Monday, April 9, 2018

পাহাড়ের শ্রেণীবিভাগে আল কোরআনের অলৌকিকতা।

আমরা জানি গঠনগত দিক দিয়ে পৃথিবীর সকল পর্বত একনয়।গবেষকরা অতি সম্প্রতি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যাবহারের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন গঠনগত কারনে পর্বত গুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।অথচ কোরআনুল করিমে ১৫০০বছর আগেই উল্লেখ করেছেন পর্বতের এই ভিন্নতার কথা। অপূর্ব ভাষাশৈলী আর সুক্ষতার মাধ্যমে মাওলা বুঝিয়ে দিয়েছেন এই পার্থক্য।
ﻭَﺃَﻟْﻘَﻰ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺭَﻭَﺍﺳِﻲَ ﺃَﻥ ﺗَﻤِﻴﺪَ ﺑِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﺭًﺍ ﻭَﺳُﺒُﻼً ﻟَّﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ
এবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।(16: 15)
And He has set up on the earth mountains standing firm, lest it should shake with you; and rivers and roads; that ye may guide yourselves;

আচ্ছা এখানে বোঝা চাপানোর সাথে পৃথিবীর হেলে পড়ার কি সম্পর্ক?
আমরা জানি পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘুড়ির মত ভেসে সূর্যকে কেন্দ্র করে অনবরত ঘুরছে লাটিমের মত!
আমরা যারা ঘুড়ি উড়িয়েছি বা লাটিম ঘুরিয়েছি তারা অবশ্যই জানি লাটিমের ঘূর্ণন বা ঘুড়ির উড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ওজনের ভারসাম্য! তা নাহলে ঘুড়ি বা লাটিম একদিকে হেলে পড়বে। ঘুড়ির ভারসাম্য রক্ষায় এর দুই পাশে বাড়তি কাগজ লাগিয়ে দেয়া হয় যেন হেলে নাপড়ে!
এই আয়াতের তাৎপর্য্য বুঝতে হলে আমাদের যা জানতে হবে তা হচ্ছে পৃথিবীর আকার, ওজন ও ওজনের ভারসাম্য!

আকৃতি :
পৃথিবী দেখতে পুরোপুরি গোলাকার নয়, বরং কমলালেবুর মত উপর ও নিচের দিকে কিছুটা চাপা এবং মধ্যভাগ (নিরক্ষরেখার কাছাকাছি) স্ফীত। এ'ধরণের স্ফীতি তৈরি হয়েছে নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে এর ঘূর্ণনের কারণে। একই কারণে বিষুব অঞ্চলীয় ব্যাস মেরু অঞ্চলীয় ব্যাসের তুলনায় প্রায় ৪৩ কিমি. বেশি।
বিষুব অঞ্চলে এর ব্যাস ৬৩৭৮.১৬০ কিলোমিটার। মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ৬৩৫৭.৭৭৫ কিলোমিটার।
ওজনঃ পৃথিবীর ওজন মাপা সম্ভব, তবে যন্ত্রে চাপিয়ে নয় বুদ্ধি জোরে অঙ্ক কষে। বিজ্ঞানীরা বুদ্ধির জোরে অঙ্ক কষে এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এই কাজটি করার সাহস যিনি প্রথম দেখিয়েছিলেন তিনি হলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরী ক্যাভেন্ডিশ।দুটো ছোট বড় সীসার গোলকের আকর্ষণ শক্তির সঙ্গে পৃথিবীর অভিকর্ষের তারতম্য এবং পৃথিবীর ঘনত্বের সঙ্গে সীসার ঘনত্বের পার্থক্য নির্ণয় করে পৃথিবীর ওজন করে করেছিলেন। কত ওজন আমাদের এই বিশাল পৃথিবীর। সংখ্যায় লিখলে তা এইরকম হবে---৬,০০০,০০০
,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ টন(প্রায়)।
এই বিশাল ভর বা ওজনের দৈত্যাকার লাটিমের ওজনের ভারসাম্যের বাপারে নিউটনের সুত্র কি বলে?

আমরা জানি বল প্রযুক্ত হলে কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পায়। প্রতি সেকেন্ডে যে বেগ বৃদ্ধি পায় তাকে ত্বরণ বলে। অভিকর্ষ বলের প্রভাবেও বস্তুর ত্বরণ হয়। এ ত্বরণকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বা মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ বলা হয়। যেহেতু বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে, সুতরাং অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে।
অভিকর্ষজ ত্বরণকে m দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেহেতু অভিকর্ষজ ত্বরণ এক প্রকার ত্বরণ, সুতরাং এর একক হবে ত্বরণের একক অর্থাৎ মিটার/সেকেন্ড২।
ধরা যাক, M = পৃথিবীর ভর, m=ভূ-পৃষ্ঠে বা এর নিকটে অবস্থিত কোনো বস্তুর ভর, d=বস্তু ও পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্যবর্তী দূরত্ব। তাহলে মহাকর্ষ সূত্রানুসারে, অভিকর্ষ বল,
আবার বলের পরিমাপ থেকে আমরা পাই, অভিকর্ষ বল = ভর$ \times $ অভিকর্ষজ ত্বরণ
অর্থাৎ F=mg
উপরিউক্ত দুই সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়,
\ $ mg= \frac {GMm} {d^2} $
বা,$ g= \frac {GM} {d^2} $
এ সমীকরণের ডান পাশে বস্তুর ভর m অনুপস্থিত। সুতরাং অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না। যেহেতু G এবং পৃথিবীর ভর M ধ্রুবক, তাই g-এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্ব d-এর উপর নির্ভর করে। সুতরাং g-এর মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। এর অর্থ হলো g-এর মান বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়।

অভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন : পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূ-পৃষ্ঠের দূরত্ব অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R হলে ভূপৃষ্ঠে $ g= \frac {GM} {R^2} $
যেহেতু পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, মেরু অঞ্চলে একটুখানি চাপা, তাই পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R ও ধ্রুবক নয়। সুতরাং ভূ-পৃষ্ঠের সর্বত্র g-এর মান সমান নয়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R সবচেয়ে কম বলে সেখানে g-এর মান সবচেয়ে বেশি। মেরু অঞ্চলে g-এর মান ৯.৮৩২ মিটার/
সেকেন্ড২। মেরু থেকে বিষুব অঞ্চলের দিকে R এর মান বাড়তে থাকায় g-এর মান কমতে থাকে। বিষুব অঞ্চলে R এর মান সবচেয়ে বেশি বলে g-এর মান সবচেয়ে কম। ৯.৭৮ মিটার/সেকেন্ড২। ক্রান্তীয় অঞ্চলে g-এর মান ৯.৮০৬৬৫ মিটার/
সেকেন্ড২। হিসাবের সুবিধার জন্য g-এর আদর্শ মান ধরা হয় ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড২ বা ৯.৮১ মিটার/সেকেন্ড২। ভূ-পৃষ্ঠে g- এর মান ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড২। এর অর্থ হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড বৃদ্ধি পায়।
পৃথিবীর ভারসাম্যের আলোচনা করতে গেলে যে বিষয়টির আলোচনা না করলে নাই হয়, তা হচ্ছে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ!
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন কতক গুলো স্তরে বিভক্ত। প্রায় ৬৩৭৮ কিমি নিচে রয়েছে এর কেন্দ্র। পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রধান স্তর গুলো হল ০-৩৫ কিমি পুরু বাইরের ভূত্বক (crust), ৩৫-২৮৯০ কিমি পুরু ম্যান্টল (mantle), ২৮৯০-৬৩৭৮ কিমি পর্যন্ত কোর (Core)। ভূতাত্ত্বিক তথ্য উপাত্তের অধিকাংশই সংগৃহীত হয় সমগ্র পৃথিবীর উপরিভাগের কঠিন স্তর থেকে। পৃথিবীর উপরিভাগের স্তরের মাটি-পাথরের মাঝেই লুকিয়ে আছে এর ইতিহাস এবং সম্পদ। এর কোথাও রয়েছে গ্যাস, কোথাওবা তেল বা আকরিক আবার কোথাও রয়েছে ধাতব পদার্থের বিশাল ভাণ্ডার! এছাড়াও আছে বিশাল জলভাগ! এতে স্পষ্ট যে পৃথিবীর ওজনের ভারসাম্য স্বাভাবিক ভাবে থাকা অসম্ভব যদি না বিকল্প ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়! যেমন- ঘুড়িকে হেলে পড়া থেকে বাঁচানোর জন্য বাড়তি ওজন এর দুপাশে জুড়ে দেয়া হয়।
সুবাহানাল্লাহ!!

ঠিক এ কথাটাই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে।
ﻭَﺃَﻟْﻘَﻰ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺭَﻭَﺍﺳِﻲَ ﺃَﻥ ﺗَﻤِﻴﺪَ ﺑِﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﺭًﺍ ﻭَﺳُﺒُﻼً ﻟَّﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ
অর্থাৎএবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।(১৬:১৫)

যাইহোক,
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা যে বিষয়গুলো পেলাম তা হচ্ছে-
১)পৃথিবী সুষম গোলক নয়।
২)এর ওজনের ভারসাম্য থাকা স্বাভাবিক নয় কারন এর ওজন সর্বত্র সমান নয়!
আর এজন্যই আল্লাহ্ বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিয়ে এর ভারসাম্য ঠিক রেখেছেন!
আল্লাহু আকবার!!
এখন আসি মূল আলোচনায়!
সুরা নাবার ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলেন-
 ﻭَّﺍﻟۡﺠِﺒَﺎﻝَ ﺍَﻭۡﺗَﺎﺩًﺍ
পাহাড়গুলোকে গেঁড়ে দিয়েছি পেরেকের মতো?
এখানে আল্লাহ্ পাক ইংগিত করেছেন ভংগিল পর্বতের প্রতি।
আর ১৬:১৫ আয়াতে মাওলা ইংগিত করেছেন স্তুপ ও আগ্নেয় পর্বতের প্রতি যা পেরেকের মত নয় বরং একটি বোঝার মতই আছে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য।

আচ্ছা, আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে কিভাবে কোরআনে আসল পর্বতের এই শ্রেণী বিভাগের তথ্য যা অতিসম্প্রতি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে ব্যাপক পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছে মানুষ? মুহাম্মদ (সাঃ) কি এগুলো গবেষনা করে বের করেছিলেন নাকি কোন এক মহান স্বত্বা তাঁকে এটা জানিয়ে দিয়েছিলেন ঐশী বাণীর মাধ্যমে?
এজন্যই কোরআনে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই এতে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন!!
এরপরেও বলব কোরআন মানুষের রচিত গ্রন্থ?


No comments:

Post a Comment