Saturday, November 5, 2016

কেয়ামতের আলামত (১ম পর্ব)

আল্লাহ তায়ালা বিশেষ একটি উদ্যেশ্য নিয়ে এই বিশ্বজাহানকে সৃষ্টি করেছেন এবং এই বিশ্বজাহানের মধ্যে স্বর্বোত্তম সৃষ্টি হিসেবে মানবজাতিকে বাছাই করেছেন।মানবজাতির দুনিয়ার প্রতিটি কাজের হিসাব নিকাশ করার জন্য একটি দিবসকে নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।সেই নির্দিষ্ট দিবসটিকে কোরআন ও হাদিসের পরিভাষায় কেয়ামত নামে অভিহিত করা হয়েছে।কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে এ পৃথিবীতে কেয়ামতের এমন কিছু আলামত প্রকাশিত হবে, যে আলামতগুলো বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আমাদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।নিম্নে হাদিসের আলোকে কিয়ামতের কিছু আলামত সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
 ★রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,
 ﻳﺘﻘﺎﺭﺏ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﻭﻳﻨﻘﺺ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻭﻳﻠﻘﻰ ﺍﻟﺸﺢ ﻭﺗﻈﻬﺮ ﺍﻟﻔﺘﻦ ﻭﻳﻜﺜﺮ ﺍﻟﻬﺮﺝ ﻗﺎﻟﻮﺍﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻳﻢ ﻫﻮ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﺍﻟﻘﺘﻞ
 অর্থাৎ-কেয়ামতের আলামতের মধ্যে কিছু আলামত হচ্ছে-
 *সময় নিকটবর্তী হয়ে যাবে( সময় থেকে বরকত উঠে যাবে)।
 *কোরআন ও হাদিসের উপর আমল কমে যাবে। 
*মানুষের মধ্যে কৃপনতা বেড়ে যাবে।
*ফেতনা ফাসাদ বেড়ে যাবে।
 *এবং হত্যা রাহাজানি প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে।(বুখারি-4452)

 ★অন্য আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, 
 ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠَﺖْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺧَﻤْﺲَ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺧَﺼْﻠَﺔً ﺣَﻞَّ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟْﺒَﻼﺀ
 . ﻗِﻴﻞَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻭَﻣَﺎ ﻫُﻦَّ ؟ ﻗَﺎﻝَ " : ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻤَﻐْﻨَﻢُ ﺩُﻭَﻻ , ﻭَﺍﻷَﻣَﺎﻧَﺔُ ﻣَﻐْﻨَﻤًﺎ , ﻭَﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓُ ﻣَﻐْﺮَﻣًﺎ , ﻭَﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺯَﻭْﺟَﺘَﻪُ , ﻭَﻋَﻖَّ ﺃُﻣَّﻪُ , ﻭَﺑَﺮَّ ﺻَﺪِﻳﻘَﻪُ , ﻭَﺟَﻔَﺎ ﺃَﺑَﺎﻩُ , ﻭَﺃُﻛْﺮِﻡَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﻣَﺨَﺎﻓَﺔَ ﺷَﺮِّﻩِ , ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺯَﻋِﻴﻢُ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﺃَﺭْﺫَﻟَﻬُﻢْ , ﻭَﺍﺭْﺗَﻔَﻌَﺖِ ﺍﻷَﺻْﻮَﺍﺕُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪِ , ﻭَﺷُﺮِﺏَ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮُ , ﻭَﻟُﺒِﺲَ ﺍﻟْﺤَﺮِﻳﺮُ , ﻭَﺍﺗُّﺨِﺬَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻥُ , ﻭَﺍﺗُّﺨِﺬَ ﺍﻟْﻤَﻌَﺎﺯِﻑُ , ﻭَﻟَﻌَﻦَ ﺁﺧِﺮُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻷُﻣَّﺔِ ﺃَﻭَّﻟَﻬَﺎ , ﻓَﻠْﻴَﺮْﺗَﻘِﺒُﻮﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺫَﻟِﻚَ ﺛَﻼﺛًﺎ : ﺭِﻳﺤًﺎﺣَﻤْﺮَﺍﺀَ ,ﻭَﺧَﺴْﻔًﺎ ,ﻭَﻣَﺴْﺨم 
অর্থাৎ যখন আমার উম্মতেরা পঁনেরটি কাজ করা শুরু করবে তখন একের পর এক বালা মুসিবত শুরু হয়ে যাবে।সাহাবিরা রাসুল (সাঃ)কে প্রশ্ন করল,হে আল্লাহর রাসুল (সা:) সে পঁনেরটি কাজ কি কি?তখন রাসুল (সাঃ) বললেন,পঁনেরটি কাজ হল- 
1-যখন গনিমতকে বা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে নিজস্ব সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
 2-আমানতকে মনে করা হবে গণিমত।অর্থাৎ আমানতের খেয়ানত করা হবে। 
3-জাকাত দেয়াকে মনে করা হবে জরিমানা।
 4-পুরুষ তার স্ত্রীর কথা মান্য করবে কিন্তু তার মায়ের কথা অমান্য করবে ।
 5-মানুষ তার বন্ধুর সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করবে।
 6-কিন্তু তার পিতার সাথে দূর্বব্যবহার করবে।
 7-মানুষকে শ্রদ্ধা করা হবে তার ক্ষতি থেকে বাচার জন্য।
 8-জাতির নেতৃত্ব দিবে তারা, যারা জাতির মধ্যে কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী অত্যধিক নিকৃষ্ট। 9-মসজিদগুলোর মধ্যে উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু হয়ে যাবে অর্থাৎ দুনিয়াবী কথাবার্তা।
 10-মদ পান প্রচুর পরিমানে বেড়ে যাবে।
 11-রেশমির সুতার কাপড় পরিধান করা শুরু করবে।
 12-বিভিন্ন ধরনের গায়ক গায়িকাদের আভির্বাব হবে।
 13-বিভিন্ন ধরেনের বাদ্যযন্ত্রের আভির্বাব হবে। 
14-উম্মতের শেষ সময়ের লোকেরা পূর্ববর্তী সময়ের নেককার লোকদের সমালোচনা করবে।
 যে সময় এ সমস্ত আলামতগুলো প্রকাশ পাবে,সেসময়ে তারা যেন তিনটি বড় ধরনের শাস্তির অপেক্ষা করে।আর সে তিনটি শাস্তি হল-
 ক-ঘু্র্নিঝড়। 
খ-ভুমিধ্বস ।
গ-আকৃতি পরিবর্তন।নাউজুবিল্লাহ!(তিরমিজি2/33)
 এ হাদিসখানায় কেয়ামতের পঁনেরটি আলামতের কথা বলা হয়েছে যেগুলো আমাদের সামনে অহরহ দেখা যাচ্ছে। 

★অপর আরেক হাদিসে কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে বিশ্বনবী (সাঃ) ইরশাদ করেন,
 ﻳﻮﺷﻚ ﺃﻥ ﻳﺄﺗﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺯﻣﺎﻥ ﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺇﻻ ﺍﺳﻤﻪ ، ﻭﻻ ﻳﺒﻘﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﺇﻻ ﺭﺳﻤﻪ ، ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻋﺎﻣﺮﺓ ﻭﻫﻲ ﺧﺮﺍﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﻬﺪﻯ ، ﻋﻠﻤﺎﺅﻫﻢ ﺷﺮ ﻣَﻦ ﺗﺤﺖ ﺃﺩﻳﻢ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ، ﻣِﻦ ﻋﻨﺪﻫﻢ ﺗﺨﺮﺝ ﺍﻟﻔﺘﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﻢ ﺗﻌﻮﺩ ‏ 
অর্থাৎ-মানুষের উপরে এমন একটি সময় আসতেছে যে সময় ইসলামের নাম ব্যতিত কোন বিধানাবলী মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা। কোরআনের পৃষ্ঠা ব্যতিত কোরআনের কোন আমল মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবেনা।ঐ সময়ে মসজিদগুলো হবে জাকজমকপূর্ণ পূর্ণ কিন্তুু এগুলো হবে হেদায়াতশুন্য (মসজিদে মুসল্লি পাওয়া যাবে না বা প্রকৃত মুসল্লি পাওয়া যাবে না।) ঐ সময়ে বহু আলেম হবে মানুষের নিকট হেয়।তাদের থেকে যাবতীয় ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং সে ফেতনার দায়ভারও তাদেরকে বহন করতে হবে। (4/227ﺍﺑﻦ ﻋﺪﻱ ﻓﻲ " ﺍﻟﻜﺎﻣﻞ ) 
 এই হাদিসখানাও কেয়ামতের যে সমস্ত আলামতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো অনেকটাই আমাদের সামনে দৃশ্যমান।

 ★অারেকখানা হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কেয়ামতের আলামতের আলামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻹِﺳْﻼﻡُ ﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ، ﻭَﺳَﻴَﻌُﻮﺩُ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃَﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ﻓَﻄُﻮﺑَﻰ ﻟِﻠْﻐُﺮَﺑَﺎﺀ
 অর্থ-ইসলামের আগমন শুরু হয়েছে গরিবি অবস্হায়। অচিরেই কেয়ামতের আগে এমন একটি সময় আসতেছে যে সময় ইসলাম আবার আগের অবস্হায় ফিরে যাবে অর্থাৎ ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের সংখ্যা কমে যাবেসে গরিবি অবস্হায় যারা কোরআন ও হাদিসের উপর কায়েম থাকতে পারবে তাদের জন্য সুসংবাদ।সুবহানাল্লাহ!(মুসলিম শরীপ হাদিস নং145)
এ হাদিসে কিয়ামতের আলামত হিসেবে বলা হয়েছে যে,ইসলামের প্রকৃত অনুসারীর সংখ্যা প্রাথমিক অবস্হায় ফিরে আসবে।বর্তমানে আমরা দেখতেছি যে,সাহাবিদের যে ইমান ছিল সে ধরনের মুমিন পাওয়া বড়ই অপ্রতুল। 
পরিশেষে বলতে চাই যে,কেয়ামতের যে সমস্ত আলামতের কথা নবীজি বলে গেছেন সেগুলো নিঃসন্দেহে ঘটবে কেননা নবীজি যা বলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলে থাকেন কিন্তু কেয়ামতের কোন আলামত যাতে আমাদের মাধ্যমে প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।লেখাটি পড়ে ভাল লাগলে অনুরোধ থাকবে অন্যকে শেয়ার করে ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেন।এর বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবে। (চলবে----------)

No comments:

Post a Comment