পরহেজগারের কর্মই গ্রহন করেন। তুমি ভিতি অবলম্বন করলে তোমার কোরবানীও গৃহীত হত। তুমি তা করনি তাই কোরবানীও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কি? কিন্তু এতদ্ সত্ত্বেও যদি তোমার ইহাই ইচ্ছে হয়ে থাকে তবে তুমি জেনে রাখ যে তুমি যদি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার প্রতি হস্ত প্রসারিত কর তথাপি আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে কখনো আমার হাত বাড়াব না। কেননা আমি বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। আমার ইচ্ছা এই যে আমার দ্বারা কোন পাপ কার্য সংগঠিত না হউক তুমি আমার উপর যত যুলুমই করনা কেন ইহার ফলে তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ সমস্তই নিজের মাথায় উঠিয়ে নাও অনন্তর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এরুপ শাস্থি অত্যাচারীদের হয়ে থাকে অতঃপর প্রবৃত্তি তাকে স্বীয় ভ্রাতিৃ হত্যার প্রতি আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলল অতএব সে তাকে হত্যাই করে ফেলল। (এমনি তো পুর্ব হতে কাবীল ভ্রাতৃ হত্যার সংকল্প করেছিল যখন শুনল সে প্রতিরোধও করবেনা। ভাইয়ের উদারবাণী শুনে তো তার হৃদয় বিগলিত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা না হয়ে নিশ্চন্ত চিত্তে তাকে হত্যা করে ফেলল ) ফলে সে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল। (পার্থিব ক্ষতি এই যে স্বীয় বাহুর বল আত্মার শান্তি হারিয়ে বসল আর কিয়ামতের দিন কঠোর শাস্থিতে নিমজ্জিত হবেই। এখন হত্যা কার্য সমাধা করে হয়রান হয়ে গেল যে লাশ কি করবে? কি করে এই পাপ লুকিয়ে রাখবে তাহা ভেবে কিছুই ঠিক করতে পারল না ) এমতাবস্তায় আল্লাহতায়ালা একটি কাক সেখানে প্রেরন করলেন। সে চঞ্চু এবং পায়ের নখের দ্বারা মাটি খুড়তে লাগল এবং অন্য একটি মরা কাককে ঐ গর্তের মধ্যে রেখে তার উপর মাটি চাপা দিতে লাগল যেন সে কাক কাবীলকে শিখাইয়া দেয় যে স্বীয় ভ্রাতা হাবীলের লাশ কিভাবে ঢাকিবে। কাবীল ঘটনা উপলদ্ধি করে নিজে নিজে খুব অপমান বোধ করল যে কাকের ন্যায় বুদ্ধিও আমার নেই এবং অত্যন্ত আফসোসের সাথে সে বলতে লাগল আফসুস আমার অবস্থার প্রতি। আমি কি এ কাকের সমতুল্য হতে পারলাম না যে আপন ভ্রাতার মৃতদেহ আবৃত করি ফলে এই দুরবস্থায় সে অত্যন্ত লজ্জিত হল। (মায়েদা ২৭-৩১)

রাসুল (সাঃ)তার রওজা শরীপে স্বশরীরে জীবিত থাকার প্রমান।

বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু লোককে বলতে শুনা যায় যে রাসুল (সাঃ)তার রওজায় স্বশরীরে জীবিত নেই এবং আরেক দলকে বলতে শুনা যায় যে রাসুল (সাsmile মৃত্যুবরণই করেন নি।এই উভয় গ্রুপই ভুলের মধ্যে আছে বরং সঠিক মাসআলা হচ্ছে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ইনতেকাল করেছেন এটা যেমন অকাট্য সত্য তেমনি রাসুল (সাsmile ইন্তেকালের পর কবরের জগতে স্বশরীরে জিবীত রয়েছে এটাও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।নিম্নে রাসুল (সাঃ) যে তার রওজায় স্বশরীরে জিবীত এ সম্পর্কে কয়েকখানা দলিল পেশ করা হল- ★ইবনে মাজাহ শরিপ হাদিস নং ১৬৩২- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﺸﻬﻮﺩ ﺗﺸﻬﺪﻩ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻭﺇﻥ ﺃﺣﺪﺍ ﻟﻦ ﻳﺼﻠﻲ ﻋﻠﻲ ﺇﻻ ﻋﺮﺿﺖ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﺮﻍ ﻣﻨﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻗﺎﻝ ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﺃﻥ ﺗﺄﻛﻞ ﺃﺟﺴﺎﺩ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻨﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻲ ﻳﺮﺯﻕ অর্থাৎ হযরত আবুদ দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ বলেন,তোমরা শুক্রবারে আমার উপরে বেশি বেশি দরুদ শরিপ পাঠ কর।কেননা শুক্রবারে আল্লাহর অগনিত ফেরেশতা তোমাদের নিকট উপস্হিত হয়।আর তোমাদের যেকোন লোক আমার উপরে দরুদ পড়ার সাথে সাথেই আমার কাছে পোঁছিয়ে দেওয়া হয়।রাবী বলেন ,আমি রাসুল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম,আপনার মৃত্যুর পরেও কি আপনার কাছে দরুদ পোঁছানো হবে?তখন রাসুল সাঃ বলেন হ্যাঁ আমার মৃত্যুর পরও আমার কাছে দরুদ পোঁছানো হবে।আর জেনে রাখ,আল্লাহ তায়ালা জমিনের উপর নবীদের দেহ হারাম করে দিয়েছেন।সুতরাং আল্লাহর নবী জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয়। উপরের হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে রাসুল সাঃ সহ সমস্ত নবীগনই কবর জগতে জীবিত। ★আবু দাউদ শরিপ ১৫৩১ নং হাদিস এসেছে, قال النبي صلي الله عليه و سلم,ﺇﻥ ﺃﻓﻀﻞ ﺃﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻴﻪ ﺧُﻠق ﺁﺩﻡ ، ﻭﻓﻴﻪ ﻗﺒِﺾ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻟﻨﻔﺨﺔ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻟﺼﻌﻘﺔ ، ﻓﺄﻛﺜﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻴﻪ ، ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺗﻜﻢ ﻣﻌﺮﻭﺿﺔ ﻋﻠﻲّ ‏» ﻗﺎﻟﻮﺍ: ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ! ﻭﻛﻴﻒ ﺗُﻌﺮﺽ ﺻﻼﺗﻨﺎ ﻋﻠﻴﻚ ، ﻭﻗﺪ ﺃﺭﻣﺖَ ‏( ﻗﺎﻝ: ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ:ﺑَﻠﻴﺖَ ‏) ، ﻗﺎﻝ : ‏« ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﺃﺟﺴﺎﺩ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎء অর্থাৎ রাসুল( সাঃ) বলেন,নিশ্চয় সবচেয়ে সম্মানিত দিন হচ্ছে শুক্রবার দিন।কারন এ দিনে হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করা হয়েছে ,এ দিনেই আদমের মৃত্যু হয়েছে, এ দিনেই শৃংগায় ফুঁ দেওয়া হবে,এবং এ দিনেই কিয়ামত হবে।সুতরাং তোমরা এই দিনে বেশি বেশি করে দরুদ পড়।কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।সাহাবিরা বলল,হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ ) আপনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন এবং আপনার শরীর গলে যাবে তখন কিভাবে আপনার কাছে আমাদের দরুদ পোঁছানো হবে?তখন রাসুল সাঃ বলেন,নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জমিনের উপর নবীদের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন। এ হাদিস দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে রাসুল সাঃ সহ সমস্ত নবীরাই কবরে স্বশরীরে বিদ্যমান আছেন। ★সহীহ মুসলিম হাদিস নং ২৩৭৫, ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ r ﻗﺎﻝ " : ﻣﺮﺭﺕ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﻭﻫﻮ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ " ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻋﻨﺪ ﻛﺜﻴﺐ ﺍﻷﺣﻤﺮ ﻭﻫﻮ ﻗﺎﺋﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ } অর্থাৎ রাসুল সাঃ বলেন, আমি (মিরাজের রাত্রিতে)কাসিবুল আহমার নামক স্হানে মুসা আঃ কে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। এ হাদিস দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে যে,মুসা নবী কবরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেছেন কারন তিনি কবরে জিবীত আছেন। তাহলে দেখুন মুসা আঃ এর যদি এ অবস্হা হয় আমাদের নবীর কি অবস্হা হবে? ★আরেক খানা হাদিসে এসেছে, ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ ﻳﺼﻠﻮﻥ ‏) ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺣﻴﺎﺓ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ ‏[ ﺹ 2 ﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ } ﺍﻟﺴﻠﺴﻠﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ 2/187 ‏(অর্থাৎ হযরত আনাস( রাঃ )থেকে বর্ণিত,রাসুল সাঃ বলেন,সমস্ত নবীগন তাদের কবরে জীবিত ,তারা কবরে নামাজ পড়তেছে। এ হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সমস্ত নবীগন কবরে কবর জগতে জীবিত আছে।আর আমাদের নবী সমস্ত নবীদের সরদার সে হিসেবে উনার শানও সমস্ত নবীদের থেকে বেশি হবে।

পাঁ ছুয়ে সালাম করা কি শিরক?একট পর্যালোচনা।

উত্তর:সম্মানিত লোকের কদমবুচি করে সম্মান করা শিরক নয় বরং এটা ইসলামি শরিয়তে সমপুরণরুপে জায়েয।নিচে এ ব্যাপারে হাদিসের দলিল পেশ করা হল- ★ইবনে মাজাহ শরিপ,হাদিস নং-3703عن صفوان بن عسال رض ان قوما من اليهود قبلوا يدا النبي عليه السلام و رجليهঅথাৎ হযরত সাফওয়ান বিন আসসাল রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,নিশচয় একদল ইহুদি রাসুল সাঃ এর দুহাত ও দুপায়ে চুম্বন করলেন।এ হাদিস থেকে বুঝা যায় কদমবুচি করা জায়েয ।এটা যদি শিরক হইত তাহলে রাসুল সাঃ ইহুদেরকে এই শিরকি কাজ থেকে বাধা দিতেন।এ হাদিসখানা ইমাম তিরমিজি রঃ আরও বিস্তারিতভাবে তার জামিউত তিরমিজিতে উললেখ করেছেন।হাদিসখানা উল্লেখ্ করার পর ইমাম তিরমিজি রঃ বলেছেন-هذا حديث حسن صحيحঅথাৎ এ হাদিসখানা হাসান,সহীহ।(তিরমিজি হাদিস নং-2733) *আবু দাউদ শরিপ হাদিস নং-5225عن زارع رض قال لما قدمنا المدينۃ فجعلنا نتبادر من رواحلنا فنقبل يد رسول الله عليه السلام ورجليهঅথাৎ হযরত জারে রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,আমরা মদিনা শরিপ পোঁছে তাড়াহুড়া করে ছাওয়ারি হতে অবতরণ করে হুযুর সাঃ এর হাত পা চুম্বন করতে লাগলাম।এ হাদিস থেকেও বুঝা যায় কদমবুচি করা রাসুল সাঃ জায়েয করে গেছেন।কেননা রাসুল সাঃকে হযরত জারে সহ অনেক সাহাবি কদমবুচি করলেন কিনতু রাসুল সাঃ তাদেরকি নিষেধ করেন নি। *ইমাম বুখারি রঃ এর লিখিত ,الاداب المفرد,হাদিস নং976قال الاوزاعي بن عامر رض قدمنا فاخبرنا ان هذا رسول الله عليه السلام فقبلنا يداه و قدمهঅথাৎ হযরত আওযায়ি ইবনর আমের রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,আমরা আগমন করলাম।অতপর আমরা জানলাম যে উনি হচছে আল্লাহর রাসুল সাঃ।অতপর আমরা তার হাতে ও পায়ে চুম্বন করলাম। *ইমাম বাজজার রঃ এর লিখিত কিতাব, মুসনাদে বাজজার হাদিস নং4450عن عبد الله بن بريدۃ رض عن ابيه قال جاء رجل الي النبي عليه السلام فقال ارني ايۃ قال اذهب الي تلك الشجرۃ فادعها فذهب اليها فقال ان رسول الله عليه السلام يدعوك فمالت علي كل جانب منها حتي قلعت عروقها ثم اقبلت حتي جاءت الي رسول الله عليه السلام فامرها رسول الله ان ترجع فقام الرجل فقبل راسه و يديه و رجليه و اسلمঅথাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ রাঃ তার পিতা থেকে বরণনা করেন,তিনি বলেন,এক ব্যকতি রাসুল সাঃ এর নিকট এসে বললেন,আমাকে কিছু নিদশন দেখান।রাসুল সাঃ তাকে বললেন,ঐ গাছের নিকট গিয়ে তাকে আমার কাছে ডেকে আন।লোকটি গাছের নিকট গিয়ে গাছকে উদ্যেশ্যে করে বললেন,রাসুল সাঃ তোমাকে ডাকতেছেন।গাছটি সাথে সাথে সমূলে রাসুল সাঃ এর নিকট আসল।অতপর রাসুল সাঃ গাছটিকে আবার স্বসানে ফিরে যাওয়ার নিদেশ দিলেন।রাসুল সাঃ এর এ মুজেজাটি দেখে লোকটি রাসুল সাঃ এর মাথা,দুহাত,দুপায়ে চুম্বন করলেন এবং ইসলাম গ্রহন করলেন।উপরের এই দুই হাদিস দারাও বুঝা গেল কদমবুচি জায়েয। *শুধু রাসুল সাঃ নয়,সাহাবাদের মধ্যেও এ কদমবুচির প্রচলন ছিল।যেমন ইমাম বুখারির الاداب المفرادকিতাবের975নং হাদিসে এসেছে عن صهيب رض رايت عليا يقبل يد العباس و رجليهঅথাৎ-হযরত সুহাইব রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,আমি হযরত আলি রাঃ কে হযরত ইবনে আব্বাসের হাত ও পায়ে চুম্বন করতে দেখেছি। উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল,কদমবুচির আমলটি রাসুলের যুগ থেকেই প্রমানিত।যারা এটাকে শিরক বলতে চান তাদেরকে বলব,কোন জায়েয কাজকে বিনা প্রমানে শিরক বললে শরিয়তে তার কি হুকুম আপনারাই চিনতা করুন।অনেকে যুক্তি দেখায়,কদমবুচির সময় মাথা জুকে যায় এ জন্য এটা শিরকের সাথে মিল রাখে। তাদেরকে বলব যে যেখানে রাসুলের হাদিস আছে সেখানে যুক্তি অচল। উল্লেখ্য:কদমবুচি করা সুননাতে রাতিবা নয়।সুতরাং এটাকে সবসময়ের অভ্যাসে পরিনত করা ঠিক নয়।বরং এটা হল জায়েযের মাসআলা।যারা এটাকে শিরক বলে এবং যারা এটাকে ওয়াজিব মনে করে উভয়েই ভুল বিশাসে আছে।উপমহাদেশের অন্যতম ফকিহ আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুয়ি রঃও তার লিখিত কিতাব ফতোয়ায়ে রশিদিয়া আকসির ৫৪৫ পৃষ্টায় কদমবুচি জায়েযের ফতোয়া দিয়ে গেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ।

ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জঙ্গিবাদের যে উত্থান ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, তার সাথে শুধু গুটি কতেক মুসলিম জড়িত। বিশ্বের সকল বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদগণ এবং মূলধারার সকল ইসলামী সংগঠন ও সংস্থা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, এধরনের ব্যক্তিরা বিভ্রান্ত, বিপথগামী। এরা ইসলামের শত্রুদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। ইসলামের শত্রুরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওরা এদেরকে ইসলামের ভাব-মর্যাদা ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করছে। এসকল ব্যক্তি কোনভাবেই ইসলামের জন্য কল্যাণকর হতে পারেনা। তারা ইসলামকে বিশ্ববাসীর সামনে বিকৃত ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। জঙ্গিবাদীরা সাধারণত সে সকল জঘন্য কর্মকান্ড ঘটিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করতে চায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- (ক) বোমাবাজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা। (খ) মানুষ হত্যা ও (গ) আত্মঘাতী হামলা। বোমাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি করা : জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন ধরনের জঘন্য কর্মকান্ড সংগঠিত করে থাকে, তার মধ্যে একটি হল বোমাবাজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ করা, দাংগা-হাংগামা করা। পবিত্র কুরআনে এগুলোকে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ শব্দদয় দ্বারা অভিহিত করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ মহান আল্লাহর কাছে অতীব ঘৃণিত একটি মহাপাপ, কবীরা গুনাহ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ সমস্ত কাজকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এগুলোর জন্যে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না।’ ﻭَﻻَ ﺗَﻌْﺜَﻮْْﺍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣُﻔْﺴِﺪِﻳْﻨَــ ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ তথা দাংগা হাংগামা করে বেড়িও না।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’ ﻭَﺃَﺣْﺴِﻦْ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻭَﻻَ ﺗَﺒْﻎِ ﺍﻟْﻔَﺴَﺎﺩَ ﻓِﻰْ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﻔْﺴِﺪِﻳْﻦَ ‘তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অুনগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুষ্কর্মীদের কর্ম সার্থক করেন না।’ মহান আল্লাহ ফিত্না সম্পর্কে ইরশাদ করেন : ﻭَﺻَﺪٌّ ﻋَﻦْ ﺳَﺒِﻴْﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻛُﻔْﺮٌ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﻭَﺇِﺧْﺮَﺍﺝُ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَِﺘْﻠِــ ‘আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কার করা, আল্লাহর নিকট বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফিতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﺘْﻞِ ـ ‘আর ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ উপরোক্ত আয়াতসমূহে ফিতনা-ফাসাদ তথা অরাজকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা জঙ্গিবাদকে হত্যার চেয়েও কঠিন ও গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের অপরাধ হত্যার সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে তাফসীর তাফহীমুল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘নর হত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য কাজ কিন্তু কোনো মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক ও যুল্মতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং যুক্তির পরিবর্তে পাশবিক শক্তি প্রয়োগে জীবন গঠন ও সংশোধনের বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে তখন সে নরহত্যার চাইতেও জঘন্যতম অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়া পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা আল্লাহ ঘোষণা করেন : ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻳُﺤَﺎﺭِﺑُﻮْﻥَ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟَﻪُ ﻭَﻳَﺴْﻌَﻮْﻥَ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻓَﺴَﺎﺩًﺍ ﺃَﻥْ ﻳُﻘَﺘَّﻠُﻮْﺍ ﺃَﻭْ ﻳُﺼَﻠَّﺒُﻮْﺍ ﺃَﻭْ ﺗُﻘَﻄَّﻊَ ﺃَﻳْﺪِﻳْﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢْ ﻣِّﻦْ ﺧِﻼﻑٍ ﺃَﻭْ ﻳُﻨْﻔَﻮْﺍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﺧِﺰْﻯٌ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻰ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻋَﻈِﻴْﻤٌــ ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ মানব হত্যা জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আরেকটি জঘন্য অপরাধ করে থাকে তা হলো মানব হত্যা। এটা বিভিন্নভাবে করে থাকে, গুপ্তভাবে, পেছন থেকে, বোমা মেরে কিংবা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দিয়ে। অথচ মানব জীবন মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻰْ ﺁﺩَﻡَ ﻭَﺣَﻤَﻠْﻨﻬُﻢْ ﻓِﻰْ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﺍﻟْﺒَﺤْﺮِ ﻭَﺭَﺯَﻗْﻨﻬُﻢْ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒﺖِ ﻭَﻓَﻀَّﻠْﻨﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻛَﺜِﻴْﺮٍ ﻣِّﻤَّﻦْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺗَﻔْﻀِﻴﻼً নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্ত্তর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। সেজন্য মহান আল্লাহ একজন মানবের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন। মানব জীবনের নিরাপত্তার প্রতি ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোন ধর্মে বা মতাদর্শে এর নযির নেই। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻞِ ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﺘَﺒْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻨِﻰْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻧَﻔْﺲٍ ﺃَﻭْ ﻓَﺴَﺎﺩٍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﻗَﺘَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﻴَﺎﻫَﺎ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺣْﻴَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎــ ‘এ কারণে আমি বনী ইসরাইলকে এরূপ লিখে দিয়ে ছিলাম যে, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কিংবা ভূ- পৃষ্ঠে কোন গোলযোগ সৃষ্টি করা ছাড়াই কাউকে হত্যা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো আর যে ব্যক্তি কোন একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই রক্ষা করলো।’ যে ব্যক্তি সংগত কারণ ছাড়া একজন মানুষকে হত্যা করে সে কেবল একজন মানুষকেই হত্যা করে না, বরং সে সমগ্র মানবতাকে হত্যা করে, অর্থাৎ সে একজন মানুষকে হত্যা করে এ কথাই প্রমাণ করলো যে তার মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায় অন্য মানুষের প্রতি সামান্যতম সম্মান, মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতির চিহ্ন নেই। সেজন্য মহান আল্লাহ সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা যেভাবেই হোক না কেন নিষিদ্ধ করেছেন। নিম্নে এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদীস হতে কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন তাকে ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া হত্যা করো না।’ ন্যায়সংগত কারণ তিনটি যা ইমাম আল বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (র) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের (রা) রিওয়ায়াতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘যে মুসলিম আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়, তার রক্ত হালাল নয়, কিন্তু তিনটি কারণে তা হালাল হয়ে যায়। (১) বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সে যদি যিনা করে, তবে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করাই তার শরীয়তসম্মত শাস্তি। (২) সে যদি অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করে, তবে তার শাস্তি এই যে, কিসাস হিসেবে তাকে হত্যা করা হবে। (৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, তার শাস্তিও হত্যা।’ (আলোচ্য হাদীসে এবং তৎসম্পর্কিত কুরআনের আয়াতে কিসাস নেয়ার অধিকার নিহত ব্যক্তির অভিভাবককে দেয়া হয়েছে। যদি তার রক্ত সম্পর্কিত কোন অভিভাবক না থাকে তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান এ অধিকার পাবে। কারণ সরকারও একদিক দিয়ে সকল মুসলিমের অভিভাবক।) কেউ কেউ ন্যায় সংগত হত্যার কারণ উপরোক্ত তিনটির সাথে আরো তিনটি বর্ণনা করেন : তাহলো- (৪) জিহাদের ময়দানে সত্যদ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের হত্যা করা। (৫) ডাকাতি অথবা রাজপথে রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা। (৬) কোন ব্যক্তি যদি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে জঙ্গিপন্থা অবলম্বন, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি, জনজীবনে আতঙ্ক-অশান্তি সৃষ্টি করে এবং ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পতন ঘটানোর চেষ্টা করে তাকে হত্যা করা। তবে উপরোক্ত ছয়টি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানুষকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু এ সকল অবস্থায় মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার অধিকার শুধু রাষ্ট্রীয় সরকার বা কর্তৃপক্ষের জন্য নির্ধারিত, অর্থাৎ আদালত রায় দেবে আর সরকার কর্তৃক নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারীরা তা বাস্তবায়ন করবে। জনগণকে কোন অবস্থাতেই আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি। মহান আল্লাহ ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা নিষিদ্ধ সম্পর্কে আরো ঘোষণা করেন : ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻘْﺘُﻞْ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻣُّﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ ﻓَﺠَﺰَﺁﺅُﻩُ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻭَﻏَﻀِﺐَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻟَﻌَﻨَﻪُ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻪ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻋَﻈِﻴْﻤًﺎــ ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই সে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তার উপর অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্ত্তত করে রাখবেন।’ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻻَ ﻳَﺪْﻋُﻮْﻥَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﺍﺧَﺮَ ﻭَﻻَ ﻳَﻘْﺘُﻠُﻮْﻥَ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲَ ﺍﻟَّﺘِﻰْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻻَ ﻳَﺰْﻧُﻮْﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَﻟِﻚَ ﻳَﻠْﻖَ ﺃَﺛَﺎﻣًﺎـــﻴُﻀﻌَﻒْ ﻟَﻪ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻳَﺨْﻠُﺪْ ﻓِﻴْﻪِ ﻣُﻬَﺎﻧًﺎ ‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদাত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সংগত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করবে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামাতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।’ নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো, যা সুস্পষ্টভাবে ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যাকে সম্পূর্ণ নিষেধ করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন : ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘হে লোক সকল! তোমাদের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর উপর তোমাদের হস্তক্ষেপ হারাম করা হলো, তোমাদের আজকের এই দিন, এই (যিলহজ্জ) মাস এবং এই (মক্কা) নগরী যেমন পবিত্র ও সম্মানিত, অনুরূপভাবে উপরোক্ত জিনিসগুলোও সম্মানিত ও পবিত্র। সাবধান! আমার পর তোমরা পরস্পরের হন্তা হয়ে কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যেও না’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘তোমরা সাতটি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, শরীয়াতের বিধিবর্হিভূত কোন অবৈধ হত্যাকান্ড ঘটানো, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, সুদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানো এবং সরলমতি সতী মু’মিন মহিলাদের ওপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি : আল্লাহর নিকট (বিনা অপরাধে) কোন মু’মিনের হত্যাকান্ড সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘কোন মুসলিম ব্যক্তির নিহত হওয়ার তুলনায় সমগ্র পৃথিবীর পতন আল্লাহর দৃষ্টিতে অতি তুচ্ছ ব্যাপার। ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘মুমিন যে পর্যন্ত অবৈধভাবে কাউকে হত্যা না করে, সে পর্যন্ত সে ইসলামের উদারতার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে।’ আল কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসমূহ ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যাকে কোনভাবেই সমর্থন করে না, বরং সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করে, অধিকন্তু ন্যায় সংগত হত্যার বিধান রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে, কোন দল বা গোষ্ঠীকে এই অধিকার দেয়া হয়নি। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম। আত্মঘাতী হামলা বা সুইসাইড স্কোয়াড জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অপর যে জঘন্য কর্মটি করে থাকে সেটা হলো আত্মঘাতী হামলা। আর এটি করে সাধারণতঃ সুই সাইড স্কোয়াড বা আত্মঘাতী দল গঠনের মাধ্যমে। কিছু সহজ-সরল সাদাসিধে মুসলিমকে জান্নাত পাবার লোভ, কিংবা অন্যান্য পুরস্কারের কথা বলে এ কাজে নিয়োজিত করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ যে ভাবে অপরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, সেভাবে নিজের জীবনকেও ধ্বংস করতে নিষেধ করেছেন। আত্মহত্যা করতে বারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত ও হাদীস উদ্ধৃত করা হলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮْﺍ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳْﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِــ ‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।’ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴْﻤًﺎــ ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর দয়ালু।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যে ব্যক্তি নিজেকে শ্বাসরুদ্ধ করবে (আত্মহত্যা করবে) সে জাহান্নামে নিজেকে শ্বাসরুদ্ধ করবে। আর যে নিজেকে আঘাত করবে (আত্মহত্যা করবে), সে জাহান্নামেও নিজেকে আঘাত করবে।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে বসেও সে অনবরত উচ্চ স্থান থেকে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের মধ্যে বসেও সে অনন্তকাল ধরে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোন লোহার অস্ত্র দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে বসে অনন্তকাল ধরে সেই অস্ত্র দিয়েই নিজেকে কোপাতে থাকবে। ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আহত হয়ে কষ্ট পাচ্ছিল। তাই সে এক খানা ছুরি দ্বারা নিজের দেহে আঘাত করলো। ফলে রক্তপাত হয়ে সে মারা গেল, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার বান্দা আমাকে ডিংগিয়ে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যে ব্যক্তি কোন জিনিস দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামাতের দিনও তাকে সে জিনিস দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। কোন মু’মিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার শামিল, আর কোন মু’মিনকে কাফির বলা তাকে হত্যা করার শামিল।’ পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত কয়েকটি আয়াত ও কয়েকটি হাদীসের আলোকে আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কোন অবস্থায় আত্মহত্যা করা যাবে না। আত্মঘাতী হামলা করে মানুষ হত্যা তো দূরের কথা, উপরোক্ত আলোচনায় আরো স্পষ্ট হয়, যারা এই অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। জঙ্গিবাদ দমনে করণীয় আমরা মনে করি জঙ্গিবাদ কোন বড় ধরনের সমস্যা নয়। গুটি কতেক ব্যক্তি এর সাথে জড়িত। এরা অসংগঠিত ও অপরিকল্পিত। যদি সদিচ্ছার সাথে কিছু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া যায় তাহলে এ সমস্যাটি সহজে দূর করা যাবে বলে বিশ্বাস করি, নিম্নে এ লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব পেশ করা হলো। ১. যে সকল মুসলিম দেশে জঙ্গিবাদ সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের শাসকদের বুঝতে হবে এটা ইসলাম বিদ্বেষী-পশ্চিমা শক্তি, ইয়াহুদী গোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র, মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও মুসলিমদের শক্তিকে দুর্বল করার জন্য তারা এ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। অতএব, তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। ২. পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, এই জঙ্গিবাদের সাথে গুটি কয়েক বিভ্রান্ত মুসলিম জড়িত। এদেরকে হিদায়াতের জন্য আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের সম্পৃক্ত করতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যে, জঙ্গিবাদ কোনক্রমেই ইসলামের পথ নয়। এটা সম্পূর্ণভাবে জাহান্নামের পথ। ৩. যেহেতু জঙ্গিবাদের সাথে সত্যিকার ইসলাম পন্থিরা জড়িত নয়, তাই জঙ্গিবাদ দমনের জন্য মূলধারার ইসলামী শক্তি, ইসলামী দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে, এবং তাদের সাথে পরামর্শ করে কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। ৪. দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদের ইমাম খতিবদের সহযোগিতা নিতে হবে, তারা যেন জুমার খুতবায় ও অন্যান্য সময়ে মসজিদগুলোতে জঙ্গিবাদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমদেরকে অবহিত করতে পারেন। ৫. মূলধারার ইসলামী শক্তি ও দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার উদ্দেশ্যে ইসলামী আদর্শ, মাদ্রাসা-মক্তবকে ঢালাওভাবে জঙ্গি আখড়া, জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র, তালেবান দুর্গ, মৌলবাদী অভয়ারণ্য বলার মত উসকানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। ৬. জনগণকে সাথে নিয়ে এই জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। তাই জনগনের বিশ্বাস, ধর্ম-বিশ্বাস, তাদের লালিত মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে সম্মান করতে হবে। এ সবের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ৭. মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের শাসকদেরকে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনক্রমে ইয়াহুদীবাদ, খৃস্টবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। সে লক্ষ্যে এদের পরিবর্তে মুসলিম বিশ্ব ও সত্যিকার ইসলামপন্থিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। 8. ব্যক্তিগতভাবে আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখরা জঙ্গীবাদ দমনে এগিয়ে আসতে পারেন। তাঁরা আলাপ-আলোচনা, ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে এর ক্ষতিকর ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সর্ব সাধারণকে সতর্ক করতে পারেন। 9. তদরূপ বিভিন্ন ইসলামী ও অ-ইসলামী দল সংস্থা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর ভয়াবহতা ও অনিষ্টকর দিকগুলো সম্পর্কে জন-সাধারণকে অভিহিত করতে পারেন। উপসংহার আমরা সকলে জানি, ইসলাম অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা ও মহান আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করা। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন মানবকুলের শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, প্রগতি ও উন্নতির জন্য মনোনিত করেছেন ইসলাম ধর্মকে, অতএব একজন মুসলিম অপর মুসলিমের অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে না। তাইতো একজন আরেক জনের সাথে দেখা হতেই ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোধন করে। যার অর্থ ‘‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’’ তাহলে কিভাবে সে অন্যকে অশান্তিতে ফেলে দেবে? অন্যের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে? সুতরাং ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বের এমনকি বাংলাদেশেরও কোন প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত ইসলামী দল বা প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নেই। শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় হাজার বছর অপেক্ষা করতে হলেও তা করা উচিত। জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দিয়ে একে তো দ্রুত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, আর করা গেলেও তার কোন শুভ ফল আশা করা যায় না। এ কথা সর্বমহলে স্বীকৃত যে, ইসলাম তার অন্তর্নিহিত স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার মাধ্যমে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, তরবারি, জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নয়। তবে নতুন গজিয়ে ওঠা কিছু গ্রুপ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা জিহাদের নামে ইসলামের নামে বিভিন্ন অরাজকতামূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করছে। অথচ এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, যা আমরা ইতিপূর্বে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে বুঝতে পেরেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ হারাম। বোমাবাজি, মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি ও আত্মঘাতী তৎপরতা ইত্যাদি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা এগুলো করছে তারা বিভ্রান্ত, ইসলাম বিরোধীদের ক্রীড়নক। এদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করা প্রয়োজন।

ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন একটি মহাপাপ।

★★হস্তমৈথুন করার অপকারিতা।★★ ------------------------------------------------------ হস্তমৈথুন করা এমন একটি কমন সমস্যা যে সমস্যাটিতে বর্তমান বিশ্বের বহু মানুষ আক্রান্ত।অথচ এ কাজটি ইসলামে যেভাবে নিষিদ্ব তদ্রুপ চিকিৎসাবিজ্ঞানেও নিষিদ্ধ। নিচে এ কাজটির অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল- ★হস্তমৈথুনের জাগতিক অপকারিতা: হস্ত মৈথুনের জাগতিক অনেক অপকারিতা অনেক।যথা- *পুরুষ হস্তমৈথুন করলে প্রধান যে্সব সমস্যায় ভুগতে পারে তার মধ্যে একটি হল নপুংসকতা (Impotence)।অর্থাৎ ব্যক্তি যৌন সংগম স্থাপন করতে অক্ষম হয়ে যায়।পুরুষ হস্তমৈথুন করতে থাকলে সে ধীরে ধীরে নপুংসক(Impotent)হয়ে যায়। *আরেকটি সমস্যা হল অকাল বীর্যপাত(Premature Ejaculation)।অর্থাৎ খুব অল্প সময়ে বীর্যপাত ঘটে।ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয়।বৈবাহিক সম্পর্ক বেশিদিনস্থায়ী হয় না। *আরো একটি সমস্যা হল Temporary Oligospermia।Oligospermia হলে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়।তখন বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ২০ মিলিয়নের কম।[২ কোটি]।যার ফলে Male infertility দেখা দেয়।অর্থাৎ সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার দেখা দেয়। একজন পুরুষ যখন স্ত্রী গমন করেন তখন তার থেকে যে বীর্য বের হয় সে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ৪২ কোটির মত।স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে কোন পুরুষের থেকে যদি ২০ কোটির কম শুক্রাণু বের হয় তাহলে সে পুরুষ থেকে কোন সন্তান হয় না। *অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষের যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয়।Dr.Liu বলেন-"There is a huge change in body chemistry when one masturbates excessively" *আর শরীরের অন্যান্য যেসব ক্ষতি হয়-- Nervous system,heart,digestive system,urinary system এবং আরো অন্যান্য system ক্ষতিগ্রস্ত হয় । *পুরো শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর রোগ-বালাইয়ের যাদুঘর হয়ে যায়। *চোখের ক্ষতি হয়। *স্মরণ শক্তি কমে যায়। *মাথা ব্যথা হয় ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা হয় হস্তমৈথুনের কারণে। *আরেকটি সমস্যা হল Leakage of semen।অর্থাৎ সামান্য উত্তেজনায় যৌনাঙ্গ থেকে তরলপদার্থ বের হয়।ফলে অনেক মুসলিম ভাই নামায পড়তে পারেন না।মহান আল্লাহ্ তা'আলার স্মরণ থেকে মুসলিমদের দূরে রাখে হস্তমৈথুন। * আর কোন নারী যখন স্বমেহন বা হস্তমৈথুন করে তখন তারHymen(fold of mucous membrane partly closing the vagina in a virgin) break হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।অর্থাৎ তার কুমারীত্ব (Virginity)হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেকে স্বমেহন করতে গিয়ে কুমারীত্ব হারিয়ে ফেলে।ফলে তার বিয়ে করতে সমস্যা হয়।বিয়ের পর স্বামী তার এ অবস্থা দেখে তাকে সন্দেহ করে তালাক দেয়।তাই হস্তমৈথুন নারীদের অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করে। ★ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুনের অপকারিতা। *আল্লাহ তা’আলার দেয়া বীর্যক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি হস্তমৈথুনের চর্চা করে বা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন তার সেই অঙ্গ পরকালে সাক্ষী দেবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﺨْﺘِﻢُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﻜَﻠِّﻤُﻨَﺎ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺗَﺸْﻬَﺪُ ﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ ‏[ ٣٦: ٦٥ ] “সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” - (৩৬:৬৫) *এছাড়াও আল্লাহ্ তা'য়ালা আরও বলেন, "মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।" (২৪:৩০-৩১) *হাদীস শরীফে বলা আছে, রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন-“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুইপায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের) নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব । ” –(বুখারী, মিশকাত) *উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, এ দু’টো অঙ্গ পাপের জন্য খুব সুবিধার। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক/যুবতী অবস্থায় যৌনাঙ্গের হেফাজত করে এবং কোন প্রকারেই হস্তমৈথুনের চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে। ★--হস্তমৈথুন ছাড়ার টিপস : – কোন কোন সময় হস্তমৈথুন বেশি করেন, সেই সময়গুলো চিহ্নিত করুন। বাথরুম বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি উত্তেজিত থাকেন, বা হঠাত কোন সময়ে যদি এমন ইচ্ছে হয়, তাহলে সাথে সাথে কোন শারীরিক পরিশ্রমের কাজে লাগে যান। যেমন বুকডন বা অন্য কোন ব্যায়াম করতে পারেন। যতক্ষণ না শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, অর্থাৎ হস্তমৈথুন করার মত আর শক্তি না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই কাজ বা ব্যায়াম করুন। গোসল করার সময় এমন ইচ্ছে জাগলে শুধু ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন এবং দ্রুত গোসল ছেড়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসুন। – মেয়েদের দিকে কুনজরে তাকাবেন না। তাদের ব্যাপারে বা দেখলে মন আর দৃষ্টি পবিত্র করে তাকাবেন। নিজের মা বা বোন মনে করবেন। – যতটা সম্ভব নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। – ধৈর্য ধরতে হবে। একদিনেই নেশা থেকে মুক্তি পাবেন, এমন হবে না। একাগ্রতা থাকলে ধীরে ধীরে যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসা যায়। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে। তখন হ তাশ হয়ে সব ছেড়ে দেবেন না। চেষ্টা করে যান। – যে কোন উপায়ে পর্ণমুভি আর চটি এড়িয়ে চলুন। – কম্পিউটারে পর্ণ দেখতে দেখতে হস্তমৈথুন করলে কম্পিউটার লিভিং রুমে নিয়ে নিন যাতে অন্যরাও দেখতে পায় আপনি কী করছেন। এতে পর্ণ সাইটে ঢোকার ইচ্ছে কমে যাবে। – যেসব ব্যাপার আপনাকে হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করে, সেগুলো ছুড়ে ফেলুন, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। যদি মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে সত্যি সত্য মুক্তি পেতে চান তাহলে পর্ণ মুভি বা চটির কালেকশন থাকলে সেগুলো এক্ষুনি নষ্ট করে ফেলুন। পুড়িয়ে বা ছিড়ে ফেলুন। হার্ডড্রাইভ বা মেমরি থেকে এক্ষুনি ডিলিট করে দিন। ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে ব্রাউজারে্র প্যারেন্টাল কন্ট্রোল-এ গিয়ে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে দিন। কোন সেক্স টয় থাকলে এক্ষুনি গার্বেজ করে দিন। – যারা বাজে বিষয় নিয়ে বা মেয়েদের নিয়ে বা পর্ণ মুভি বা চটি নিয়ে বেশি আলোচনা করে, তাদেরকে এড়িয়ে চলুন। – হস্তমৈথুনে চরমভাবে এডিক্টেড হলে কখনোই একা থাকবেন না, ঘরে সময় কম কাটাবেন, বাইরে বেশি সময় কাটাবেন। জগিং করতে পারেন, সাইকেল নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। ছাত্র হলে ক্লাসমেটদের সাথে একসাথে পড়াশুনা করতে পারেন। লাইব্রেরি বা কফি শপে গিয়ে সময় কাটাতে পারেন। – সন্ধ্যার সময়ই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কিছু করার না থাকলে মুভি দেখুন বা বই পড়ুন। – ভিডিও গেম খেলতে পারেন। এটাও হস্তমৈথুনের কথা ভুলিয়ে দেবে। – সেক্সুয়াল ব্যাপারগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলবেন। এধরনের কোন শব্দ বা মন্তব্য শুনবেন না। – ছোট ছোট টার্গেট সেট করুন। ধরুন প্রথম টার্গেট টানা দুইদিন হস্তমৈথুন করবেন না। দুইদিন না করে পারলে ধীরে ধীরে সময় বাড়াবেন। – যখন তখন বিছানায় যাবেন না। কোথাও বসলে অন্যদের সঙ্গ নিয়ে বসুন। – বাথরুম শাওয়ার নেয়ার সময় হস্তমৈথুনের অভ্যাস থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করুন। – যখনি মনে সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হবে, তখনই অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন। – বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার সাথে বেশি সময় কাটান। – ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। – নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করবেন, আপনার সাথে যারা আছে তাদের কথা ভাববেন। – ফোনসেক্স এড়িয়ে চলুন – অপরের সাহায্য নিতে ভুল করবেন না। রাতের বেলা হস্তমৈথুন করলে কারো সাথে রুম শেয়ার করুন। বা দরজা জানালা খোলা রেখে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। যখন দেখবেন যে সব চেষ্টা করেও একা একা সফল হতে পারছেন না, তখন বন্ধুবান্ধব, পরিবার, ডাক্তার- এদের সাহায্য নেয়া যায়। এখানে লজ্জার কিছু নাই। – উপুর হয়ে ঘুমাবেন না। – বিকেলের পরে উত্তেজক ও গুরুপাক খাবার খাবেন না। – গার্লফ্রেণ্ড বা প্রেমিকাদের সাথে শুয়ে শুয়ে, নির্জনে বসে প্রেমালাপ করবেন না।