Sunday, October 30, 2016

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী জাতির মর্যাদা।

বর্তমানে কিছু প্রগতিশীল সেকুলার বুদ্ধিজীবী ইসলামের উপর দোষারোপ করে যে,ইসলাম পুরুষদের বিবেচনায় নারীদের অপমান করেছে।অথচ ইসলাম এমন একটি বিজ্ঞানসম্মত বাস্তববাদী ধর্ম যেখানে নারীদেরকে শুধু সম্মানই দেননি বরং বহু ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।নিম্নে এ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

★ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে পুরুষদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀَ ﺻَﺪُﻗَﺎﺗِﻬِﻦَّ ﻧِﺤْﻠَﺔً “আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)এ আয়াতে পুরুষদের উপরে নারীদের মোহরানা আদায় করাকে ফরজ করা হয়েছে।অথচ কোরআন ও হাদিসের কোথাও নারীদের উপরে এমন কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে তোমরা পুরুষদেরকে মোহরানা আদায় কর।তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে মোহরানার ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের উপর সম্মান দেওয়া হয়েছে।

★ইসলাম পুরুষদের উপরে তাদের সামর্থ অনুযায়ী নারীদের ভরনপোষন আদায় করা ফরজ করে দিয়েছেন।যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে - ﺃَﺳْﻜِﻨُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﺳَﻜَﻨْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻭُﺟْﺪِﻛُﻢْ
“তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস কর সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও।”
(সূরা তালাক, আয়াত ৬)
শুধু তাই নয় নারীর নিজের ভরণ-পোষণের পাশাপাশি

সন্তানের দায়িত্বও স্বামীর কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
ﻟِﻴُﻨْﻔِﻖْ ﺫُﻭ ﺳَﻌَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺳَﻌَﺘِﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻗُﺪِﺭَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭِﺯْﻗُﻪُ ﻓَﻠْﻴُﻨْﻔِﻖْ ﻣِﻤَّﺎ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ
 “বিত্তশালীরা যেনো সামর্থানুযায়ী স্ত্রী- সন্তানের উপর ব্যয় করে। সীমিত উপার্জনকারীরা আল্লাহর দেয়া অর্থানুপাতে ব্যয় করবে।” (সূরা তালাক, আয়াত ৭)
অথচ কোরআন ও হাদিসের কোথাও এ রকম নির্দেশ আসেনি যে, নারীরা পুরুষদের ও সন্তানদের ভরন পোষন বহন করতে হবে।তাহলে এ আয়াতগুলো দ্বারাও নারীদেরকে পুরুষদের উপর বাড়তি সম্মান দান করা হয়েছে।

★ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে বেহেশতকে মায়ের পায়ের তলায় ঘোষণা করা হয়েছে।যেমন হাদিস শরীপে এসেছে-
ﻋﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺑﻦ ﺟﺎﻫﻤﺔ ﺃﻧﻪ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺭﺩﺕ ﺃﻥ ﺃﻏﺰﻭ، ﻭﺟﺌﺖ ﺃﺳﺘﺸﻴﺮﻙ ؟ ﻓﻘﺎﻝ: "ﻫﻞ ﻟﻚ ﻣﻦ ﺃﻡ "؟ ﻗﺎﻝ ﻧﻌﻢ : ﻗﺎﻝ: " ﻓﺎﻟﺰﻣﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺗﺤﺖ ﺭﺟﻠيه
হযরত মুয়াবিয়া বিনতে জাহিমা নবীজীর সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি। আপনার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাঁকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তাঁর দুই পায়ের নিচে।” (সুনানে নাসাঈ ) অথচ কোরআন ও হাদিসে কোথাও বেহেশতকে পিতার পায়ের নিচে বলা হয়নি।তাহলে এখানেও নারীদেরকে পুরুষদের তুলনায় বেশি সম্মান করা হয়েছে।

★অন্য হাদিসে পুরুষের ও নারীর মর্যাদার ব্যাপারে বলা হয়েছে -
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺇﻟﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺃﺣﻖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺤﺴﻦ ﺻﺤﺎﺑﺘﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ ,, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﻣﻚ, ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﻣﻦ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺃﺑﻮﻙ . ‏
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিতা-মাতার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার হকদার কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা। এরপর সাহাবী চতুর্থ বার যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, তারপর কে? তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার বাবা।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদীসের দ্বারা এটা পরিস্কার হয়ে গেলো যে, নারী জাতিকে ইসলাম মাতৃত্বের উচ্চাসনে বসিয়েছে। তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছে।অথচ পুরুষদের ব্যাপারে এমন কোন মর্যাদার কথা কোথাও বলা হয়নি।

 ★সমাজে কেউ যেনো নারী জাতির অবমাননা করতে না পারে সেটিও ইসলাম নিশ্চিত করেছে। অন্যায়ভাবে কেউ কোনো নারীকে অপবাদ দিলে তার জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
 ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺮْﻣُﻮﻥَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺎﺕِ ﺛُﻢَّ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺗُﻮﺍ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻌَﺔِ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀَ ﻓَﺎﺟْﻠِﺪُﻭﻫُﻢْ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴﻦَ ﺟَﻠْﺪَﺓً ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﺒَﻠُﻮﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓً ﺃَﺑَﺪًﺍ ﻭَﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ
“আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” (সুরা আন-নূর: আয়াত ৪)
অথচ পুরুষদের ব্যাপারে এরকম একক নির্দেশ কোথাও বলা হয়নি

★শুধু তাই নয়, নারীদের প্রতিপালনে ইসলাম যে মর্যাদা রেখেছে পুরুষদের জন্য তা রাখা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻻَ ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻷَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﺛَﻼَﺙُ ﺑَﻨَﺎﺕٍ ﺃَﻭْ ﺛَﻼَﺙُ ﺃَﺧَﻮَﺍﺕٍ ﻓَﻴُﺤْﺴِﻦُ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻦَّ ﺇِﻻَّ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
. ‘তোমাদের যে কারও যদি তিনজন কন্যা বা বোন থাকে আর সে তাদের সুন্দরমত দেখাশুনা করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [12]
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন,
ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻷَﻫْﻠِﻪِ ‘
তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।’
 এ হাদীসে স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারকে পুরুষের চারিত্রিক মর্যাদার মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং এখন আমরা কি বলবো যে ইসলাম পুরুষের বিপক্ষে বর্ণবৈষম্যকে প্রশ্রয় দিয়েছে?

 ★ এমনকি ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মে আজ পর্যন্ত নারী জাতির অধিকারের কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। হিন্দুধর্মে নারী জাতিকে মৃত্যু, নরক, সর্প, বীষ ও আগুন থেকেও মারাত্মক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারী জাতির আলাদা কোনো অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় নি। যার কারণে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সাথে সহমরণে যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। খৃষ্টান ধর্মে নারী জাতিকে চরম লাঞ্চনার বস্তু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তাই তো খৃষ্টান পাদ্রী মি: সেন্ট টার্টুলিয়ামের মতে, নারী হচ্ছে বন্য জন্তুর চেয়েও অধিক বিপদজনক। অন্য আরেক পাদ্রী সেন্ট ক্রিয়ান নারীকে বীষধর সাপের সাথে তুলনা করে তার থেকে দূরে সরে থাকতে বলেছেন। সপ্তদশ শতকে খৃষ্টধর্মের রাজধানী রোমে বিত্তবানদের একটি কাউন্সিল সমবেত সকল শীর্ষ ব্যক্তি এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিল যে, নারীর কোন আত্মা নেই।

 ইহুদী ধর্মে নারীকে পুরুষের জন্য প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের মতে একজন সতী নারীর চেয়ে একজন পাপিষ্ট পুরুষ বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।
বৌদ্ধধর্মে কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করাকে অলক্ষণীয় বলে মনে করা হয়। নারীর কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকৃতি দেয় না।
 এভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মেই নারী জাতিকে পাপিষ্ট, অলুক্ষুণে, অপয়া ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে কোনো অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, তাদেরকে মানুষ বলেই স্বীকার করা হয়নি। তারা নারীদেরকে কেবলমাত্র ভোগের পণ্য হিসেবেই গণনা করতো।
 -এমনিভাবে সর্বত্রই যখন নারী জাতির এমন লাঞ্চনা-গঞ্জনা আর অসম্মান ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলাম এসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্ত করেছে।
ইসলামই একমাত্র দীন -যা নারী জাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের যথাযথ অধিকার। ইসলাম এসে ধাপে ধাপে নারী জাতিকে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। যেই সমাজে নারী জন্মই পাপ বলে গণ্য হতো সেখানে ইসলাম সর্বপ্রথমই নারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারী সন্তানকে হত্যাকারীদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। ঘোষণা করেছে
, ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﻟْﻤَﻮْﺀُﻭﺩَﺓُ ﺳُﺌِﻠَﺖْ . ﺑِﺄَﻱِّ ﺫَﻧْﺐٍ ﻗُﺘِﻠَﺖْ
“আর স্মরণ করো সেই দিনের কথা! যখন জীবন্ত কবরস্থ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে?”
 (সুরা তাকউইর, আয়াত ৮-৯)

 ★একইভাবে ইসলাম নারীদের জন্য সোনা ও রেশমী কাপড় ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। পুরুষের জন্য দেয়নি। নারীদের মাসে প্রায় এক সপ্তাহ এবং বছরে প্রায় একমাস সালাত মাফ করা হয়েছে, যা পুরুষের ক্ষেত্রে করা হয়নি। নারীদেরকে দূর্বল ও অসহায় পেয়ে যাতে করে কেউ তাঁদের উপর জুলুম ও অত্যাচার না করে সেজন্যে ইসলাম ঘোষণা করেছে,
 ﻭَﻻَ ﺗُﻤْﺴِﻜُﻮﻫُﻦَّ ﺿِﺮَﺍﺭًﺍ ﻟِّﺘَﻌْﺘَﺪُﻭﺍْ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻔْﻌَﻞْ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻓَﻘَﺪْ ﻇَﻠَﻢَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্যে আটকে রেখো না। আর যারা এ ধরণের জঘন্যতম অন্যায় করবে তারা নিজেদের উপরই জুলুম করবে।”
 (সূরা বাকারা : আয়াত ২৩১)

 ★এবং নারীদেরকে আল্লাহ তায়ালা অর্থনৈতিকভাবেও স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন আল্লাহ তা’‘আলা বলেন,
 ﻟِﻠﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒُﻮﺍ ﻭَﻟِﻠﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِﻤَّﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒْﻦَ ‘পুরুষদের জন্য রয়েছে অংশ, তারা যা উপার্জন করে তা থেকে এবং নারীদের জন্য রয়েছে অংশ, যা তারা উপার্জন করে তা থেকে।’

 পরিশেষে বলব যে, নারীর অবাস্তব সমানাধিকারের দাবিদাররা যার গান গায় আমরা যদি সেই ফরাসি বিপ্লবের নথিপত্র এবং গণতান্ত্রিক দেশসহ বহু দেশের সংবিধান ঘেঁটে দেখি, তাহলে দেখবো অনেক ক্ষেত্রেই তারা নারীর সেই অধিকারগুলোর স্বীকৃতি মাত্র সেদিন দিয়েছে, ইসলাম যা প্রতিষ্ঠা করেছে চৌদ্দশ বছর আগে! শুধু তাই নয়, বরং অনেক অধিকার এমনও আছে যার স্বীকৃতি আজো তারা দেয়নি। যেমন পরিবারে নারীর আর্থিক দায়িত্ব ক্ষমা করা এবং তাকে যাবতীয় অর্থনৈতিক ভার থেকে অব্যহতি দেয়া ইত্যাদি।

Wednesday, October 26, 2016

মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা প্রসঙ্গে।

বর্তমানে কিছু লোককে বলতে শুনা যায় যে,মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা বিদআত।আসুন আমরা হাদিস থেকে এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জেনে নিই। ★ﻋﻦ ﻣﻌﻘﻞ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠه – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ " ﺍﻗﺮﺅﻭﺍ ‏( ﻳﺲ ‏) ﻋﻠﻰ ﻣﻮﺗﺎﻛﻢ " . ، ﻭﺃﺑﻮﺩﺍﻭﺩ ‏( 3 / 188 / 3121 ‏) ، অর্থাৎ হযরত মা'কাল ইবনে ইয়াসার (রাঃ)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল (সাঃ)বলেন,তোমরা মৃত ব্যক্তিদের উপরে সুরা ইয়াসিন পাঠ কর।তাহলে এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় মৃতদের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা রাসুলের নির্দেশ। ★ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : " ﺇﺫﺍ ﻣﺎﺕ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻓﻼ ﺗﺤﺒﺴﻮﻩ ، ﻭﺃﺳﺮﻋﻮﺍ ﺑﻪ ﺇﻟﻰ ﻗﺒﺮﻩ ، ﻭﻟﻴﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻪ ﻓﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ، ﻭﻋﻨﺪ ﺭﺟﻠﻴﻪ ﺑﺨﺎﺗﻤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻭﻗﺎﻝ : - ﻭﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﺃﻧﻪ ﻣﻮﻗﻮﻑ ﻋﻠﻴﻪঅর্থাৎ হযরত ইবনে উমর (রাং)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি রাসুল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে,যখন তোমাদের কেহ মারা যাবে তখন তোমরা তার কাফনে দেরি করিওনা এবং দ্রুত তার দাফনের ব্যবস্হা কর এবং দাফনের পর তার মাথার পাশে সুরা বাকারার প্রাথমিক আয়াতগুলো ও তার পায়ের কাছে সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো পাঠ করবে।এ হাদিসেও মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের উদ্যশ্য কোরআন পাঠ করা জায়েয প্রমানিত হয়। ★ﻋَﻦِ ﺍﻟﺸَّﻌْﺒِﻲِّ ، ﻗَﺎﻝَ : " ﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭُ ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖُ ﺍﺧْﺘَﻠَﻔُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺒْﺮِﻩِ ﻳَﻘْﺮَﺀُﻭﻥَ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ "(ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ ﻟﻠﺨﻼﻝ7) অর্থাৎ হযরত শাবি (রাঃ)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আনসার সাহাবিদের মধ্যে যখন কেহ মারা যেত তখন তারা তার কবরে ছড়িয়ে পড়ত,তারা সেখানে কোরআন শরিপ তেলাওয়াত করত।সুতরাং আনসার সাহাবিরা কোন কাজ করার অর্থ হল রাসুলের সম্মতি থাকা।কেননা রাসুলের অবাধ্য হওয়া কোন সাহাবির জন্য শোভনীয় নয়। ★ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﻠﺠﺎﺝ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﺃﺑﻲ ﻳﺎ ﺑﻨﻲ ﺇﺫﺍ ﺃﻧﺎ ﻣﺖ ﻓﺄﻟﺤﺪ ﻟﻲ ﻟﺤﺪﺍ ﻓﺈﺫﺍ ﻭﺿﻌﺘﻨﻲ ﻓﻲ ﻟﺤﺪﻱ ﻓﻘﻞ ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻠﻰ ﻣﻠﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛﻢ ﺳﻦ ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ ﻋﻠﻰ ﺳﻨﺎ ﺛﻢ ﺃﻗﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻲ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﺧﺎﺗﻤﺘﻬﺎ ﻓﺈﻧﻲ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺫﻟﻚ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﻣﻮﺛﻘﻮﻥ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ ﺝ/3 ﺹ 44 হযরত আব্দুর রহমান থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,আমাকে আমার পিতা বলেন,হে প্রিয় বৎস!যখন আমি মারা যাব তোমরা আমার জন্য কবর প্রস্তুত করবে।অতঃপর যখন আমাকে কবরে রাখার ইচ্ছে করবে তখন তুমি বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতে রাসুলিল্লাহ এ দোয়াটি পাঠ করবে।অতঃপর আমার কবরের উপরে মাটি ছিটিয়ে দাও।অতঃপর দাফনের পর আমার মাথার নিকট সুরা বাকারার প্রাথমিক আয়াতগুলো এবং আমার পায়ের নিকট সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো পাঠ কর।কেননা আমি রাসুল (সাঃ) কে এরকম বলতে শুনেছি।তাহলে এ হাদিস থেকে বুঝা যায় মৃত ব্যক্তির নিকট কোরআন তেলাওয়াত রাসুলের যুগ থেকেই সাবিত। ★আলী বিন মূসা আল- হাদ্দাদ বলেন, ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﺍﻟﺠﻮﻫﺮﻱ ﻓﻲ ﺟﻨﺎﺯﺓ، ﻓﻠﻤﺎ ﺩﻓﻦ ﺍﻟﻤﻴﺖ ﺟﻠﺲ ﺭﺟﻞ ﺿﺮﻳﺮ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺮ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺃﺣﻤﺪ : ﻳﺎ ﻫﺬﺍ ﺇﻥ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻘﺒﺮ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﻠﻤﺎ ﺧﺮﺟﻨﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻘﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ ﻻﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺣﻨﺒﻞ : ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﻣﺒﺸﺮ ﺍﻟﺤﻠﺒﻲ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺛﻘﺔ ﻗﺎﻝ : ﻛﺘﺒﺖ ﻋﻨﻪ ﺷﻴﺌﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﻧﻌﻢ، ﻗﺎﻝ : ﻓﺄﺧﺒﺮﻧﻲ ﻣﺒﺸﺮ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﻼﺀ ﺑﻦ ﺍﻟﻠﺠﻼﺝ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﺃﻭﺻﻰ ﺇﺫﺍ ﺩﻓﻦ ﺃﻥ ﻳﻘﺮﺃ ﻋﻨﺪ ﺭﺃﺳﻪ ﺑﻔﺎﺗﺤﺔ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ ﻭﺧﺎﺗﻤﺘﻬﺎ ﻭﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻳﻮﺻﻲ ﺑﺬﻟﻚ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺃﺣﻤﺪ : ﻓﺎﺭﺟﻊ ﻓﻘﻞ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﻳﻘﺮﺃ- ‘আমি আহমাদ বিন হাম্বল ও মুহাম্মাদ বিন কুদামা জাওহারীর সাথে কোন এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। মাইয়েতের দাফন সম্পন্ন হ’লে জনৈক অন্ধ কবরের নিকট বসে কুরআন তেলাওয়াত শুরু করল। তখন ইমাম আহমাদ তাকে বললেন, ওহে! কবরের নিকট কুরআন তেলাওয়াত বিদ‘আত। আমরা যখন কবরস্থান হ’তে বের হ’লাম তখন ইবনু কুদামা ইমাম আহমাদকে বললেন, হে আবু আব্দুর রহমান! মুবাশশির আল- হালাবীর ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, সে বিশ্বস্ত। আপনি তার থেকে কোন কিছু লিখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ইবনু কুদামা বললেন, মুবাশশির আব্দুর রহমান বিন আ‘লা বিন লাজলাজ তার পিতা হ’তে আমাকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এ মর্মে উপদেশ দিয়েছেন যে, যখন তাকে দাফন করা হবে তখন যেন তার মাথার নিকট সূরা বাক্বারার শুরু ও শেষাংশ তেলাওয়াত করা হয়। আর তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমরকে এ মর্মে অছিয়ত করতে শুনেছি। তখন ইমাম আহমাদ তাকে বললেন, ফিরে গিয়ে ঐ লোকটিকে বল, সে যেন কুরআন তেলাওয়াত করে’। (আবুবকর আল-খাল্লাল, আল-আমরু বিল মা‘রূফ, হা/২৪৬;) ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ، ﻳَﻘُﻮﻝُ : " ﺯَﺍﺭَ ﻗَﺒْﺮَ ﻭَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺟُﻤُﻌَﺔٍ ﺃَﻭْ ﺃَﺣَﺪِﻫِﻤَﺎ ، ﻓَﻘَﺮَﺃَ ﻋِﻨْﺪَﻫُﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻋِﻨْﺪَﻩُ : ﻳﺲ ، ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﺑِﻌَﺪَﺩِ ﺫَﻟِﻚَ ﺁﻳَﺔً ﺃَﻭْ ﺣَﺮْﻓًﺎ (" .ﻃﺒﻘﺎﺕ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﺑﺄﺻﺒﻬﺎﻥ ﻭﺍﻟﻮﺍﺭﺩﻳﻦ ﻋﻠﻴﻬﺎ-751) অর্থাৎ-হযরত আবু বকর থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে প্রতি শুক্রবার তার পিতা মাতা উভয় বা যেকোন একজনের কবর যিয়ারত করে এবং সেখানে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি আয়াত বা হরফের বিনিময়ে তাদেরকে মাফকরে দিবেন।সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে আমাদের কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফিরাতের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা হাদিস অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমানিত। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি বহু হাদিস এখানে পেশ করতে পারিনি। এটাই হল জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতামত।(বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মিরকাতুল মাফাতিহ পৃষ্ঠা নং228-229)

Wednesday, October 5, 2016

মহররম ও আশুরার দিনের ফজিলত।

আরবি বছরের প্রথম মাস মুহাররম। আরবি বারটি মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে কুরআন শরিফ ও হাদিস শরিফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে, মুহাররম মাস তার মধ্যে অন্যতম। আসমান-জমিন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে। এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﺇِﻥَّ ﻋِﺪَّﺓَ ﭐﻟﺸُّﻬُﻮﺭِ ﻋِﻨﺪَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﭐﺛۡﻨَﺎ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﻬۡﺮٗﺍ ﻓِﻲ ﻛِﺘَٰﺐِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮۡﻡَ ﺧَﻠَﻖَ ﭐﻟﺴَّﻤَٰﻮَٰﺕِ ﻭَﭐﻟۡﺄَﺭۡﺽَ ﻣِﻨۡﻬَﺎٓ ﺃَﺭۡﺑَﻌَﺔٌ ﺣُﺮُﻡٞۚ ﺫَٰﻟِﻚَ ﭐﻟﺪِّﻳﻦُ ﭐﻟۡﻘَﻴِّﻢُۚ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻈۡﻠِﻤُﻮﺍْ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡۚ # ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : ٣٦ “নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলুম করো না।{সূরা আত-তাওবাহ: ৩৬} এ মাসেরই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহাররম “আশূরা” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয । ★ইতিহাসে আশুরা: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻗﺎﻝ : ﻗﺪﻡ ﺍﻟﻨﺒﻲ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻓﺮﺃﻯ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﺗﺼﻮﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ ﻓﻘﺎﻝ } : ﻣَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﺻَﺎﻟِﺢٌ، ﻫَﺬَﺍ ﻳَﻮْﻡٌ ﻧَﺠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻣِﻦْ ﻋَﺪُﻭِّﻫِﻢْ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ ﻣُﻮﺳَﻰ، ﻗﺎﻝ : ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺃَﺣَﻖُّ ﺑِﻤُﻮﺳَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻓَﺼَﺎﻣَﻪُ ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ { ‏[ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ 1865]. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা আশুরার দিন সাওম পালন করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আলাইহিস সালম সাওম পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি সাওম পালন করেছেন এবং সাওম পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। {বুখারী:১৮৬৫ ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন, ﻭﻫﻮ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺬﻱ ﺍﺳﺘﻮﺕ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﻮﺩﻱ ﻓﺼﺎﻣﻪ ﻧﻮﺡ ﺷﻜﺮﺍً . এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন সাওম পালন করেছিলেন। ★আশুরার রোজার ফজিলত: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﺘَﺤَﺮَّﻯ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓَﻀَّﻠَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﺇِﻟّﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺷَﻬْﺮَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম পালন করার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমযান মাসের সাওমের প্রতি। {বুখারী: ১৮৬৭} রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ﺻﻴﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ، ﺇﻧﻲ ﺃﺣﺘﺴﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻔﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻗﺒﻠﻪ আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। {সহিহ মুসলিম:১৯৭৬} এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের সাওমের মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡِ ﺑَﻌْﺪَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺷَﻬْﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻤُﺤَﺮَّﻡُ অর্থাৎ রমযানের সাওমের পরে সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররাম মাসের রোজা। { সহিহ মুসলিম: ১৯৮২} ★আশুরার সাথে তাসু‘আর সাওমও মুস্তাহাব :: আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, ﺣِﻴﻦَ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﺼِﻴَﺎﻣِﻪِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻳَﻮْﻡٌ ﺗُﻌَﻈِّﻤُﻪُ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩُ ﻭَﺍﻟﻨَّﺼَﺎﺭَﻯ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : " ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻌَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﻘْﺒِﻞُ ﺇِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺻُﻤْﻨَﺎ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺍﻟﺘَّﺎﺳِﻊَ ." ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺄْﺕِ ﺍﻟْﻌَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﻘْﺒِﻞُ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﻮُﻓِّﻲَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ অর্থাৎ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার সাওম পালন করলেন এবং (অন্যদেরকে) সাওম পালন করার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও সাওম পালন করব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে। {সহিহ মুসলিম} ইমাম শাফেয়ি ও তাঁর সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেন, আশুরার সাওমের ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের সাওমই মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ তারিখ সাওম রেখেছেন এবং নয় তারিখ সাওম পালন করার নিয়ত করেছেন। এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার সাওমের কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের সাওম পালন করা। এরচে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের সাওম পালন করা। এমনিভাবে মুহাররাম মাসে সাওমের সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফজিলতও ততই বাড়তে থাকবে। ★আশুরার তাৎপর্য: ১০ই মুহাররম হযরত আলী রা. এর নয়নমণি নবী তনয় ফাতিমার রা.-এর কলিব্জার টুকরা ইমাম হুসাইনের স্বপরিবারের উনিশজন সদস্যসহ তাঁর বাহাত্তরজন অনুসারীকে যেভাবে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়কে যে ব্যথিত করবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর তাই মুহাররম মাসের আগমনে নতুন করে মুসলমানদের হৃদয়ের নিভৃতে মুহররমের নির্মম স্মৃতি যেন সকল ঐতিহাসিক ঘটনাকে ম্লান করে দেয়। ঈমানদার মাত্রই এহেন নির্মম ঘটনায় মর্মাহত হবে এবং হওয়াই ঈমানের দাবী। আমাদের কিছু সংখ্যক অজ্ঞ মুসলমান কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে নিজেদের মনগড়া কিছু কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে এই দিনের তাৎপর্যকে নষ্ট করে। ঐদিন তারা তাজিয়া তৈরি করে পথ ঘাটে বুক থাবরিয়ে মাতম করে। ইমাম হুসাইনের কৃত্রিম কবর তৈরি করে অনৈসলামিক ‘কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। আসলে আশুরার দিনে যারা তাজিয়া তৈরি করে পথে প্রান্তরে পর্তন কুর্দন ও অন্যান্য অনৈসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন রা. এর স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাকে লোক চোখে তুলে ধরতে চায় তা ইসলাম সমর্থন নয় । যদিও অনেকের ধারণা কারবালার শোকাহত ও মর্মস্পশী ঘটনাই মুহাররম মাসের বৈশিষ্ট্য। আসলে তা ঠিক নয়। পৃথিবীর শুরু থেকেই মাহে মুহাররম দশম দিবস অতি পূণ্যময় ও তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ মাসটি অত্যন্ত সম্মানীত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত। জাহিলিয়াতের যুগেও আরবের মুর্খরা এ মাসটিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিত। এমনকি এ মাসকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনা করে অন্যায়, অবিচার, জুলুম-অত্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, দাঁঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে চলতো। আশুরা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যই নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের কাছেও একটি ফজিলতপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচিত হতো। বস্তুতঃ অতীতে আশুরা দিবসে বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে, কেননা আদিকাল থেকে যুগে যুগে আশুরা দিবসে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কথা বিভিন্ন সূত্রে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমরা জেনেছি আল্লাহ্ রাববুল আলামিন যেদিন আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জান্নাত-জাহান্নাম, লাউহু মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্টি জীবের আত্মাসৃজন করেন, সে দিনটি ছিল ১০ই মুহাররম তথা আশুরা দিবস। শুধু তাই নয় বরং আদম আ. এর সৃষ্টির দিন ও ছিল ১০ই মুহারম, হযরত নূহ আ. এর জাহাজ ৮০জন সহচর নিয়ে যেদিন নিরাপদে জুদী পর্বতে অবতরণ করেছিল সে দিনটিও ছিল ১০ই মুহাররম। এভাবে হযরত ইউসুফ আ. এর কুপ থেকে উদ্ধার। আয়ুব আ. এর আরোগ্য লাভ, হযরত ইউনুস আ. এর মৎস উদর হতে মুক্তি লাভ, মূসা আ. এর পরিত্রাণ, হযরত ইবরাহিম আ. নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে মুক্তি পেয়ে ছিলেন যে দিনটিতে সে দিনটিও ছিল ১০ই মুহাররম। শুধু কী তাই? বরং ঐদিন অর্থাৎ ১০ইং মুহাররমেই হাশর ও কিয়ামত সংঘটিত হবে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বস্তুতঃ যে আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য ইমাম হুসাইন রা. একদিন কারবালার প্রান্তরে শহিদ হয়ে ছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই আদর্শকে আমাদের আঁকড়ে ধরতে হবে। আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে ইসলামি মূল্যবোধকে জাগ্রত করার শপথ গ্রহণ করতে হবে। ঐদিন তাজিয়া নিয়ে নর্তন-কুর্দন করার দিন নয়। আমাদের প্রত্যেককেই ঐ দিনটির যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে। আর তখনই মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে যখন আমরা এ মাসের ইতিহাসের প্রতি লক্ষ্য রেখে তা থেকে শিক্ষণীয় , বর্জনীয় ও করণীয় বিষয় এবং তার আদর্শ ও কার্যকলাপ আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রিয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারবো।আমিন!

Sunday, October 2, 2016

মধু সেবনের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা।

পৃথিবীতে যত খাবার রয়েছে সব খাবারের পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা একটি তালিকা করি, তবে সে তালিকার প্রথম সারিতেই থাকবে ‘মধু’র নাম। মানবদেহের জন্য মধু অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন করলে অসংখ্য রোগবালাই হতে পরিত্রান পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমানিত। হাজার বছর পূর্বেও মধু ছিল সমান জনপ্রিয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক সভ্যতায় মধু ‘ঔষধ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হত। এমনকি প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও মধু সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে বাড়ি তৈরী কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত)" মধু কি? মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধুর উপকারিতাঃ মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।মধুর নানাবিধ উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হল, ★শক্তি প্রদায়ীঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। ★হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রিয়া করে। পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি। ★কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। ★রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। ★ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী। যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাস কষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীর ভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাস কষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো। ★অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে। পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়। ★দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে। ★পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। ★দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। ★রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়। ★ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার করে, মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে। ★হাড়ের জন্য ভালো: দুধের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম। আর মধুর মধ্যে রয়েছে রোগ নিরাময়কারী উপাদান। তাই দুধ ও মধুর মিশ্রণ হাড়ের জন্যও ভালো। এটি হাড়কে শক্তিশালী করে এবং ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। ★তারুণ্য ধরে রাখে: মধু ও দুধের মিশ্রণ খাওয়া বার্ধক্যের আগমনকে ধীর করে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য এই খাবার শতবর্ষ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ★মনোযোগ বাড়ায়: মধু মস্তিষ্কে ভালো প্রভাব ফেলে। আর দুধ মস্তিষ্ককে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। দুধ ও মধুর মিশ্রণটি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। ★হাজারো গুণে ভরা মধুতে গুকোজ ও ফ্রুকটোজ আছে যা শরীরে শক্তি যোগায়। এর অন্যান্য উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। *প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা লাগা,কফ,কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়। *মন ভালো করতে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারুচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন। *প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে,শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়। **মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। *মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়। *যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন। *সকালে ত্বকে মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয় । *ত্বকে নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।