Sunday, September 25, 2016

নামাজের মধ্যে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন আস্তে বলা প্রসঙ্গে।

সুরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হাদীস শরীফে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নামাযে যেমন ইমাম ও মুনফারিদ (একা নামায আদায়কারী)-এর জন্য ‘আমীন’ বলা সুন্নত তেমনি মুকতাদির জন্যও ইমামের ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ শোনার পর ‘আমীন’ বলা সুন্নত। ফকীহ ও ইমামগণের ইজমা আছে যে, আমীন মুখে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ তা মনে মনে পড়ার (কল্পনা করার) বিষয় নয়; বরং নামাযের অন্যান্য তাসবীহের মতো ‘আমীন’ও সহীহ-শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে। তবে তাঁদের মাঝে এ বিষয়ে সামান্য মতপার্থক্য হয়েছে যে, ‘আমীন’ শব্দটি কি আস্তে উচ্চারণ করা হবে, না জোরে। এটা মূলত ‘তানাওউয়ে সুন্নাহ’ বা সুন্নাহর বিভিন্নতা, যাকে ইখতিলাফে মুবাহও বলা হয় অর্থাৎ এখানে দুটি নিয়মই মোবাহ ও বৈধ এবং যে নিয়মই অনুসরণ করা হোক সুন্নত আদায় হবে।


কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, অন্য অনেক কিছুর মতো একেও মানুষ জায়েয-নাজায়েয ও সুন্নত-বিদআতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এমনকি একে কেন্দ্র করে বিবাদ- বিসংবাদেও লিপ্ত হয়েছে। এখনও অনেক জায়গায় দেখা যায়, কিছু মানুষ এত উঁচুস্বরে আমীন বলেন, যেন নামাযের মাঝেই অন্য মুসল্লীদের কটাক্ষ করেন যে, তোমরা সবাই সুন্নাহ তরককারী!নিচে আমিন আস্তে বলা সম্পর্কে বিস্তারিত দলিলসমূহ পেশ করা হল-

 ★আমীন একটি দুআ। আতা ইবনে রাবাহ বলেন, ‘আমীন হচ্ছে দুআ।’ ﺁﻣﻴﻦ ﺩﻋﺎﺀ (সহীহ বুখারী ১/১০৭) লুগাতুল হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মাজমাউল বিহারে (১/২০৫) আছে, ‘আমীন অর্থ, ইয়া আল্লাহ আমার দুআ কবুল করুন, বা এমনই হোক।’ ﻭﻣﻌﻨﺎﻩ ﺍﺳﺘﺠﺐ ﻟﻲ ﺃﻭ ﻛﺬﻟﻚ ﻓﻠﻴﻜﻦ অতএব প্রথমেই দেখা উচিত, দুআ কি জোরে করা উত্তম, না আস্তে। যদিও জোরে দুআ করাও জায়েয এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোরেও দুআ করেছেন, তবে দুআর মূল তরীকা হল আস্তে করা। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- ﺍﺩﻋﻮﺍ ﺭﺑﻜﻢ ﺗﻀﺮﻋﺎ ﻭﺧﻔﻴﺔ তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ডাক কাতরভাবে ও গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ : ৫৫)

★হাদিসগ্রন্থের সুপ্রসিদ্ব কিতাব আল-আলাস সহিহাইন কিতাবে হাদিস এসেছে-
 ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻭَﺍﺋِﻞٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺻَﻠَّﻰ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣِﻴﻦَ ﻗَﺎﻝَ : ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦ{ ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﺁﻣِﻴﻦَ ‏» ﻳَﺨْﻔِﺾُ ﺑِﻬَﺎ ﺻَﻮْﺗَﻪُ " ‏«ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﺮْﻁِ ﺍﻟﺸَّﻴْﺨَﻴْﻦِ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺨَﺮِّﺟَﺎﻩُ »(হাদিস নং-১২০০)
 অর্থাৎ হযরত ওয়ায়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত: তিনি রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে নামায পড়ছিলেন। যখন রসূলুল্লাহ স. ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ বললেন তখন নীরবে ‘আমীন’ বললেন। হাকেম বলেন: এ হাদীসটি বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ। তবে হাদীসটি বুখারী-মুসলিম রহ. কেউই বর্ণনা করেননি।

এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ তইয়ালীসী রহ. তাঁর সুনানেও বর্ণনা করেছেন। (হাদীস নম্বর- ১১১৭) হজর ইবনুল আম্বাস ব্যতীত উক্ত হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর হজর ইবনুল আম্বাস ﺛﻘﺔٌ “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৯৫০)
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় রাসুল( সাঃ)আমিন আস্তে বলতেন।

★হাদিস শাস্ত্রের আরেক প্রসিদ্ব কিতাব আবু দাউদ শরীপে এসেছে-
 ﺃَﻥَّ ﺳَﻤُﺮَﺓَ ﺑْﻦَ ﺟُﻨْﺪُﺏٍ، ﻭَﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺑْﻦَ ﺣُﺼَﻴْﻦٍ، ﺗَﺬَﺍﻛَﺮَﺍ ﻓَﺤَﺪَّﺙَ ﺳَﻤُﺮَﺓُ ﺑْﻦُ ﺟُﻨْﺪُﺏٍ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺣَﻔِﻆَ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳَﻜْﺘَﺘَﻴْﻦِ ﺳَﻜْﺘَﺔً ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻭَﺳَﻜْﺘَﺔً ﺇِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻦْ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓِ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻَ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ ﻓَﺤَﻔِﻆَ ﺫَﻟِﻚَ ﺳَﻤُﺮَﺓُ ﻭَﺃَﻧْﻜَﺮَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥُ ﺑْﻦُ ﺣُﺼَﻴْﻦٍ ﻓَﻜَﺘَﺒَﺎ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﺑَﻰِّ ﺑْﻦِ ﻛَﻌْﺐٍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺑِﻪِ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺭَﺩِّﻩِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺃَﻥَّ ﺳَﻤُﺮَﺓَ ﻗَﺪْ ﺣَﻔِﻆَ .
অর্থাৎ  হযরত সামুরা বিন জুুনদুব ও ইমরান বিন হুছইন রা. পরস্পর আলোচনা করার সময় হযরত সামুরা রা. বললেন: তিনি রসূলুল্লাহ স. থেকে দু’টি নীরবতা স্মরণ রেখেছেন। একটি নীরবতা হলো তাকবীরে তাহরিমা বলার পর। অপরটি হলো ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ َ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻻ বলার পর। এ কথাটি হযরত সামুরা স্মরণ রাখলেও হযরত ইমরান অস্বীকার করায় উভয়ে এ ব্যাপারটি হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা.-এর নিকটে লিখে জানালেন। তিনি তাঁদের পত্রের জবাবে জানালেন যে, সামুরা হাদীসটি সঠিকভাবে স্মরণ রেখেছেন।
 (আবু দাউদ: ৭৭৯) হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের উঁচু মানের ﺛﻘﺔٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী। শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে বলেন: ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ “এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য, সহীহ হাদীসের রাবী”। (মুসনাদে আহমাদ: ২০১৬৬)
এই হাদিস দ্বারাও বুঝা যায় রাসুল( সাঃ)আমিন আস্তে বলতেন।

 ★হাদিস শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ব আরেক কিতাব (সুনানে নাসাঈ ১/১৪৭) পৃষ্টায় এসেছে-
 ﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﺗﻘﻮ ﺁﻣﻴﻦ، ﻭﺇﻥ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻳﻘﻮﻝ ﺁﻣﻴﻦ، ﻓﻤﻦ ﻭﺍﻓﻖ ﺗﺄﻣﻴﻨﻪ ﺗﺄﻣﻴﻦ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
অর্থাৎ  ইমাম যখন বলে - ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ তখন তোমরা বল আমীন। কারণ ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলবে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
 পাঠক বৃন্দ লক্ষ করুন,, এখানে কি বলা হয়েছে,,??? এখানে বলা হয়েছে : **ফেরেশতাগণ বলেন আমীন এবং ইমামও বলেন আমীন।
** ইমামও এ সময় আমিন বলে কথাটি তখনই বলা চলে যখন ইমাম নিঃশব্দে আমিন বলে। ফেরেশতাগন যেমন নিঃশব্দে আমিন বলার কারনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এসময় ফেরেশতাগন আমিন বলে। তদ্রুপ ইমামও নিঃশব্দে বলার কারনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এ সময় ইমামও আমীন বলে। তাছাড়া এখানে ফেরেশতাগনের আমীন বলার সংগে মিল রেখে আমীন বলতে বলা হয়েছে। আর তারা তো নিঃশব্দে আমীন বলে থাকেন। সুতরাং এই হাদিসের উপর আমল তাদেরই সহিহ হবে যারা নিঃশব্দে আমীন বলবে।

 ★এখন আমীন আস্তে বলা সম্পর্কে সাহাবিদের  কিছু আছার পেশ করছি।যথা-
১. হযরত ওমর রা. বলেন,
ﺃﺭﺑﻊ ﻳﺨﻔﻴﻬﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ : ﺍﻟﺘﻌﻮﺫ ﻭﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺁﻣﻴﻦ ﻭﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻭﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ
অর্থাৎ- চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ।
 (ইবনে জারীর, কানযুল উম্মাল ৮/২৭৪; বিনায়াহ ২/২১ ২

★. আবু ওয়াইল রাহ. বলেন,
 ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻲ ﻭﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺠﻬﺮﺍﻥ ﺑﺒﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﻻ ﺑﺎﻟﺘﻌﻮﺫ، ﻭﻻ ﺑﺎﻟﺘﺄﻣﻴﻦ، ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭﻓﻴﻪ ﺃﺑﻮ ﺳﻌﺪ ﺍﻟﺒﻘﺎﻝ، ﻭﻫﻮ ﺛﻘﺔ ﻣﺪﻟﺲ
 অর্থাৎ- খলীফায়ে রাশেদ আলী রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বিসমিল্লাহ উঁচু আওয়াজে পড়তেন না। তেমনি আউযুবিল্লাহ ও আমীনও। . (আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৯৪০৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১০৮)

 ★হযরত আবু ওয়াইল থেকে বর্ণিত,
ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﻋﻠﻲ ﻳﺠﻬﺮﺍﻥ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﻻ ﺑﺂﻣﻴﻦ
 অর্থাৎ হযরত ওমর রা. ও হযরত আলী রা. বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়তেন না।
 . (ইবনে জারীর তবারী ; আলজাওহারুন নকী ১/১৩০)

★হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,
ﻳﺨﻔﻲ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺛﻼﺛﺎ : ﺍﻻﺳﺘﻌﺎﺫﺓ ﻭﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺁﻣﻴﻦ
অর্থাৎ- ইমাম তিনটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়বে : আউযুবিল্লাহ ..., বিসমিল্লাহ ... ও আমীন।
  . (আলমুহাল্লা ৩/১৮৪)

★ ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,
ﺃﺭﺑﻊ ﻳﺨﻔﻴﻬﻦ ﺍﻹﻣﺎﻡ : ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺍﻻﺳﺘﻌﺎﺫﺓ ﻭﺁﻣﻴﻦ، ﻭﺇﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﻦ ﺣﻤﺪﻩ ﻗﺎﻝ ﺭﺑﻨﺎ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ .
অর্থাৎ-চারটি বিষয় ইমাম অনুচ্চস্বরে পাঠ করবে : বিসমিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ, আমীন ও সামিআল্লাহর পর রাববানা লাকাল হামদ।


★ অন্য বর্ণনায় আছে,
ﺧﻤﺲ ﻳﺨﻔﻴﻬﻦ : ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻭﺑﺤﻤﺪﻙ ﻭﺗﻌﻮﺫ ﻭﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ ﻭﺁﻣﻴﻦ ﻭﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺑﻨﺎ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ
 অর্থাৎ-পাঁচটি বিষয় অনুচ্চস্বরে পড়া হয় : সুবহানাকাল্লাহুম্মা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন ও আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ।
. (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৮৬ )
উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে সুরা ফাতিহা শেষে আমিন আস্তে বলা উত্তম হওয়া এটা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।তবে যে সমস্ত বর্ণনায় জোরের কথা এসেছে তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য।



Tuesday, September 20, 2016

★★★★বিজ্ঞান ও কুরআনে মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর।****

কুরআন শরীফ মানুষের সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: অর্থাৎ, আর আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির সারাংশ থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরুপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি। অবশেষে তাকে একটি নতুনরুপে দাড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টি কর্তা কতই না কল্যাণময়। (সূরা মু’মিনুন: ১২-১৪) আরবী ” ﺍﻟْﻌَﻠَﻘَﺔَ ” (আলাকা) শব্দের তিনটি অর্থ রয়েছে। ১. জোক ২. সংযুক্ত জিনিস ৩. রক্তপিন্ড আমরা যদি জোককে গর্ভস্থ সন্তানের সাথে মেলাতে যাই তাহলে,আমরা দু’টির মধ্যে সামঞ্জস্য দেখতে পাইজোক যেমন অন্যের রক্ত খায় তেমনি উক্ত ভ্রুন তার মায়ের রক্ত খেয়ে বেচে থাকে। দ্বিতীয় অর্থের আলোকে আমরা যদি তাকে “সংযুক্ত জিনিস” অর্থে নিই তাহলে দেখতে পাই যে,গর্ভস্থ ভ্রুন মায়ের গর্ভের সাথে লেপ্টে আছে। তৃতীয় অর্থের আলোকে আমরা উক্ত শব্দের “রক্তপিন্ড” অর্থ গ্রহণ করলে দেখতে পাব যে, তার বাহ্যিক অবস্থা ও তার সংরক্ষিত খাচা (আবরণ) রক্ত পিন্ডের মতই দেখায়। উক্ত অবস্থায় এখানে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বর্তমান থাকে। এতদসত্বেও তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই রক্ত সঞ্চালিত হয় না।সুতরাং, বলা যায়- এ অবস্থা রক্তপিন্ডের মতই। উক্ত “আলাকা” শব্দের তিনটি অর্থের সাথেই ভ্রুনের বিভিন্ন স্তরের গুণাবলী হুবহু মিলে যাচ্ছে। কুরআন শরীফের আয়াতে উল্লেখিত ভ্রুনের ২য় স্তর হল-” ﻣُﻀْﻐَﺔً ” (মুদগাহ)। ﻣُﻀْﻐَﺔً হল চর্বিত দ্রব্য। যদি কেউ ১ টুকরা লোবান নিয়ে দাতে চর্বন করার পর তাকে ভ্রুনের সাথে তুলনা করতে যায় তাহলে, দেখতে পাবে দাতে চর্বন করার পর উক্ত দ্রব্য যেমন দেখায় সেটার সাথে ভ্রুনের হুবহু মিল রয়েছে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৮) আজ বিজ্ঞানীরা মাইক্রোস্কোপসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে এগুলো আবিস্কার করেছে কুরআন নাযিল হওয়ার দেড় হাজার বছর পর। তাহলে, এত কিছু জানা মুহাম্মদ(সাঃ)এর জন্য কেমন করে সম্ভব ঐ সময়ে যখন এ সবের কিছুই আবিস্কৃত হয়নি? ১৬৭৭ খৃষ্টাব্দে হাম ও লিউয়েনহোক নামক দুই বিজ্ঞানী মাইক্রোস্কোপ দিয়ে মানুষের বীর্যের মধ্যে জীবনের অস্তিত্ব (Spermatozoma) খুজে পান রাসুল(সাঃ) এর যুগের এক সহস্রাধিক বছর পর। এ দুইজন বিজ্ঞানীই আগে ভূলক্রমে বিশ্বাস করেছিলেন যে, মানুষের বীর্যের মধ্যে উক্ত কোষের রয়েছে অতি সামান্য প্রক্রিয়া। নারীর ডিম্বানুতে আসার পর তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (মানবদেহের প্রবৃদ্ধি-মুর ও পারসাউড, ৫ম সংস্করণ, পৃষ্ঠা-৯) আর প্রফেসর কেইথ এল. মুর বিশ্বের একজন প্রসিদ্ধ ভ্রুন বিজ্ঞানী এবং “মানবদেহের প্রবৃদ্ধি” গ্রন্থের লেখক;যা বিশ্বের আটটি ভাষায় ছাপা হয়েছে।এটা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বই।এ বইটি আমেরিকার বিশিষ্ট্য একটি গবেষণা বোর্ড কর্তৃক কোন একক লেখকের শ্রেষ্ঠ বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেইথ এল.মুর হচ্ছেন কানাডার টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা ও কোষ বিভাগের প্রফসর।তিনি ওখানে মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অধীনে মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী ডীন হিসেবে এবং আট বছর শরীরবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে তিনি কানাডায় শরীরবিদ্যা বিভাগের উপর কৃতিত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখার জন্য কানাডার শরীরবিদ্যা বোর্ডের পক্ষ থেকে J.C.B পুরস্কার পেয়েছিলেন।এছাড়া তিনি “কানাডিয়ান এন্ড এমেরিকান এসোসিয়শন এবং দি কাউন্সিল অফ দি ইউনিয়ন অফ বাইয়োলজিকাল সাইন্স” সহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১ সালে সউদীর দাম্মামে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল সেমিনারে তিনি বলেন:আমার জন্য এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল যে, আমি মানব শরীরের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে ভালোভাবে জানতে কুরআন শরীফের সহায়তা নিতাম।আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,এ বিষয়গুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে।কেননা,এ সকল বিষয়ের প্রায় সব কিছুই তার ইন্তেকালের কয়েকশত বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে।এ ব্যাপারটি প্রমাণ করে যে, মুহাম্মদ (সাঃ)আল্লাহ তায়ালার সত্য নবী।(“হাজিহী হিয়াল হাকিকাহ তথা এটাই সত্য” নামক ভিডিও ডকুমেন্টারী থেকে সংগৃহীত) এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হল- তাহলে কি এর অর্থ দাঁড়ায়-কুরআন আল্লাহ তায়ালার বাণী? তিনি জবাব দিলেন:”আমি এ কথা মেনে নিতে কুন্ঠাবোধ করি না।” প্রফেসর মুর একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন:”কুরআন ও হাদীসে মানবভ্রুনের বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার সময়কার বিভিন্ন স্তরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিভিন্ন নামে ভাগ করেছে।”এর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত চমৎকার ও বিস্তৃত অর্থ নির্দেশ করে থাকে।যা আধুনিক শরীর বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের সাথে সংগতিপূর্ণ।বিগত চার বছরে সপ্তম শতাব্দীতে নাযিলকৃত কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানবভ্রুন নিয়ে গবেষণা করে বিস্ময়কর ফলাফল পাওয়া গেছে। এরিস্টোটল ভ্রুন বিদ্যার জনক হওয়া সত্বেও খৃষ্টপুর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মুরগীর ডিমের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে,মুরগীর বাচ্চার সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় কয়েকটি স্তরে।তবে, তিনি স্তরগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেন নি।ধরে নেয়া যায় যে,কুরআন নাযিলের সময় খুব কমই জানা ছিল ভ্রুনের স্তরগুলো সম্বন্ধে;যা সপ্তম শতাব্দীতে বিজ্ঞানের কোন কিছুর উপর নির্ভর করে তা জানার সুযোগ ছিল না। এখানে এসে শুধু একটি মাত্র নির্ভরযোগ্য ফলাফলে আসা যায় যে, এসমস্ত জ্ঞান মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে এসেছে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। কারণ, তিনি ছিলেন নিরক্ষর তার এগুলো জানার কথা ছিল না। এছাড়া অন্য কোথাও থেকে তার মত নিরক্ষর লোককে যে ট্রেনিং দেয়া হবে তাও ছিল অসম্ভব।

Monday, September 12, 2016

হাবিল ও কাবিলের কাহিনী

যখন হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয় তখন হাওয়ার গর্ভ থেকে প্রত্যেকবারেই হযরত আদমের দুটি সন্তান এরুপ যমজ জম্ম গ্রহন করিত যে একটি পুত্র আর একটি কন্যা। তখন ভ্রাতা ভগ্নি ছাড়া হযরত আদম (আঃ) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভ্রাতা ভগ্নি পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ তায়ালা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আঃ) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এই নির্দেশ জারি করেন যে একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহন করিবে তারা পরস্পর সহোদর ভ্রাতা ভগ্নি গন্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহনকারীনী কন্যা সহোদরা ভগিনী হিসাবে গন্য হবে না। তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। অর্থাৎ ১ম বারের পুত্র ২য় বারের কন্যা আর ২য় বারের পুত্র এবং ১ম বারের কন্যা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত। অর্থাৎ আদমের শরীয়তে প্রয়োজনের কারনে গর্ভের ভিন্নতাকে বংশের ভিন্নতা হিসাবে গন্য করা হত। এ পরম্পরায় আদম (আঃ) এর দুটি পুত্র ভুমিষ্ট হল। একজনের নাম রাখা হল হাবীল আর অন্য জনের নাম রাখা হল কাবীল। উভয়ের সংগে এক এক জন কন্যাও জন্মেছিল। সে সময়ের বিধান অনুযায়ী হাবীলের বিবাহ কাবীলের ভগ্নির সহিত এবং কাবীলের বিবাহ হাবীলের ভগ্নির সহিত নির্ধারিত হল। কাবীলের সহজাত ভগ্নিটি ছিল অপেক্ষাকৃত পরমাসুন্দরী এবং হাবীলের ভগ্নিটি ছিল কুশ্রি ও কদাকার। অতএব কাবীল নিজেই তার ভগ্নির বিবাহের প্রার্থী হল। এতে হাবীল রাজী না হওয়ায় কাবীল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবীলের শত্র“ হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে আমার সহজাত ভগ্নি কেই আমার সংগে বিবাহ দিতে হবে। আদম (আঃ) কাবীলকে বহু বুঝালেন কিন্তু সে মানলনা। অবশেষে আদম (আঃ) তার শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবীলের আব্দার প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি কাবীলের মুখ বন্ধ করে হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দুর করার উদ্দেশ্যে এ মিমাংশা করলেন যে তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কোরবানী (মান্নত) পেশ কর। যার কোরবানী আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে সেই এ কন্যাকে বিবাহ করতে পারবে। আদম (আঃ) এর নিশ্চিত বিশ্বাস যে, যে সত্য পথে আছে তার কোরবানীই গৃহীত হবে। এজন্যই তিনি এই মিমাংশা করলেন যেন কাবিলের ঝগড়া বিবাদেরও কথা বলিবার স্থান না থাকে। ইহার অর্থ এ নহে যে কাবীলের পক্ষে তাহার ভগ্নি হালাল হবার সম্ভাবনা ছিল। তৎকালে কোরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পস্ট নিদর্শন ছিল এই যে আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কোরবানীকে পোড়াইয়া দিত, যে কোরবানীকে অগ্নি পোড়াইয়া দিত না তাকে প্রত্যাখ্যাত মনে করা হত। মোট কথা উভয়েই স্ব স্ব কোরবানী (মান্নত) উপস্থিত করল। হাবীল ভেড়া দুম্বা ইত্যাদি পশুু পালন করত তাই সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কোরবানীর জন্য উপস্থিত করল। কাবীল কৃষি কাজ করত সে কিছু শস্য গম পেশ করল। অতঃপর আকাশ থেকে অগ্নিশিখা অবতরন করে হাবীলের কোরবানীকে পোড়াইয়া দিল এবং কাবীলের কোরবানী যেমন ছিল তেমনি পড়ে রইল। এ মিমাংশায়ও যখন কাবীল হেরে গেল তখন তার দুঃখ ও ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল। অত্যাচারী যখন কোন প্রমান উপস্থিত করতে না পারে তখন প্রতিশোধ গ্রহনের পিছনে লেগে যায়। সে মর্মে কাবীল হাবীলের প্রানের শত্র“ হয়ে গেল। এবং প্রকাশ্যে ভাইকে প্রানহানীর হুমকি দিয়ে বলে দিল অবশই আমি তোমাকে হত্যা করব। হাবীল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারন করে বলল ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻘﻴﻦ আল্লাহ তায়ালার নিয়ম এই যে তিনি খোদাভীরু পরহেজগারের কর্মই গ্রহন করেন। তুমি ভিতি অবলম্বন করলে তোমার কোরবানীও গৃহীত হত। তুমি তা করনি তাই কোরবানীও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কি? কিন্তু এতদ্ সত্ত্বেও যদি তোমার ইহাই ইচ্ছে হয়ে থাকে তবে তুমি জেনে রাখ যে তুমি যদি আমাকে হত্যা করার জন্য আমার প্রতি হস্ত প্রসারিত কর তথাপি আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে কখনো আমার হাত বাড়াব না। কেননা আমি বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। আমার ইচ্ছা এই যে আমার দ্বারা কোন পাপ কার্য সংগঠিত না হউক তুমি আমার উপর যত যুলুমই করনা কেন ইহার ফলে তুমি আমার পাপ এবং তোমার পাপ সমস্তই নিজের মাথায় উঠিয়ে নাও অনন্তর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এরুপ শাস্থি অত্যাচারীদের হয়ে থাকে অতঃপর প্রবৃত্তি তাকে স্বীয় ভ্রাতিৃ হত্যার প্রতি আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলল অতএব সে তাকে হত্যাই করে ফেলল। (এমনি তো পুর্ব হতে কাবীল ভ্রাতৃ হত্যার সংকল্প করেছিল যখন শুনল সে প্রতিরোধও করবেনা। ভাইয়ের উদারবাণী শুনে তো তার হৃদয় বিগলিত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু তা না হয়ে নিশ্চন্ত চিত্তে তাকে হত্যা করে ফেলল ) ফলে সে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল। (পার্থিব ক্ষতি এই যে স্বীয় বাহুর বল আত্মার শান্তি হারিয়ে বসল আর কিয়ামতের দিন কঠোর শাস্থিতে নিমজ্জিত হবেই। এখন হত্যা কার্য সমাধা করে হয়রান হয়ে গেল যে লাশ কি করবে? কি করে এই পাপ লুকিয়ে রাখবে তাহা ভেবে কিছুই ঠিক করতে পারল না ) এমতাবস্তায় আল্লাহতায়ালা একটি কাক সেখানে প্রেরন করলেন। সে চঞ্চু এবং পায়ের নখের দ্বারা মাটি খুড়তে লাগল এবং অন্য একটি মরা কাককে ঐ গর্তের মধ্যে রেখে তার উপর মাটি চাপা দিতে লাগল যেন সে কাক কাবীলকে শিখাইয়া দেয় যে স্বীয় ভ্রাতা হাবীলের লাশ কিভাবে ঢাকিবে। কাবীল ঘটনা উপলদ্ধি করে নিজে নিজে খুব অপমান বোধ করল যে কাকের ন্যায় বুদ্ধিও আমার নেই এবং অত্যন্ত আফসোসের সাথে সে বলতে লাগল আফসুস আমার অবস্থার প্রতি। আমি কি এ কাকের সমতুল্য হতে পারলাম না যে আপন ভ্রাতার মৃতদেহ আবৃত করি ফলে এই দুরবস্থায় সে অত্যন্ত লজ্জিত হল। (মায়েদা ২৭-৩১)

রাসুল (সাঃ)তার রওজা শরীপে স্বশরীরে জীবিত থাকার প্রমান।

বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু লোককে বলতে শুনা যায় যে রাসুল (সাঃ)তার রওজায় স্বশরীরে জীবিত নেই এবং আরেক দলকে বলতে শুনা যায় যে রাসুল (সাsmile মৃত্যুবরণই করেন নি।এই উভয় গ্রুপই ভুলের মধ্যে আছে বরং সঠিক মাসআলা হচ্ছে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ইনতেকাল করেছেন এটা যেমন অকাট্য সত্য তেমনি রাসুল (সাsmile ইন্তেকালের পর কবরের জগতে স্বশরীরে জিবীত রয়েছে এটাও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।নিম্নে রাসুল (সাঃ) যে তার রওজায় স্বশরীরে জিবীত এ সম্পর্কে কয়েকখানা দলিল পেশ করা হল- ★ইবনে মাজাহ শরিপ হাদিস নং ১৬৩২- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﺪﺭﺩﺍﺀ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﺈﻧﻪ ﻣﺸﻬﻮﺩ ﺗﺸﻬﺪﻩ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻭﺇﻥ ﺃﺣﺪﺍ ﻟﻦ ﻳﺼﻠﻲ ﻋﻠﻲ ﺇﻻ ﻋﺮﺿﺖ ﻋﻠﻲ ﺻﻼﺗﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﺮﻍ ﻣﻨﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻗﺎﻝ ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﺃﻥ ﺗﺄﻛﻞ ﺃﺟﺴﺎﺩ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻨﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﻲ ﻳﺮﺯﻕ অর্থাৎ হযরত আবুদ দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ বলেন,তোমরা শুক্রবারে আমার উপরে বেশি বেশি দরুদ শরিপ পাঠ কর।কেননা শুক্রবারে আল্লাহর অগনিত ফেরেশতা তোমাদের নিকট উপস্হিত হয়।আর তোমাদের যেকোন লোক আমার উপরে দরুদ পড়ার সাথে সাথেই আমার কাছে পোঁছিয়ে দেওয়া হয়।রাবী বলেন ,আমি রাসুল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম,আপনার মৃত্যুর পরেও কি আপনার কাছে দরুদ পোঁছানো হবে?তখন রাসুল সাঃ বলেন হ্যাঁ আমার মৃত্যুর পরও আমার কাছে দরুদ পোঁছানো হবে।আর জেনে রাখ,আল্লাহ তায়ালা জমিনের উপর নবীদের দেহ হারাম করে দিয়েছেন।সুতরাং আল্লাহর নবী জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয়। উপরের হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে রাসুল সাঃ সহ সমস্ত নবীগনই কবর জগতে জীবিত। ★আবু দাউদ শরিপ ১৫৩১ নং হাদিস এসেছে, قال النبي صلي الله عليه و سلم,ﺇﻥ ﺃﻓﻀﻞ ﺃﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻴﻪ ﺧُﻠق ﺁﺩﻡ ، ﻭﻓﻴﻪ ﻗﺒِﺾ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻟﻨﻔﺨﺔ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺍﻟﺼﻌﻘﺔ ، ﻓﺄﻛﺜﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻴﻪ ، ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺗﻜﻢ ﻣﻌﺮﻭﺿﺔ ﻋﻠﻲّ ‏» ﻗﺎﻟﻮﺍ: ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ! ﻭﻛﻴﻒ ﺗُﻌﺮﺽ ﺻﻼﺗﻨﺎ ﻋﻠﻴﻚ ، ﻭﻗﺪ ﺃﺭﻣﺖَ ‏( ﻗﺎﻝ: ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ:ﺑَﻠﻴﺖَ ‏) ، ﻗﺎﻝ : ‏« ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﺃﺟﺴﺎﺩ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎء অর্থাৎ রাসুল( সাঃ) বলেন,নিশ্চয় সবচেয়ে সম্মানিত দিন হচ্ছে শুক্রবার দিন।কারন এ দিনে হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টি করা হয়েছে ,এ দিনেই আদমের মৃত্যু হয়েছে, এ দিনেই শৃংগায় ফুঁ দেওয়া হবে,এবং এ দিনেই কিয়ামত হবে।সুতরাং তোমরা এই দিনে বেশি বেশি করে দরুদ পড়।কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।সাহাবিরা বলল,হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ ) আপনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন এবং আপনার শরীর গলে যাবে তখন কিভাবে আপনার কাছে আমাদের দরুদ পোঁছানো হবে?তখন রাসুল সাঃ বলেন,নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জমিনের উপর নবীদের দেহ খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন। এ হাদিস দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে রাসুল সাঃ সহ সমস্ত নবীরাই কবরে স্বশরীরে বিদ্যমান আছেন। ★সহীহ মুসলিম হাদিস নং ২৩৭৫, ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ r ﻗﺎﻝ " : ﻣﺮﺭﺕ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﺳﻰ ﻭﻫﻮ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ " ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻋﻨﺪ ﻛﺜﻴﺐ ﺍﻷﺣﻤﺮ ﻭﻫﻮ ﻗﺎﺋﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻲ ﻗﺒﺮﻩ } অর্থাৎ রাসুল সাঃ বলেন, আমি (মিরাজের রাত্রিতে)কাসিবুল আহমার নামক স্হানে মুসা আঃ কে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। এ হাদিস দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে যে,মুসা নবী কবরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেছেন কারন তিনি কবরে জিবীত আছেন। তাহলে দেখুন মুসা আঃ এর যদি এ অবস্হা হয় আমাদের নবীর কি অবস্হা হবে? ★আরেক খানা হাদিসে এসেছে, ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏( ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ ﻳﺼﻠﻮﻥ ‏) ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺣﻴﺎﺓ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ﻓﻲ ﻗﺒﻮﺭﻫﻢ ‏[ ﺹ 2 ﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ } ﺍﻟﺴﻠﺴﻠﺔ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ 2/187 ‏(অর্থাৎ হযরত আনাস( রাঃ )থেকে বর্ণিত,রাসুল সাঃ বলেন,সমস্ত নবীগন তাদের কবরে জীবিত ,তারা কবরে নামাজ পড়তেছে। এ হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সমস্ত নবীগন কবরে কবর জগতে জীবিত আছে।আর আমাদের নবী সমস্ত নবীদের সরদার সে হিসেবে উনার শানও সমস্ত নবীদের থেকে বেশি হবে।

পাঁ ছুয়ে সালাম করা কি শিরক?একট পর্যালোচনা।

উত্তর:সম্মানিত লোকের কদমবুচি করে সম্মান করা শিরক নয় বরং এটা ইসলামি শরিয়তে সমপুরণরুপে জায়েয।নিচে এ ব্যাপারে হাদিসের দলিল পেশ করা হল- ★ইবনে মাজাহ শরিপ,হাদিস নং-3703عن صفوان بن عسال رض ان قوما من اليهود قبلوا يدا النبي عليه السلام و رجليهঅথাৎ হযরত সাফওয়ান বিন আসসাল রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,নিশচয় একদল ইহুদি রাসুল সাঃ এর দুহাত ও দুপায়ে চুম্বন করলেন।এ হাদিস থেকে বুঝা যায় কদমবুচি করা জায়েয ।এটা যদি শিরক হইত তাহলে রাসুল সাঃ ইহুদেরকে এই শিরকি কাজ থেকে বাধা দিতেন।এ হাদিসখানা ইমাম তিরমিজি রঃ আরও বিস্তারিতভাবে তার জামিউত তিরমিজিতে উললেখ করেছেন।হাদিসখানা উল্লেখ্ করার পর ইমাম তিরমিজি রঃ বলেছেন-هذا حديث حسن صحيحঅথাৎ এ হাদিসখানা হাসান,সহীহ।(তিরমিজি হাদিস নং-2733) *আবু দাউদ শরিপ হাদিস নং-5225عن زارع رض قال لما قدمنا المدينۃ فجعلنا نتبادر من رواحلنا فنقبل يد رسول الله عليه السلام ورجليهঅথাৎ হযরত জারে রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,আমরা মদিনা শরিপ পোঁছে তাড়াহুড়া করে ছাওয়ারি হতে অবতরণ করে হুযুর সাঃ এর হাত পা চুম্বন করতে লাগলাম।এ হাদিস থেকেও বুঝা যায় কদমবুচি করা রাসুল সাঃ জায়েয করে গেছেন।কেননা রাসুল সাঃকে হযরত জারে সহ অনেক সাহাবি কদমবুচি করলেন কিনতু রাসুল সাঃ তাদেরকি নিষেধ করেন নি। *ইমাম বুখারি রঃ এর লিখিত ,الاداب المفرد,হাদিস নং976قال الاوزاعي بن عامر رض قدمنا فاخبرنا ان هذا رسول الله عليه السلام فقبلنا يداه و قدمهঅথাৎ হযরত আওযায়ি ইবনর আমের রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,আমরা আগমন করলাম।অতপর আমরা জানলাম যে উনি হচছে আল্লাহর রাসুল সাঃ।অতপর আমরা তার হাতে ও পায়ে চুম্বন করলাম। *ইমাম বাজজার রঃ এর লিখিত কিতাব, মুসনাদে বাজজার হাদিস নং4450عن عبد الله بن بريدۃ رض عن ابيه قال جاء رجل الي النبي عليه السلام فقال ارني ايۃ قال اذهب الي تلك الشجرۃ فادعها فذهب اليها فقال ان رسول الله عليه السلام يدعوك فمالت علي كل جانب منها حتي قلعت عروقها ثم اقبلت حتي جاءت الي رسول الله عليه السلام فامرها رسول الله ان ترجع فقام الرجل فقبل راسه و يديه و رجليه و اسلمঅথাৎ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ রাঃ তার পিতা থেকে বরণনা করেন,তিনি বলেন,এক ব্যকতি রাসুল সাঃ এর নিকট এসে বললেন,আমাকে কিছু নিদশন দেখান।রাসুল সাঃ তাকে বললেন,ঐ গাছের নিকট গিয়ে তাকে আমার কাছে ডেকে আন।লোকটি গাছের নিকট গিয়ে গাছকে উদ্যেশ্যে করে বললেন,রাসুল সাঃ তোমাকে ডাকতেছেন।গাছটি সাথে সাথে সমূলে রাসুল সাঃ এর নিকট আসল।অতপর রাসুল সাঃ গাছটিকে আবার স্বসানে ফিরে যাওয়ার নিদেশ দিলেন।রাসুল সাঃ এর এ মুজেজাটি দেখে লোকটি রাসুল সাঃ এর মাথা,দুহাত,দুপায়ে চুম্বন করলেন এবং ইসলাম গ্রহন করলেন।উপরের এই দুই হাদিস দারাও বুঝা গেল কদমবুচি জায়েয। *শুধু রাসুল সাঃ নয়,সাহাবাদের মধ্যেও এ কদমবুচির প্রচলন ছিল।যেমন ইমাম বুখারির الاداب المفرادকিতাবের975নং হাদিসে এসেছে عن صهيب رض رايت عليا يقبل يد العباس و رجليهঅথাৎ-হযরত সুহাইব রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,আমি হযরত আলি রাঃ কে হযরত ইবনে আব্বাসের হাত ও পায়ে চুম্বন করতে দেখেছি। উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল,কদমবুচির আমলটি রাসুলের যুগ থেকেই প্রমানিত।যারা এটাকে শিরক বলতে চান তাদেরকে বলব,কোন জায়েয কাজকে বিনা প্রমানে শিরক বললে শরিয়তে তার কি হুকুম আপনারাই চিনতা করুন।অনেকে যুক্তি দেখায়,কদমবুচির সময় মাথা জুকে যায় এ জন্য এটা শিরকের সাথে মিল রাখে। তাদেরকে বলব যে যেখানে রাসুলের হাদিস আছে সেখানে যুক্তি অচল। উল্লেখ্য:কদমবুচি করা সুননাতে রাতিবা নয়।সুতরাং এটাকে সবসময়ের অভ্যাসে পরিনত করা ঠিক নয়।বরং এটা হল জায়েযের মাসআলা।যারা এটাকে শিরক বলে এবং যারা এটাকে ওয়াজিব মনে করে উভয়েই ভুল বিশাসে আছে।উপমহাদেশের অন্যতম ফকিহ আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গুয়ি রঃও তার লিখিত কিতাব ফতোয়ায়ে রশিদিয়া আকসির ৫৪৫ পৃষ্টায় কদমবুচি জায়েযের ফতোয়া দিয়ে গেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ।

ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জঙ্গিবাদের যে উত্থান ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়, তার সাথে শুধু গুটি কতেক মুসলিম জড়িত। বিশ্বের সকল বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদগণ এবং মূলধারার সকল ইসলামী সংগঠন ও সংস্থা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, এধরনের ব্যক্তিরা বিভ্রান্ত, বিপথগামী। এরা ইসলামের শত্রুদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। ইসলামের শত্রুরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওরা এদেরকে ইসলামের ভাব-মর্যাদা ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করছে। এসকল ব্যক্তি কোনভাবেই ইসলামের জন্য কল্যাণকর হতে পারেনা। তারা ইসলামকে বিশ্ববাসীর সামনে বিকৃত ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। জঙ্গিবাদীরা সাধারণত সে সকল জঘন্য কর্মকান্ড ঘটিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করতে চায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- (ক) বোমাবাজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা। (খ) মানুষ হত্যা ও (গ) আত্মঘাতী হামলা। বোমাবাজি ও অরাজকতা সৃষ্টি করা : জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন ধরনের জঘন্য কর্মকান্ড সংগঠিত করে থাকে, তার মধ্যে একটি হল বোমাবাজি করে অরাজকতা সৃষ্টি করা, সমাজে বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ করা, দাংগা-হাংগামা করা। পবিত্র কুরআনে এগুলোকে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ শব্দদয় দ্বারা অভিহিত করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ মহান আল্লাহর কাছে অতীব ঘৃণিত একটি মহাপাপ, কবীরা গুনাহ। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এ সমস্ত কাজকে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এগুলোর জন্যে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর বিপর্যয় ঘটাবে না।’ ﻭَﻻَ ﺗَﻌْﺜَﻮْْﺍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣُﻔْﺴِﺪِﻳْﻨَــ ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ তথা দাংগা হাংগামা করে বেড়িও না।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।’ ﻭَﺃَﺣْﺴِﻦْ ﻛَﻤَﺎ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻭَﻻَ ﺗَﺒْﻎِ ﺍﻟْﻔَﺴَﺎﺩَ ﻓِﻰْ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻻَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﻔْﺴِﺪِﻳْﻦَ ‘তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অুনগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারী, দুষ্কর্মীদের কর্ম সার্থক করেন না।’ মহান আল্লাহ ফিত্না সম্পর্কে ইরশাদ করেন : ﻭَﺻَﺪٌّ ﻋَﻦْ ﺳَﺒِﻴْﻞِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻛُﻔْﺮٌ ﺑِﻪِ ﻭَﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﻭَﺇِﺧْﺮَﺍﺝُ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﻣِﻨْﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَِﺘْﻠِــ ‘আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা, মসজিদে-হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিষ্কার করা, আল্লাহর নিকট বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফিতনা সৃষ্টি করা নরহত্যা অপেক্ষাও মহাপাপ। ﻭَﺍﻟْﻔِﺘْﻨَﺔُ ﺃَﺷَﺪُّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﺘْﻞِ ـ ‘আর ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ উপরোক্ত আয়াতসমূহে ফিতনা-ফাসাদ তথা অরাজকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ফিতনা-ফাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা জঙ্গিবাদকে হত্যার চেয়েও কঠিন ও গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের অপরাধ হত্যার সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে তাফসীর তাফহীমুল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘‘নর হত্যা নিঃসন্দেহে একটি জঘন্য কাজ কিন্তু কোনো মানবগোষ্ঠী বা দল যখন জোরপূর্বক নিজের স্বৈরতান্ত্রিক ও যুল্মতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়, সত্য গ্রহণ থেকে লোকদেরকে জোরপূর্বক বিরত রাখে এবং যুক্তির পরিবর্তে পাশবিক শক্তি প্রয়োগে জীবন গঠন ও সংশোধনের বৈধ ও ন্যায়সঙ্গত প্রচেষ্টার মুকাবিলা করতে শুরু করে তখন সে নরহত্যার চাইতেও জঘন্যতম অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়া পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা আল্লাহ ঘোষণা করেন : ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺟَﺰَﺍﺀ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻳُﺤَﺎﺭِﺑُﻮْﻥَ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟَﻪُ ﻭَﻳَﺴْﻌَﻮْﻥَ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻓَﺴَﺎﺩًﺍ ﺃَﻥْ ﻳُﻘَﺘَّﻠُﻮْﺍ ﺃَﻭْ ﻳُﺼَﻠَّﺒُﻮْﺍ ﺃَﻭْ ﺗُﻘَﻄَّﻊَ ﺃَﻳْﺪِﻳْﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢْ ﻣِّﻦْ ﺧِﻼﻑٍ ﺃَﻭْ ﻳُﻨْﻔَﻮْﺍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﻬُﻢْ ﺧِﺰْﻯٌ ﻓِﻰ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻰ ﺍﻵﺧِﺮَﺓِ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﻋَﻈِﻴْﻤٌــ ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ মানব হত্যা জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আরেকটি জঘন্য অপরাধ করে থাকে তা হলো মানব হত্যা। এটা বিভিন্নভাবে করে থাকে, গুপ্তভাবে, পেছন থেকে, বোমা মেরে কিংবা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দিয়ে। অথচ মানব জীবন মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻰْ ﺁﺩَﻡَ ﻭَﺣَﻤَﻠْﻨﻬُﻢْ ﻓِﻰْ ﺍﻟْﺒَﺮِّ ﻭَﺍﻟْﺒَﺤْﺮِ ﻭَﺭَﺯَﻗْﻨﻬُﻢْ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒﺖِ ﻭَﻓَﻀَّﻠْﻨﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻛَﺜِﻴْﺮٍ ﻣِّﻤَّﻦْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺗَﻔْﻀِﻴﻼً নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি, তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্ত্তর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। সেজন্য মহান আল্লাহ একজন মানবের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করেছেন। মানব জীবনের নিরাপত্তার প্রতি ইসলাম যতটা গুরুত্ব দিয়েছে অন্য কোন ধর্মে বা মতাদর্শে এর নযির নেই। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻞِ ﺫَﻟِﻚَ ﻛَﺘَﺒْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻨِﻰْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻧَﻔْﺲٍ ﺃَﻭْ ﻓَﺴَﺎﺩٍ ﻓِﻰ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﻗَﺘَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﻴَﺎﻫَﺎ ﻓَﻜَﺄَﻧَّﻤَﺎ ﺃَﺣْﻴَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎــ ‘এ কারণে আমি বনী ইসরাইলকে এরূপ লিখে দিয়ে ছিলাম যে, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কিংবা ভূ- পৃষ্ঠে কোন গোলযোগ সৃষ্টি করা ছাড়াই কাউকে হত্যা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই হত্যা করলো আর যে ব্যক্তি কোন একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকেই রক্ষা করলো।’ যে ব্যক্তি সংগত কারণ ছাড়া একজন মানুষকে হত্যা করে সে কেবল একজন মানুষকেই হত্যা করে না, বরং সে সমগ্র মানবতাকে হত্যা করে, অর্থাৎ সে একজন মানুষকে হত্যা করে এ কথাই প্রমাণ করলো যে তার মন-মানসিকতায়, চিন্তা-চেতনায় অন্য মানুষের প্রতি সামান্যতম সম্মান, মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতির চিহ্ন নেই। সেজন্য মহান আল্লাহ সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা যেভাবেই হোক না কেন নিষিদ্ধ করেছেন। নিম্নে এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন ও হাদীস হতে কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন তাকে ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া হত্যা করো না।’ ন্যায়সংগত কারণ তিনটি যা ইমাম আল বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (র) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের (রা) রিওয়ায়াতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘যে মুসলিম আল্লাহ এক এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়, তার রক্ত হালাল নয়, কিন্তু তিনটি কারণে তা হালাল হয়ে যায়। (১) বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সে যদি যিনা করে, তবে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করাই তার শরীয়তসম্মত শাস্তি। (২) সে যদি অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করে, তবে তার শাস্তি এই যে, কিসাস হিসেবে তাকে হত্যা করা হবে। (৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, তার শাস্তিও হত্যা।’ (আলোচ্য হাদীসে এবং তৎসম্পর্কিত কুরআনের আয়াতে কিসাস নেয়ার অধিকার নিহত ব্যক্তির অভিভাবককে দেয়া হয়েছে। যদি তার রক্ত সম্পর্কিত কোন অভিভাবক না থাকে তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার প্রধান এ অধিকার পাবে। কারণ সরকারও একদিক দিয়ে সকল মুসলিমের অভিভাবক।) কেউ কেউ ন্যায় সংগত হত্যার কারণ উপরোক্ত তিনটির সাথে আরো তিনটি বর্ণনা করেন : তাহলো- (৪) জিহাদের ময়দানে সত্যদ্বীনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের হত্যা করা। (৫) ডাকাতি অথবা রাজপথে রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা। (৬) কোন ব্যক্তি যদি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে জঙ্গিপন্থা অবলম্বন, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি, জনজীবনে আতঙ্ক-অশান্তি সৃষ্টি করে এবং ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পতন ঘটানোর চেষ্টা করে তাকে হত্যা করা। তবে উপরোক্ত ছয়টি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণে মানুষকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু এ সকল অবস্থায় মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার অধিকার শুধু রাষ্ট্রীয় সরকার বা কর্তৃপক্ষের জন্য নির্ধারিত, অর্থাৎ আদালত রায় দেবে আর সরকার কর্তৃক নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারীরা তা বাস্তবায়ন করবে। জনগণকে কোন অবস্থাতেই আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি। মহান আল্লাহ ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যা নিষিদ্ধ সম্পর্কে আরো ঘোষণা করেন : ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻘْﺘُﻞْ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﻣُّﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ ﻓَﺠَﺰَﺁﺅُﻩُ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﺧَﺎﻟِﺪًﺍ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﻭَﻏَﻀِﺐَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻟَﻌَﻨَﻪُ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻪ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻋَﻈِﻴْﻤًﺎــ ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানেই সে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে। আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তার উপর অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্ত্তত করে রাখবেন।’ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻻَ ﻳَﺪْﻋُﻮْﻥَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﺍﺧَﺮَ ﻭَﻻَ ﻳَﻘْﺘُﻠُﻮْﻥَ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲَ ﺍﻟَّﺘِﻰْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻭَﻻَ ﻳَﺰْﻧُﻮْﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَﻟِﻚَ ﻳَﻠْﻖَ ﺃَﺛَﺎﻣًﺎـــﻴُﻀﻌَﻒْ ﻟَﻪ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻭَﻳَﺨْﻠُﺪْ ﻓِﻴْﻪِ ﻣُﻬَﺎﻧًﺎ ‘এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদাত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সংগত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করবে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামাতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।’ নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো, যা সুস্পষ্টভাবে ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া মানব হত্যাকে সম্পূর্ণ নিষেধ করে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন : ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘হে লোক সকল! তোমাদের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরুর উপর তোমাদের হস্তক্ষেপ হারাম করা হলো, তোমাদের আজকের এই দিন, এই (যিলহজ্জ) মাস এবং এই (মক্কা) নগরী যেমন পবিত্র ও সম্মানিত, অনুরূপভাবে উপরোক্ত জিনিসগুলোও সম্মানিত ও পবিত্র। সাবধান! আমার পর তোমরা পরস্পরের হন্তা হয়ে কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যেও না’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘তোমরা সাতটি সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক। আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, শরীয়াতের বিধিবর্হিভূত কোন অবৈধ হত্যাকান্ড ঘটানো, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, সুদ খাওয়া, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানো এবং সরলমতি সতী মু’মিন মহিলাদের ওপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি : আল্লাহর নিকট (বিনা অপরাধে) কোন মু’মিনের হত্যাকান্ড সমগ্র পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘কোন মুসলিম ব্যক্তির নিহত হওয়ার তুলনায় সমগ্র পৃথিবীর পতন আল্লাহর দৃষ্টিতে অতি তুচ্ছ ব্যাপার। ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘মুমিন যে পর্যন্ত অবৈধভাবে কাউকে হত্যা না করে, সে পর্যন্ত সে ইসলামের উদারতার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে।’ আল কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসমূহ ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যাকে কোনভাবেই সমর্থন করে না, বরং সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করে, অধিকন্তু ন্যায় সংগত হত্যার বিধান রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে, কোন দল বা গোষ্ঠীকে এই অধিকার দেয়া হয়নি। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম। আত্মঘাতী হামলা বা সুইসাইড স্কোয়াড জঙ্গিবাদীরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অপর যে জঘন্য কর্মটি করে থাকে সেটা হলো আত্মঘাতী হামলা। আর এটি করে সাধারণতঃ সুই সাইড স্কোয়াড বা আত্মঘাতী দল গঠনের মাধ্যমে। কিছু সহজ-সরল সাদাসিধে মুসলিমকে জান্নাত পাবার লোভ, কিংবা অন্যান্য পুরস্কারের কথা বলে এ কাজে নিয়োজিত করে থাকে। অথচ মহান আল্লাহ যে ভাবে অপরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, সেভাবে নিজের জীবনকেও ধ্বংস করতে নিষেধ করেছেন। আত্মহত্যা করতে বারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত ও হাদীস উদ্ধৃত করা হলো। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮْﺍ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳْﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِــ ‘তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।’ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴْﻤًﺎــ ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর দয়ালু।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যে ব্যক্তি নিজেকে শ্বাসরুদ্ধ করবে (আত্মহত্যা করবে) সে জাহান্নামে নিজেকে শ্বাসরুদ্ধ করবে। আর যে নিজেকে আঘাত করবে (আত্মহত্যা করবে), সে জাহান্নামেও নিজেকে আঘাত করবে।’ ــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামে বসেও সে অনবরত উচ্চ স্থান থেকে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের মধ্যে বসেও সে অনন্তকাল ধরে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোন লোহার অস্ত্র দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে বসে অনন্তকাল ধরে সেই অস্ত্র দিয়েই নিজেকে কোপাতে থাকবে। ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আহত হয়ে কষ্ট পাচ্ছিল। তাই সে এক খানা ছুরি দ্বারা নিজের দেহে আঘাত করলো। ফলে রক্তপাত হয়ে সে মারা গেল, তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার বান্দা আমাকে ডিংগিয়ে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম। ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ ‘যে ব্যক্তি কোন জিনিস দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামাতের দিনও তাকে সে জিনিস দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে। কোন মু’মিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার শামিল, আর কোন মু’মিনকে কাফির বলা তাকে হত্যা করার শামিল।’ পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত কয়েকটি আয়াত ও কয়েকটি হাদীসের আলোকে আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কোন অবস্থায় আত্মহত্যা করা যাবে না। আত্মঘাতী হামলা করে মানুষ হত্যা তো দূরের কথা, উপরোক্ত আলোচনায় আরো স্পষ্ট হয়, যারা এই অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। জঙ্গিবাদ দমনে করণীয় আমরা মনে করি জঙ্গিবাদ কোন বড় ধরনের সমস্যা নয়। গুটি কতেক ব্যক্তি এর সাথে জড়িত। এরা অসংগঠিত ও অপরিকল্পিত। যদি সদিচ্ছার সাথে কিছু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া যায় তাহলে এ সমস্যাটি সহজে দূর করা যাবে বলে বিশ্বাস করি, নিম্নে এ লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাব পেশ করা হলো। ১. যে সকল মুসলিম দেশে জঙ্গিবাদ সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের শাসকদের বুঝতে হবে এটা ইসলাম বিদ্বেষী-পশ্চিমা শক্তি, ইয়াহুদী গোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র, মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও মুসলিমদের শক্তিকে দুর্বল করার জন্য তারা এ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। অতএব, তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। ২. পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, এই জঙ্গিবাদের সাথে গুটি কয়েক বিভ্রান্ত মুসলিম জড়িত। এদেরকে হিদায়াতের জন্য আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের সম্পৃক্ত করতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যে, জঙ্গিবাদ কোনক্রমেই ইসলামের পথ নয়। এটা সম্পূর্ণভাবে জাহান্নামের পথ। ৩. যেহেতু জঙ্গিবাদের সাথে সত্যিকার ইসলাম পন্থিরা জড়িত নয়, তাই জঙ্গিবাদ দমনের জন্য মূলধারার ইসলামী শক্তি, ইসলামী দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে, এবং তাদের সাথে পরামর্শ করে কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। ৪. দেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদের ইমাম খতিবদের সহযোগিতা নিতে হবে, তারা যেন জুমার খুতবায় ও অন্যান্য সময়ে মসজিদগুলোতে জঙ্গিবাদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমদেরকে অবহিত করতে পারেন। ৫. মূলধারার ইসলামী শক্তি ও দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার উদ্দেশ্যে ইসলামী আদর্শ, মাদ্রাসা-মক্তবকে ঢালাওভাবে জঙ্গি আখড়া, জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র, তালেবান দুর্গ, মৌলবাদী অভয়ারণ্য বলার মত উসকানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। ৬. জনগণকে সাথে নিয়ে এই জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। তাই জনগনের বিশ্বাস, ধর্ম-বিশ্বাস, তাদের লালিত মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে সম্মান করতে হবে। এ সবের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ৭. মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের শাসকদেরকে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনক্রমে ইয়াহুদীবাদ, খৃস্টবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। সে লক্ষ্যে এদের পরিবর্তে মুসলিম বিশ্ব ও সত্যিকার ইসলামপন্থিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। 8. ব্যক্তিগতভাবে আলিম-ওলামা, পীর-মাশায়েখরা জঙ্গীবাদ দমনে এগিয়ে আসতে পারেন। তাঁরা আলাপ-আলোচনা, ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে এর ক্ষতিকর ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সর্ব সাধারণকে সতর্ক করতে পারেন। 9. তদরূপ বিভিন্ন ইসলামী ও অ-ইসলামী দল সংস্থা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর ভয়াবহতা ও অনিষ্টকর দিকগুলো সম্পর্কে জন-সাধারণকে অভিহিত করতে পারেন। উপসংহার আমরা সকলে জানি, ইসলাম অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা ও মহান আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পন করা। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন মানবকুলের শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, প্রগতি ও উন্নতির জন্য মনোনিত করেছেন ইসলাম ধর্মকে, অতএব একজন মুসলিম অপর মুসলিমের অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হতে পারে না। তাইতো একজন আরেক জনের সাথে দেখা হতেই ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সম্বোধন করে। যার অর্থ ‘‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’’ তাহলে কিভাবে সে অন্যকে অশান্তিতে ফেলে দেবে? অন্যের নিরাপত্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে? সুতরাং ইসলামের সাথে জঙ্গিবাদের কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বের এমনকি বাংলাদেশেরও কোন প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত ইসলামী দল বা প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নেই। শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় হাজার বছর অপেক্ষা করতে হলেও তা করা উচিত। জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দিয়ে একে তো দ্রুত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, আর করা গেলেও তার কোন শুভ ফল আশা করা যায় না। এ কথা সর্বমহলে স্বীকৃত যে, ইসলাম তার অন্তর্নিহিত স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার মাধ্যমে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, তরবারি, জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নয়। তবে নতুন গজিয়ে ওঠা কিছু গ্রুপ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা জিহাদের নামে ইসলামের নামে বিভিন্ন অরাজকতামূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করছে। অথচ এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, যা আমরা ইতিপূর্বে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে বুঝতে পেরেছি। ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ হারাম। বোমাবাজি, মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি ও আত্মঘাতী তৎপরতা ইত্যাদি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যারা এগুলো করছে তারা বিভ্রান্ত, ইসলাম বিরোধীদের ক্রীড়নক। এদের চিহ্নিত করে প্রতিহত করা প্রয়োজন।

ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন একটি মহাপাপ।

★★হস্তমৈথুন করার অপকারিতা।★★ ------------------------------------------------------ হস্তমৈথুন করা এমন একটি কমন সমস্যা যে সমস্যাটিতে বর্তমান বিশ্বের বহু মানুষ আক্রান্ত।অথচ এ কাজটি ইসলামে যেভাবে নিষিদ্ব তদ্রুপ চিকিৎসাবিজ্ঞানেও নিষিদ্ধ। নিচে এ কাজটির অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল- ★হস্তমৈথুনের জাগতিক অপকারিতা: হস্ত মৈথুনের জাগতিক অনেক অপকারিতা অনেক।যথা- *পুরুষ হস্তমৈথুন করলে প্রধান যে্সব সমস্যায় ভুগতে পারে তার মধ্যে একটি হল নপুংসকতা (Impotence)।অর্থাৎ ব্যক্তি যৌন সংগম স্থাপন করতে অক্ষম হয়ে যায়।পুরুষ হস্তমৈথুন করতে থাকলে সে ধীরে ধীরে নপুংসক(Impotent)হয়ে যায়। *আরেকটি সমস্যা হল অকাল বীর্যপাত(Premature Ejaculation)।অর্থাৎ খুব অল্প সময়ে বীর্যপাত ঘটে।ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয়।বৈবাহিক সম্পর্ক বেশিদিনস্থায়ী হয় না। *আরো একটি সমস্যা হল Temporary Oligospermia।Oligospermia হলে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়।তখন বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ২০ মিলিয়নের কম।[২ কোটি]।যার ফলে Male infertility দেখা দেয়।অর্থাৎ সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার দেখা দেয়। একজন পুরুষ যখন স্ত্রী গমন করেন তখন তার থেকে যে বীর্য বের হয় সে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ৪২ কোটির মত।স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে কোন পুরুষের থেকে যদি ২০ কোটির কম শুক্রাণু বের হয় তাহলে সে পুরুষ থেকে কোন সন্তান হয় না। *অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষের যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয়।Dr.Liu বলেন-"There is a huge change in body chemistry when one masturbates excessively" *আর শরীরের অন্যান্য যেসব ক্ষতি হয়-- Nervous system,heart,digestive system,urinary system এবং আরো অন্যান্য system ক্ষতিগ্রস্ত হয় । *পুরো শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর রোগ-বালাইয়ের যাদুঘর হয়ে যায়। *চোখের ক্ষতি হয়। *স্মরণ শক্তি কমে যায়। *মাথা ব্যথা হয় ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা হয় হস্তমৈথুনের কারণে। *আরেকটি সমস্যা হল Leakage of semen।অর্থাৎ সামান্য উত্তেজনায় যৌনাঙ্গ থেকে তরলপদার্থ বের হয়।ফলে অনেক মুসলিম ভাই নামায পড়তে পারেন না।মহান আল্লাহ্ তা'আলার স্মরণ থেকে মুসলিমদের দূরে রাখে হস্তমৈথুন। * আর কোন নারী যখন স্বমেহন বা হস্তমৈথুন করে তখন তারHymen(fold of mucous membrane partly closing the vagina in a virgin) break হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।অর্থাৎ তার কুমারীত্ব (Virginity)হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেকে স্বমেহন করতে গিয়ে কুমারীত্ব হারিয়ে ফেলে।ফলে তার বিয়ে করতে সমস্যা হয়।বিয়ের পর স্বামী তার এ অবস্থা দেখে তাকে সন্দেহ করে তালাক দেয়।তাই হস্তমৈথুন নারীদের অনেক বড় সমস্যার সৃষ্টি করে। ★ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুনের অপকারিতা। *আল্লাহ তা’আলার দেয়া বীর্যক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি হস্তমৈথুনের চর্চা করে বা অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন তার সেই অঙ্গ পরকালে সাক্ষী দেবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﺨْﺘِﻢُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﻜَﻠِّﻤُﻨَﺎ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺗَﺸْﻬَﺪُ ﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ ‏[ ٣٦: ٦٥ ] “সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” - (৩৬:৬৫) *এছাড়াও আল্লাহ্ তা'য়ালা আরও বলেন, "মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।" (২৪:৩০-৩১) *হাদীস শরীফে বলা আছে, রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন-“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুইপায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের) নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব । ” –(বুখারী, মিশকাত) *উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, এ দু’টো অঙ্গ পাপের জন্য খুব সুবিধার। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক/যুবতী অবস্থায় যৌনাঙ্গের হেফাজত করে এবং কোন প্রকারেই হস্তমৈথুনের চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে। ★--হস্তমৈথুন ছাড়ার টিপস : – কোন কোন সময় হস্তমৈথুন বেশি করেন, সেই সময়গুলো চিহ্নিত করুন। বাথরুম বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি উত্তেজিত থাকেন, বা হঠাত কোন সময়ে যদি এমন ইচ্ছে হয়, তাহলে সাথে সাথে কোন শারীরিক পরিশ্রমের কাজে লাগে যান। যেমন বুকডন বা অন্য কোন ব্যায়াম করতে পারেন। যতক্ষণ না শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, অর্থাৎ হস্তমৈথুন করার মত আর শক্তি না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই কাজ বা ব্যায়াম করুন। গোসল করার সময় এমন ইচ্ছে জাগলে শুধু ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন এবং দ্রুত গোসল ছেড়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসুন। – মেয়েদের দিকে কুনজরে তাকাবেন না। তাদের ব্যাপারে বা দেখলে মন আর দৃষ্টি পবিত্র করে তাকাবেন। নিজের মা বা বোন মনে করবেন। – যতটা সম্ভব নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন। – ধৈর্য ধরতে হবে। একদিনেই নেশা থেকে মুক্তি পাবেন, এমন হবে না। একাগ্রতা থাকলে ধীরে ধীরে যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসা যায়। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে। তখন হ তাশ হয়ে সব ছেড়ে দেবেন না। চেষ্টা করে যান। – যে কোন উপায়ে পর্ণমুভি আর চটি এড়িয়ে চলুন। – কম্পিউটারে পর্ণ দেখতে দেখতে হস্তমৈথুন করলে কম্পিউটার লিভিং রুমে নিয়ে নিন যাতে অন্যরাও দেখতে পায় আপনি কী করছেন। এতে পর্ণ সাইটে ঢোকার ইচ্ছে কমে যাবে। – যেসব ব্যাপার আপনাকে হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করে, সেগুলো ছুড়ে ফেলুন, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। যদি মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে সত্যি সত্য মুক্তি পেতে চান তাহলে পর্ণ মুভি বা চটির কালেকশন থাকলে সেগুলো এক্ষুনি নষ্ট করে ফেলুন। পুড়িয়ে বা ছিড়ে ফেলুন। হার্ডড্রাইভ বা মেমরি থেকে এক্ষুনি ডিলিট করে দিন। ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে ব্রাউজারে্র প্যারেন্টাল কন্ট্রোল-এ গিয়ে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে দিন। কোন সেক্স টয় থাকলে এক্ষুনি গার্বেজ করে দিন। – যারা বাজে বিষয় নিয়ে বা মেয়েদের নিয়ে বা পর্ণ মুভি বা চটি নিয়ে বেশি আলোচনা করে, তাদেরকে এড়িয়ে চলুন। – হস্তমৈথুনে চরমভাবে এডিক্টেড হলে কখনোই একা থাকবেন না, ঘরে সময় কম কাটাবেন, বাইরে বেশি সময় কাটাবেন। জগিং করতে পারেন, সাইকেল নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। ছাত্র হলে ক্লাসমেটদের সাথে একসাথে পড়াশুনা করতে পারেন। লাইব্রেরি বা কফি শপে গিয়ে সময় কাটাতে পারেন। – সন্ধ্যার সময়ই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কিছু করার না থাকলে মুভি দেখুন বা বই পড়ুন। – ভিডিও গেম খেলতে পারেন। এটাও হস্তমৈথুনের কথা ভুলিয়ে দেবে। – সেক্সুয়াল ব্যাপারগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলবেন। এধরনের কোন শব্দ বা মন্তব্য শুনবেন না। – ছোট ছোট টার্গেট সেট করুন। ধরুন প্রথম টার্গেট টানা দুইদিন হস্তমৈথুন করবেন না। দুইদিন না করে পারলে ধীরে ধীরে সময় বাড়াবেন। – যখন তখন বিছানায় যাবেন না। কোথাও বসলে অন্যদের সঙ্গ নিয়ে বসুন। – বাথরুম শাওয়ার নেয়ার সময় হস্তমৈথুনের অভ্যাস থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করুন। – যখনি মনে সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হবে, তখনই অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন। – বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার সাথে বেশি সময় কাটান। – ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। – নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করবেন, আপনার সাথে যারা আছে তাদের কথা ভাববেন। – ফোনসেক্স এড়িয়ে চলুন – অপরের সাহায্য নিতে ভুল করবেন না। রাতের বেলা হস্তমৈথুন করলে কারো সাথে রুম শেয়ার করুন। বা দরজা জানালা খোলা রেখে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। যখন দেখবেন যে সব চেষ্টা করেও একা একা সফল হতে পারছেন না, তখন বন্ধুবান্ধব, পরিবার, ডাক্তার- এদের সাহায্য নেয়া যায়। এখানে লজ্জার কিছু নাই। – উপুর হয়ে ঘুমাবেন না। – বিকেলের পরে উত্তেজক ও গুরুপাক খাবার খাবেন না। – গার্লফ্রেণ্ড বা প্রেমিকাদের সাথে শুয়ে শুয়ে, নির্জনে বসে প্রেমালাপ করবেন না।

আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম রাসুল সাঃ এর রুহ মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।একথা কি সঠিক?

উত্তর:হ্যাঁ।আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম রাসুল সাঃ এর রুহ মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।নিম্নে এ ব্যাপারে দলিল পেশ করা হল- ★মুসান্নাফে আবি শায়বাহ ৭/৮০পৃষ্ঠায় হাদিস এসেছে,عن قتادۃ (رض)قال كان النبي (ص)اذا قرء :و اذ اخذنا من النبيين ميثاقهم و منك ومن نوح قال بدي بي في الخلق و كنت اخرهم في البعث অর্থ-হযরত ক্বাতাদাহ (রা)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল (সাঃ)যখন কোরআন শরিপের এ আয়াত পাঠ করলে(যখন আমি সমস্ত নবী,বিশেষ করে আপনার ও নুহ আঃ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলাম) তখন রাসুল সাঃ বলেন যে,আমার দ্বারাই সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছে এবং প্রেরনের দিক থেকে আমি সমস্ত নবীদের শেষে এসেছি।এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় রাসুল সাঃ সৃষ্টির দিক থেকে প্রথম। ★ইমাম বায়হাকি (রঃ)তার দালায়েলুন নুবুওয়াত কিতাবের ১/৪৪৩পৃষ্ঠায় হাদিস নিয়ে এসেছেন, عن ابي هريرۃ (رض)في قوله تعالي ,سبحان الذي اسري بعبده ليلا من المسجد الحرام ,فذكر الحديث حتي بلغ الي قوله :قال الله تعالي لي و جعلتك اول النبيين خلقا و اخرهم بعثا و جعلتك فاتحا و خاتماঅর্থ-হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ)আল্লাহর আয়াত,(পবিত্রতম আল্লাহ যিনি তার বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে রাত্রি কালিন ভ্রমন করিয়েছেন)এর তাফসিরে একখানা হাদিস পেশ করলেন এবং রাসুলের এ কথায় পোঁছলেন যে,আল্লাহ তায়ালা বলেন,হে নবী আমি আমি আপনাকে সৃষ্টির দিক থেকে প্রথম নবী করেছি আর প্রেরনের দিক থেকে সর্বশেষ করছি।আর আমি আপনাকে সূচনাকারি ও পরিসমাপ্তিকারি হিসেবে সৃষ্টি করেছি।সুতরাং এ হাদিস দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে রাসুল সাঃ প্রথম সৃষ্টি। ★দালায়েলুন নুবুওয়াত কিতাবের ৫/৪৮৩পৃষ্ঠায় আরও একখানা হাদিস এসেছেعن ابي هريرۃ (رض) قال قال رسول الله (صلي)لما خلق الله تعالي ادم خبره ببنيه فجعل يري الانبياء عليه السلام و فضاءل بعضهم علي بعض فراي نورا ساطعا في اسفلهم فقال يا رب من هذا قال هذا ابنك احمد هو الاول و هو الاخر و هو اول شافعঅর্থাৎ-হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল(সাঃ)এরশাদ করেন,যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করলেন,তার সন্তানদের ব্যাপারে সংবাদ দিলেন।তিনি সমস্ত নবীদের এবং তাদের পরস্পরের মর্যাদাকে অবলোকন করলেন।এবং তিনি তাদের মধ্যে একটি উজ্জ্বল নুর দেখলেন।অতপর আদম(আঃ)বললেন,,হে প্রভু এ লোকটি কে?তখন আল্লাহ বললেন,তিনি হচ্ছেন তোমার পুত্র আহমদ।তিনি হলেন সৃষ্টির দিক থেকে প্রথম আর প্রেরনের দিক থেকে শেষ। আর তিনিই হলেন হাশরের মাঠে প্রথম সুপারিশকারি।এ হাদিস দ্বারাও বুঝা যাচ্ছে রাসুল (সাঃ) হলেন প্রথম সৃষ্টি। ★ইমাম আবদুর রাজ্জাক এর লিখিত কিতাব ,মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকের ৬/১১২ পৃষ্টায় হাদিস এসেছে ,عن عمر بن الخطاب (رض)فقال النبي (صلي)عند ذلك انما بعثت فاتحا و خاتماঅর্থ--হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ)থেকে বর্ণিত,হযরত রাসুল (সাঃ)বলেন,আমি সূচনাকারি ও পরিসমাপ্তি কারি হিসেেবে প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ আমার দ্বারা আল্লাহ মানব সৃষ্টিকে সূচনা করেছেন এবং আমার দ্বারা নুবুওয়াতের দ্বারাকে সমাপ্ত করেছেন। উপরের হাদিসগুলো দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে রাসুল (সাঃ) এর রুহ মোবারককে আল্লাহ প্রথম সৃষ্টি করেছেন।বর্তমানে যারা রাসুলকে প্রথম সৃষ্টি হিসেবে মানতে চায়না তারা প্রকারান্তরে রাসুলের হাদিসগুলোকে অস্বিকার করতেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বাতিল বিশ্বাস থেকে হেফাজত করুন ।আমিন: উপরের হাদিসগুলো ছাড়াও রাসুল (সাঃ) প্রথম সৃষ্টি হওয়ার আরও হাদিস দেখতে পারেন,ইবনে আবি খাসিম এর লিখিত, আওয়ায়িল কিতাবের ১৫৩পৃষ্ঠা।দালায়েলুন নুবুওয়াতের ১/৪১৭পৃষ্ঠা।আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি সেগুলো এখানে পেশ করলাম না।

রাসুল সাঃ বা অন্য কোন মৃত নেককার লোকদের অসিলায় দোয়া করা প্রসঙ্গে।

বর্তমানে আমাদের সমাজে একদল লোক বলতেছে যে রাসুল সাঃ বা অন্য কোন মৃত নেককার লোকদের অসিলা দিয়ে দোয়া করা জায়েয নেই।আসল কথা হচ্ছে রাসুল সাঃ বা অন্যান্য মৃত নেককার লোকদের অসিলা দিয়ে দোয়া করা ইসলামি শরিয়তে সমপূর্ণরুপে জায়েয।নিচে এ ব্যাপারে কয়েকখানা হাদিস পেশ করা হল- ★আল্লামা ইমাম তাবরানি রঃ তার লিখিত আওসাত নামক গ্রন্থের ১/১৫২ পৃষ্টায় এসেছে-عن سيدنا بن عباس رض انه قال قال رسول الله صلي لما دفن فاطمۃ بنت اسد رض ام سيدنا علي رض :اللهم بحقي وبحق الانبياء من قبلي اغفر لامي بعد امي অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,যখন হযরত আলি রাঃ এর মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ রাঃ এর দাফন করা হল,তখন রাসুল সাঃ দোয়া করলেন যে হে আল্লাহ আপনি আমার এবং আমার পূর্বের সমস্ত নবীদের অসিলায় আমার খালাকে মাফ করে দেন। তাহলে এ হাদিস থেকে বুঝা যায় মৃত ব্যাক্তির অসিলায় দোয়া করা জায়েয।কারন সমস্ত নবীরা রাসুল সাঃ এর অনেক আগেই ইনতেকাল করেছিলেন অথচ রাসুল সাঃ তাদের নামের অসিলায় দোয়া করতেছেন। ★ইমাম বুখারি রঃ ,আত তারিখুল কাবির ৭/৩০৪ পৃষ্টায় হাদিস নিয়ে এসেছেন-عن مالك رض قال اصاب الناس قحط في زمان عمر بن الخطاب رض فجاء رجل الي قبر النبي صلي فقال يا رسول الله استسق الله لامتك فانهم قد هلكوا فاتاه رسول الله في المنام فقال اءت عمر رض فاقرءه مني السلام واخبرهم انه مسقون و قل له عليك بالكيس الكيس فاتي الرجل فاخبر عمر فقال يا رب ما ءالوا الا ما عجزت عنهঅর্থাৎ হযরত মালেক রঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,হযরত ওমর রাঃ এর জামানায় মানুষকে দুর্ভিক্ষ পাইল।অতপর এক সাহাবি রাসুল সাঃ এর কবরের পাশে এসে বলল,হে আল্লাহর রাসুল সাঃ,আপনি আল্লাহর নিকট আপনার উম্মতের জন্য পানি প্রার্থনা করুন কারন তারা ধংস হয়ে যাচ্ছে ।অতঃপর রাসুল সাঃ স্বপ্নে এ লোকটির নিকট এসে বলল-তুমি উমরের কাছে গিয়ে আমার সালাম দাও আর বলবে যে তারা পানি পাবে। অতপর লোকটি এসে হযরত উমরকে এসে এ খবরটি জানাল।হযরত উমর রাঃ এ খবর শুনে বলে উঠলেন হে প্রভু! তারা এমন অবস্হায় পোঁছেছে আমার পক্ষে সমাধান করা অসম্ভব ছিল।সুতরাং এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে,রাসুল এর অসিলায় দোয়া করা রাসুলের ইনতেকালের পর হযরত উমরের জামানায়ও জায়েয ছিল।এখন যারা এটাকে শিরক বলে তারা কি সাহাবিদের থেকেও বেশি জ্ঞানী!নাউজুবিল্লাহ। ★শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রঃ, আল কালিমুত তায়্যিব কিতাবের ১/১৭৩ পৃষ্টায় হাদিস নিয়ে এসেছেন-عن الهيثم بن انس رض كنا عند بن عمر رض فخدرت رجله فقال له رجل اذكر احب الناس اليك فقال يا محمد فكانما نشط من عقالঅর্থাৎ হযরত হাইসাম ইবনে আনাস থেকে বণিত, তিনি বলেন,আমরা ইবনে উমরের সামনে বসা ছিলাম।হঠাৎ করে তার পা অবশ হয়ে গেল।তখন উপস্থিত এক ব্যাক্তি তাকে বললেন,আপনি আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ব্যাক্তি কে স্ণরন করুন।তখন তিনি বলে উঠলেন হে মুহাম্মদ! এ কথা বলার সাথে সাথে তার পা ভাল হয়ে গেল।সুতরাং এ হাদিস থেকে জানা গেল ইবনে উমরের মত সাহাবি রাসুলের ইনতেকালের পর রাসুলের নামের অসিলায় সুস্থ হয়ে গেলেন। এখন কি আপনারা বলবেন ইবনে উমর শিরক করে ফেললেন।নাউজুবিল্লাহ?বরং ইবনে উমর রাসুলের সুন্নাহর খুবই অনুসারি ছিলেন।উনি জানতেন যে,রাসুলের ইনতেকালের পর রাসুলের অসিলায় দোয়া করা শিরক নয়। ★ইবনে মাজাহ,হাদিস নং৭৭৮عن ابي سعيدن الخدري رض قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم من خرج من بيته الي الصلاۃ فقال اللهم اني اسالك بحق الساءلين عليك و بحق ممشاي هذا فاني لم اخرج اشرا ولا بطرا ولا رياء ولا سمعۃ خرجت اتقاء سخطك و ابتغاء مرضاتك فاسالك ان تعيذني من النار و ان تغفرلي ذنوبي انه لا يغفر الذنوب الا انت اقبل الله بوجهه و استغفر له سبعون الف ملكঅর্থ- হযরত আবু সায়িদ খুদরি রাঃ থেকে বণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ বলেছেন,যে ব্যক্তি ঘর থেকে নামাজের উদ্যেশ্যে বের হয়।তারপর সে বলে,হে খোদা আমি আপনার কাছে আপনার সমস্ত ছুয়ালকারিদের এবং আমার এই যাতায়াতের অসিলায় দোয়া করতেছি।নিশ্চয় আমি কোন অহংকার বা কোন আত্নগর্ব,কোন লোকিকতা, বা কাউকে শুনানোর জন্য বের হইনি ।আমি শুধু বের হয়েছি তোমার শাস্তি থেকে রক্ষা এবং তোমার সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য।সুতরাং তুমি আমাকে জাহাননামের আগুন থেকে মুক্তি দাও এবং আমার সমস্ত পাপকে মাফ করো।কেননা তুমি ছাড়া পাপ মোচনের কেহ নেই।এ দোয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তার দিকে ফিরেন এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা চায়। এ হাদিসখানাকে আললামা ইবনে হাজার আসকালিন রঃ ,আমালিল আযকার নামক কিতাবের ১/২৯১ পৃষ্টায় হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।এ হাদিসে রাসুল সাঃ দোয়া শিখিয়েছেন যে,যারা সমস্ত সুয়াল কারিদের অসিলায় দোয়া করবে। আললাহর কাছে সুয়ালকারি বলতে জিবীত মৃত সমস্ত নবী,রাসুল নেককার বান্দাগনই উদ্যেশ্য।সুতরাং এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে রাসুল সাঃ সহ সমস্ত মৃত নেককার বান্দাদের অসিলায় দোয়া করা জায়েয। ★দারিমি শরিপ ১/৪৩ পৃষ্টা عن ابي الجوزاء اوس بن عبد الله قال قحط اهل المدينۃ قحطا شديد فشكوا الي عاءشۃ فقالت انظروا قبر النبي صلي الله عليه وسلم فاجعلوا منه كوي الي ا لسماء حتي لا يكون بينه وبين السماء سقف قال ففعلوا فمطرنا مطرا حتي نبت العشب و سمنت الابل حتي تفتقت من الشحم فسمي الفتقঅর্থাৎ হযরত আবুল জাওযা আউস ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মদিনাবাসিরা একদা মারাত্মক দুর্ভিক্ষের শিকার হলেন।অতঃপর তারা হযরত আয়েশা রাঃ এর নিকট অভিযোগ জানাইল।আয়েশা রাঃ তাদেরকে বললেন,তোমরা রাসুলের কবরের দিকে তাকাও।রাসুলের কবরের উপর থেকে আসমান পর্যন্ত খালি করে দাও যাতে আসমান ও রাসুলের কবরের মাঝখানে কোন পর্দা না থাকে। রাবি বলেন,সাহাবিরা আয়েশার কথা মোতাবেক তাই করল।আর আমরা এমন বৃষ্টি পাইলাম যে বৃষ্টির দ্বারা অনেক ঘাস হল এবং উট মোটা তাজা হল।এ হাদিস থেকে বুঝা গেল রাসুলের রওজার অসিলায় সাহাবিরা বৃষ্টি পেল। আবার তাও যিনি রাসুলের হাদিস সম্পর্কে বেশি অবগত তার পরামর্শে ।যদি রাসুলের ইন্তেকালের পর রাসুলের অসিলায় দোয়া শিরিক হইত তাহলে আয়েশা রাঃ সাহাবাদেরকে এ ধরনের শিরিকি পরামর্শ দিতেন না।সুতরাং উপরে বর্ণিত মারফু ও মাওকুফ হাদিস দ্বারা আমরা জানলাম যে,রাসুলের বা নেক বান্দাদের ইন্তেকালের পরও তাদের অসিলায় দোয়া করা বৈধ।এছাড়াও আরও বিস্তরিারিত জানার জন্য দেখুন-তাফসিরে ইবনে কাসির সুরা নিসা ৬৪নং আয়াতের তাফসির। তিরমিজি ৩৫৭৮ নং হাদিস।উল্লেখ্য-জিবীত নেককার লোকদের অসিলায় দোয়া করা জায়েয হওয়া এটা বুখারি শরিপের ৯৬৪ নং হাদিস দারা প্রমানিত।

Sunday, September 11, 2016

নামাজের মধ্যে নাভির নিচে হাত বাঁধার দলিল।

বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছুলোক এ অপপ্রচারে লিপ্ত যে, নামাজের মধ্যে নাভির নিচে হাত বাঁধার কোন দলিল নেই।নিম্নে নামাজের মধ্যে নাভির নিচে হাত বাধার ব্যাপারে কয়েকখানা মারফু,মাউকুফ ও মাকতু হাদিস পেশ করা হল।এ হাদিসগুলো কোনটি সহীহ লি আইনিহি আর কোনটি সহীহ লি গাইরিহি।

★-ﻋﻦ ﻋﻠﻘﻤۃ بن واءل بن حجر عن ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ . (-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১)
হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন।এ হাদিসখানার সনদ জায়্যিদ।

 ★ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺟﺤﻴﻔﺔ ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻜﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।(’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬
 এ হাদিসখানা হাসান লি গাইরিহি

 ★ﻗﺎﻝ ﺃبو ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﺧﺬ ﺍﻷﻛﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻛﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖالسرۃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।(সুনানে আবু দাউদ -758)এ হাদিসখানাও হাসান লিগাইরিহি।

★عن انس( رض) قالﺛﻼﺙ ﻣﻦ ﺃﺧﻼﻕ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ : ﺗﻌﺠﻴﻞ ﺍﻷﻓﻈﺎﺭ، ﻭﺗﺄﺧﻴﺮ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ، ﻭﻭﺿﻊ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ. -(আলমুহাল্লা ৩/৩০; আলজাওহারুন নাকী ২/৩১’)
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘তিনটি বিষয় (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নবী- স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত: ইফতারে বিলম্ব না করা, সাহরী শেষ সময়ে খাওয়া এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখা

★ﻋﻦ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻝ : ﻳﻀﻊ ﻳﻤﻴﻨﻪ ﻋﻠﻰ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ
হযরত ইবরাহিম নাখয়ি (রঃ)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, ‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০) এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান।

 ★ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﺑﻦ ﺣﺴﺎﻥ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﻣﺠﻠﺰ ـ ﺃﻭ ﺳﺄﻟﺘﻪ ـ ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻛﻴﻒ ﺃﺻﻨﻊ؟ ﻗﺎﻝ : ﻳﻀﻊ ﺑﺎﻃﻦ ﻛﻒ ﻳﻤﻨﻴﻪ ﻋﻠﻰ ﻇﺎﻫﺮ ﻛﻒ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﺎ ﺃﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺮﺓ.
তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে কোথায় হাত বাঁধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৩)
 এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ।

★ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ ﺃﻗﻮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ ﺃﻗﻮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺃﻗﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ
ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’