উত্তরঃ রাসুল সাঃ কে নুর বলা কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী সম্মুর্ণরুপেই জায়েয।নিম্ণে এ সম্পর্কে বিস্তারিত দলিল পেশ করা হল
★আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন- قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে।। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫)
আলোচ্য আয়াতে নুর শব্দের ব্যাখ্যায় বহু মুফাস্সির নবীজীকেই উদ্যেশ্য করেছেন ।
যেমন- ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত্-তবারী (রা) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে জারীর এর মধ্যে বলেন-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعني باالنؤر محمدا صلي الله عليه ؤسلم الذي انار الله به الحق واظهربه الاسلام ومحق به الشرك-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, যে নূর দ্বারা আল্লাহ সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। ( তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৬, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তায়ালা নিজেই নবীজীকে নুর বলে সম্বোধন করেছেন।সুতরাং এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় নবীজীকে নুর বলা জায়েয।
★হাদিস শরীপে এসেছে- ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ : ﺃَﻥَّ ﻗُﺮَﻳْﺸًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻧُﻮﺭًﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﻠُﻖَ ﺁﺩَﻡَ ﺑِﺄَﻟْﻔَﻲْ ﻋَﺎﻡٍ ﻳُﺴَﺒِّﺢُ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻨُّﻮﺭُ ﻭَﺗُﺴَﺒِّﺢُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﺑِﺘَﺴْﺒِﻴﺤِﻪِ , ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺁﺩَﻡَ ﺃَﻟْﻘَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻨُّﻮﺭَ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺒِﻪِ , ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻓَﺄَﻫْﺒَﻄَﻨِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺐِ ﺁﺩَﻡَ , ﻭَﺟَﻌَﻠَﻨِﻲ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺐِ ﻧُﻮﺡٍ ﻓِﻲ ﺳَﻔِﻴﻨَﺘِﻪِ , ﻭَﻗَﺬْﻑَ ﺑِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺐِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ , ﺛُﻢَّ ﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻳَﻨْﻘُﻠُﻨِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺻْﻠَﺎﺏِ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻤَﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡِ ﺍﻟﻄَّﺎﻫِﺮَﺓِ , ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺧْﺮَﺟَﻨِﻲ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺑَﻮَﻱَّ , ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺳِﻔَﺎﺡٍ ﻗَﻂ (ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻟﻶﺟﺮﻱ < ﺑﺎﺏ ﺫﻛﺮ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ : } ﻭﺗﻘﻠﺒﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﺟﺪﻳﻦ{)948
অর্থাৎ- হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নিশ্চয় কুরাইশ সম্প্রদায় আদম আঃ কে সৃষ্টির দুই হাজার বছর পুর্বে আল্লাহর দরবারে নুর হিসেবে বিদ্যমান ছিল।এ নুরটি আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করত।তার সাথে সাথে ফেরেশতারাও তাসবীহ পাঠ করত।অতঃপর যখন আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ কে সৃষ্টি করলেন এ নুরটিকে আদমের পৃষ্ঠদেশে স্হাপন করলেন।অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,আল্লাহ তায়ালা আমাকে আদমের পৃষ্ঠদেশে করে জমিনে পাঠাইলেন।আর আমাকে নুহ আঃ এর পৃষ্ঠে করে নোকায় আরোহন করাইলেন।আর আমাকে ইব্রাহিমের পৃষ্ঠে করে আগুনে নিক্ষেপ করলেন।অতঃপর সবসময় আমাকে এভাবে পবিত্র পৃষ্ঠ থেকে পবিত্র রেহেমে স্হানান্তর করলেন।শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা আমাকে আমার পিতা মাতা থেকে বের করলেন।আর আমার পিতা মাতার উর্ধতন কেহ কখনও পাপাচারে লিপ্ত হয়নি।
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় নবীজী নিজেই নিজেকে নুর বলে সম্ভোধন করেছেন।সুতরাং আমাদের জন্যও নবীজীকে নুর বলা জায়েয।
★আরেকখানা হাদিসে নবীজী তার জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনায় বলেছেন-
ﻋﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﺎﺽ ﺑﻦ ﺳﺎﺭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : " ﺇﻧﻲ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻡّ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﺨﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻴّﻴﻦ، ﻭﺇﻥ ﺀﺍﺩﻡ ﻟﻤﻨﺠﺪﻝ ﻓﻲ ﻃﻴﻨﺘﻪ ﻭﺳﺄﻧﺒﺌﻜﻢ ﺑﺘﺄﻭﻳﻞ ﺫﻟﻚ : ﺩﻋﻮﺓ ﺃﺑﻲ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ، ﻭﺑﺸﺎﺭﺓ ﻋﻴﺴﻰ ﻗﻮﻣﻪ، ﻭﺭﺅﻳﺎ ﺃﻣﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﺭﺃﺕ ﺃﻧﻪ ﺧﺮﺝ ﻣﻨﻬﺎ ﻧﻮﺭ ﺃﺿﺎﺀﺕ ﻟﻪ ﻗﺼﻮﺭ ﺍﻟﺸﺎﻡ ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺗﺮﻯ ﺃﻣﻬﺎﺕ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ." ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ( 1 ) : " ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﺄﺳﺎﻧﻴﺪ، ﻭﺍﻟﺒﺰﺍﺭ(2 ) ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﺑﻨﺤﻮﻩ" "... ﺃﺣﺪ ﺃﺳﺎﻧﻴﺪ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻏﻴﺮ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺳﻮﻳﺪ، ﻭﻗﺪ ﻭﺛﻘﻪ ﺍﺑﻦ ﺣﺒّﺎﻥ ( "(3
অর্থাৎ- হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শ্রবন করেছি,নিশ্চয় আমি আল্লাহর নিকট তাকদীরের খাতায় সর্বশেষ নবী হিসেবে লিখিত ছিলাম।তখন আদম আঃ ছিল মাটির সাথে।আর আমি তোমাদেরকে উহার ব্যাখ্যা দিতেছি-আমি আমার পিতা ইব্রাহিমের দোয়ার ফসল।আর ইসা আঃ তার কাওমকে যে সুসংবাদ দিয়েছিল তার সুসংবাদের ফসল।আর আমার মায়ের সেই দর্শনীয়,যা ছিল এমন যে, তার পেঠ থেকে একটি আলো বের হল যে আলোতে সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ দেখা গিয়েছিল।এভাবে সমস্ত নবীদের মাতারা দেখেছিল।
আলোচ্য হাদিস দ্বারাও বুঝা যায় যে,নবীজীর নুরের আলোতেই সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ আলোকিত হয়েছিল।যার বর্ণনা রাসুল নিজেই দিতেছেন।
★মুসলিম শরীপের এক হাদিসে এসেছে- ﺃﺧﺮﺝ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ - ( ﺝ 4 / ﺹ 158 ) ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓِﻲ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺳُﺠُﻮﺩِﻩِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻓِﻲ ﺳَﻤْﻌِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻓِﻲ ﺑَﺼَﺮِﻱ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻋَﻦْ ﻳَﻤِﻴﻨِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻋَﻦْ ﺷِﻤَﺎﻟِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺃَﻣَﺎﻣِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺧَﻠْﻔِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻓَﻮْﻗِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺗَﺤْﺘِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻞْ ﻟِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ
অর্থাৎ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ নামাজে বের হয়ে তার নামাজের ভিতরে বা সেজদার মধ্যে এ দোয়া করতেন-হে আল্লাহ আমার অন্তরে নুর দাও।আমার কর্ণে নুর দাও।আমার চক্ষুতে নুর দাও।আমার ডাণে ও বামে নুর দাও।আমার সামনে ও পিছনে নুর দাও।আমার উপরে ও নিচে নুর দাও।আর আমার পুরা দেহকে নুর করে নাও।
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে,রাসুল সাঃ নিজেই আল্লাহর দরবারে নুর হওয়ার জন্য দোয়া করেছেন।আর আমরা সবাই জানি যে,আল্লাহর নবীর দোয়া অবশ্যই গ্রহনযোগ্য।সুতরাং এ হাদিসেও রাসুলকে নুর বলা জায়েয বলা প্রমাণিত হল।
★আরও একখানা হাদিসে এসেছে- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ : ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻇﻞ، ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺷﻤﺲ ﻗﻂ ﺇﻻ ﻏﻠﺐ ﺿﻮﺅﺀ ﺍﻟﺸﻤﺲ، ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺳﺮﺍﺝ ﻗﻂ ﺇﻻ ﻏﻠﺐ ﺿﻮﺀﻩ ﻋﻠﻰ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﺴﺮﺍﺝ { ﺃﺧﺮﺝ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺍﻟﻐﺪﺍﻓﻲ ﻓﻲ ﺟﺰﺋﻪ ﻛﻤﺎ ﻓﻲ ﺇﻣﺘﺎﻉ ﺍﻷﺳﻤﺎﻉ - ( ﺝ 2 / ﺹ 170 ) }
অর্থাৎ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ এর কোন ছায়া ছিল না।আর যখনই তিনি সুর্যের আলোতে দাড়াইতেন তখন তার দেহের আলোর নিকট সুর্যের আলো পরাজিত হয়ে যেত। আর তিনি কোন বাতির সামনে দাঁড়াইলে বাতির আলো তার দেহের আলোর কাছে হার মানত।
আলোচ্য হাদিস দ্বারাও বুঝা যায় নবীজীর আলোতে সুর্যের আলোও অকার্যকার হয়ে যেত। সুতরাং পরিশেষে বলতে পারি যে,রাসুল সাঃ কে নুর বলে সম্ভোধন করা জায়েয ।এটা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
★আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন- قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে।। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫)
আলোচ্য আয়াতে নুর শব্দের ব্যাখ্যায় বহু মুফাস্সির নবীজীকেই উদ্যেশ্য করেছেন ।
যেমন- ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত্-তবারী (রা) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে জারীর এর মধ্যে বলেন-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعني باالنؤر محمدا صلي الله عليه ؤسلم الذي انار الله به الحق واظهربه الاسلام ومحق به الشرك-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, যে নূর দ্বারা আল্লাহ সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। ( তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৬, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তায়ালা নিজেই নবীজীকে নুর বলে সম্বোধন করেছেন।সুতরাং এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় নবীজীকে নুর বলা জায়েয।
★হাদিস শরীপে এসেছে- ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ : ﺃَﻥَّ ﻗُﺮَﻳْﺸًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻧُﻮﺭًﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻱِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَﺨْﻠُﻖَ ﺁﺩَﻡَ ﺑِﺄَﻟْﻔَﻲْ ﻋَﺎﻡٍ ﻳُﺴَﺒِّﺢُ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻨُّﻮﺭُ ﻭَﺗُﺴَﺒِّﺢُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﺑِﺘَﺴْﺒِﻴﺤِﻪِ , ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺁﺩَﻡَ ﺃَﻟْﻘَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﻨُّﻮﺭَ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺒِﻪِ , ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻓَﺄَﻫْﺒَﻄَﻨِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺐِ ﺁﺩَﻡَ , ﻭَﺟَﻌَﻠَﻨِﻲ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺐِ ﻧُﻮﺡٍ ﻓِﻲ ﺳَﻔِﻴﻨَﺘِﻪِ , ﻭَﻗَﺬْﻑَ ﺑِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻓِﻲ ﺻُﻠْﺐِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ , ﺛُﻢَّ ﻟَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﻳَﻨْﻘُﻠُﻨِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺻْﻠَﺎﺏِ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻤَﺔِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡِ ﺍﻟﻄَّﺎﻫِﺮَﺓِ , ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﺧْﺮَﺟَﻨِﻲ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺑَﻮَﻱَّ , ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻠْﺘَﻘِﻴَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺳِﻔَﺎﺡٍ ﻗَﻂ (ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻟﻶﺟﺮﻱ < ﺑﺎﺏ ﺫﻛﺮ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ : } ﻭﺗﻘﻠﺒﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﺟﺪﻳﻦ{)948
অর্থাৎ- হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,নিশ্চয় কুরাইশ সম্প্রদায় আদম আঃ কে সৃষ্টির দুই হাজার বছর পুর্বে আল্লাহর দরবারে নুর হিসেবে বিদ্যমান ছিল।এ নুরটি আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করত।তার সাথে সাথে ফেরেশতারাও তাসবীহ পাঠ করত।অতঃপর যখন আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ কে সৃষ্টি করলেন এ নুরটিকে আদমের পৃষ্ঠদেশে স্হাপন করলেন।অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,আল্লাহ তায়ালা আমাকে আদমের পৃষ্ঠদেশে করে জমিনে পাঠাইলেন।আর আমাকে নুহ আঃ এর পৃষ্ঠে করে নোকায় আরোহন করাইলেন।আর আমাকে ইব্রাহিমের পৃষ্ঠে করে আগুনে নিক্ষেপ করলেন।অতঃপর সবসময় আমাকে এভাবে পবিত্র পৃষ্ঠ থেকে পবিত্র রেহেমে স্হানান্তর করলেন।শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা আমাকে আমার পিতা মাতা থেকে বের করলেন।আর আমার পিতা মাতার উর্ধতন কেহ কখনও পাপাচারে লিপ্ত হয়নি।
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় নবীজী নিজেই নিজেকে নুর বলে সম্ভোধন করেছেন।সুতরাং আমাদের জন্যও নবীজীকে নুর বলা জায়েয।
★আরেকখানা হাদিসে নবীজী তার জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনায় বলেছেন-
ﻋﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﺎﺽ ﺑﻦ ﺳﺎﺭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ : " ﺇﻧﻲ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻡّ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻟﺨﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻴّﻴﻦ، ﻭﺇﻥ ﺀﺍﺩﻡ ﻟﻤﻨﺠﺪﻝ ﻓﻲ ﻃﻴﻨﺘﻪ ﻭﺳﺄﻧﺒﺌﻜﻢ ﺑﺘﺄﻭﻳﻞ ﺫﻟﻚ : ﺩﻋﻮﺓ ﺃﺑﻲ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ، ﻭﺑﺸﺎﺭﺓ ﻋﻴﺴﻰ ﻗﻮﻣﻪ، ﻭﺭﺅﻳﺎ ﺃﻣﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﺭﺃﺕ ﺃﻧﻪ ﺧﺮﺝ ﻣﻨﻬﺎ ﻧﻮﺭ ﺃﺿﺎﺀﺕ ﻟﻪ ﻗﺼﻮﺭ ﺍﻟﺸﺎﻡ ﻭﻛﺬﻟﻚ ﺗﺮﻯ ﺃﻣﻬﺎﺕ ﺍﻷﻧﺒﻴﺎﺀ ." ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﻣﺠﻤﻊ ﺍﻟﺰﻭﺍﺋﺪ( 1 ) : " ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﺄﺳﺎﻧﻴﺪ، ﻭﺍﻟﺒﺰﺍﺭ(2 ) ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﺑﻨﺤﻮﻩ" "... ﺃﺣﺪ ﺃﺳﺎﻧﻴﺪ ﺃﺣﻤﺪ ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻏﻴﺮ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺳﻮﻳﺪ، ﻭﻗﺪ ﻭﺛﻘﻪ ﺍﺑﻦ ﺣﺒّﺎﻥ ( "(3
অর্থাৎ- হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শ্রবন করেছি,নিশ্চয় আমি আল্লাহর নিকট তাকদীরের খাতায় সর্বশেষ নবী হিসেবে লিখিত ছিলাম।তখন আদম আঃ ছিল মাটির সাথে।আর আমি তোমাদেরকে উহার ব্যাখ্যা দিতেছি-আমি আমার পিতা ইব্রাহিমের দোয়ার ফসল।আর ইসা আঃ তার কাওমকে যে সুসংবাদ দিয়েছিল তার সুসংবাদের ফসল।আর আমার মায়ের সেই দর্শনীয়,যা ছিল এমন যে, তার পেঠ থেকে একটি আলো বের হল যে আলোতে সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ দেখা গিয়েছিল।এভাবে সমস্ত নবীদের মাতারা দেখেছিল।
আলোচ্য হাদিস দ্বারাও বুঝা যায় যে,নবীজীর নুরের আলোতেই সিরিয়ার রাজ প্রাসাদ আলোকিত হয়েছিল।যার বর্ণনা রাসুল নিজেই দিতেছেন।
★মুসলিম শরীপের এক হাদিসে এসেছে- ﺃﺧﺮﺝ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ - ( ﺝ 4 / ﺹ 158 ) ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺛُﻢَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻓِﻲ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺳُﺠُﻮﺩِﻩِ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﻓِﻲ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻓِﻲ ﺳَﻤْﻌِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻓِﻲ ﺑَﺼَﺮِﻱ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻋَﻦْ ﻳَﻤِﻴﻨِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻋَﻦْ ﺷِﻤَﺎﻟِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺃَﻣَﺎﻣِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺧَﻠْﻔِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﻓَﻮْﻗِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺗَﺤْﺘِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻞْ ﻟِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻝَ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨِﻲ ﻧُﻮﺭًﺍ
অর্থাৎ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ নামাজে বের হয়ে তার নামাজের ভিতরে বা সেজদার মধ্যে এ দোয়া করতেন-হে আল্লাহ আমার অন্তরে নুর দাও।আমার কর্ণে নুর দাও।আমার চক্ষুতে নুর দাও।আমার ডাণে ও বামে নুর দাও।আমার সামনে ও পিছনে নুর দাও।আমার উপরে ও নিচে নুর দাও।আর আমার পুরা দেহকে নুর করে নাও।
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে,রাসুল সাঃ নিজেই আল্লাহর দরবারে নুর হওয়ার জন্য দোয়া করেছেন।আর আমরা সবাই জানি যে,আল্লাহর নবীর দোয়া অবশ্যই গ্রহনযোগ্য।সুতরাং এ হাদিসেও রাসুলকে নুর বলা জায়েয বলা প্রমাণিত হল।
★আরও একখানা হাদিসে এসেছে- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋﻨﻪ : ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻇﻞ، ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺷﻤﺲ ﻗﻂ ﺇﻻ ﻏﻠﺐ ﺿﻮﺅﺀ ﺍﻟﺸﻤﺲ، ﻭﻟﻢ ﻳﻘﻢ ﻣﻊ ﺳﺮﺍﺝ ﻗﻂ ﺇﻻ ﻏﻠﺐ ﺿﻮﺀﻩ ﻋﻠﻰ ﺿﻮﺀ ﺍﻟﺴﺮﺍﺝ { ﺃﺧﺮﺝ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺍﻟﻐﺪﺍﻓﻲ ﻓﻲ ﺟﺰﺋﻪ ﻛﻤﺎ ﻓﻲ ﺇﻣﺘﺎﻉ ﺍﻷﺳﻤﺎﻉ - ( ﺝ 2 / ﺹ 170 ) }
অর্থাৎ-হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুল সাঃ এর কোন ছায়া ছিল না।আর যখনই তিনি সুর্যের আলোতে দাড়াইতেন তখন তার দেহের আলোর নিকট সুর্যের আলো পরাজিত হয়ে যেত। আর তিনি কোন বাতির সামনে দাঁড়াইলে বাতির আলো তার দেহের আলোর কাছে হার মানত।
আলোচ্য হাদিস দ্বারাও বুঝা যায় নবীজীর আলোতে সুর্যের আলোও অকার্যকার হয়ে যেত। সুতরাং পরিশেষে বলতে পারি যে,রাসুল সাঃ কে নুর বলে সম্ভোধন করা জায়েয ।এটা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমানিত।