Tuesday, May 30, 2017

★বিশিষ্ট পণ্ডিত ও হিন্দু ধর্মগুরু ড. শিবশক্তির ইসলাম গ্রহণের কাহিনী:

যদি আল্লাহ পাক কাউকে হেদায়াত দান করতে চান তবে কেউ তা রুখতে পারেনা। আর সে মূল্যবান হিদায়াত যদি মহান আল্লাহ পাক তার হাবীব হুজুর সা. এর দীদারের মাধ্যমে কাউকে দান করেন তবে তা যে কত বড় সৌভাগ্যের বিষয় তা সহজেই অনুমেয়। সে সৌভাগ্যশীল মানুষদের একজন হলেন ভারতের ৭০ কোটি হিন্দুর সাক্ষাৎ ভগবান ড. শিবশক্তি স্বরুপজি। হিদায়াতের নূর দ্বারা আলোকিত হয়ে পৃথিবীর সেরা আলোকিত মানুষে পরিণত হলেন ড. শিবশক্তি। তার ইসলাম গ্রহণের এ ঘটনায় সারা বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। সারা দুনিয়ার স্বনামধন্য সব মিডিয়া তা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছিল। তার ইসলাম গ্রহণের কাহিনী যেকোন সত্যান্বেষী ও সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। চলুন, শুনি সে স্বার্থক জীবনের অভূতপূর্ব কাহিনী।

১৯৮৬ সালের রমজান মাস। এ পবিত্র মাসেই ড. শিবশক্তি একটি স্বপ্ন দেখলেন। যে স্বপ্নটি তার জীবনকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। স্বপ্নটির সারসংক্ষেপ এমন যে, তিনি স্বপ্ন দেখার এক পর্যায়ে ভয়ে হাপাচ্ছেন আর দৌঁড়াচ্ছেন। এমন সময় তিনি তার সামনে এক নূরানী চেহারার সীমাহীন ব্যক্তিত্ববান এক মানুষকে দেখতে পেলেন, যিনি তাকে ভয় নেই বলে আশ্বস্ত করলেন এবং ড. সাহেবের কাছে এভাবেই  তার পরিচয় পেশ করলেন যে, আমিই শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সা.! সে স্বপ্নের মধ্যেই নবীজি সা. শিবশক্তিকে কালিমা পড়ার আহ্বান জানালেন এবং কালিমা স্বয়ং নিজেই পড়িয়ে দিলেন। এরপর থেকেই তিনি ইসলামকে মনে প্রাণে কবুল করে নিলেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে ড. ইসলামুল হক রাখলেন।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঠিক একই স্বপ্নটি তার বিদূষী স্ত্রী স্ত্রীমতি শ্রদ্ধাদেবীও দেখলেন, তিনিও কালিমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামকে গ্রহণ করে খাদিজা হক নাম ধারণ করলেন। তাদের উচ্চশিক্ষিত গ্রাজুয়েট কন্যা শ্রীমতি অপরাজিতা দেবীও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার নাম রাখা হলো আয়েশা হক। তাদের আরেক কন্যাও স্বামীসহ ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন পিতার কাছে।

ড. সাহেব ভারতের বৃন্দাবনে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর এ বৃন্দাবনেই হিন্দুদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। হিন্দুসমাজ এ বৃন্দাবনকে তাদের পবিত্র তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচনা করে। রাধা কৃষ্ণের লীলাভূমি নামেও এটি সারা পৃথিবীতে পরিচিত।

তিনি হিন্দু সমাজের নিকট এতই পূজনীয় ছিলেন যে,ভারতের হিন্দুসমাজ তার ব্যাপারে  মনে করত রাধা কৃষ্ণের এ লীলাভূমি বৃন্দাবনেই আরেক ভগবান জন্মগ্রহণ করে ‘শিবশক্তি’ নামধারণ করেছেন।

হিন্দুসমাজের এমন পূজনীয় ভগবান সমতুল্য শিবশক্তির ইসলাম গ্রহণের এ ঘটনায় ভারতীয় হিন্দুসমাজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। দুঃখে আর ক্ষোভে তাদের জ্ঞানীয় শক্তি লোভ পেয়ে যায়। ব্রাক্ষণ্যবাদের পতাকাবাহী এক শ্রেণীর সাম্প্রদায়িক লোক ড. শিবশক্তির বিরুদ্ধে মিছিল বের করে তার ফাসির দাবিতে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। তারা ‘নব ভারত টাইমস’ ‘নব ভারত সমাচার’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। ড. সাহেব সীমাহীন ধৈর্য আর সহিষ্ণুতার সাথে এ সমস্ত বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিবেদনের জবাব দিয়েছেন তার লিখিত দুটি পুস্তক হিন্দি ভাষায় লিখিত ‘খোলাপত্র’ ও উর্দু ভাষায় লিখিত ‘লিজিয়ে আপ ভি সৌচিয়ে’ দ্বারা।

অপরদিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পৈতৃক আশ্রমের স্বর্ণসিংহাসনের মোহ ত্যাগ করে তিনি যখন ইসলামকে কবুল করেছেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীর সচেতন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সারা জাহানের জ্ঞানী গুণীরা তাকে মোবারকবাদ জানিয়ে পত্র লিখতে থাকেন। তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোলাগার কথা জানান।

ড. শিবশক্তি উত্তর ভারতের মথুরা জেলার বৃন্দাবনে ১৯৩৬ সালে এক ঐতিহ্যবাহী মোহন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বংশানুক্রমেই সর্বস্বামী বা মোহন্ত। তার পিতার নাম প্রিতমদাস উদাসেন এবং মায়ের নাম ভানুমতি কর। তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হলেন শিবশক্তি।

পিতার আশ্রমেই শিবশক্তি প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরিয়ান্টালিজম এ মাস্টার্স করেন। গুরু কুল কাংড়ি থেকে ‘আচারিয়া’ পদবি, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে বিশ্বের দশটি প্রধান ধর্মের উপর ডক্টরেট অব ডিভাইটিটি এবং অরিয়ান্টালিজম এ আরেকটি ‘পি এইচ ডি লাভ করেন।

পৃথিবীর বারটি ভাষায় তিনি পাণ্ডত্য অর্জন করেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো ইংরেজি, সংস্কৃতি, গ্রিক, উর্দু, পালি, মারাঠি, গোরমুখি, গুজরাটি, আরবী প্রভৃতি ভাষা।

তিনি যখন ভ্যার্টিকানের পোপ পল-৬ এর বৃত্তি নিয়ে ইটালি যান তখন তাকে সেখানকার নাগরিকত্ব দেয়া হয়। পোপ জন পলের পক্ষ থেকে তাকে খৃষ্টধর্ম গ্রহনের আহব্বান জানালে তিনি তা উপেক্ষা করে ভারতে এসে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভগবানের আসনে আরোহন করেন।

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত মোহন্তগিরি পেশা ছিল তাঁর অঢেল তীর্থ উপার্জনের উৎস। অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী অঢেল বিত্ত, সম্মান আর সেবাযত্নের  মোহ তাকে ধরে রাখতে পারেনি। কালিমার শ্বাশত আহবান তাকে বিমোহিত করতে সক্ষম হয়েছিল বিধায় তা সম্ভব হয়েছে।

আর্কষণীয় চেহারার শ্বেতশুভ্র চুল-দাড়িশোভিত ড. ইসলামুল হক বর্তমানে তাঁর ভাগ্যবতী স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে ভূপালের ১৫নং নীলম কলোনির একটি ভাড়া বাসার দোতলায় থাকেন। ভবনের পাশেই জাওয়াবিত মসজিদ। সেখানে তিনি ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন। পাওয়ার থেরাপির আয়ুর্বেদ শাস্ত্র দ্বারা চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর জীবনে এতো প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও তিনি সীমাহীন নির্ভীক মানুষ। তিনি বলেছেন, এক আল্লাহকে ছাড়া কাউকে তিনি ভয় করেন না।
একজন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিল যে, “ভারতীয় হিন্দুদের ভগবানের আসনে সমাসীন হবার সৌভাগ্য লাভ করেও আপনি কেন ইসলাম গ্রহণ করেছেন?

জবাবে ড. সাহেব বলেছিলেন, ‘আমি ভারতের আর ১০ জন হিন্দুর মত নই। আমি ব্যাপক পড়াশোনা করেছি। ভালো-মন্দ সম্পর্কে আমার যথেষ্ট জ্ঞান হয়েছে। বিশ্বের প্রধান ১০ টি ধর্মের উপর পড়াশোনা করে আমি অক্সফোর্ড থেকে পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছি। ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েই আমি ইসলামের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি। মানবীয় জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে। অন্য কোন ধর্মের এ দুঃসাহস নেই। ইসলামের সৌন্দর্য ও মানসিকতা আমাকে ইসলাম গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করেছে।

তাছাড়া গভীর রাতে হযরত মুহাম্মদ সা. আমাকে ও আমার বিদূষী স্ত্রীকে ইসলাম গ্রহনের নির্দেশও দেন। হাদীসের ভাষ্যনুযায়ী এ স্বপ্ন মিথ্যা হয়না। স্বপ্নযোগে হযরত মোহাম্মদ সা. এর দীদার কয়জনের ভাগ্যে জোটে?’ তিনি আরো বলেন, “নবীজি সা. এর নির্দেশ আমরা পালন করেছি মাত্র। কাজেই আমাদের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে কোনরূপ প্রশ্ন তোলা ঠিক হবেনা বলে আমি মনে করি। ইসলাম গ্রহণ করতে পেরে আমরা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ” আল জান্নাত
১৪ আগস্ট,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর


Friday, May 26, 2017

★রাসুল(সাঃ) চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময় উদ্বিগ্ন হওয়ার কারনঃ

 নাস্তিকেেরা প্রায় সময় উপহাস করে এই বলে যে, রাসুল(সাঃ) চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময় উদ্বিগ্ন হতেন যা একটি হাস্যকর বিষয়।
আসলে এটা তাদের জ্ঞানহীনতারই পরিচয় বহন করে।চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের প্রকৃত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানালে তারা কখনোই এ নিয়ে উপহাস করত না বরং নিঃসংশয়ে স্বাক্ষ দিয়ে দিত-

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্(সাঃ)!

একটু বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় যাচ্ছি চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের, যেন সবাই বুঝতে পারেন কেন রাসুল(সাঃ) এসময় উদ্বিগ্ন হতেন!

উদ্বিগ্নের কারনঃ

অভিকর্ষজ নিয়ম অনুযায়ী চন্দ্র ও সূর্য উভয়ই পৃথিবীর উপর বলীয় প্রভাব বিস্তার করে। আমরা জানি, অভিকর্ষ বল দুটি বস্তুর দূরত্বের বর্গের বিপরীতে হ্রাস পায়! পৃথিবী হতে সূর্যের দূরত্ব চন্দ্রের দূরত্বের ৪০০গুণ!  এই দূরত্বের কারনে সুবিশাল ভরসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সূর্যের চাইতে চাদের অভিকর্ষ প্রতাপ পৃথিবীর উপর বেশি পড়ে। উভয় গোলকের অভিকর্ষ প্রভাবের প্রত্যক্ষ ফলাফলে সমুদ্রে জোয়ার -ভাটার সৃষ্টি হয়! বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী সূর্যের এই প্রভাবটি চাঁদের আকর্ষী বলের ৪৫ ভাগ।পৃথিবী চন্দ্রের কম দূরত্বের কারনে চাদ-পৃথিবী অভিকর্ষ শক্তি সূর্য-পৃথিবী অভিকর্ষ শক্তির চাইতে কম!

চাঁদ বা সূর্য যখন পৃথিবীকে আকর্ষন করে, এই আকর্ষী বলটি পৃথিবীকে সমস্ত বস্তু সমেত টেনে নিতে চায়! প্রকৃতির নিয়মের কারনে এটি সম্ভব হয়না। কঠিন বস্তুনিচয়ের উপরো এই বল কার্যকর হয়না---- বলটির প্রভাব যখন জলবিস্তারের উপর পড়ে,  তখন চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ জনিত টানের কারনে জলভাগ স্ফীত ও বলের দিকে নীত হতে চায়। বলটি এতটা শক্তিশালী নয় যে  ভূভাগের সমস্ত জলকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এর ততটা শক্তি রয়েছে যে বিপুল জলরাশীকে টেনে ধরে রাখতে সক্ষম। এই টানের দিকে জলের স্ফীত সৃষ্ট হয়। পৃথিবী গোলাকার এবং কঠিন ও অনড়, তাই এটানের প্রভাব ভূ-ভাগের সমস্ত জলরাশিতে পড়ে। ফলে জল বিস্তার স্থানচ্যুত হয়ে আসে বা আসতে চায়। ক্রমে ক্রমে জলীয় বলয়ে গতির সৃষ্টি হয় এবং জোয়ার আসে।
চাদের মত সূর্য ও পৃথিবীর জলরাশির উপর পৃথক একটি প্রভাব সৃষ্টি করে। যখন সূর্যের এই আকর্ষন চন্দ্রের আকর্ষণ রেখার উপর পতিত হয় বা সসমান্তরাল হয় তখন এই জোয়ারের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য যখন মোটামোটি একই সরল রেখায় উপনীত হয়, তখন পৃথিবী জলীয়মন্ডলে যে প্রভাব পড়ে তাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছে  Spring tide.
পূর্ণিমা বা অমাবস্যায় এই জোয়ার সৃষ্টি হয়।
প্রতিদিন আমরা যে জোয়ারের সাথে পরিচিত, অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় সে জোয়ার অপেক্ষাকৃত অধিকতর প্রভাবশালী।

চাঁদ যদি গ্রহণী সমতলে অর্থাৎ সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে সূর্য- চাঁদ - পৃথিবী এই বিন্যাসে একটি সরল রেখায় উপনীত হয়, তখন চাঁদের পূর্ণ ছায়া পৃথিবীর উপর পতিত হয়। চাঁদ টি সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে এমনভাবে থাকে যে, সূর্য আড়াল হয়ে যায়। তখন যে গ্রহন হয় তা হল সূর্য গ্রহন।
চাঁদ যখন পৃথিবী ও সূর্যের শূন্য লাইনে চলে আসে তখন তিন বস্তুর শক্তি ভেক্টরটি সূর্যের দিকে গতিমুখ করে থাকে। এই শক্তি ভেক্টরটি সাধারণত বেশি শক্তিশালী হয়। তখন কিন্তু সূর্য গ্রহন।আর এটি হতেপারে মহা সংকটকাল। ৩বস্তুর একত্রিত অভিকর্ষ শক্তি দূরে কোনো ধংসের আগন্তুককে ডেকে আনবার রাস্তাটি দেখিয়ে দেয়।
এই অবস্থাটি একটি অতিশয় নাজুক পরিস্থিতিরই নামান্তর, যা পরিণামে সর্বৈব ধংসের কারন হতে পারে।
সূর্যকে কেন্দ্র বিবেচনা করলে যে চিত্র আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি তা হলো----
এসটিরয়েড ও মিটিওর বেল্ট, শনির পাথুরে বেল্ট, ওল্ট ক্লাউড এইসব অঞ্চলের অভিশপ্ত  আগন্তুকগনের জন্য(যারা পৃথিবীর কক্ষপথ ছেদ করে) পৃথিবী হল সর্ব প্রথম লক্ষ বস্তু! কোন কারনে কোনো সময়ে সূর্য-চন্দ্র পৃথিবী লাইনে তৈরী হবার পর গতিটানের অনুকূল দিকে সন্তরণমান কোনো মহাকাশীয় বস্তু যদি ক্ষুদ্র কৌণিক দূরত্ব নিয়ে আপতিত হয়,তবে এ সর্বনাশের মখে পৃথিবী হল প্রথম পরিণামবাহী!
অতীতে পৃথিবীর সঞ্চালন তলকে যেসব গ্রহাণুরা ছেদ করে গেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ---- ইরোস ১৯৩১ সালে, ব্যাস ৩০ কিঃমিঃ।অ্যালবার্ট ১৯১১ সালে,ব্যাস ৫কিঃমিঃ।অ্যামোর ব্যাস ৮কিঃমিঃ। এছড়াও, এপোলো, অ্যাদোনিস ইত্যাদির আগমন ঘটেছিল ছিল । অনুরোপ ভাবে বিভিন্ন ধুমকেতুর আনাগোনা হয়েছে অতীতে।
এমনি একটি এসটিরয়েডের আঘাতে ৬কোটি ৫০লক্ষ বছর আগে যে বিপর্যয়ের সৃষ্ট হয়েছিল তার ফলে বিলুপ্ত হয়েছিল "ডাইনোসোরাস প্রজাতী"!!

প্রিয় ভাইয়েরা, এবার আপনারা বলুন চন্দ্র ও সূর্য গ্রহন আতংকের বিষয় নাকি উপভোগ করার বিষয়?

আজকের আধুনিক মুক্তমনাগণ যা জানেনা মহান রব ১৫০০ বছর আগেই তা জানিয়ে দিয়েছিলেন তার প্রিয় হাবিবকে!! আর এজন্যই তিনি চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের সময় উদ্বিগ্ন হয়ে সবাইকে নিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতে এবং আল্লাহ্‌র কাছে অনুগ্রহ ও দয়ার জন্য কান্নাকাটি করতেন!!
আল্লাহ্‌ আমাদের সবাই রাসুল(সাঃ) কথা ও কাজ  বুঝার ও জানার তওফিক দান করুন,আমিন!

Tuesday, May 16, 2017

★আল কোরআন আলোকে অতি পারমানবিক কনিকার অস্তিত্ব।::::

কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আমাদের মহাবিশ্বের
সবকিছু কি দিয়ে গঠিত? তাহলে সবাই বলবে, কেন পরমাণু দিয়ে গঠিত! যারা বিজ্ঞান সম্পর্কে
অল্পকিছু জানে তারা বলবে- ইলেকট্রন , প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে সকল পরমানু গঠিত, তাই সবকিছুই এই ইলেকট্রন-প্রোটন-নিউট্রন দিয়েই গঠিত। এতসব কথা আমরা জেনেছি সেটি কিন্তু খুব বেশি দিন আগে নয়।

দার্শনিক এরিস্টটল(৩৮৪-৩২২ খ্রিঃপূঃ) মনে করতেন, আমাদের মহাবিশ্বে যা কিছু আছে তা সবই “মাটি”, “পানি”, “আগুন” আর “বাতাস” এই চারটি মৌলিক জিনিস দিয়ে গঠিত। তিনি এমনই প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন যে, তার মৃত্যুর পরও প্রায় দুই হাজার বছর মানুষ এই কথাই মেনে নিয়েছিল। তবে ভিন্ন মত যে একেবারেই ছিলনা তা নয়। ডেমোক্রিটাস নামে এক গ্রিক মনে করতেন ব্যাপারটি এমন নয়। তিনি ভাবতেন, কোন পদার্থকে ভাঙ্গলে দেখা যাবে এরা খুব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা দিয়ে গঠিত । তিনি আরও প্রস্তাব করেন যে, এসব কনাকে আর ভাঙ্গা যাবে না।তিনি এসব অবিভাজ্য কনার
নাম দেন এটম বা পরমানু।

কিন্তু এরিস্টটল বা ডেমোক্রিটাস কারও কথার পক্ষেই কোন প্রমান ছিল না। ১৯১১ সালে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড নামে একজন পদার্থবিজ্ঞানী পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি পরমানু মডেল প্রস্তাব করেন ।পরবর্তীতে আরও
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেই মডেলের উন্নতি করা
হয়। আর একথাও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, সকল পদার্থই পরমানু দিয়ে গঠিত; তবে এসব পরমানুও অবিভাজ্য নয়। পরমানুগুলো ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন নামে মৌলিক কনিকা দিয়ে গঠিত। প্রকৃতিকে প্রথমে যতটা সহজ সরল বলে ভাবা হয়েছিল, দেখা গেল ব্যাপারটা মোটেই সেরকম না।

বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, কোন সহজ উপায়েই
পরমানুর ভেতরে থাকা অতি-পারমানবিক কনাদের আচরন ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। গবেষণা চলতেই থাকল। পরবর্তী গবেষণায় বেরিয়ে এল আরও আশ্চর্য তথ্য। প্রোটন, নিউট্রনকে আমরা যেমন অবিভাজ্য ও মৌলিক কনা বলে ভেবে এসেছি, সেগুলো আসলে অবিভাজ্য না। প্রোটন ও নিউট্রনগুলো “কোয়ার্ক” নামে এক ধরনের কনা দিয়ে গঠিত। তিনটি কোয়ার্ক মিলে তৈরি হয় একটি প্রোটন বা নিউট্রন। পার্টিক্যাল এক্সিলারেটরের ভিতর পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ভেঙ্গে আরও অনেক অস্থায়ী অতিপারমানবিক কনিকার অস্তিত্ব পাওয়া গেল। তবে এরা সবাই কিন্তু পদার্থের কনিকা। এটুকু আমরা জানতে পারলাম, সকল প্রকার পদার্থ পরমাণু দিয়েই
গঠিত আর এসব পরমাণু বিভিন্ন অতি পারমানবিক কনা দিয়ে দিয়ে তৈরি।

সুতরাং বলা যায় যে, পরমানুকেও যে বিভক্ত করা যায় তা বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার। এই তথ্য ১৪০০ বছর আগে কারই জানা ছিল না।আর পরমানুকে আরবীতে অতি সাধারনভাবে  আরবীতেٍٍ ذَرَّةٍ বলা হয়। “ذَرَّةٍ” (জাররাহ) তথা পরমানু ছিল একটি সীমা যা কেউ অতিক্রম করতে পারত না।কিন্তু কোরআনের নিচের আয়াতটি “ذَرَّةٍ” বা পরমানু শব্দের এ সীমা স্বীকার করে না-
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَأْتِينَا السَّاعَةُ ۖ قُلْ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتَأْتِيَنَّكُمْ عَالِمِ الْغَيْبِ ۖ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
“কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু,না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।”[৩৪:৩]
এ আয়াতে মহান আল্লাহর সর্বজ্ঞান, তার প্রকাশ্য ও গোপন সকল কিছুর জ্ঞানের দিকে ইঙ্গিত করে। তারপর এটি বলে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা পরমানু অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর কিংবা বৃহত্তর সবকিছুর ব্যাপারেই সচেতন। এভাবে এ আয়াতটি সুস্পষ্টভাবে প্রমান করে যে পরমানুর থেকে ক্ষুদ্রতর কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব।যে সত্যটি আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা অতি সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে।

Monday, May 15, 2017

হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে নারীদের অবস্হান।

সনাতন হিন্দু ধর্মের তথাকথিত প্রগতিশীল লোকেরা সময়-সুযোগ পেলেই বড়াই করে বলে বেড়ান, হিন্দু ধর্মে না-কী নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা-সম্মান দেয়া হয়েছে; নারীদের মাতৃজ্ঞানে এ ধর্মে পূঁজা করা হয়;হিন্দু নারীরা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় অনেক বেশি প্রগতিশীল!
এ ধরনের বক্তব্য প্রচারের কারণ আছে; পশ্চিমা সামাজ্যবাদের বর্তমান চক্ষুশুল ইসলামি মৌলবাদ নিয়ে সারা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো ব্যস্ত থাকায় ফাঁক দিয়ে সুযোগ বুঝে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের ধর্মকে প্রগতিশীল, যুগোপযুগী, নারী স্বাধীনতার পক্ষে—ইত্যাদি তকমা ব্যবহার (ব্রেনওয়াশ!) করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।

এ প্রবন্ধে আমি শুধুমাত্র প্রগতিশীল দাবিদার হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দাবিগুলোর যথার্থতা নিরুপণের জন্য হিন্দু ধর্মীয় অনুশাসনগুলোর‘কিছু’ দৃষ্টান্ত হাজির করার চেষ্টা করবো। আমি মনে করি, এই ‘কিছু’, অনেক কিছু বোঝার জন্য যথেষ্ট।.এবার মূল আলোচনায় আসি। বলা হয়ে থাকে হিন্দুধর্মের মূল গ্রন্থ বেদ। এজন্য অনেকে হিন্দুধর্মকে বৈদিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। হিন্দুধর্মের বেদ চারটি; যথা-
 ঋগবেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ ও যজুর্বেদ।
 যজুর্বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত যথা-
 একটি হচ্ছে কৃষ্ণযজুর্বেদ বা তৈত্তরীয় সংহিতা
অন্যটি শুক্লযজুর্বেদ;
 এই শুক্লযজুর্বেদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত।যথা-
একটি -শতপথ ব্রাহ্মণ
অন্যটি বৃহদারণ্যকোপনিষদ।
 শুক্লযজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মণে নারীকে তুলনা করা হয়েছে এভাবে,
 “সে ব্যক্তিই ভাগ্যবান, যার পশুসংখ্যা স্ত্রীর সংখ্যার চেয়ে বেশি” (২/৩/২/৮)।
 শতপথ ব্রাহ্মণের এ বক্তব্যকে হয়তো দরদী ধর্মবাদীরা ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে যৌক্তিকতা দিতে চেষ্টা করবেন, কিন্তু পরের আরেকটি শ্লোকে পাওয়া যায় হিন্দু ধর্মের দৃষ্টিতে নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান;
 “বজ্র বা লাঠি দিয়ে নারীকে দুর্বল করা উচিৎ, যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার না থাকতে পারে” (৪/৪/২/১৩)।
 এর থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্যের আর প্রয়োজন আছে? বৃহদারণ্যকোপনিষদে ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য বলেন, “স্ত্রী স্বামীর সম্ভোগকামনা চরিতার্থ করতে অসম্মত হলে প্রথমে উপহার দিয়ে স্বামী তাকে‘কেনবার’ চেষ্টা করবে, তাতেও অসম্মত হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মেরে তাকে নিজের বশে আনবে” (৬/৪/৭, ১/৯/২/১৪)।

 দেবীভাগবত-এ নারীর চরিত্র সম্পর্কে বলা আছে (৯:১): “নারীরা জোঁকের মত, সতত পুরুষের রক্তপান করে থাকে। মুর্খ পুরুষ তা বুঝতে পারে না, কেননা তারা নারীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। পুরুষ যাকে পত্নী মনে করে,সেই পত্নী সুখসম্ভোগ দিয়ে বীর্য এবং কুটিল প্রেমালাপে ধন ও মন সবই হরণ করে।”
বাহ্! হিন্দুরা না-কি মাতৃজ্ঞানে দেবীর (দূর্গা, কালি,মনসা, স্বরসতী, লক্ষী) পূজা করে?.
হিন্দুধর্ম গ্রন্হে নারীদের জন্য মনু বেদসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পাঠের অধিকার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন,
 “নারীরা ধর্মজ্ঞ নয়, এরা মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায় (অশুভ)এই শাস্ত্রীয় নিয়ম” (মনুসংহিতা,৯/১৮)

 হিন্দুধর্মের ইতিহাসে সেই কুখ্যাত সতীদাহ বা সহমরণের কথা প্রথম জানা যায় অথর্ববেদে, “... জীবিত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃতের বধু হতে” (১৮/৩/৩);
 “এই নারী পতিলোকে যাচ্ছে, এ প্রাচীন রীতি অনুসরণ করছে...” (১৮/৩/৩/১)।
 এ প্রাচীন রীতি কত পুরানো?এটি আর্য না প্রাগার্য সংস্কৃতি? কারণ আমরা ইন্দো-ইয়রোপীয় অন্য সভ্যতাগুলিতে আমরা সহমরণের কথা তো পাই না। উত্তরগুলো আমার জানা নেই।
তবে পাঠক, আপনারা হয়তো ইতিহাস পাঠের কারণে জানেন, এই বাংলায় ১৮১৫ সাল থেকে ১৮২৮ সাল পর্যন্ত মাত্র তের বছরে ব্রাহ্মণ্যবাদীর দল পুণ্যলাভের আশায় আর নারীর সতীত্ব (?) রক্ষার ধুয়া তুলে ৮১৩৫ জন নারীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে সতী বানিয়েছিল! তো, একটি নিরাপরাধ মেয়েকে টেনে-হিচড়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলছে, পাশে মা-বাবা,আত্মীয়স্বজন সকলে দাঁড়িয়ে ‘বল হরি বল’কীর্তন গেয়ে নিজেদের স্বর্গে যাবার আয়োজন করছে, ভাবতেই তো গা গুলিয়ে উঠে! মানুষ কী পরিমাণ পাষণ্ড-হারামি-ধর্মান্ধ হলে এরকম কাজ করতে পারে? ‘ধর্ম’ নামক আফিমীয় মাদক মানুষকে কতটুকু নিবোর্ধ-মানবিকতাশূণ্য বানিয়ে দেয়, তারই উদাহরণ হতে পারে উপমহাদেশের এই সতীদাহ প্রথা।

★মনুসংহিতা এবং নারী :
                     হিন্দু আইনের মূল উৎস হচ্ছে এই ‘মনুসংহিতা’ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচ্য। এই ধর্মগ্রন্থে নারীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে,
 “বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ/পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহার্থোহগ্নিপরিক্রিয়া॥” (২:৬৭), অর্থাৎ স্ত্রীলোকদের বিবাহবিধি বৈদিক সংস্কার বলে কথিত, পতিসেবা গুরুগৃহেবাস এবং গৃহকর্ম তাদের (হোমরূপ) অগ্নিপরিচর্যা; সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যই নারী এবং সন্তান উৎপাদনার্থে পুরুষ সৃষ্টি হয়েছে (৯:৯৬)।
 যে সকল নারী একদা বৈদিক মন্ত্র-শ্লোক পর্যন্ত রচনা করেছিলেন, তাদের উত্তরসূরীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত-অমন্ত্রক (২:৬৬
); নারী মন্ত্রহীন, অশুভ (৯:১৮)।
কন্যা, যুবতী,রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম নিষিদ্ধ এবং করলে নরকে পতিত হয় (১১:৩৭)!
 স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে
 (৫:১৫৪) “বিশীলঃ কামবৃত্তো বা গুণৈর্বা পরিবর্জিতঃ/উপচর্যঃ স্ত্রিয়া সাধ্ব্যা সততং দেববৎ পতিঃ॥”
 বাংলা করলে দাঁড়ায়, স্বামী দুশ্চরিত্র, কামুক বা নির্গুণ হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য। পরবর্তী শ্লোকে রয়েছে,
কোনো নারী (স্ত্রী) যদি স্বামীকে অবহেলা করে, ব্যভিচারিণী হলে সংসারে তো নিন্দিত হবেই সাথে-সাথে যক্ষা, কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়,শুধু তাই নয় পরজন্মে শৃগালের গর্ভে জন্ম নিবে সেই নারী (৫:১৬৩-১৬৪)।

 স্ত্রীদের জন্য স্বামী ছাড়া পৃথক যজ্ঞ নেই, স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো ব্রত বা উপবাস নেই, শুধু স্বামীর সেবার মাধ্যমেই নারী স্বর্গে যাবে (৫:১৫৫)।
 সাধ্বী নারী কখনো জীবিত অথবা মৃত স্বামীর অপ্রিয় কিছু করবেন না (৫:১৫৬)।
 স্বামী মারা গেলে স্ত্রীদের কি করতে হবে
“কামন্তু ক্ষপয়েদ্দেহং পুস্পমূলফলৈঃ শুভৈঃ/ন তু নামাপি গৃহ্নীয়াৎ পত্যৌ প্রেতে পরস্য তু॥” (৫:১৫৭), সহজ ভাষায় বাংলা করলে হয়, স্ত্রী সারা জীবন ফলমূল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন, কিন্তু অন্য পুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না।
 কিন্তু স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কি করবেন,
 “ভার্যায়ৈ পূর্বমারিণ্যৈ দত্ত্বাগ্নীনন্ত্যকর্মণি/পুনর্দারক্রিয়াং কুর্যাৎপুনরাধানমেব চ॥” (৫:১৬৮),
 এই শ্লোকেরও বাংলা শুনুন, দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে স্বামী আবার বিয়ে এবং অগ্ন্যাধ্যান করবেন।

 সত্যি! নারী-পুরুষের মধ্যে কী চমৎকার সমতা!! কেহ কেহ বলেন, ‘মনুবাদ’ থেকেই না-কি ‘মানবতাবাদ’ এসেছে! দারুন! ধন্য মোরা মনুর প্রতি! আবার এই ‘মনুবাদ’না-কী হিন্দু আইনের উৎস! নারীর গুণাবলী নিয়ে মনু বলেন,
 নারীর কোনো গুণ নেই, নদী যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে লবনাক্ত (সমুদ্রের গুণপ্রাপ্ত) হয়, তেমনই নারী বিয়ের পর স্বামীর গুণযুক্ত হন (৯:২২)।
 নারীর স্বাধীনতা সম্পর্কে মনুর সংহিতাতে বলা আছে : “অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ঃ কার্য্যাঃ পুরুষৈঃ স্বৈর্দ্দিবানিশম্/ বিষয়েষু চ সজ্জন্ত্যঃ সংস্থাপ্যা আত্মনো বশে॥” (৯:২), অর্থাৎ স্ত্রীলোকদের স্বামীসহ প্রভৃতি ব্যক্তিগণ দিনরাত পরাধীন রাখবেন, নিজের বশে রাখবেন...;
পিতা রক্ষতি কৌমারে ভর্ত্তা রক্ষতি যৌবনে/রক্ষতি স্থবিরে পুত্রা ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি॥” (৯:৩) অর্থাৎ স্ত্রীলোককে পিতা কুমারী জীবনে, স্বামী যৌবনে ও পুত্র বার্ধক্যে রক্ষা করে; (কখনও) স্ত্রীলোক স্বাধীনতার যোগ্য নয়।

 এখন যারা (সনাতনবাদীরা) নারীমুক্তির বিষয়ে নিজ ধর্মের পক্ষে সাফাই গান, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এই শ্লোক দেখে তারা কী ব্যাখ্যা দেবেন? নিশ্চয়ই আমতা আমতা করে ছলনা-শঠতার মাধ্যমে যৌক্তিকতা (বাস্তব উপযোগিতা) দানের চেষ্টা করবেন, কিংবা অস্বীকার করে বসবেন, আদৌ এ ধরনের কোনো শ্লোক কোথাও নেই! নারী সম্পর্কে ঘৃণ্য দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে আছে সমগ্র মনুসংহিতা জুড়েই; নারীনিন্দায় মনুসংহিতা শ্লীলতার সীমা অতিক্রম করে গেছে।
 মনুর দৃষ্টিতে নারী স্বভাবব্যভিচারিণী, কামপরায়ণা; কাম, ক্রোধ,পরহিংসা, কুটিলতা ইত্যাদি যত খারাপ দোষ আছে, সবই নারীর বৈশিষ্ট্য, এসবই দিয়ে নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে! তবু সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এসব কিছুই নজরে আসে না, তাঁরা উদয়-অস্ত খুঁজে বেড়ান ইসলামধর্ম, নারীদের কোন্ অধিকার দিয়েছে, আর কোন্ অধিকার দেয়নি!
 আলোচনায় মশগুল কোথায় কোন মুসলিম দেশে নারীদেরকে পাথর ছুড়ে হত্যার ফতোয়া দেয়া হল, বোরকা চাপিয়ে দেয়া হল,কিংবা কোথায় হিল্লা বিয়েতে নারীকে বাধ্য করা হল! এ নিয়েই তাদের মাথা-ব্যাথা! হিন্দুধর্মের এমন স্ববিরোধী, মানবতাবিরোধী, নারী-বিদ্বেষী চরিত্র জানার পরও কোন্ যুক্তিতে হিন্দুধর্মকে আধুনিক-প্রগতিশীল দাবি করা হয়? নারীর প্রতি এতো বিদ্বেষ, হিংসা, ঘৃণা আর কোনো ধর্মে আছে কি-না আমার জানা নেই?

 ধর্মগুরু, ঈশ্বরতুল্য মনু ঠিক কী পরিমাণ নারী-বিদ্বেষী হলে বলতে পারেন :
 “নৈতা রূপং পরীক্ষন্তে নাসাং বয়সি সংস্থিতিঃ/সুরূপং বা বিরূপং বা পুমানিত্যেব ভুঞ্জতে॥“ (৯:১৪), অর্থাৎ“যৌবনকালে নারী রূপ বিচার করে না, রূপবান বা কুরূপ পুরুষ মাত্রেই তার সঙ্গে সম্ভোগ করে।”
 (বাহ্! মনে হয় তাদের নিজেদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র!);
 আসুন, একই রকম আরেকটি মনুর শ্লোক দেখি “স্বভাব এস নারীনাং নরাণামিহ দূষণম্/অতোহর্থান্ন প্রমাদ্যন্তি প্রমদাসু বিপশ্চিতঃ॥” (২:২১৩) অর্থাৎ “নারীর স্বভাবই হলো পুরুষদের দূষিত করা...”!

 ★মহাভারত এবং নারী :
                     সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে আরেকটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে মহাভারত;যদিও ইদানীং অনেকে একে মহাকাব্য হিসেবে বিবেচনা করেন, তবে বেশিরভাগ ধর্মাবলম্বীদের কাছে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ‘মহাভারতের কথা অমৃতসমান’ বিবেচিত হয়। পণ্ডিতেরা বলেন মহাভারতের রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ চতুর্থ শতকের মধ্যে এবং কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল (যদি বাস্তবে কখনো সে যুদ্ধ ঘটে থাকে) মোটের উপর খ্রিস্টপূর্ব নবম শতক।
 মহাভারতেও নারী সম্পর্কে মনুসংহিতার প্রভাব পড়েছে তীব্রভাবে, এসেছে নারী সম্পর্কে অনেক হীন বক্তব্য; যার সামান্য কয়েকটি আগ্রহীদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে : মহাভারতের অসংখ্য চরিত্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে ভীষ্ম, তাঁর মধ্যেও স্পষ্টরূপে মনুর ছায়া পরিলক্ষিত হয়
, তিনি বলেন (১৩/৩৮),
 “উহাদের (স্ত্রীলোকদের) মত কামোন্মত্ত আর কেহই নাই। ... কাষ্ঠরশি যেমন অগ্নির, অসংখ্য নদীর দ্বারা যেমন সমুদ্রের ও সর্বভূত সংহার দ্বারা অন্তকের তৃপ্তি হয় না, তদ্রুপ অসংখ্য পুরুষ সংসর্গ করিলেও স্ত্রীলোকের তৃপ্তি হয় নাধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরও গুরু ভীষ্মের মতোই,তাঁর মুখেও শোনা যায় তীব্র নারীনিন্দা,
 “উহারা (নারীরা) ক্রিয়া-কৌতুক দ্বারা পুরুষদিগকে বিমোহিত করে। উহাদিগের হস্তগত হইলে প্রায় কোনো পুরুষই পরিত্রাণ লাভ করিতে পারে না।গাভী যেমন নূতন নূতন তৃণভক্ষণ করিতে অভিলাষ করে, তদ্রুপ উহারা নূতন নূতন পুরুষের সহিত সংসর্গ করিতে বাসনা করিয়া থাকে” (১৩/৩৯)।
 আবারো পঞ্চপাণ্ডবের মহাজ্ঞানী পিতামহ ভীষ্মের উপলব্ধি,
 “মানুষের চরিত্রে যত দোষ থাকতে পারে,সব দোষই নারী ও শূদ্রের চরিত্রে আছে।জন্মান্তরীয় পাপের ফলে জীব স্ত্রীরূপে (শূদ্ররূপেও) জন্মগ্রহণ করে” (ভীষ্মপর্ব ৩৩/৩২);
 “স্ত্রীগণের প্রতি কোন কার্য বা ধর্ম নেই। (কারণ) তারা বীর্যশূণ্য,শাস্ত্রজ্ঞানহীন।” (অনু, ১৩/৩৯)
এরপরেও নাকি মহাভারতের কথা অমৃতসমান!
 (সূত্র : মনুসংহিতা ও নারী, পৃষ্ঠা ৭২-৭৬)
 “তুলাদণ্ডের একদিকে যম,বায়ু, মৃত্যু, পাতাল, দাবানল, ক্ষুরধার বিষ, সর্প ও বহ্নিকে রেখে অপরদিকে নারীকে স্থাপন করিলে ভয়ানকত্বে উভয়ে সমান-সমান হবে” (অনুশাসনপর্ব ৩৮)।

 ব্রাহ্মণ্যধর্মের ‘সম্পূর্ণ ধর্মগ্রন্থ’ রূপেই এখন গীতার স্থান; এবং কারো কারো কাছে আধুনিক ধর্মগ্রন্থ! গীতাকে বলা হয়, শ্রীভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, ভগবদগীতা। কিন্তু এই গীতাতেও দেখি ভগবানের কণ্ঠে মনুর বক্তব্য! শ্রীমদ্ভগবদগীতায় পঞ্চপাণ্ডবের শ্রেষ্ঠ বীর শ্রীমান অজুর্নের মুখে শুনি—
 “অধর্মাভিভাবাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কুলস্ত্রিয়ঃ/স্ত্রীষু দুষ্টাসু বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসঙ্করঃ॥”(গীতা, ১:৪০)
 অর্থাৎ “হে কৃষ্ণ, অধর্মের আবির্ভাব হলে কুলস্ত্রীরা ব্যভিচারিণী হয়। হে বার্ষ্ণেয়, কুলনারীগণ ব্যভিচারিণী হলে বর্ণসংকরের সৃষ্টি হয়”।
 এর পরেই বর্ণসঙ্কর সৃষ্টি হলে কি হয়, তারও উত্তর রয়েছে :
“সঙ্করো নরকায়ৈব কুলনাং কুলস্য চ/পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ॥” (গীতা,১:৪১)
 অর্থাৎ বর্ণসঙ্কর, কুলনাশকারীদের এবং কুলের নরকের কারণ হয়। শ্রাদ্ধ-তর্পণাদি ক্রিয়ার লোপ হওয়াতে ইহাদের পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয়।”
 এই উক্তিগুলো পঞ্চপাণ্ডবের এক ভাই অর্জুনের; মেনে নিচ্ছি ভগবদগীতায় শ্রী ভগবানের উক্তিই প্রামাণ্য, অর্জুনের নয়।
কিন্তু এ প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের বক্তব্য খণ্ডন তো করেনই নি, বরঞ্চ সে বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করে এবং অর্জুনকেও ছাড়িয়ে গিয়ে নারীদের ‘পাপযোনি’বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন :
 “মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহ্যপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ/স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেপি যান্তি পরাং গতিম্॥” (গীতা,৯:৩২) অর্থাৎ “আমাকে আশ্রয় করে স্ত্রী, বৈশ্য, শূদ্র এসব পাপযোনিরাও পরম গতি লাভ করে থাকে”।

এরপরই দয়ময় ভগবান ব্রাহ্মণ ও রাজর্ষিদের ভক্তিতে গদগদ হয়ে বলেন :
 “কিং পুনর্ব্রাহ্মণাঃ পুণ্যা ভক্তা রাজর্ষয়স্তথা/অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্॥” (৯:৩৩) অর্থ হচ্ছে “পুণ্যশীল ব্রাহ্মণ ও রাজর্ষিগণ যে পরম গতি লাভ করিবেন তাহাতে আর কথা কি আছে?
অতএব আমার আরাধনা কর। কারণ এই মর্তলোক অনিত্য এবং সুখশূণ্য।

” পাঠক, বত্রিশ নম্বর শ্লোকে লক্ষণীয় যে,নারীর সাথে বৈশ্য ও শূদ্ররা পাপযোনিভুক্ত, শুধু ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় বাদে! কিন্তু নারী যদি কোনো ব্রাহ্মণের মেয়ে হয় তবুও সে ভগবানের দৃষ্টিতে পাপযোনিভুক্ত। বুঝা যাচ্ছে, ভগবানের কাছে নারীর আলাদা কোনো জাত বা বর্ণ নেই; সব নারীই পাপযোনিভুক্ত। কিন্তু খটকা লাগে, কোনো ব্যক্তির নিজের জন্মের উপর নিজের কি কোনো হাত থাকতে পারে? যদি হাত নাই থাকে, তবে নারী,বৈশ্য, শূদ্ররা পাপযোনিভুক্ত হয় কী করে? তাছাড়া এ ধরনের নোংরা বক্তব্য কী কোনো ধর্মগ্রন্থে থাকতে পারে?
এ ধরনের নোংরা বাণী এখানেই শেষ নয়, আরো আছে; প্রচুর পরিমাণে আছে।
নারীদের নিয়ে হিন্দু ভগবান থেকে শুরু করে মুনি-ঋষি, ঠাকুর-পুরোহিত, রাজন্যবর্গ কারোর-ই চিন্তার শেষ নেই। নারী অমুক, নারী তমুক! অনেকেই ভাবতে পারেন, হিন্দুধর্মের দৃষ্টিতে নারী বোধহয় কখনোই ভালো নয়? না, না। এরকমটি নয়। হিন্দু মুনি-ঋষিরা ভালো নারী-ধর্মচারী নারীর বৈশিষ্ট্য ঠিক করে দিয়েছেন!
তাদের দৃষ্টিতে সতী-সাধ্বী-ধর্মচারিণী হচ্ছে—
 “ন চন্দ্রসূর্যৌ ন তরুং পুন্নাুো যা নিরীক্ষতে/ভর্তৃবর্জং বরারোহা সা ভবেদ্ধর্মচারিণী॥ (মহাভারত, ১২/১৪৬/৮৮) অর্থাৎ “যে নারী স্বামী ব্যতীত কোনো পুংলিঙ্গান্ত (নামের বস্তু), চন্দ্র, সূর্য,বৃক্ষও দর্শন কওে না, সে-ই ধর্মচারিণী।” ওরেবাব্বা! দেখলেন তো! ধর্মচারিণী হতে হলে কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন? এতো দেখি পর্দাপ্রথা থেকেও চূড়ান্ত ও উন্মত্ত সংস্করণ!

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এরপরেও কোন মুখে দাবি করেন, তাদের ধর্ম প্রগতিশীল, তাদের ধর্মে নারী সম্পর্কে কোনো বাজে ধারণা নেই? না জেনে দাবি করে বসলে আমার কিছু বলার নেই? কিন্তু জেনে-শুনে যারা এগুলো গোপন করে নিজেদের ধর্ম যুগোপযুগী,নারী-মুক্তির পক্ষে কিংবা নারী-মুক্তি হিন্দু ধর্মেই রয়েছে বলে সাফাই গান, তাদের জন্য বাংলা ভাষায় একটা ভদ্র শব্দ প্রচলিত আছে, তা হল‘চশমখোর’!

হিন্দুধর্ম নারীকে বিন্দুমাত্র মানুষের মূল্য দেয় না; নারী শুধুমাত্র পণ্য, নারীর নিজস্ব কোনো অধিকার নেই, নেই স্বাধীনতা; এখনো হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিয়ের সময় কন্যাদান করা হয় পুরুষের (স্বামী/প্রভু) কাছে যজ্ঞ-মন্ত্র ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা মেনেই। বৈদিকযুগ থেকেই বিয়ের সময়ই কন্যাদান নয়, অহরহই যে কোনো অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ক্ষত্রিয় রাজা বা ঠাকুর-পুরোহিত-ব্রাহ্মণদের মনোরঞ্জনের জন্য নারীদের দান করা হতো, দেখুন পবিত্র মহাভারতের কিছু নমুনা : মহাভারতের কথিত শ্রেষ্ঠ সত্যবাদী যুধিষ্ঠির নিজেও যজ্ঞে-দানে-দক্ষিণায় বহুশত নারীকে দান করে দিতেন অবলীলায় অতিথিরাজাদের আপ্যায়নে (আশ্বমেধিকপর্ব ৮০/৩২, ৮৫/১৮)!
 রাজাদের লালসার তো শেষ নেই! শুধু ক্ষত্রিয় রাজারা ভোগের জন্য নারী পেলে তো হবে না, অমৃতের সন্তান ব্রাহ্মণেরা কী দোষ করলো তবে! চিন্তার কিছু নেই, ওদের জন্যও ব্যবস্থা আছে। শ্রাদ্ধের-দক্ষিণার তালিকাতে পুরোহিত ব্রাহ্মণদের নারী দান করার বিধান রয়েছে,
দেখুন : আশ্রমবাসিকপর্ব ১৪/৪, ৩৯/২০, মহাপ্রস্থানপর্ব ১/৪, স্বর্গরোহণপর্ব ৬/১২,১৩।

 যাহোক, এই ইহজগতে না হয় দুদর্মনীয় কামভোগের একটা ব্যবস্থা করা গেল, কিন্তু মৃত্যুর পর কী হবে? মরণের পরেও তো সুখ-শান্তির ব্যবস্থা থাকা চাই। চিন্তা নেই, তারও রেডিমেড ব্যবস্থা আছে। যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো যুদ্ধ করে মারা গেলে স্বর্গে পাওয়া যাবে অসংখ্য সুন্দরী নারী।প্রমাণ চাই তো নিশ্চয়ই!
দেখুন : বনপর্ব ১৮৬-১৮৭
,কর্ণপর্ব ৪৯/৭৬-৭৮,
শান্তিপর্ব ৬৪/১৭, ৩০; ৯৬/১৮,১৯, ৮৩, ৮৫, ৮৬, ৮৮, ১০৬ রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ড ৭১/২২, ২৫, ২৬, সুন্দরকাণ্ড ২০/১৩।
(সূত্র : প্রাচীন ভারত সমাজ ও সাহিত্য,পৃষ্ঠা ৬৩)
 নারীর জন্য নয় কোনো ধর্মগ্রন্থ :

পাঠক, এবার আলোচনায় ইতি টানতে হচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরেই তো দেখলেন-পড়লেন হিন্দুধর্মীয় অনুশাসনগুলো।কি মনে হয়? এই ধর্মীয় অনুশাসনগুলো কী নারীদের পক্ষে, কিংবা ওগুলোতে কি নারীদের প্রতি ইতিবাচক কোনো বক্তব্য আছে? (অস্বীকার করছি না, কোথাও কোথাও হয়তো ভাসা-ভাসা আছে, কিন্তু সার্বিকভাবে দেখলে, কখনোই বলা যাবে না, হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলো নারীদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে) কেউ কেউ হয়তো পুরানো সেই ভাঙা রেকর্ড ‘ভগবানের কাছে নারী-পুরুষ সবই সমান’ বাজিয়ে বলবেন ওগুলো এক-আধটু সব ধর্মেই আছে, এতে দোষের কিছু নেই! এসব কথা শুনলে বড্ড হাসি পায়; করুণা হয় সনাতনপন্থীদের প্রতি!
সনাতনপন্থীদের কথা এবার বাদ দেই, অনেকে হয়তো ভাবছেন, নারীর প্রতি এতো অবমাননা, অশ্লীল বক্তব্য থাকার পরও নারীরা এ হীন অবস্থানকে মেনে নিলেন কেন?প্রশ্নটা আমাকেও ভাবিয়েছে অনেকদিন। আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে মনে হয়, তৎকালীন পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা শুধু এগুলোকে ধর্মীয়-বিধান বলেই মানতে বাধ্য হয়েছিলেন; না হলে নির্ঘাত বিদ্রোহ হত।

সেকালে নারীরা কোনো ধরনের শিক্ষা পাননি;খুব পরিকল্পিতভাবেই তাদেরকে ধর্মগ্রন্থ এবং অন্যান্য জ্ঞানার্জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। নারীর সবরকম মানবিক ও সামাজিক অধিকারকে অস্বীকার করে পুরুষদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল ভোগের জন্য আর সন্তান উৎপাদনের জন্য; তবে সে সন্তান হতে হবে ছেলে।মেয়ে জন্মের পরই মাথায় ঢুকানো হত‘জন্মান্তরবাদ’ ও ‘কর্মবাদ’-এর তত্ত্ব। মনুর মতো শাস্ত্রকাররা নারীদের বুঝাতেন, নারীর জন্ম হল আজন্ম পাপের ফল...! মনুসংহিতাসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ করলে বোঝা যায়, ব্রাহ্মণপুরুষ কর্তৃক রচিত ওগুলো একেকটা ‘পুরুষসংহিতা’; নারীদের (যে বর্ণের হোক) জন্য নয় ওগুলো।

  ★সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি:
 (১) সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (ভূমিকা, অনুবাদ,টীকা), ২০০২, মনুসংহিতা, আনন্দ পাবলিশার্স,কলকাতা।
 (২) শ্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ (সম্পাদিত), ১৯৯৭,শ্রীমদ্ভগবদগীতা, প্রেসিডেন্সী লাইব্রেরী, কলকাতা।
 (৩) কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৯৮, ধর্ম ও নারী,এলাইড পাবলিশার্স, কলকাতা।
 (৪) কঙ্কর সিংহ, ২০০৫, মনুসংহিতা ও নারী,র‌্যাডিক্যাল ইম্প্রেশন, কলকাতা।
 (৫) সুকুমারী ভট্টাচার্য, ২০০২, প্রাচীন ভারত সমাজ ও সাহিত্য, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।
 (৬) সা’দ উল্লাহ্, ২০০২, নারী অধিকার ও আইন,সময় প্রকাশন, ঢাকা।
 (৭) মাহমুদ শামসুল হক, ১৯৯৬, নারীকোষ,তরফদার প্রকাশনী, ঢাকা।
 (৮) প্রবীর ঘোষ, ১৯৯৪, যুক্তিবাদের চোখে নারী-মুক্তি, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

Sunday, May 14, 2017

সুর্যের অবস্হান স্হল নিয়ে নাস্তিকদের একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর।

সহী বুখারীর একটি হাদীস নিয়ে আমাদের মুক্তমনা
সমাজ প্রায়ই ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা করে থাকে।
তাদের দাবি হচ্ছে, এই হাদীসটি সম্পূর্ণ
অবৈজ্ঞানিক। যেহেতু বুখারীর মতো প্রসিদ্ধ হাদীস
গ্রন্থে এটির উল্লেখ পাওয়া যায়, আর হাদীস
শাস্ত্রে বুখারীর মান যেহেতু সবার উর্ধ্বে, এবং
মুসলিমরা যেহেতু এটাতে বিশ্বাস করে, তাই ইসলাম
এবং মুসলিমদের একহাত নেওয়ার সুযোগ তারা ছাড়ে
না।
পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে
একটি বিষয় ক্লিয়ার করে নিই। সেটা হচ্ছে,
বাংলাদেশের মুক্তোমনা নামধারী ইসলাম
বিদ্বেষীদের কথাবার্তা আর লেখাযোখা পড়লে
মনে হয় এরা একেকজন ইসলাম, কোরআন, হাদীসের
উপরে পিএইচডি করে ফেলেছে। মনে হয়, কোরআন
হাদীসের উপরে থিসিস করতে গিয়ে এরা বিরাট
বিরাট ভুল ধরতে পেরেছে, যার ফলে তারা
ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
আদতে আসল ব্যাপার হলো, কোরআন-হাদীস নিয়ে
এদের জ্ঞান একেবারে শূন্যের কোঠায়। বলা চলে,
এদের শতকরা ৯৯ ভাগ আরবি পড়তেই জানেনা।
তাহলে এরা সমালোচনা কীভাবে করে, তাইনা?
আসল ব্যাপার হচ্ছে, এরা যে প্রশ্নগুলো ইসলাম
নিয়ে করে থাকে, সেগুলো সব খ্রিষ্টান
মিশনারীদের কাছ থেকে ধার করা।
খ্রিষ্টান মিশনারীদের এরকম প্রচুর সাইট আছে
যেখানে বাংলা মুক্তোমনা ব্লগের মতো সারাদিন
ইসলাম বিদ্বেষীতা চলে। বাংলাদেশের আর্টসে
পড়ুয়া নাস্তিকবাহিনী (মূলত নাস্তিক নয়। এদের
বেশিরভাগ একটি বিশেষ ধর্মের) সেখান থেকে ধার
করে এনে নিজেরা বড় বড় ‘হনু’ সাজে। সম্ভবত ঠিক এই
কারণেই তারা নিজেদের ধর্মবিরোধি বলে পরিচয়
দিলেও, কখনোই তারা খ্রিষ্টান ধর্মের বিরুদ্ধে ‘টু’
শব্দও উচ্চারণ করেনা। কৃতজ্ঞতার ব্যাপার-স্যাপার
আছে কীনা, তাই হয়তো
যাহোক, মূল আলোচনায় ফিরে আসি। আমরা প্রথমে
হাদীসটা দেখে নিই। হাদীসটি আছে বুখারী
শরীফের চতুর্থ খন্ডের ৫৪ নাম্বার অধ্যায়ে। হাদীস
নাম্বার হচ্ছে ৪২১।
হজরত আবু যা’র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,-
“রাসূল (সাঃ) আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন,- তুমি
কী জানো (সূর্যাস্তের সময়) সূর্য কোথায় যায়?”
আমি বললাম,- “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ভালো
জানেন”। তখন তিনি বললেন,- ‘এটা (নির্দিষ্ট পথে
চলতে চলতে) আল্লাহর আরশের নিচে এসে সিজদা
করে এবং উদয় হবার জন্য অনুমতি চায় এবং এটাকে
অনুমতি দেওয়া হয়। এমন একটা সময় আসবে যেদিন
এটাকে আর অনুমতি দেওয়া হবেনা (পূর্বদিক থেকে
উদিত হবার জন্য) এবং এটাকে যেদিক থেকে
এসেছে সেদিকে ফিরে যেতে বলা হবে। সেদিন
এটা (সূর্য) পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”।
এখান থেকে যে প্রশ্নগুলো তারা করার চেষ্টা করে
তা হলো নিম্নরূপঃ
১/ বলা হচ্ছে, সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে যায়।
আমরা জানি, সূর্য তার নিজ কক্ষপথেই থাকে,
কোথাও যায় না। তাহলে এইটা কীভাবে সম্ভব যে,
সূর্য আরশের নিচে যায়?
২/ সূর্য কীভাবে সিজদা করতে পারে? এই প্রশ্নের
সাথে সম্পূরক প্রশ্ন হচ্ছে,- সিজদা করতে হলে
সূর্যকে তার কাজ (ঘূর্ণন) থামাতে হবে।
জোতির্বিজ্ঞান বলছে, সূর্য নিজ কক্ষপথে অবিরত
ঘূর্ণন অবস্থায় থাকে। তাহলে সূর্য সিজদাটাই বা
করে কখন আর অনুমতিটাই বা পায় কখন?
৩/ সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই বা কীভাবে উদিত হবে?
এটা কী বিজ্ঞানসম্মত কীনা?
প্রথমে এক নাম্বার প্রশ্নটা নিয়ে ভাবা যাক। এটার
উত্তর জানার জন্য আমাদেরকে আগে জানতে হবে
আল্লাহর আরশ কোথায়। আল কোরআন, সহী হাদীস
এবং সালাফদের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে,
আল্লাহর আরশ হচ্ছে সবকিছুর উর্ধ্বে। অর্থাৎ,
দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান (পৃথিবী, আকাশ, গ্যালাক্সি,
পদার্থ) এই মহাবিশ্বের সবকিছুর উপরে আল্লাহর
আরশ অবস্থিত। এই “সবকিছুর” মধ্যে কিন্তু সূর্যও পড়ে।
সুতরাং, “সূর্য আল্লাহর আরশের নিচে কিভাবে যায়”
প্রশ্নটা অবান্তর। কারণ, সূর্য নিজেই আলটিমেটলি
আল্লাহর আরশের নিচেই আছে। আল্লাহর আরশের
নিচে যাওয়ার জন্য সূর্যকে আলাদাভাবে তার
কক্ষপথ ছাড়তে হয়না। নিজ কক্ষপথে থেকেই সূর্য
আল্লাহর আরশের নিচে অবস্থান করছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, সূর্য কীভাবে সিজদা করতে
পারে?
এটা বোঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে, সিজদা
বলতে আমরা যা বুঝি, এখানেও এই অর্থ বোঝায়
কীনা? সিজদা আমরা কীভাবে দিই? হাত-পা
মাটিতে রেখে, মাথা-নাক-কপাল মাটিতে স্পর্শ
করাই হলো আমাদের সিজদার পদ্ধতি।
সূর্যের কী হাত-পা আছে? নাক-কপাল আছে? যদি না
থাকে, তাহলে সূর্য সিজদা কীভাবে দেয়?
নাস্তিক তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের বড় সমস্যা হচ্ছে,
তারা সবকিছুর আক্ষরিক অর্থ করে থাকে। কোরআন
এবং হাদীসের কিছু কথা আছে সাহিত্যের মতো
করে। রূপক, উপমা যেভাবে আমএয়া ব্যবহার করি।। এই
কথাগুলোর অর্থ যদি আপনি আক্ষরিক ধরেন, তাহলে
কিন্তু বিপদ। সাহিত্যে এই “মেটাফোর” নিয়ে গাদা
গাদা বইপত্র আছে। বাংলা নাস্তিকরা আর
যাইহোক, সাহিত্যটা কিন্তু ভালো পড়ে থাকে।
একটা এক্সাম্পল দিই। জীবনানন্দ দাশ উনার এক
কবিতায় লিখেছেন,- “বিষণ্ন বিকেলে আমি পকেটে
আকাশ নিয়ে ঘুরি”
এখন বলুন, পকেটে কী আকাশ নিয়ে ঘুরা যায়?
এইটাকেই বলে মেটাফোর। এটা না বুঝলে আপনার
কাছে জীবনানন্দ দাশকে স্রেফ একজন পাগল মনে
হবে। কিন্তু এর গভীরতা বুঝলে, জীবনানন্দকে
আপনার কাছে শেক্সপিয়ার কিংবা দস্তয়ভস্কির
চাইতেও বেশি ভালো লাগবে।
এবার আসুন সূর্যের সিজদা নিয়ে। সিজদা মানে
আমরা কী বুঝি? কারো কাছে বিনত হওয়া, অবনত
হওয়া, অনুগত হওয়া। আরো অর্থ করা যায়, যেমন- রুলস
মেনে চলা , নিয়মাধীন হওয়া ইত্যাদি।
সূর্যের সিজদাও কী আমাদের মতো হতে হবে? আচ্ছা
বলুন তো, আপনার ‘বসা’ আর দইয়ের ‘বসা’ কী এক?
আমরা যে বলি, দধি বসেছে বা দুধের উপর ছনা
(আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় ছানা বলি) বসেছে।
দুধের উপর ছানা কী আমাদের মতোই বসে? হাত পা
গেঁড়ে? দুইটাই তো বসা। কিন্তু দুইটা বসাই কী এক?
এক না।
তাহলে সূর্যের সিজদাকে কেনো আমাদের সিজদার
মতোই হতে হবে?
তাহলে, বুঝা গেলো , সূর্যের সিজদা আর আমাদের
সিজদা এক নয়।
এবার আসুন, সিজদা দেওয়ার জন্য কী সূর্যের থেমে
যাওয়াটা জরুরি?
এই জিনিসটা বোঝার জন্য একটা জিনিসের
অবতারণা করি। আগেই বলেছি, মেটাফোরিক্যাল
জিনিসগুলোকে আমাদেরকে ঠিক সেভাবেই ভাবতে
হবে। আক্ষরিক অর্থ করা যাবেনা।
স্কুল লাইফে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়
মেয়েদের কমন একটা খেলা দেখতাম। খেলাটার নাম
হলো- ‘চেয়ার খেলা’।
এই খেলার নিয়ম হচ্ছে- গোলাকারভাবে কিছু
চেয়ারকে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়।
একটা মিউজিক প্লেয়ারের ব্যবস্থা থাকে।
প্রতিযোগীরা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা এই
চেয়ারগুলোকে কেন্দ্র করে চক্রাকারে ঘুরতে
থাকে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না মিউজিক অফ হচ্ছে,
প্রতিযোগীরা এই চেয়ারগুলোকে কেন্দ্র করে ঘুরতে
থাকে। মিউজিক অফ হওয়া মাত্র টুপ করে বসে পড়ে।
চিন্তা করে দেখুন, প্রতিযোগীদের কাজ হচ্ছে
চেয়ারগুলোকে কেন্দ্র করে চক্রাকারে ঘুরবে।
তারা কতক্ষণ ঘুরবে? যতক্ষণ পর্যন্ত না মিউজিক অফ
হচ্ছে।
তারা কিন্তু নির্দিষ্ট একটা পয়েন্ট (নিজ নিজ
চেয়ার) থেকে খেলাটা শুরু করে। এখন, একবার
চক্রাকারে ঘুরে নিজ নিজ চেয়ারের কাছে এসে
কোন প্রতিযোগী কি ‘গেম ডিরেক্টর’ কে বলে,
“স্যার, আমি কী পরের চক্র ঘুরে আসবো?” বলে না।
বলেনা , কারণ- পরের চক্র দেওয়ার পারমিশানটা
তার জন্য একটা চলমান (On Going) প্রক্রিয়া। তাকে
চেয়ারের কাছে এসে থেমে স্যারের অনুমতি নিয়ে
পরের চক্র দিতে হচ্ছেনা। নিজের চেয়ারের কাছে
এসে না থেমেই সে দ্বিতীয় চক্কর দিতে পারবে,
কারণ অনুমতিটা বলবৎ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।
কতক্ষণ সেই সময়? যতোক্ষণ না মিউজিক অফ হচ্ছে।
ঠিক এভাবেই সূর্যের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে
দেওয়া আছে। সেই সময় পর্যন্ত সে এভাবেই
চক্রাকারে ঘুরতে থাকবে। এই ঘুরার মধ্যেই সে দুটি
কাজ করবে। একটি হলো- নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সে
ঘুরবে, অন্যটা হলো,- সে নির্দিষ্ট পয়েন্টে এসে
(ধরা যাক সেটা আল্লাহর আরশের কেন্দ্র বরাবর)
আল্লাহর কাছে পরেরবার ঘুরার (উদিত হওয়ার) জন্য
অনুমতি চাইবে। কিন্তু এই অনুমতি নেওয়ার জন্য তাকে
তার গতি স্তিমিত করতে হবেনা। থামতে হবে না।
কারণ, খেলার প্রতিযোগীর মতোই তার জন্যও
অনুমতিটা একটা চলমান (On Going) প্রক্রিয়া।
সুতরাং, অনুমতি নেওয়ার জন্য সূর্যের লুটে পড়ার বা
থেমে যাবার কোন দরকার নেই। সূর্য তার On Going
Process এর মধ্যেই সেটা সেরে নেয়।
(And after all, Allah knows best)
তৃতীয় প্রশ্ন- সূর্যের পশ্চিম দিক থেকে উদিত
হওয়াটা কী বৈজ্ঞানিক?
এটা নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না, কারণ, অনেক
বিজ্ঞানীই এটা প্রেডিক্ট করেছেন যে, সূর্য তার
সমস্ত তাপ হারানোর প্রাক্কালে তার উদয়-অস্তের
দিক চেইঞ্জ করে ফেলতে পারে। চেইঞ্জ হয়ে
যেতে পারে পৃথিবীর দিকসমূহ। তারা নির্দিষ্ট করেই
বলেছে, - সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হতে পারে।
ব্রিটেইনের লিডিং নিউজ পেপার “ডেইলি
এক্সপ্রেস” শিরোনাম করেছে- “Sunrise in the west:
North could be south as earth’s magnetic poles switch”
আই হোপ, বিজ্ঞানের ধোঁয়া তোলা আমাদের
মুক্তোমনাগণ এটলিস্ট বিজ্ঞানীদের বাণীকে
বিনাবাক্যে মেনে নিবে
সংযুক্তি- একটি প্রশ্ন ক্লিয়ার করা হয়নি। সূর্য যদি
আরশের নিচেই থাকে, তাহলে আলাদাভাবে আবার
আরশের নিচে যেতে বলার কারণ কী?
সিম্পল। ধরুন, একটি পুরো জায়গাজুড়ে মসজিদ আছে।
এখন,মসজিদের ঈমাম সাহেব যদি আপনাকে বলে, -
'মসজিদ থেকে আমার চশমাটা নিয়ে আসুন।'
আপনি কী মসজিদ বলতে কেবল মসজিদের প্রথম
কক্ষটিকেই ধরে নিবেন? নাহ। মসজিদে অনেকগুলো
স্থান আছে। মিম্বর আছে। সবগুলোই মসজিদের
আওতাভুক্ত। এমতাবস্থায়, মিম্বরকে আলাদাভাবে
উল্লেখ না করা মানে এই না, মিম্বর মসজিদের
বাইরের কিছু।
সেরকম, সূর্য আরশের নিচেই আছে কিন্তু একটা
পয়েন্ট নির্ধারিত আছে যেখানে এসে এটি অনুমতি
নিবে, (চেয়ার খেলায় যেমন প্রত্যেকের নির্দিষ্ট
একটা চেয়ার থাকে যেখান থেকে সে শুরু করে)
যেরকম মসজিদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় (মিম্বরে)
এসে আপনি ঈমামের চশমাটা খুঁজে পাবেন।
এখন আপনি পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন না, - 'হুজুর
আপনি মসজিদ বলেছেন, মিম্বর বলেন নি....

নারীদের সম্পর্কে প্রসিদ্ব নাস্তিকদের কিছু উক্তি।

জেনে নিন যেই সমস্ত বুদ্ধিজীবীদেরকে আপনারা নারীবাদের আদর্শ মনে করেন নারী সম্পর্কে তাদের কিছু বিখ্যাত উক্তি!!!

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চুইংগামের মতো চাবাতে ইচ্ছে করে -
হুমায়ন আজাদ

২) একজন মেয়ে যাকে মন দিতেপারে, তাকে শরীরটা দেওয়া কিছুই নয় । এই শরীরে আছেটা কি ? অথচ আশ্চর্য ! নিরানব্বই ভাগ পুরুষের কাছে এবং সমাজ যারা গড়েছেন তাদের কাছে এই শরীরটাই দামি। মনের দাম নেই কানাকড়িও
! -বুদ্ধদেবগুহ

৩) মেয়ের সম্মান মেয়েদের কাছেই সবচেয়ে কম ! -
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৪) কম বয়েসী মেয়েহল রসগোল্লার মত যেখানে রাখবে সেখানেই পিঁপড়ে ধরবে!
-শংকর

৫) পৃথিবীতে বা সমুদ্রে যতহিংস্র প্রাণী আছে সবচেয়ে বৃহত্তম প্রাণী হল মেয়েরা!-
মেনানডার

৬) পুরুষেরা মেয়েদের খেলার সামগ্রী আর মেয়েরা শয়তানের খেলার সামগ্রী! মেয়েরা সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র বৈ কিছু নয়!!

-নেপোলিয়ান

৭) বিড়াল, পাখিরা এবং মেয়েরা এই ধরণের প্রাণী যারা নিজেদের প্রসাধনের উপর সর্বাধিক সময় নষ্ট করে!

-চার্লস নড়ায়ার

৮) "চোখের সামনে আমার মেয়েবড় হচ্ছে ।কিন্তু সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আমার হাত-পা বাঁধা ।"
-হুমায়ূন আজাদ

৯)"প্রত্যেক মেয়েই নিজের জন্য একটা নুনু চায় ।এই নুনুর জন্যই তারা পুরুষদের হিংসা করে"-
সিগময়েড ফ্রয়েডদাবী:

১০)"-মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেললেই তো পার -ফ্রিতেই যদি গাভীর দুধ মেলে তাহলে কোন মূর্খ টাকা খরচা করে ঘরে গাই পোষে ?"-
মনেরমত মন,সমরেশ মজুমদার

১১)
ড. আহমদ শরীফ
-পুরুষদের যদি সততা দরকার না হয় তবে নারীদের সতীত্বের কেন দরকার? নারীরাও পুরুষদের (উনি) মত যেভাবে খুশি তার যৌণাঙ্গ বিলাতে পারবে,

১২)
তসলিমা নাসরিন
-পূরুষরা যেমন খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় নারীরাও তেমনি খালি গায়ে ঘুরে বেড়াবে, তাদের সূউচ্চ স্তন সবাই দেখবে.সম্মান পাবেন এখানে?

১৩)
কবি শামসূর রহমান
-হয়তো স্নানের ঘরে নিজেকে দেখেছো অনাবৃতা, জানালার ফাকে বৃষ্টিভেজা নর্তকীর মতো,গাছটিকে (যৌণাঙ্গ) তীব্র দেখছিলাম তখন! সরার মত স্তন. নাভিমূল. উরু, এবং ত্রিকোন মাংসপিন্ড, কি মন্জুল!!

১৪)
হুমায়ুন আযাদ
-এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি,ঠোট দেখি! মোটা ঠোট আমার পছন্দ, জিভ দেখি, মোটা ধারালো চ্যাপ্টা খসখসে জিহ্বা আমার পছন্দ! স্তন দেখি, মাঝারী স্তন আমার পছন্দ, পানি ভরা ব্লাডের মত স্তন আমি সহ্য করতে পারি না! স্তনে দাঁতের লাল দাগ আমার চুনির থেকেও ভালো লাগে! উরু দেখি: সরু মাংসল উরু আমার পছন্দ!

১৫)
ফ্রান্সের পোপ
যখন বলেছিলেন ''নারীদের ঘরে থাকা, আর সন্তান জন্ম দেয়া উচিত''

নিচে সৈয়দ শামসুল হকের ভালবাসা রাতে গ্রন্হের ২টি কবিতা অন্য আরেকটি কবিতার কয়েকটি লাইন তুলে দিলাম / তবে নিজ দায়ীত্বে পড়বেন / লেখার কোন শব্দের জন্য আমি নিজে দায়ী নই / সম্পুর্ন দ্বায়ভার এই বিশিষ্ট লেখকের /

------------------------------------------------

যখন দু’স্তন মেলে ডেকে নিলে বুকের ওপরে,

স্বর্গের জঘন খুলে দেখালে যে-দীপ্তির প্রকাশ,

তখন কী হলো আমি কোন্ ভাষে বলবো কী করে?

মুহূর্তেই ঘুচে গেলো তৃষিতের অপেক্ষার ত্রাস।

(‘ভালোবাসার রাতে-২’)

----------------------------------------------

বৃষ্টিও বৃষ্টি তো নয় - জরায়ুর রক্তিম ক্রন্দন।

আজ তিনদিন থেকে অবিরাম, ক্ষান্তি নেই তার।

নিষেধ পতাকা লাল, পতাকায় শরীরী স্পন্দন

তবুও তবুও জাগে, জাগে ইচ্ছা সেখানে যাবার।

শত বাধা সত্ত্বেও থামতে পারে না কামুক পুরুষ। দুজনের দেহ ছিঁড়ে বের হয় দুধ-পূর্ণিমা। আর তা নেমে আসে স্তনের চূড়ায়। বাড়তে থাকে কামনার জ্বর। আর জ্বরতপ্ত হাত কুড়ায় কামনার ফুল। এ টান শুধু এক পক্ষের নয়। সমানতালে দুজনের। অবশেষ ভেঙে যায় বাঁধ -

তবে ভিজে যাক সব, বৃষ্টি থাক, এসো ভিজে যাই -

জ্বরের আগুনে দেহ লাল বৃষ্টিধারায় ভেজাই॥

(‘ভালোবাসার রাতে-২৯’)

-----------------------------------

আমি তোমার যতটা দেখি, তা ভালো;

যা দেখি না, সম্ভবত তা আরো ভালো।

এবং মাঝরাতে ইচ্ছার আলো

ঐ সব ভেবে হয় ভীষণ জোরালো॥

(‘এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি-৮’)

এই হলো নারীবাদীদের স্বপ্নের পূরুষদের নারী সম্পর্কে কিছু উক্তি!

এমন হাজারো উক্তি আছে যা নারীকে চরমভাবে অপমানিত করে অথচ তা নিয়ে কোন মাতামাতি বা প্রতিবাদ নেই....

Thursday, May 11, 2017

রাসূল সাঃ কি দাস - দাসী বনানোর জন্য যুদ্ধ করেছেন??

উইকিপিডিয়া থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় দেখেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন ও কর্মের অধ্যায়ে সমালোচনা নামক একটি চাপ্টার থাকে। সেখানে এক কথায় বলে দেওয়া হয় বিভিন্ন যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে হত্যা ও বন্দি এবং কৃতদাস বানানোর মাধ্যমে নাকি রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিংস্র রুপ বিশ্ব বাসীর কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ। আজ রাসূলের সাঃ বিভিন্ন যুদ্ধ এবং যুদ্ধে রাসূলের আচরন নিয়েই আলোচনা করব ৷

★যুদ্ধ বন্দিদের প্রতি বিধান গুলো নিম্নরূপ,
(1) অর্থ নিয়ে ছেড়ে দিতে পারবে,
(2) অর্থ ছাড়াও দয়া প্রদর্শন করে ছেড়ে দিতে পারবে ৷ (3) হত্যা করতে পারবে ৷
(4)বন্দিকে দাস বানাতে পারবে এবং লালন -পালনের, বা ভরন পোষনের সামর্থ না থাকলে অন্যের কাছে বিক্রি করতে পারবে ৷
 (5) তবে মুসলমান হয়ে গেলে আর বন্দি রাখা যাবে না।
(6) নিজে যা খাবে, পরবে তাকেও তা খাওয়াতে ও পরাতে হবে ৷
 (7) একটা থাপ্পর দিলেও, আযাদ না করলে জাহান্নামে যেতে হবে ৷

★রাসূল সাঃ যুদ্ধে কি করেছেন??
 বদরের যুদ্ধ : 
                  ২ হিজরির ১৭ রমজান (১৩ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটি প্রথম প্রধান যুদ্ধ। বদর ছিল দুই বাহিনীর মধ্যে প্রথম বড় আকারের যুদ্ধ। যুদ্ধে সুসংগঠিত মুসলিমরা মক্কার সৈনিকদের সারি ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়। যুদ্ধে মুসলিমদের প্রধান প্রতিপক্ষ আবু জাহল নিহত হয় এবং 70 জন বন্দি হয় ৷ তাদের 2 জনকে অতীতের ভয়ংকর অপরাধের জন্য হত্যা করা হয় ৷ যারা সম্পদশালী ছিল তাদের কাছ হতে অর্থ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় ৷ যারা শিক্ষিত ছিল তাদের প্রত্যেককে 10 জন মুসলমানকে শিক্ষা দানের বিনিময় মুক্তি দেয়া হয় এবং যারা গরিব ও অশিক্ষিত তাদের বিশেষ ক্ষমা প্রদান করা হয় ৷

 উহুদের যুদ্ধ :
                  ৩ হিজরির ৭ শাওয়াল (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ) উহুদ পর্বতের সংলগ্ন স্থানে সংঘটিত হয়।[২] মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। এই দুই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন যথাক্রমে মুহাম্মাদ (সা) ও আবু সুফিয়ান। ইসলামের ইতিহাসে সংঘটিত প্রধান যুদ্ধসমূহের মধ্যে এটি দ্বিতীয়। এর পূর্বে ৬২৪ সালে এই দুইপক্ষের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল৷ এই যুদ্ধে রাসূলের সাঃ চাচা হামজা রাঃ সহ 70 জন সাহাবী শহীদ হয় ৷কোন মুশরিক বন্দি হয় নাই ৷

খন্দকের যুদ্ধ বা আহযাবের যুদ্ধ::
                    ৫ হিজরিতে (৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ) সংঘটিত হয়। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। জোট বাহিনীর সেনাসংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০ এবং সেসাথে তাদের ৬০০ ঘোড়া ও কিছু উট ছিল। অন্যদিকে মদিনার বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ছিল ৩,০০০। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে মুহাম্মাদ (সা) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন।প্রাকৃতিকভা বে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণকারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কুরাইজা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়।

 বনু কুরাইজার যুদ্ধ:: 
                        খন্দকের যুদ্ধের পর কোরাইশদের সহযোগি এই গোত্রের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হয় ৷ তারা দুর্গের মধ্যে অবস্থান নেয় ৷যথারীতি অনেকদিন দূর্গের মধ্যে অবরূদ্ধ থেকে যখন তারা দেখলো যে খায়বার থেকে ইহুদী বাহীনির আসার কোনোই সম্ভবনা নেই তখন তারা আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে রাসুল (সাঃ) এর কাছে আত্মসমর্পন না করে তারা তাদের পুরোনো মিত্র সাদ-বিন- মুয়াদের (রাঃ) কাছে নিজেদের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয়।সাদ রাঃছিলেন যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের একজন ৷
 রাসূলের অনুপস্থিতে ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থের বিধান অনুযায়ী সাদ (রাঃ)বিচার করেন এবং সিদ্ধান্ত দেন কুরাইযা গোত্রের সকল যোদ্ধাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হোক আর মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হোক। রায় দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই গুরুতর আহত সাদ (রাঃ) মারা যান ৷ এই যুদ্ধের মূল কারন এবং বিচার প্রক্রিয়া হতে আমারা দেখি যে
, (1) বনু কোরাইযা গোত্র বার বার চুক্তি ভঙ্গ করে এবং রাসূল সাঃ তাদের বারবার ক্ষমা করেন এবং সুযোগ দেন ৷ ( পূর্বের post এ বলা হয়েছে)
 (2) তারা কোরাইশদের পক্ষ নিয়ে রাসূলের সাঃ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৷
(3) বনু কোরাইযা গোত্র শর্তসাপেক্ষে পূর্বের মিত্র সাদ রাঃ এর নিকট আত্মসমর্পণ করেন ৷
 (4) যেহেতু বনু কোরাইযা গোত্র শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণ করে ,সেহেতু রাসূল (সাঃ) বিচারে চুক্তি অনুযায়ী হস্তক্ষেপ করেন নাই ৷
(5)রাসূল সাঃ বনু কোরাইযার বিচার করেন নাই ৷ (6)গুরুতর আহত সাদ (রাঃ) ইহুদীদের বিধান অনুযায়ী সকল যোদ্ধাকে হত্যার নির্দেশ দেন
( বিঃদ্রঃ যোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল 300/400 জন)
এবং নারী,শিশুদের কৃতদাস বানান ৷
(7)বনু কোরাইযা গোত্রের কোন নিরপরাধ ব্যাক্তির বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি বরং যারা মদীনার সকল মুসলমানকে হত্যা করতে চেয়েছিল, এবং যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, এমন যোদ্ধাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল ৷ আচ্ছা, কোন দেশ, ষ্ট্রদ্রোহীকে ক্ষমা করে?? প্রতিটি দেশে রাষ্ট্রদ্রোহীকে কি সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়না?? আমাদের সময়ে রাষ্ট্রদ্রোহীদের শাস্তি যদি মৃত্যুদণ্ড হয় ,তবে বনু কোরাইযা গোত্রের শাস্তি কেন ভুল হবে?? এবং এই রায়ের জন্য রাসূল সাঃ কে কেন অপবাদ দেয়া হবে?

 খায়বারের যুদ্ধ:
                 ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আরবের মদিনা নগরী থেকে ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা) দুরে অবস্থিত খায়বার নামক মরুভূমিতে বসবাসরত ইহুদিগণের সাথে মুসলিমগণের সঙ্ঘটিত একটি যুদ্ধ। ৭ম হিজরিতে মদীনা আক্রমণ করার ব্যাপারে খায়বারের ইহুদীদের নতুন ষড়যন্ত্রের কারনে খায়বার যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কাউকে বন্দি বা কতদাস বানানো হয় নাই ৷

বনু মুস্তালিকের যুদ্ধ: : 
                          বনু মুছত্বালিকের সাথে মুসলিম বাহিনীর কোন যুদ্ধই হয়নি। বরং মুসলিম বাহিনী তাদের উপরে আকস্মিক হামলা চালালে তারা সব পালিয়ে যায় ও তাদের নারী-শিশুসহ বহু লোক বন্দী হয়। বন্দিদের মধ্যে গোত্রনেতা হারেছ বিন যিরারের কন্যা জুওয়াইরিয়া ( ﺟُﻮَﻳْﺮِﻳَﺔُ) ছিলেন। যিনি ছাবেত বিন ক্বায়েস-এর ভাগে পড়েন। ছাবেত তাকে ‘মুকাতিব’ হিসাবে চুক্তিবদ্ধ করেন। মুকাতিব ঐ দাস বা দাসীকে বলা হ’ত, যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্বীয় মনিবকে দেয়ার শর্তে চুক্তি সম্পাদন করে এবং উক্ত অর্থ পরিশোধ করার পর সে স্বাধীন হয়ে যায়। নবী করীম (ছাঃ) তার পক্ষ থেকে চুক্তি পরিমাণ অর্থ প্রদান পূর্বক তাকে মুক্ত করেন এবং গোত্র নেতার কন্যা হিসাবে তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন।
এই বিবাহের ফলশ্রুতিতে মুসলমানগণ বনু মুছত্বালিক গোত্রের বন্দী একশত পরিবারের সবাইকে মুক্ত করে দেন এবং তারা সবাই মুসলমান হয়ে যায়। এর ফলে তারা ‘রাসূল (ছাঃ)-এর শ্বশুর গোত্রের লোক’ ( ﺃَﺻْﻬَﺎﺭُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ) বলে পরিচিতি পায়’ (আবুদাঊদ হা/৩৯৩১, সনদ হাসান)।

মক্কা বিজয় ::
               নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) খ্রিস্টীয় ৬৩০ অব্দে রক্তপাতহীনভাবে মক্কা নগরী দখল করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা মক্কা বিজয় নামে খ্যাত। এই যুদ্ধেও কাওকে কৃতদাস বানানো হয় নাই বরং রাসূল সাঃ আবু সুফিয়ান কেও ক্ষমা করে দেন ৷

 হুনাইনের যুদ্ধ ::
                   মক্কা বিজয়ের পরই হেনাইনের যুদ্ধ হয় এই যুদ্ধে মুসলমানদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় কিন্তু যুদ্ধে জয়যুক্ত হয় এবং 6000 মুশরিক বন্দি হয় কিন্তু রাসূল সাঃ তাদের সকলকে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেন ৷ কাওকেই কৃতদাস বানান নাই ৷ যদি চাইতেন তবে কত টাকায় এই সব বন্দিকে বিক্রি করতে পারতেন তা কি ভেবে দেখেছেন?? এত সব প্রমানের পরও কি নাস্তিকরা বলবে যে রাসূল সাঃ যুদ্ধ করেছেন শুধু হত্যা এবং দাস, দাসী বানানোর জন্য??

Friday, May 5, 2017

★পৃথিবী ঘুরে নাকি সুর্য ঘুরে?আল কোরআন কি বলে?

এক সময় সূর্য ঘুরে না পৃথিবী ঘুরে এ বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক মতানৈক ছিল। যেমন, প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মহাবিশ্বের সব কিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু “পৃথিবী স্থির।”
 এ ধারণাটা পরবর্তী বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভুল প্রমাণিত হয়।
 পোল্যান্ডের একজন জ্যোতিবিজ্ঞানী যার নাম “কোপানিকাস” (১৪৭৩-১৫৪৩) তিনি বলেছিলেন, পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে। কিন্তু কেউই তার উক্তিটি বিশ্বাস করেনি।
 পরবর্তীযুগে বিজ্ঞানী “নিউটন” আবিস্কার করেন, যে পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে ঘুরে এবং পক্ষান্তরে সূর্যও তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে।
বর্তমানে সূর্যকেন্দ্রিক এই মডেল প্রমানিত এবং বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ তা গ্রহন করেছে।

অথচ কুরআনুল কারীম আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শত বছর আগেই একথা বলে দিয়েছে যে, চন্দ্র, সূর্য ওপৃথিবীসহ মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্র,গ্রহ,ও উপগ্রহই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করতেছে ।’
নিম্নে   পবিত্র কোরআনের আলোকে পৃথিবী সহ মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্র,গ্রহ ও উপগ্রহের ঘুর্নায়মান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হল-

★কুরআনুল কারীমের সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ  তায়ালা বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
“এবং তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে।”
বিশ্বখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন, বিজ্ঞানী আল্লামা ত্বানত্ববী আল জাওহারী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, উক্ত আয়াতটি ব্যাপক অর্থ সম্বলিত। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও পৃথিবী, মোটকথা প্রত্যেকটি নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। [আল জাওয়াহিরু ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম : ১০/১৯৯]
বিশ্বনন্দিত মুফাস্সীরে কুরআন আল্লামা মাহমুদ হিজাযী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, আল্লাহ পাক পৃথিবীর বুকে পাহাড়সমূহের বোঝা রেখে দিয়েছেন; যাতে করে পৃথিবী মানব মণ্ডলীকে নিয়ে ঝুঁকে না পড়ে। পৃথিবী নিজ কক্ষে ঘুরে এবং সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। (আল্লাহ্) সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন যেন প্রত্যেকটি নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরে।
[আত তাফসীরুল ওয়াজেহ : ১৭/৫২৮]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে।

★পবিত্র কোরআনের  (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮-৪০) নং আয়াতে  আল্লাহ বলেন,
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ, وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ, لَا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ                                                  
“সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।”
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা আহমদ মোস্তফা মারাগী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা ইয়াসীনের অত্র আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, প্রত্যেকটি গ্রহ-নক্ষত্র অর্থাৎ পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে (ঘুরছে)। যেভাবে মাছ পানিতে সাঁতার কাটে। সূর্য ঘুরছে নিজ কক্ষপথে।
 [আত তাফসীরুল মারাগী : ২৩/১০]

★পবিত্র কোরআনের সূরা যুমারের  ৫ নং আয়াতে  আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّار -
“তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন।প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।”
এই আয়াত দ্বারাও পৃথিবী ঘুর্নায়মানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।কারনে আয়াতে বলা হয়েছে  সৌরজগতের প্রত্যেকেই  বিচরণ করতেছে  নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।আর পৃথিবীও যেহেতু সৌরজগতের একটি গ্রহ সুতরাং পৃথিবীর ঘুর্নায়মান হওয়াটাই স্বাভাবিক।

পরিশেষে বলা যায় যে,পবিত্র কোরআন গতানুগতিক কোন বৈজ্ঞানিক থিওরীর কিতাব নয় বরং এটা হল-এই বিশ্বভ্রম্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব  জাতীর হেদায়াতের আলোকবর্তিকা।এখানে শুধু বৈজ্ঞানিক থিওরীর এতটুকুই বর্ণিত হয়েছে যতটুকুতে মানুষের উপদেশের সম্পর্ক রয়েছে।বাকিটা মানুষ নিজ নিজ প্রজ্ঞা দিয়ে আবিষ্কার করে নিবে।
বিজ্ঞানের কোন থিওরি যদি কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে বুঝতে হবে এ থিওরি এখনও  ১০০% চুড়ান্ত পর্যায়ে পোঁছেনি।কারন বৈজ্ঞানীকদের জ্ঞান হল-সসীম আল্লাহর জ্ঞান হল-অসীম।সসীম জ্ঞান কখনও অসীমের সমকক্ষ হতে পারেনা।
বি.দ্র. : এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে নিম্নে প্রদত্ত তাফসীরগ্রন্থদ্বয়  ও গুগলের লিঙ্কটি  অধ্যয়ন করুন।
১.তাফসীরে ছানায়ী। [লেখক : আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী রহ.। খন্ড- ৮ম : পৃষ্ঠা-১৯২]
২. তাফসীরে আনওয়ারুল বয়ান। [লেখক : আল্লামা আশেক এলাহী বুলন্দশহরী রহ.। খন্ড : ৭ম : পৃষ্ঠা-৩৮১]
৩.  http://fatwa.islamweb.net/fatwa index.php page=showfatwa&Option=FatwaId&Id=56931